২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার কেন্দ্র স্থাপনের এক দফা দাবি আদায়ে ক্লাস বর্জন করে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজ ও ঈশ্বরগঞ্জ আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২৩ এপ্রিল) বেলা ১১ টার দিকে ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা।
মিছিলটি পৌর শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদের সামনে এসে মানববন্ধনে অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে ফের মিছিল নিয়ে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এতে প্রায় ১ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখার ফলে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটেরও সৃষ্টি হয়। মহাসড়ক অবরোধের সংবাদ শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদুল আহমেদ।
এ সময় তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। আশ্বাস পেয়ে মহাসড়ক ছাড়ে শিক্ষার্থীরা। একইদিন দুপুরে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত আবেদনও করে শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজ, ঈশ্বরগঞ্জ আইডিয়াল কলেজসহ উপজেলার আরও কয়েকটি কলেজের হাজার-হাজার শিক্ষার্থী ২০-২৫ কিলোমিটার দূর উপজেলার শেষ প্রান্তে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। এই হয়রানি থেকে রেহাই পেতে পৌর শহরে কেন্দ্র স্থাপনের দাবিতে শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলনে নামে।
উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার, উচাখিলা ইউনিয়নের কাজির বলসা গ্রামের বিথি ও তামান্না আক্তার বলেন, আমাদের বাড়ি থেকে আঠারবাড়ি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। এতো দূরে জার্নি করে পরীক্ষা দিলে আমাদের যেমন শারীরিক পরিশ্রম হবে, তেমনি আর্থিকভাবেও এর প্রভাব পড়বে। যা আমাদের এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলে অর্জনে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আন্দোলনরত ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রেদোয়ান হাসান, শাহরিয়ার নাফিজ, সারোয়ার হাসান, হাসান লোহানি ও আনিসুর রহমান জানান, গত ১৫ বছর ধরে ঈশ্বরগঞ্জের ৮-৯ টি ইউনিয়নের হাজারো শিক্ষার্থী প্রতিবছর ২০ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে উপজেলার আঠারবাড়ি ডিগ্রি কলেজে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আসছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত অবিচার ও অমানবিক। কারণ এতো দূরবর্তী স্থানে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আমরা এ বছর আর কোনভাবেই আঠারবাড়ি গিয়ে পরীক্ষা দিব না। আমরা ঈশ্বরগঞ্জ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজকে এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে অনুমোদন দেওয়ার জন্য এই আন্দোলনে নেমেছি। দাবি আদায় না হলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
ঈশ্বরগঞ্জ আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী জাকিরুল ইসলাম সোহান,পাভেল আহমেদ সরকার, মাহমুদ আহমেদ জীবন, শাহরিয়ার প্রত্যয় ও আশরাফুল জানান, দূরবর্তী কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে আমাদের মানসিক চাপ, ভোগান্তি ও মনোযোগ নষ্ট হয়। যা পরীক্ষার ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এছাড়াও যাতায়াতে অতিরিক্ত সময় ও খরচ হয়, যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য একপ্রকার বোঝা।
এ ব্যাপারে ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী ২০-২৫ কিলোমিটার দূরে গিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা তাদের স্বাভাবিকতা হারাচ্ছে। এইচএসসির কেন্দ্র পরিবর্তনের দাবিটি ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবি। কিন্তু একটি অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে দাবি আদায় হচ্ছে না। আমরা শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের এ দাবি পূরণে একমত।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, খবর পেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের আশ্বস্ত করেছি। পরে তারা মহাসড়কের অবরোধ ছেড়ে দেয়। বর্তমানে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা আমার কাছে একটি লিখিত আবেদন জমা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। আশা করছি শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়ন হবে।