কৃষি ডিপ্লোমা ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে দিনভর উত্তপ্ত রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে (ডিএই)। কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো অযৌক্তিক বলছেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কৃষিবিদরা।
গতকাল সোমবার সকালে নিজেদের ৮ দফা দাবি আদায়ে পূর্ব ঘোষিত এগ্রি ব্লকেড কর্মসূচির অংশ হিসাবে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মূল ফটক বন্ধ করে দেয় কৃষি ডিপ্লোমার শিক্ষার্থীরা। এতে ডিএইর কর্মকর্তারা অফিসে ঢুকতে পারেনি। সাড়ে তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ অবস্থার পর দুপুর দেড়টার দিকে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খামারবাডি়র সামনে জড়ো হন। এ সময় ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
একপর্যায়ে শেকৃবি শিক্ষার্থীরা তাদের (ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী) খামারবাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেয়, পরে ভেতরে ঢুকতে চাইতে সংঘাত এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বাধা দেয়। পরে খামারবাড়ি ছেড়ে চলে যায় কৃষি ডিপ্লোমার শিক্ষার্থীরা তারপর ভেতরে প্রবেশ করে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শেকৃবি শিক্ষার্থীরা।
গতকাল সোমবার এই অবস্থার মধ্য দিয়ে বিকেলে সচিবালয়ে কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে বলে জানায় কৃষি মন্ত্রণালয়। এ সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. জাকির হোসেন, ডিএই এর মহাপরিচালক মো. ছাইফুল ইসলাম, ছাত্র প্রতিনিধিদের মধ্যে আবু নাঈম সিদ্দিক, আসাদুজ্জামান কবির, মুসা প্রধান, মুনতাসির রহমান ও রায়ন উদ্দিম শামীম উপস্থিত ছিলেন।
কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, সচিবালয়ে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এ বৈঠকে শিক্ষার্থীদের ৮ দফা দাবির বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করার আশ্বাস দেন কৃষি উপদেষ্টা। শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা তাদের দাবিগুলো বিধিসম্মত উপায়ে বাস্তবায়নে সরকারের আশ্বাসের ওপর আস্থা রেখে চলমান আন্দোলন বন্ধ করে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে।
কৃষি উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের কাজ পড়াশোনা করা। তোমাদের ভবিষ্যৎ আমাদের ওপর ছাড়ো, আমরা দেখব। তোমাদের দাবি পূরণে সরকার আন্তরিক।’
কৃষিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সহ মোট ৮ দফা দাবি জানায় কৃষি ডিপ্লোমা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে গেজেট করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে এবং প্রতিবছর নিয়োগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষকসংকট দূর করতে হবে। কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষাকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) অধীন থেকে বের করে সম্পূর্ণভাবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আলাদা প্রতিষ্ঠান করতে হবে। সব কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদটি শুধু ডিপ্লোমা
কৃষিবিদদের জন্য সংরক্ষিত করতে হবে।খামারবাড়িতে অবস্থান নেওয়া শেকৃবি শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া নিয়ে খামারবাড়ি অচল করছে। আমরাও চাই তাদের যেসব সমস্যা আছে সেগুলো সমাধান হোক তবে জিম্মি করে কোনো অযৌক্তিক দাবি আদায় ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না।