সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

শ্রীমঙ্গল উপজেলা হাসপাতাল

নেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, স্টাফ-নার্সরাই দেখেন রোগী 

আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৮ পিএম

'সামান্য অসুস্থ হয়ে এলেই আমাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় মৌলভীবাজার জেলা হাসপাতালে। সরকারি হাসপাতালে অল্প টাকায় ভালো সেবা পাওয়া যায় সেই আশায় আমরা শ্রীমঙ্গল হাসপাতালে আসি। কিন্তু একটু চেকআপ করেই বলা হয় মৌলভীবাজার জেলা হাসপাতালে চলে যান। মৌলভীবাজার যাতায়াতের যে খরচ হয় সেই খরচে আমরা প্রাইভেট মেডিকেলেই চিকিৎসা নিতে পারি।' কথাগুলো বলেছিলেন শ্রীমঙ্গল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক চা বাগানের  রোগীর স্বজন অর্জুন সবর।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা৷ নামে ৫০ শয্যা হাসপাতাল হলেও ৫০ শয্যা হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় রোগীদের চিকিসা সেবা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে চিকিসকদের। স্থাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৩ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও মাত্র ১০ ডাক্তার দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন রোগীদের। সামন্য রোগ নিয়ে আসা রোগীদেরও চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে জেলা হাসপাতালে। ডাক্তার ছাড়াও বিভিন্ন পদ শূন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

হাসপাতালে আসা একাধিক রোগী ও রোগীর স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, হাসপাতালে এখন এমবিবিএস ডাক্তার কম। সিনিয়র স্টাফ-নার্সরাই রোগী দেখেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই বললেই চলে। হাসপাতালে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। সব ওষুধও পাওয়া যায় না। সেবার মানও খারাপ। সামান্য রোগেও জেলা হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের গড়ে প্রতিদিন জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেন প্রায় ৯০ জন রোগী, আউটডোরে বিভিন্ন রোগ নিয়ে চিকিৎসা নেন প্রায় ৩০০ জন আর হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন রোগী ভর্তি থাকেন৷  হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট (বিষয়হীন) ৬ জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ১ জন। মেডিকেল অফিসার/সহকারী সার্জন ৭ জনের জায়গার রয়েছেন মাত্র ১ জন। সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে শূন্য রয়েছে ৭টি, ফার্মাসিস্ট পদে শূন্য রয়েছে ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এসআই) পদে শূন্য রয়েছে ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি) পদে শূন্য রয়েছে ১টি, পরিসংখ্যানবিদ পদে শূন্য রয়েছে ১টি, কার্ডিওগ্রাফার পদে শূন্য রয়েছে ১টি, কম্পিউটার অপারেটর পদে শূন্য রয়েছে ১টি, অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে শূন্য রয়েছে ১টি, স্বাস্থ্য সহকারী পদে শূন্য রয়েছে ৪টি, হেলথ এডুকেটর পদে শূন্য রয়েছে ১টি, অফিস সহায়ক পদে শূন্য রয়েছে ২টি, ওয়ার্ড বয় পদে শূন্য রয়েছে ২টি, আয়া পদে শূন্য রয়েছে ১টি, বাবুর্চি পদে শূন্য রয়েছে ১টি এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ৩টি পদ শূন্য রয়েছে। হাসপাতালের এক্সরে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন ও ইসিজি মেশিনটি অকেজো পড়ে আছে।

এ ছাড়া চিকিৎসক সংকটের কারণে উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ৪ জন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারকে দিয়ে ইমার্জেন্সি ডিউটি করানো হয়। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে তৃণমূলে স্বাস্থ্য সেবাও।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ২য় তলায় অবস্থিত নারী, শিশু ও পুরুষ ওয়ার্ডের কোনো সিট খালি নেই৷ ডাক্তারদের চেম্বারের বাইরে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরিবর্তে সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন রোগীদের।

জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, মানুষ কত ধরনের রোগ নিয়ে আসে। আমরা এখন শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি৷ মৌলভীবাজার জেলা হাসপাতালে রেফার করে দিচ্ছি।

নূর আলম নামের একজন বলেন, আমার স্ত্রী গর্ভবতী। এখানে এসে জানলাম গাইনি ডাক্তার কেউ নাই। আমরা গরিব মানুষ, প্রাইভেট ডাক্তার দেখানোর টাকা নাই। এখন অন্য কোনো ডাক্তার দেখিয়ে যাব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র নার্স বলেন, প্রায় ২০ -২৫ দিন ধরে গাইনি চিকিৎসক নেই। হাসপাতালে সিজার বন্ধ, গাইনি ডাক্তার না থাকায় গর্ভবতী নারীরা এসে ঘুরে যান। আমাদেরও খারাপ লাগে। ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যা রোগীর তুলনায় কম হওয়ায় আমরা খুবই চাপের মধ্যে আছি। এভাবে চলতে পারে না৷

এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিনথিয়া তাসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ৫০ শয্যার হাসপাতালে ২৩ জন চিকিৎসকের জায়গায় আছে মাত্র ১০ জন।  জনবল চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছি। জনবল নিয়োগ হলে রোগীদের আরও ভালো সেবা দেওয়া যাবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত