মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

সীমান্তে ভারত-পাকিস্তান সেনাদের গোলাগুলি, উত্তেজনা বাড়ছেই

আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২১ এএম

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় চিরবৈরী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এর মধ্যেই জম্মু ও কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) ভারত ও পাকিস্তানের সেনাসদস্যদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি, যা দুই দেশের মধ্যকার চলমান এ টানাপড়েনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

পাশাপাশি পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পর কাশ্মীর জুড়ে চিরুনি অভিযান শুরু করেছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। গতকাল শুক্রবার কাশ্মীরের বান্দিপোরা জেলায় সেনাবাহিনীর এমন অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। বৈসরণে এ হামলার ঘটনায় কাশ্মীরে নিরাপত্তাব্যবস্থায় যথেষ্ট গাফিলতি ছিল বলে স্বীকার করেছে ভারত সরকার। এদিকে এ ঘটনায় পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করে ঐতিহাসিক সিন্ধু চুক্তি বাতিলসহ পাঁচটি বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে নয়াদিল্লি। সেই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হুঁশিয়ারি দিয়ে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, ভারত হামলা করলে যুদ্ধ বাধবে। ফলে সমাধান আলোচনাতেই।

সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকিস্তানি সেনারা ভারতীয় বাহিনীর নিরাপত্তাচৌকিতে গুলি ছোড়ার পর ভারতের সেনাবাহিনী এর কার্যকর জবাব দিয়েছে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। ইন্ডিয়া টুডে ভারতীয় সেনার এক কর্মকর্তার বরাতে জানিয়েছে,

পাকিস্তানের বাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর কিছু জায়গায় ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি ছোড়ে। পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতদের সন্ধানে কাশ্মীর জুড়ে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। গতকাল কাশ্মীরের বান্দিপোরা জেলায় সেনাবাহিনীর এমন অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হয়। আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, বান্দিপোরার কুলনার বাজিপোরা এলাকায় অভিযান চালাচ্ছিল সেনারা। লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা হঠাৎই নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালাতে থাকে। পাল্টা আক্রমণ করেন সেনাসদস্যরাও। স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে সেনা-সন্ত্রসীদের বন্দুকযুদ্ধ চলে। এতে কেউ হতাহত হয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সেনা সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে জানানো হয়, ওই এলাকায় কয়েকজন সন্ত্রাসী লুকিয়ে আছে, এমন খবরে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে শুরু হয় তল্লাশি অভিযান।

এদিকে ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় নিরাপত্তা ত্রুটি থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। বৃহস্পতিবার রুদ্ধদ্বার সর্বদলীয় বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকার নিরাপত্তা ত্রুটির বিষয়টি স্বীকার করে নেয় বলে একাধিক সূত্রের বরাতে জানিয়েছে ইন্ডিয়া টুডে। বৈঠকে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা বিরোধী দলের নেতাদের উদ্দেশে বলেন যদি কিছুই ভুল না হয়, তাহলে আমরা এখানে বসেছি কেন? কোথাও না কোথাও ত্রুটি হয়েছেই, আর সেটাই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। কাশ্মীরের পেহেলগামে মঙ্গলবার এক বর্বর জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহতের পর পরিস্থিতি সম্বন্ধে বিরোধী দলগুলোর নেতাদের অবহিত করতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বৃহস্পতিবার এ সর্বদলীয় বৈঠক ডাকে। বৈঠকে বিরোধী দলগুলোর একাধিক নেতা নিরাপত্তা ব্যবস্থার দৃশ্যমান ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

জবাবে সরকারের ঊর্ধ্বতনরা বলেছেন, অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের কাছে বৈসরণ এলাকাটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার আগে স্থানীয় প্রশাসন নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে কিছু জানায়নি। সাধারণত জুনের অমরনাথ যাত্রা পর্যন্ত বৈসরণে যাতায়াতে বিধিনিষেধ থাকে। ঘটনার পর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ঘটনাস্থলে দেরিতে পৌঁছানো নিয়েও বৈঠকে উদ্বেগ জানানো হয়। এর উত্তরে সরকারি কর্মকর্তারা জানান, ঘটনাস্থলটি এমন জায়গায় যেখানে পৌঁছাতে উঁচু পাহাড়ি পথে ৪৫ মিনিট হেঁটে যেতে হয় এবং এ ধরনের জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার মতো প্রস্তুতিও ছিল না। পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে থাকা পাকিস্তানিদের শনাক্ত করে তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে সব মুখ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গতকাল দেশটির সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন অমিত শাহ। সেখানে তিনি বলেন, রাজ্যে কোনো পাকিস্তানের নাগরিক আছেন কি না, তা খতিয়ে দেখুন। যদি কেউ থেকে থাকেন, তবে তাকে শনাক্ত করুন এবং দ্রুত পাকিস্তানে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।

অন্যদিকে কাশ্মীর নিয়ে চলমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত যদি হামলা করে তাহলে এর জবাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তান। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে আলোচনাই পারে এ সংকট নিরসন করতে। খাজা আসিফ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে পূর্ণমাত্রার সংঘাতের সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্বকে চিন্তা করতে হবে। ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। ভারত সরকার পেহেলগামের হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ দৃঢ়ভাবে দাবি অস্বীকার করেছে। এ অবস্থায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জোর দিয়ে বলেছেন, ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। খাজা আসিফ সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, ভারত যা কিছু শুরু করবে, সে অনুযায়ী আমরা আমাদের প্রতিক্রিয়া পরিমাপ করব। এটি একটি পরিমাপিত প্রতিক্রিয়া হবে। যদি কোনো সর্বাত্মক আক্রমণ বা এই জাতীয় কিছু হয়, তাহলে অবশ্যই একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ হবে। যদিও সংঘাত এড়িয়ে চলমান পরিস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে জটিলতার সমাধান করা যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনা পর্যবেক্ষণ করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পাশে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, আমরা এ বিষয়ে এখন আর কোনো মন্তব্য করব না। উত্তেজনার মধ্যে চিরবৈরী দেশ দুটিকে ‘সর্বোচ্চ ধৈর্য’ ধরার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এসব বিষয় নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন বলেও জানিয়েছেন তিনি। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে গুতেরেসের এ বার্তা গণমাধ্যমকে জানান।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত