রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ডাকাতির অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বুধবার ভোরে ধানমণ্ডি ৮ নম্বর এলাকায় অলংকার নিকেতন জুয়েলার্সের মালিকের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো ফরহাদ বীন মোশারফ (৩৩), ইয়াসিন হাসান (২২), মোবাশ্বের আহাম্মেদ (২৩) ও ওয়াকিল মাহমুদ (২৬)।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমণ্ডি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান বলেন, বাসাটি থেকে এক-দেড় লাখ টাকা এবং জুয়েলার্সের মালিকের স্ত্রীর ব্যবহৃত স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় ডাকাতরা। ভবনটির তৃতীয় ও চতুর্থতলায় একটি অফিস ছিল, সেখান থেকে ২০-২৫ লাখ টাকা নিয়ে যায় তারা। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় গ্রেপ্তার চারজনসহ পলাতকদের আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদী তৌহিদুল ইসলাম লিমন (৪৫) উল্লেখ করেন, অলংকার নিকেতন জুয়েলার্স নামে আমার মামা এমএ হান্নান আজাদের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। আমি সেখানে ফ্যাক্টরি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করি। ধানমণ্ডিতে ভিকারুননিসা স্কুলের গলিতে আমার মামার একটি বাড়ি আছে। ওই বাড়ির নিচতলায় এসএম সোর্সিংয়ের অফিস আছে। এ ছাড়া ওই বিন্ডিয়ের দ্বিতীয়তলায় একটি কনসালট্যান্সি অফিস, তৃতীয় ও চতুর্থতলায় এসএম সোর্সিংয়ের অফিস এবং পঞ্চম ও ষষ্ঠতলা নিয়ে আমার মামার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে। বুধবার ভোর ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে তিনটি মাইক্রোবাস এবং একটি প্রাইভেট কারে গ্রেপ্তার ডাকাতরা তাদের পলাতক সহযোগীসহ অন্তত ১০-১২ জন দলবদ্ধভাবে আমার মামার বাসার সামনে এসে গেটে দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ডদের বলে, ‘আমরা র্যাবের লোক, আমাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে, আমরা এ বাড়িতে অভিযান করব, তাড়াতাড়ি গেট খোলো’। তাদের কয়েকজনের গায়ে র্যাবের পোশাক পরা ছিল। তখন দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড তাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে। কিন্তু ডাকাতরা গার্ডদের গালাগালি করতে থাকে এবং গেট না খুললে তাদের হত্যার হুমকি দেয়। তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন গেটের ওপর দিয়ে উঠে জোর করে গেট খুলে ফেলে।
এরপর ডাকাতরা সবাই জোর করে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে সিকিউরিটি গার্ড, কেয়ারটেকার শেখ রিয়াজুল ইসলাম, গাড়িচালক বিজয় মিয়াকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। আসামিরা নিচতলার অফিসের গেট ভেঙে পিয়ন দেলোয়ারকে মারধর করে মালিক কততলায় থাকে তা জানতে চায়। ডাকাতরা তাকে মারধর করে এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে তার কাছে থাকা ৪৫ হাজার ১০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। তারপর ডাকাতরা তাকে ভয়তীতি দেখিয়ে তৃতীয়তলায় গিয়ে এসএম সোর্সিংয়ের অফিসের গেট ভেঙে ফেলে। এ সময় গেট ভাঙার শব্দ পেয়ে চতুর্থতলায় থাকা এসএম সোর্সিংয়ের অফিস সহকারী লিয়ন টনি, ইমরান ও সিয়াম তৃতীয়তলায় নেমে আসে।
ডাকাতরা তখন তাদেরও আটক করে মারধর করে অফিসের চাবি ও বাড়িওয়ালার বাসার চাবি দিতে বলে। ডাকাতরা জোর করে পিয়নদের কাছ থেকে চাবি নিয়ে তৃতীয়তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে এবং অফিসের ড্রয়ার ভেঙে ২২ লাখ টাকা লুট করে নেয় ও অফিসের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। ডাকাতদের আরেকটি দল চতুর্থতলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে আলমারি ভেঙে ১৩ লাখ টাকা লুট করে নেয়। তারপর ডাকাতরা আমার মামার পঞ্চম ও ষষ্ঠতলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্বর্ণের কানের দুল, চেইনসহ প্রায় ৪ লাখ টাকার স্বর্ণ লুট করে নেয়। ডাকাতরা আমার মামাকে জোর করে নিচে নিয়ে গাড়িতে ওঠানোর চেষ্টা করে। ওই মুহূর্তে থানার একটি টহল টিম আমার মামার বাড়ির সামনে হাজির হয়ে ডাকাতদের হাত থেকে মামাকে উদ্ধার করে।
এ সময় আসামিরা তাদের হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। আসামিদের হামলায় পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হন। তখন আশপাশে থাকা লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং উত্তেজিত জনতা গ্রেপ্তার চার আসামিকে গণপিটুনি দিলে পুলিশ জনতার হাত থেকে তাদের উদ্ধার করে গাড়িতে তুলে। এ সময় পুলিশ আসামিদের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি র্যাবের জ্যাকেট, কালো রঙের র্যাব লেখা ক্যাপ, মোবাইল ফোন, বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ও এবং ৪৫ হাজার ১০০ টাকা উদ্ধার করে।