কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে স্ত্রী শাহিদা বেগমকে (৬৫) হত্যা করে লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলেছিলেন স্বামী আবদুল মোমিন (৬৮)। হত্যার প্রায় আড়াই মাস পর বুধবার (২৩ এপ্রিল) আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে নিজের কৃতকর্ম স্বীকার করেছেন তিনি।
দীর্ঘদিন স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন মোমিন। সেই মোমিনই এক রাতে স্ত্রীর মুখে বালিশ চেপে ধরেন। স্ত্রীর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর ভোররাতে তার মরদেহ কাঁধে করে বাড়ির পেছনের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে ঢাকনা লাগিয়ে দেন। পরে গোসল করে চলে যান নামাজ পড়াতে।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দীন আহমেদ।
পুলিশ জানায়, ধনুসাড়া গ্রামের এক বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে শাহিদা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্বামী আবদুল মোমিন তখন দাবি করেন, স্ত্রীকে ফজরের নামাজ পড়তে বলে তিনি মসজিদে যান। ফিরে এসে স্ত্রীকে আর খুঁজে পাননি।
কিন্তু তদন্তে একের পর এক অসঙ্গতি ধরা পড়ে। প্রথমে নিখোঁজ নাটক, পরে দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন ভাইয়ের পরিবারের ওপর। কখনও বলেন, স্ত্রীকে মেরেছে দুষ্টু জিন। একপর্যায়ে পুলিশের সন্দেহ ঘনীভূত হয়।
তাকে নজরদারির পর গত ২৭ মার্চ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রিমান্ডে নেওয়ার পর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে শেষ পর্যন্ত স্বীকার করেন খুনের কথা।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মোমিন বলেন, তার মায়ের বয়স প্রায় ১৩০ বছর। চলাফেরা না করলেও মস্তিষ্ক সচল। তিনি ও তার ভাই পালা করে মায়ের সেবা করতেন। কিন্তু স্ত্রী শাহিদা বেগম এ দায়িত্ব নিতে চাইতেন না। ঘটনার রাতে মায়ের সেবাযত্ন নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। স্ত্রী উত্তেজিত হয়ে গালাগাল করতে থাকলে রাগের বশে বালিশ চেপে ধরেন মুখে। কিছুক্ষণ পর স্ত্রীর নিথর দেহ দেখে বুঝতে পারেন, তিনি মারা গেছেন।
এরপর ভোররাতে লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন। ফিরে এসে নাটক সাজিয়ে ছেলেকে ফোন দেন, বলেন ‘তোমার মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
চৌদ্দগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেশাম উদ্দিন বলেন, আদালতে মোমিন একাই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। আমরা শিগগিরই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করব।
এ ঘটনার পর ধনুসাড়া গ্রামে শোক ও বিস্ময়ের পাশাপাশি উঠেছে নৈতিক অবক্ষয়ের প্রশ্ন। ইমামতি করা এক ব্যক্তি কীভাবে এমন নির্মমভাবে স্ত্রীকে হত্যা করতে পারলেন, সেই প্রশ্নে স্তব্ধ এলাকাবাসী।