ঘড়ির কাটা তখন সন্ধ্যা ৭টা ১৯ মিনিট। বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার সবুজ গালিচায় পা রাখতেই গ্যালারিতে বিশেষ ব্যবস্থায় প্রবেশের সুযোগ পাওয়া শ'খানেক দর্শক সমস্বরে হামজা হামজা স্লোগানে মুখরিত করে তুললেন পুরো স্টেডিয়াম। প্রিয় তারকাকে সামনে থেকে দেখার সুযোগটা অবশ্য সবার ভাগ্যে জুটেনি। বাফুফের পৃষ্ঠপোষকদের কিছু সৌজন্য টিকিট দেওয়া হয়েছিল, সেটাই ইস্তেমাল করে হামজা চৌধুরীকে দেখার সুযোগ পান তারা। বার কয়েক হাত নেড়ে গ্যালারির প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানালেন হামজা। হামজাকে দূর থেকে আলাদা করে চেনা যায় তার ঝাকড়া চুলের কারণে। তবে ট্রেডমার্ক চুল নয়, হামজা দেশে পা রাখার পর থেকেই ভুবন ভোলানো হাসিতে মাত করে রেখেছেন হাজারো সমর্থককে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দীর্ঘদিন খেলা এই মিডফিল্ডারের স্ফিত হাসি দেখে গর্বে বুক ভরে উঠছে ভিআইপি স্ট্যান্ডে উপস্থিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কর্তাদের। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার সফল রূপ পেতে দেখতে কার না ভালো লাগে? তবে কাবরেরার পাঠশালায় প্রথম পাঠ নিতে এসে হামজা শুধু ভক্তদের নয়, খুব করে চাইলেন সতীর্থদের সবার মাঝে মিশে যেতে।
সেই প্রয়াশটা ছিল মাঠে নামার আগে থেকেই। হোটেল থেকে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে চড়ে কিংস অ্যারেনায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ দল। তার খানিক আগেই ঝা চকচকে নোয়ায় চড়ে এলেন হাভিয়ের কাবরেরাসহ কোচিং স্টাফরা। কয়েকজন খেলোয়াড়ও নামলেন সেই সাদা নোয়া থেকে। ধারণা ছিল কাবরেরার সঙ্গেই আসবেন হামজা। ধারণাটা ভুল প্রমাণিত করে হামজা এলেন বাসে চড়ে সতীর্থদের সঙ্গী হয়ে। কাঁধে একটা সাদা তোয়ালে আর ঠোটে লেগে রইলো হাসি। সতীর্থদের সঙ্গে গল্প করতে করতে কিংস অ্যারেনার ড্রেসিং রুমে পৌঁছে গেলেন দেশের ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকা।
এর খানিক বাদে মাঠে এসেও আলাদা থাকেননি। শেষ তিনদিনের ধকল কাটাতে বিশ্রামও নেননি। শুরুতে সতীর্থদের সঙ্গে বল নিয়ে খেললেন চোর-পুলিশ খেলা। এক-দুই ছোঁয়ায় পার্থক্যটা বোঝালেন ঠিক, তবে মাঠে হামজার যাদু পুরোরপুরি দেখার সুযোগ ছিল না। অনুশীলনের শুরুর কুড়ি মিনিট ছিল মিডিয়া ও গ্যালারির জন্য উন্মুক্ত। বাধ্যতামূলক গ্যালারি ত্যাগ করতে করতেই হামজাকে দেখা গেলো পুরো দলের সঙ্গে ভ্রাম্যমান বারপোস্ট কাঁধে করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যেতে।
বোঝাই গেলো ভারত পরীক্ষার আগে যে চার-পাঁচদিন সময় মিলবে, দলের সঙ্গে মিশে গিয়ে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টাটাই করবেন ধারে লেস্টার সিটি থেকে শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা হামজা। তবে কেবল হামজা মানিয়ে নিলেই চলবে না। এই মানের ফুটবলারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে অন্যদেরও। অন্তত প্রথম দিনের যতটা দেখার সুযোগ হলো, চেষ্টার কমতি ছিল না তপু, সাদ, জামালদের। এভাবেই একে অপরকে মানিয়ে নিতে পারলে ২৫ মার্চ শিলংয়ে বাংলাদেশ ধরা দিবে অন্য রূপে। তাতে ঘুঁচেও যেতে পারে ২২ বছর ভারতের বিপক্ষে হারাতে না পারার আক্ষেপ।