মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

রাজধানীর বাজারে সবজির ঝাঁজ, কিছুটা স্বস্তি মাংস-মুরগিতে

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৬ এএম

ঈদের পর সপ্তাহ না পেরোতেই রাজধানীর কাঁচা বাজারে ফের চড়া হয়েছে সবজির দাম। বিশেষ করে করলা, বেগুন, বরবটি, কাঁকরোল, কাঁচা মরিচসহ বেশ কিছু সবজির কেজি দরে বেড়েছে ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। তবে কিছুটা স্বস্তির খবর হলো—দাম কমেছে খাসির মাংস ও সব ধরনের মুরগির। আর মাছের বাজার এখনো রয়েছে স্থিতিশীল।

আজ শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের শেষ দিকে কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও বর্তমানে বাজার দখল নিয়েছে গ্রীষ্মকালীন সবজি। বাজারে করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা, বেগুন ৫০-৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৪০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা ও টমেটো ৩০ টাকায়। অন্যদিকে গাজর ৪০, পেঁপে ৫০, শসা ৬০, পটোল ৫০-৬০, সজনে ডাটা ১০০-১২০, ধনেপাতা ১৪০ ও একটি লাউয়ের দাম ৬০-৭০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।

সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি ৭০ টাকা হলেও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। বিক্রেতাদের দাবি, সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে উৎপাদন ও সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় এই মূল্যবৃদ্ধি।

সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্রীষ্মকালীন সবজির উৎপাদন খরচ বেশি, তার ওপর মৌসুমের শুরুতে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেশি। কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা আনিস বলেন, ‘সবজি এখনও পর্যাপ্ত আসেনি। তাই দাম একটু চড়া। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’

অন্যদিকে, বাজারে এখন তুলনামূলক কম দামে মিলছে লেবু। রমজানে যেখানে হালি লেবু বিক্রি হয়েছে ৮০-১০০ টাকায়, এখন তা ডজনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকায়।

তবে উল্টো চিত্র পেয়াজের বাজারে। পহেলা বৈশাখের পর থেকে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে বর্তমানে কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। পেঁয়াজ বিক্রেতা আলমগীর জানান, হঠাৎ করেই দাম বাড়তে শুরু করেছে, সামনে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মাঝারি স্বস্তি রয়েছে আলু ও মাছের বাজারে। আলুর দাম এখনো স্থিতিশীল, কেজিতে ২০-২২ টাকা। আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, দেশি রসুন ৮০-১০০ আর আমদানিকৃত রসুন ১৮০-২২০ টাকায়।

মাছের দামেরও তেমন পরিবর্তন নেই। রুই ৩৫০-৪২০, কাতল ৩৮০-৪৫০, তেলাপিয়া ১৫০-২২০, পাঙাশ ১৮০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোয়াল, পোয়া, আইড়, টেংরা, দেশি কৈ ও শিংসহ অন্যান্য মাছের দামেও বড় ধরনের পরিবর্তন নেই। তবে এক কেজির ইলিশের দাম ২২০০ টাকা, দেড় কেজির ২৫০০ ও ছোট সাইজের (৫০০-৬০০ গ্রাম) ইলিশ ১৪০০-১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পোলট্রি বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৭০-১৮০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৩০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির দাম ৬৫০-৬৮০, সাদা লেয়ার ২৭০ ও লাল লেয়ার ২৮০ টাকা। হাঁস জাতভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়।

একই সঙ্গে কমেছে খাসির মাংসের দাম। বর্তমানে কেজি প্রতি ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা আগের তুলনায় ৫০ টাকা কম। গরুর মাংসের দাম এখনো ৭৫০-৮০০ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়।

তবে ডিমের বাজারে আবার কিছুটা উর্ধ্বগতি দেখা গেছে। লাল ডিম ডজনপ্রতি ১২০-১৩০ টাকা, সাদা ডিম ১১৫-১২০, হাঁসের ডিম ১৮০-২০০ এবং দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়।

নিত্যপণ্যের এই দামের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। বাজারে আসা আদিলুর বলেন, ‘রমজানে দাম সহনীয় ছিল, কিন্তু ঈদের পর হঠাৎ করেই সবজির বাজার চড়েছে। দ্রুত বাজার মনিটরিং জোরদার না করলে সিন্ডিকেট আবার সক্রিয় হয়ে উঠবে।’

সব মিলিয়ে একপাশে যখন কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে মাছ-মাংসে, অন্যদিকে সবজির বাজারে সেই স্বস্তি যেন ফের উধাও। এখন দেখার বিষয়, বাজার মনিটরিং জোরদার করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা যায় কিনা।

 

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত