ফটক থেকে ডাকা হচ্ছে রোজাদারদের, ভেতরে থরে থরে সাজানো ইফতারের প্লেট, সেখানে আসছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ, সারিবদ্ধভাবে সবাই বসছেন ইফতারের জন্য। পাশাপাশি বসেছেন যারা, কেউ কারও চেনাজানা নয়। এ চিত্র বগুড়া শহরের দত্তবাড়ীতে শহীদ জিয়াউর রহমান শিশু হাসপাতাল চত্বরের। একসঙ্গে বহু মানুষের ইফতারের এমন আয়োজন চলছে কয়েক বছর ধরেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উদ্যোগে ইফতারের এ আয়োজনে প্রতিদিন সেখানে অংশ নেন প্রায় ৫০০ মানুষ। সমাজের অসহায় নারী-পুরুষ ও এতিম শিশুদের সঙ্গে ইফতারে অংশ নেন দিনমজুর, ভ্যান-রিকশাচালকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
গত সোম ও মঙ্গলবার শহীদ জিয়াউর রহমান শিশু হাসপাতাল চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, ইফতারের জন্য দুপুর থেকেই শুরু হয় রান্না, এরপর প্লেটে সাজিয়ে তা পরিবেশন করা হয়। ইফতারের আগমুহূর্তে সারিবদ্ধভাবে সবাই বসে পড়েন। এর আগে হাসপাতালের ফটকে দাঁড়িয়ে স্বেচ্ছাসেবকরা ডাকতে থাকেন রোজাদারদের। শহরে আসা মানুষ যারা কর্মব্যস্ততা অথবা অর্থাভাবে ইফতার কিনতে পারেন না, তারা সেখানে প্রায় দিনই আসেন। অসহায় নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর আর পথচারীরা তৃপ্তির সঙ্গে করেন ইফতার। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে নিজের পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত এ শিশু হাসপাতালে শিশু রোগীদের সেবার পাশাপাশি কয়েক বছর ধরেই ইফতারের আয়োজন করছেন। হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদ এ কার্যক্রম দেখভাল করে থাকে। আতিথেয়তার কোনো কমতি থাকে না ইফতারের এ আয়োজনে অংশ নিতে আসা মানুষদের। ইফতারের আগমুহূর্তে জিয়া পরিবারের সদস্যদের এবং দেশজাতির কল্যাণ কামনায় দোয়া করা হয়। মনমতো ইফতার করতে পেরে তৃপ্ত হন সাধারণ মানুষ আর প্রাণভরে দোয়া করেন জিয়া পরিবারের জন্য।
শহরের চেলোপাড়া বস্তির বিধবা আছমা ছোট্ট দুই সন্তান নিয়ে চলতি বছরের রমজান মাসের প্রথম দিন থেকে এখানে ইফতার করেন। তিনি বলেন, ‘আয়-রোজগার তেমন নেই, ইফতারে নিজে ও সন্তানকে ভালোমন্দ খাওয়াতে পারি না। এখানে এলেই ইফতার পাওয়া যায়, পেটভরে সন্তানদের নিয়ে খাই। এমন আয়োজন করায় তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করি, তারা যেন ভালো থাকে।’
ইফতারের এ আয়োজনে প্রায় প্রতিদিনই অংশ নেওয়া হোসেন আলী বলেন, ‘সোনাতলা থেকে শহরে আসি রিকশা নিয়ে, যা রোজগার হয় তা দিয়ে সংসার খরচ চালিয়েও টাকা জমাচ্ছি ছেলেমেয়েদের ঈদের পোশাক কেনার জন্য। এখানে প্রতিদিন বিনামূল্যে ইফতার দেওয়া হয়, এতে ইফতার খরচ বেঁচে যায়।’
আরেক রিকশাচালক আজিজারসহ অন্যরাও এমন আয়োজনে অংশ নিয়ে প্রাণভরে দোয়া করেন জিয়া পরিবারের কল্যাণ কামনায়।
বিএনপি মিডিয়া সেলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর সাংবাদিক কালাম আজাদ বলেন, ‘তারেক রহমানের নির্দেশে হাসপাতাল চত্বরে প্রতি বছর এ ইফতার কার্যক্রম চলে আসছে। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।’
জিয়াউর রহমান শিশু হাসপাতালের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা সৈয়দ আমিনুল হক দেওয়ান সজল বলেন, ‘রমজান আত্মশুদ্ধি ও সংযমের মাস। সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষ, পথচারী ও সুবিধাবঞ্চিতরা যেন ইফতার থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্যই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।’