সাভারে বহুতল ভবন ‘রানা প্লাজা’ ধসের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনো নিহত ও আহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, সুচিকিৎসা কিংবা পুনর্বাসন কোনোটিই জোটেনি। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে খেয়ে না খেয়ে আশায় বুক বেঁধে দিন পার করছেন ভুক্তভোগী শ্রমিকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার ভবনধসের যুগপূর্তিতে নিহত ও নিখোঁজদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই।
স্বজন হারানোর বেদনা ও অঙ্গহানিসহ চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলা শ্রমিকরা মরার আগে ভবন মালিকসহ দোষীদের বিচার দেখে যেতে চান। পাশাপাশি সুচিকিৎসা, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনও দাবি করেন তারা।
এক যুগ পূর্তির দিনে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় রানা প্লাজা ভবনধসের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নিহত ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে শুরু হয়ে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে এসে শেষ হয়। পরে সংগঠনের পক্ষ থেকে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক মারা গেছেন। এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। কিন্তু এক যুগেও এই নির্মম হত্যাকান্ডের বিচারকাজ শেষ হয়নি, যা খুবই দুঃখজনক।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের আইনবিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ১২ বছর পূর্ণ হলেও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হয়নি। এটাকে দুর্ঘটনা বললে ভুল হবে, এটি একটি হত্যাকান্ড। ক্ষতিগ্রস্ত সবার প্রয়োজনীয় সহায়তা, পুনর্বাসন এবং আহতদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দিতে হবে। ভবন মালিক এক যুগ ধরে জেলে আছেন, বিচারকাজ এখনো শেষ হয়নি। কিন্তু কারখানার মালিকরা দিব্যি বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
সাভারের রানা প্লাজা ধসের এক যুগেও জড়িতদের শাস্তি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নারী শ্রমিক শিলা বেগম। তিনি বলেন, ২৩ তারিখ বিল্ডিংয়ে ফাটল দেখা দিলে একজন ইঞ্জিনিয়ার এসে বলেন, ‘ভবন ঝুঁকিপূর্ণ’। পরে ব্যানার ও তালা লাগিয়ে দিলেও রানা এবং গার্মেন্টস মালিকরা জোর করে ভয় দেখিয়ে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেন। তাদের কারণে এতগুলো মানুষ প্রাণ হারালেন, পঙ্গু হলেন কিন্তু তাদের কোনো শাস্তি হলো না।’
বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম ইসমাইল বলেন, রানা প্লাজার জায়গা ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে আহত এবং নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে পুনর্বাসন, আহতদের সুচিকিৎসা, সোহেল রানাসহ দায়ী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতসহ ২৪ এপ্রিলকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণার দাবি জানান।
অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির আয়োজনে ‘নিরাপদ কর্মস্থল এবং ন্যায্য মজুরি’ সেøাগানকে ধারণ করে ১৩ থেকে ২৪ স্মরণে ও সংস্কারে শ্রমিকের বন্দোবস্ত শিরোনামে রানা প্লাজার সামনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, রানা প্লাজা ভবনধসের আগের দিন ফাটল দেখা গেলেও সেটিকে গুরুত্ব না দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে ভবন মালিক সোহেল রানা পরের দিন গার্মেন্টস খোলা রাখে।