গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বন্যার্তদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ না করে আত্মসাতের অভিযোগে এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের গভমেন্ট রিলিফ (জিআর) বরাদ্দের তিন মেট্রিকটন চাল বিতরণ না করে তা নিজ গুদামে রেখে আত্মসাতের চেষ্টা করেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনজু মিয়া।
এদিকে ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করার পর কেন তাকে চূড়ান্ত অপসারণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব তৌহিদ এলাহী স্বাক্ষরিত চিঠিতে আগামী দশ কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকালে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে রোববার (২০ এপ্রিল) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব তৌহিদ এলাহী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনজু মিয়াকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন। বরখাস্ত হওয়া মো. মনজু মিয়া উপজেলার ১৫ নং কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১৬ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের ত্রাণ শাখা থেকে কাপাসিয়া ইউনিয়নের বন্যার্তদের মাঝে বিতরণের জন্য চেয়ারম্যানের অনুকূলে ৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি বন্যার্তদের জন্য বরাদ্দকৃত এসব চাল বিতরণ না করে আত্মসাতের চেষ্টা করেন। কাপাসিয়া ইউনিয়নের কছিম বাজার এলাকার জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যক্তির গোডাউন থেকে এসব চাল উদ্ধার করে উপজেলা প্রশাসন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চেয়ারম্যান মনজু মিয়া ওই চাল গোপনে বিক্রির উদ্দেশ্যে গুদামজাত করেছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৮ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া আটটার দিকে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ৩০ কেজি ওজনের একশ বস্তা চাল উদ্ধার করে। এরপর গোডাউনটি তাৎক্ষণিকভাবে সিলগালা করা হয়। ঘটনার পরদিন সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উদ্ধারকৃত এসব চাল বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে উপজেলা প্রশাসন। এতে বলা হয়, কেন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা তিন কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে হবে। কারণ দর্শানোর ব্যাখ্যায় সন্তোষজনক কোন উত্তর দিতে না পারায় ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রতিবেদন দাখিল করেন তৎকালীন ইউএনও তরিকুল ইসলাম।
ঘটনার দশ মাস পর বিষয়টি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকার বিভাগের (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ৩৪(৪)(খ) ও (ঘ) ধারা অনুযায়ী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনজু মিয়াকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যক্রম জনস্বার্থ এবং ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ববোধের পরিপন্থী হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। আদেশটি জনস্বার্থে অবিলম্বে কার্যকর হবে।