বাংলাদেশ টেস্ট খেলছে ২৫ বছর ধরে। অথচ এখনও গড়ে ওঠেনি কাঙ্ক্ষিত ‘টেস্ট কালচার’। এমন বাস্তবতায় মনের কষ্টই যেন ঝরল নাজমুল হোসেন শান্তর কণ্ঠে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, 'খুবই ইম্পর্টেন্ট, আমার মনে হয় এত বছর টেস্ট খেলার পরে যখন টেস্ট কালচার নিয়ে আমাদের কথা বলতে হয় এটা অবশ্যই দুঃখজনক।'
তবে শুধু দুঃখ জানিয়ে থেমে থাকেননি শান্ত। বরং আশার কথা শুনিয়েছেন। জানালেন, 'গত বছর থেকেই আমরা কীভাবে টেস্ট টিমটা একটা কালচার তৈরি করতে পারি বা আমরা কীভাবে খেলাটা খেলতে চাই এই বিষয়গুলো নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছিল। নতুন আসার পরে তার একটা প্ল্যান আছে এবং সে কীভাবে দলটাকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে চায়, তার একটা স্পষ্ট রূপরেখা আছে, যেটা অলরেডি প্লেয়ারদের সাথে শেয়ার করেছেন।'
নতুন বছরে নতুনভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ও শোনা গেল তার কণ্ঠে— 'আমি আশা করব সামনে যেই পাঁচটা ছয়টা টেস্ট ম্যাচ আছে, নতুন কিছু আপনারা দেখতে পাবেন ইনশাল্লাহ।'
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শেষ করেই টেস্ট প্রস্তুতিতে নেমেছে দল। হাতে ছিল ছয়-সাতদিন সময়। এই সময়টুকুকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পেরেছেন বলে মনে করেন অধিনায়ক, 'আমার মনে হয় খুব স্পেসিফিক এবং খুব কোয়ালিটি প্র্যাকটিস হচ্ছে। ফ্যাসিলিটিস ওয়াইজ দারুণ, উইকেটও ভালো ছিল। আমরা যেরকম উইকেটে প্র্যাকটিস করতে চেয়েছি, ঐ ধরনের ফ্যাসিলিটিস গুলো আমরা পেয়েছি।'
ব্যাটিং ইউনিট, বিশেষ করে টপ অর্ডার নিয়ে এখনও কনসার্ন থেকেই যাচ্ছে। শান্ত নিজেও স্বীকার করলেন, 'আমি গত বছর ১৩-১৪টা ইনিংসে ফ্রেশ হয়ে আউট হয়েছি। ৩০-৪০ রানে থেমে যাওয়া উচিত না, স্পেশালি এই ফরম্যাটে। কারণ টাফ টাইমটা পার করার পরে আউট হচ্ছি।'
তবে সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানে মনোযোগী হতেই চান, 'আমি নিজেও কাজ করেছি এই জায়গায় এবং সবাই চেষ্টা করছে কীভাবে দলকে কন্ট্রিবিউট করা যায়। আমি বিশ্বাস করি, যদি আরও অপরচুনিটি দেওয়া হয়, তাহলে প্লেয়ারদের মধ্য থেকে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।'
নিজের দলকে নিয়ে শান্তর প্রত্যাশা—জেতার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামা। 'আমরা প্রত্যেকটা ম্যাচ যেন জিতার জন্য খেলি। এখানে কোন সেলফ ক্রিকেট খেলার ইচ্ছা আমাদের কারোরই নাই। আমরা যেভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে জিতেছি, ওইরকম বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, আগ্রাসন সবসময় থাকতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'গত ২০-২২ বছরে টেস্ট ক্রিকেটে খুব বেশি উন্নতি হয়নি। এই জায়গাটাতে আমাদের পরিবর্তনের দরকার আছে। সেই পরিবর্তনটাই করার চিন্তা করছি।'
সিলেটের উইকেট নিয়ে সন্তুষ্ট অধিনায়ক, 'সিলেটের সবসময় এরকম ভালো বাউন্সই থাকে। আমি আশা করব ম্যাচেও এমন উইকেট থাকবে। অবশ্যই বৃষ্টি আমাদের কন্ট্রোলে নাই, কিন্তু আমরা এক্সকিউজ খুঁজে নিতে চাই না।'
কে কিপিং করবেন, সেটা এখনই বলেননি শান্ত। তবে বলেছেন, 'সবাই খেলার জন্য প্রস্তুত আছে। আমার মনে হয় খুবই হেলদি একটা কম্পিটিশন, স্পেশালি যারা উইকেট কিপিং করবেন। ইনশাল্লাহ, কালকে টসের পর সবাই জানবেন।'
ডিভিশন পর্যায় থেকেই নাহিদকে চেনেন শান্ত। তাই তার প্রতি আস্থা আরও গভীর। 'আমি সবসময় ওকে ডে ওয়ান থেকে বলছি যেন ও ১৪০ প্লাস বল করে। আশা করব কাল যদি সুযোগ পায়, তাহলে সেই গতিতেই বল করবে।'
জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক শন উইলিয়ামস বলেছেন, নাহিদের পেসে সমস্যা হবে না। শান্তর ভাষায়, 'ম্যাচে যখন নাহিদ বল করবে আর অপোনেন্ট ব্যাটিং করবে, তখন তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখেই বুঝবেন ও কত জোরে বল করে।'
নাজমুল হোসেন শান্তর দৃষ্টিতে প্রতিপক্ষ বড় না ছোট—এই বিভাজন অপ্রাসঙ্গিক, 'প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড বা জিম্বাবুয়ে—এই ধরনের চিন্তা না করে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। জিম্বাবয়ের সঙ্গে যেভাবে খেলবো, সাউথ আফ্রিকার সঙ্গেও যেন সেই মন মানসিকতা থাকে।'
ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে কথাবার্তার কথা জানিয়ে শান্ত বলেন, 'যখন বাইরে খেলি তখন উইকেটগুলা ডিফারেন্ট থাকে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটে যে ধরনের উইকেটে খেলা হয়, ডোমেস্টিক ফার্স্ট ক্লাসেও যেন ওই উইকেটেই খেলা হয়। কেউ পারফর্ম না করলেও যেন তাকে ব্যাক করা হয়। কারণ পরিবর্তনের শুরুতেই রেজাল্ট পাওয়া কঠিন।'
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু হচ্ছে আগামীকাল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। মাঠে নামার আগে সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হোসেন শান্তর এই বার্তাগুলোই যেন নতুন টেস্ট মানসিকতার সূচক হয়ে রইল।