বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

দ্রুত বিচার দাবিতে ট্রাইব্যুনালের ফটকে স্বজনদের বিক্ষোভ

আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩৬ এএম

জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনে হত্যায় অভিযুক্ত শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার, তাদের দ্রুত বিচার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনে নিহতদের স্বজনরা। ‘জুলাই-২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’ ও ‘জুলাই মঞ্চ’র ব্যানারে অবস্থান নিয়ে তারা মিছিল, বিক্ষোভ করে ও স্লোগান দেয়। গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তারা ট্রাইব্যুনালের সামনে অবস্থান করে। এ সময় তারা বিচারের অগ্রগতি জানতে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সাক্ষাৎ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আন্দোলনকারীরা দ্রুত বিচার শুরুর দাবি পূরণ না হলে ঈদুল ফিতরের পর ট্রাইব্যুনাল ঘেরাওসহ কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে ওই এলাকা ত্যাগ করে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ইমাম হাসানের বড় ভাই রবিউল আওয়াল ভূঁইয়া কর্মসূচি চলাকালে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দোসররা শহীদ পরিবারের ওপর নানা নির্যাতন শুরু করেছে। অথচ তাদের বিচারের মুখোমুখি করার কথা। ছয় মাসের মধ্যে বিচারের আশ্বাস দিয়ে আট মাস চলে যাচ্ছে, এখনো হত্যাকারীদের বিচার হয়নি। বিচার ও গ্রেপ্তারের কাজ ত্বরান্বিত না হলে ঈদের পর কঠোর আন্দোলনে যাব। আমরা ট্রাইব্যুনাল ঘেরাও করব। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলশান বাঁশতলা এলাকায় গুলিতে নিহত কামাল হোসেন সবুজের ছোট বোন লিমা আক্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের তিনটি ছেলেমেয়ে এতিম হয়েছে। কিন্তু যাদের কারণে শিশুগুলো বাবা হারাল, আমি ভাই হারালাম, তাদের বিচার এখনো কেন শুরু হচ্ছে না? বিচারের দাবিতে এই রোজার মধ্যেও আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে কেন? আমরা এর জবাব চাই। আসামিদের দ্রুত বিচার দেখতে চাই।’ আন্দোলনের সময় গত বছরের ২০ জুলাই গৌরীপুরে নিহত নূরে আলম সিদ্দিকী রাকিবের বোনের স্বামী মো. ইলিয়াস মাহমুদ বলেন, ‘রাকিব মারা গেছে আট মাস আগে। কিন্তু এখনো আমরা বিচার দেখছি না।’ 

দুপুর ২টার দিকে ট্রাইব্যুনালের গেটে আসেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম। এ সময় তিনি সমবেতদের উদ্দেশে বিচারের প্রক্রিয়া তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের ক্ষমতা গ্রেপ্তার বা চার্জশিট দেওয়া নয়। আমরা ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তারের ও চার্জশিট দেওয়ার ব্যবস্থার জন্য বলি। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সেটা বাস্তবায়ন করে। আমরা এবং আমাদের তদন্ত সংস্থা দিনরাত কাজ করছি। এখন পর্যন্ত ৩০০-এর বেশি অভিযোগ এসেছে। কিন্তু একটি ট্রাইব্যুনালে শুনানি হচ্ছে। ইতিমধ্যে একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আমরা পেয়ে গেছি। ঈদের পর আরও চারটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আসবে। আপনাদের আশ^^স্ত করছি, এরপর দ্রুত বিচার শুরু হবে।’

আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকালে হত্যার সঙ্গে জড়িত অনেক আসামিকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট তামিম তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এই ট্রাইব্যুনাল থেকে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার কোনো আসামি জামিন পাননি। কিন্তু থানা থেকে কেন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, সেটা থানার কাছে জানতে পারবেন। আমাদের কাজ আসামির বিচারের ব্যবস্থা করা।’

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে দেশে আনার কথা জানিয়েছি।’ একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন জানিয়ে ট্রাইব্যুনালের গেটের সামনে বসে পড়েন। বেলা ৩টা ২০ মিনিটের দিকে তারা ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ বাড়ানো, দ্রুত বিচারের দাবি পূরণ না হলে ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিসহ ট্রাইব্যুনাল ঘেরাও করা হবে বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

জুলাই মঞ্চ প্ল্যাটফর্মটির অন্যতম সংগঠক ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী অর্ণব হোসেন বলেন, ট্রাইব্যুনালের মাত্র একটি বেঞ্চ রয়েছে। বেঞ্চেই ১৩২টি মামলা চলমান আছে, যা তাদের ওপর অনেক চাপ সৃষ্টি করছে। সংবেদনশীল মামলাগুলো যাচাই-বাছাই করতেও অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। তাই আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরও পাঁচটি বেঞ্চ গঠনের দাবি জানাই। ঈদের পর যেন অন্তত চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর রায় অতি দ্রুত দেওয়া হয়।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জুলাই-২৪ গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। এ সময় নিহত আমিনের মা বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের খুনের বিচার চাই। সরকার গদিতে বসে সব ভুলে গেছে। আমরা আমাদের সন্তান হারিয়েছি। আর তারা ক্ষমতা পেয়ে সব ভুলে গেছে। হাসিনার অত্যাচারের শিকার হয়েছে সবাই।’ নিহত নাদিমুল হাসান সেলিমের বাবা বলেন, ‘আমার ছেলেকে শেখ হাসিনা খুন করেছে। তার মতো স্বৈরাচার যেন দেশে আর না আসে। বিচারের দাবিতে আমাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। তারা ক্ষমতায় বসে আমাদের আর খবর রাখে না। কেন খবর রাখে না, তা আমরা জানতে চাই।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত