টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার অভয়ারণ্য পাঠাগারে চার শতাধিক বই লুট করার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পাঠাগারের কর্তৃপক্ষ প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে ঢাকা-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের বাঁশহাটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ২৪ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ যুব খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ আমীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘ধনবাড়ীতে নাস্তিক্যবাদের কোন জায়গা হবে না। এটাই ফাইনাল বক্তব্য আমাদের। নাস্তিক বানানোর এক কারখানার সন্ধান পেয়েছি আমরা। অতিদ্রুত আপনাদের কারখানায় তালা লাগিয়ে ধনবাড়ী ছাড়ুন।’
ওই পোস্টের পর সন্ধ্যার দিকে ২০-২৫ জন যুব খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মী পাঠাগারে হামলা চালায়। এ সময় পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ উপস্থিত ছিলেন।
পাঠাগারে হামলার পর পুলিশ উপস্থিত হলে খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীরা বইগুলো নিয়ে যায়। এ সময় তারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন আহমেদ, ড. জাফর ইকবালসহ কয়েকজন লেখকের বইগুলো লুট করে রিকশায় করে নিয়ে যায়। এরপর আবারও গোলাম রব্বানী তার ফেসবুকে পোস্ট করেন, ‘জয়বাংলা কর্মসূচী। বি:দ্র: যাদের বোঝা দরকার তারা বুঝতে পারছে।’
অভয়ারণ্য পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ জানান, হামলাকারীরা তাদের বই নিয়ে চলে যাওয়ার সময় ‘এখানে নাস্তিকদের বই থাকবে না’ বলে হুমকি দেয়। তারা আরও বলেন, ‘এখানে জাফর ইকবালের বই থাকবে না, প্রথম আলোর বই থাকবে না। এই পাঠাগার থাকবে না।’
অভয়ারণ্য পাঠাগারের সভাপতি সুপ্তি মিত্র জানান, বইগুলো নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা বইগুলো পুড়িয়ে ফেলার কথা ভাবছিল, কিন্তু পরে তাদের সিদ্ধান্ত বদলিয়ে বইগুলো নিয়ে যায়। তিনি জানান, বইগুলো বর্তমানে ইউএনও অফিসে রাখা হয়েছে এবং তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
অভিযোগের ব্যাপারে যুব খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী বলেন, পাঠাগারের সদস্যরা ইসলাম বিরোধী লেখাসমূহ প্রচার করত এবং সেখানে নারীদের অধিকার ও ইসলাম বিরোধী লেখা ছিল, এজন্য তারা বইগুলো ইউএনও অফিসে জমা দিয়েছে।
ধনবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম শহিদুল্লাহ বলেন, ‘হুজুররা পাঠাগার থেকে বইগুলো নিয়ে ইউএনও অফিসে রেখেছে। তাদের দাবি ওই লেখকরা নাস্তিকবাদী। আমরা বিষয়টি সমাধান করতে রবিবার ইউএনও কার্যালয়ে দুই পক্ষকে আসতে বলেছি।’
এ ব্যাপারে ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহীন মাহমুদ বলেন, ‘বই নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানি। এখন পর্যন্ত বইয়ের পরিমাণ সম্পর্কে কোনো তথ্য জানি না, তবে রবিবার বিষয়টি সমাধানের জন্য দুই পক্ষকে ইউএনও অফিসে আসতে বলা হয়েছে।’