বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব সশস্ত্র বাহিনী, সমস্যা ও সম্ভাবনা

আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪০ পিএম

উপক্রমণিকা

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশি, একদিকে যেমন আমাদের চোখে সমৃদ্ধিশালী ‘নীল অর্থনীতির’ অঞ্জন এঁকে দিয়েছে, তেমনি পরাশক্তিদের কাছে এর ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব, আমাদের নিরাপত্তা ঝুঁকির এক অজানা আশঙ্কায়ও ফেলে দিয়েছে। সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ সমভূমিই গঠিত হয়েছে, অসংখ্য নদ-নদীবিধৌত উর্বর পলিমাটি দিয়ে। টারশিয়ারি যুগের পাহাড়গুলো দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ১২ ভাগ ভূমি, একদিকে প্রাকৃতিক বেষ্টনী গড়ে তুলেছে। অবশিষ্ট ৮ ভাগ ভূমি গঠিত হয়েছে, ২৫০০০ বছর আগের প্লাইস্টোসিন কালের সোপান দ্বারা।

বৈচিত্র্যময় এই ভূতাত্ত্বিক গঠন, সমৃদ্ধ খনিজ, মৎস্য, প্রকৃতিপদত্ত উর্বরতা এবং নানা ধরনের ফলদ এবং ঔষধি গাছের প্রাচুর্য, বাংলাদেশকে সেই প্রাচীনকাল থেকেই, বহির্বিশ্বের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছিল। অতীতে আরব, চৈনিক বণিকদের আগমন যেমন আমাদের এক সম্পদশালী অতীতের কথা মনে করিয়ে দেয়, তেমনি মগ বা পর্তুগিজদের আক্রমণ একই সঙ্গে, এক রক্তাক্ত ইতিহাসের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে অদম্য সাহস, নিখাদ দেশপ্রেম এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে জ¦লে উঠার ইতিহাস আমাদের অতি প্রাচীন।

১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ, কিংবা ৫২-এর ভাষা আন্দোলন যেমন লড়াকু ইতিহাসের এক প্রামাণ্য দলিল, তেমনি সাম্প্রতিক ইতিহাস হচ্ছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে, জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা নিষ্ঠুর স্বৈরাচার বিতাড়নের, আরেক মহাকাব্য রচনার। তবে ইতিহাসের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় ইতিপূর্বে আমাদের কখনো এমন, জটিল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়নি, যা এখন করতে হচ্ছে। ফলে বর্তমানে আমাদের বুদ্ধিদীপ্ত রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সামরিক পদক্ষেপই হতে পারে, নিরাপদ ভবিষ্যতের একমাত্র রক্ষাবকচ।

বহুবিধ চ্যালেঞ্জগুলো

বর্তমানে বাংলাদেশ যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করছে, তাকে মোটা দাগে দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে ক. আন্তর্জাতিক এবং খ. অভ্যন্তরীণ।

একটি দেশের পররাষ্ট্রনীতির ওপর ভিত্তি করে রচিত হয় তার দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক সম্পর্ক। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি দেশ তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই, পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন এবং পরিচালনা করে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পারদ ওঠানামা করে দেশগুলোর পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে।

ব্যতিক্রম বিগত প্রায় দেড় দশকব্যাপী সময়কাল। এ সময়ে বাংলাদেশ, শুধু ভারত ছাড়া প্রায় সবার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যদিও ২০১৬ সনের অন্তিমলগ্নে এসে, আওয়ামী সরকার চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। কিন্তু অতিরিক্ত ভারতমুখীনতার কারণে, ক্ষমতা দখলের শেষ পর্যায়ে এসে সেই সম্পর্কেও বড় ধরনের ফাটল ধরে। কাজেই বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রায় নিঃসঙ্গ ছিল বলা চলে। বর্তমান সরকার সেই পরিস্থিতি বদলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে, যেখানে তারা বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।

আইপিএস : প্রথমেই বলা যেতে পারে, ইন্দোপ্যাসিফিক কৌশল বা আইপিএস নিয়ে বাংলাদেশের দোদুল্যমানতার কথা। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক এবং সামরিক উত্থান, আমেরিকাকে ভাবিয়ে তুলে। বারাক ওবামার শাসনামালে ২০০৯-১০-এর দিকে এডেন সাগরে চীনের জলদস্যুবিরোধী অভিযান, আমেরিকাকে তার ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল পুনর্বিন্যাস করতে বাধ্য করে। আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল প্রণেতারা ইন্দো প্যাসিফিক বলতে, আমেরিকার পশ্চিম তীর থেকে ভারতের পশ্চিম তীরবর্তী এলাকার মধ্যভাগে অবস্থিত, সমুদ্রসীমাকে  বোঝায়। এই অঞ্চল বৈশ্বিক জিডিপি বা মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ উৎপাদন করে এবং প্রায় ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যবসা-বাণিজ্য এই পথে সংঘটিত হয়। এই অঞ্চল বিশ্বের জলভাগের প্রায় ৬৫ শতাংশ এবং ভূমির ২৫ শতাংশ অংশের ওপর বিস্তৃত। এই বিশাল সম্ভাবনাময় এলাকার ওপর চীন এককভাবে প্রভাব বিস্তার করলে, আমেরিকার প্রাধান্য খর্ব হবে। তাই ২০২১ সালে, মূলত চীনকে একঘরে করতে আমেরিকা বহুল চর্চিত ইন্দোপ্যাসিফিক অঞ্চল ঘিরে, ইন্দোপ্যাসিফিক কৌশল সূচনা করে এবং বাংলাদেশকে এই কৌশলের অংশ হতে আহ্বান জানায়। এই উদ্দেশ্যে, আইপিএস গঠনের আগেই ২০২০ সালে আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী মন্ত্রী স্টিফেন ই বেইগুন, বাংলাদেশকে আইপিএসের সদস্য হওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অনুরোধ পৌঁছে দেন। একই বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশকে কোয়াডে যোগ দিতে বলা হয়। বাংলাদেশ দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে কোনোটাতেই যোগ না দিয়ে, বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। ইন্দো প্যাসিফিক কৌশলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুপ্রতিম বেশ কিছু দেশ যেমন ইউ কে, অস্ট্রেলিয়া, ইইউ, ভারত এবং জাপান যোগ দিয়েছে। কিন্তু কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার হচ্ছে, একমাত্র অস্ট্রেলিয়া ছাড়া কেউ চীনকে দমনের জন্য, আইপিএসের সামরিক ব্যবহারের ব্যাপারে উৎসাহ দেখায়নি। অবশ্য পরবর্তীকালে ইন্দোপ্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক (আইপিইএফ) ঘোষণার মাধ্যমে, এই অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক আকাক্সক্ষাকেও মূল্যায়ন করা হয়েছে। সব দেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৬০ বিলিয়ন ডলারের ‘বিল্ড এক্টের’ মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জাপান ‘গুণগত মানসম্পন্ন অবকাঠামো’র জন্য ২০০ বিলিয়ন ডলার প্রাথমিক বিনিয়োগের মাধ্যমে, চীনের ‘বিআরআই’ থেকে বিভিন্ন দেশকে মুখ ফিরিয়ে নিতে উৎসাহ জোগাবে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন। যদিও চীনের প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের পরিকল্পিত বিআরআই প্রকল্পে ইতিমধ্যে, ১.১৭৫ ট্রিলিয়ন বিনিয়োগের বিপরীতে, উপরোক্ত উদ্যোগগুলোতে বিনিয়োগ এখনো অনুল্লেখযোগ্য। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলো, এবং ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া আইপিএসের কৌশলগত ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর করেছে, পক্ষান্তরে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ১৫ পয়েন্ট ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুকের মাধ্যমে, নিজস্ব স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের এই ভারসাম্যপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক কৌশল এখন পর্যন্ত বেশ কার্যকর বলেই প্রতিপন্ন হচ্ছে।

বিআরআই (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ)

বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন নিয়ে কিছুদিন পূর্বেও যেখানে সারা বিশ্ব উচ্চকিত ছিল, শেখ হাসিনার পতনের পর দেখা যাচ্ছে সব ছিল শুভঙ্করের ফাঁকি। উন্নয়নের ফাঁকা বুলি কপচিয়ে শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে, আমাদের একটা আকণ্ঠ ঋণগ্রস্ত অর্থনীতি উপহার দিয়েছে। পদ্মা ব্রিজ তৈরি করতে গিয়ে দুর্নীতির যে কালিমা বাংলাদেশের ললাটলিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তার পেছনে কোনো দেশপ্রেম ছিল না। ছিল দুর্নীতির উদগ্র বাসনা এবং বিশ্বব্যাংক তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি, এক ধরনের অবজ্ঞা প্রকাশ করা। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা ব্রিজে অর্থায়ন বন্ধ করে দিলে, শেখ হাসিনা নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশের সব সম্পদ একত্রিত করে পদ্মা ব্রিজ প্রকল্পে বিনিয়োগ করেন। দশ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ত্রিশ হাজার কোটি টাকায়। চায়না মেজর ব্রিজের কারিগরি সহায়তায় পদ্মা ব্রিজ শেষ করার আগেই বৈদেশিক ঋণের জন্য হন্যে হয়ে থাকা হাসিনা সরকার, বিআরআইর অধীন প্রকল্পে ঋণগ্রহণ করে। ২০১৬ সালে চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরে, চীন বিআরআইয়ের অধীনে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার ঋণদানের অঙ্গীকার করে। এর মধ্যে মাত্র ৭ বিলিয়ন ডলার ছাড় হলেও, বিভিন্ন কারণে অবশিষ্ট ঋণ প্রদান বিলম্বিত হচ্ছে। তবে আগ্রহোদ্দীপক ব্যাপার হচ্ছে যে, সরকারি-বেসরকারি ঋণ মিলে চীনের বাংলাদেশে মোট বিনিয়োগ প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলার।

সরকারি ঋণ থমকে যাওয়ার নেপথ্যের মূল কারিগর আবার ভারত। প্রাথমিক অবস্থায় চীনের অর্থায়নে বিআরআই প্রকল্পের আওতায় চীন-মিয়ানমার-বাংলাদেশ-ভারত (বিএমইসি) অর্থনৈতিক করিডর যা, চীনের কুনমিং থেকে ভারতের কলকাতাকে সংযুক্ত করার প্রস্তাব ছিল। ভারত হঠাৎ এই প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায় এবং বাংলাদেশকে, বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিইএন) অর্থনৈতিক করিডরে সংযুক্ত হতে প্রস্তাব দেয়। অন্যদিকে চীন, বিআরআইয়ের অধীন নির্মিত চীন-মায়ানমার (সিএমইসি) অর্থনৈতিক করিডরের মানদালা থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম পর্যন্ত, সংযুক্ত করার প্রস্তাব দিলেও, মিয়ানমার জান্তা সরকারের সঙ্গে আরাকান আর্মির চলমান যুদ্ধের কারণে প্রস্তাবটি আলোর মুখ দেখেনি।

চীনের অর্থায়ন নিয়ে ‘ঋণের ফাঁদ’ নামক এক বহুল চর্চিত প্রচারণা থাকলেও এর সপক্ষে যথেষ্ট যুক্তি নেই। আগামী বছর বাংলাদেশের এলডিসিতে উত্তরণ ঘটলে আন্তর্জাতিক ঋণ এবং অনুদান সংগ্রহ কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক এই মর্মে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, এলডিসিতে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের জিডিপি গ্রোথ ৬-৮ শতাংশ প্রয়োজন। এই ম্যাজিক ফিগার অর্জন করতে বাংলাদেশকে অবকাঠামো খাতে আরও ৩২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। চীন ছাড়া এত বড় বিনিয়োগ আর কারও পক্ষে করা সম্ভব না। বাংলাদেশে প্রায় ৬৭০টি চীনা কোম্পানি শুধু কাজই করছে না, এই কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ২১টি সেতু এবং ২৭টি পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে। কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ প্রায় ৯০ শতাংশ। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর যুদ্ধাস্ত্র ক্রয়, প্রশিক্ষণ এবং দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর ভেতর চার দশকের নিবিড় যোগাযোগ, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক উভয় শক্তি এবং পরাশক্তির জন্য অস্বস্তিকর। এমতাবস্থায়, একদিকে চীনের কাছ থেকে অর্থনৈতিক এবং সামরিক সহায়তা গ্রহণ এবং অন্যদিকে বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখা এক জটিল পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের এই পরস্পরবিরোধী অবস্থানকে যুক্তিযুক্তভাবে উত্থাপন করার ওপরই, পররাষ্ট্রনীতির কৌশলগত সাফল্য নির্ভর করবে।

রোহিঙ্গা সমস্যা

রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য এক স্থায়ী দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক জাতিগোষ্ঠী এই রোহিঙ্গারা। গত ৪০ বছরে তারা অন্তত তিনবার, জাতিগত দাঙ্গার শিকার হয়ে সম্পূর্ণ বাস্তুচ্যুত হয়ে, বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। তার মধ্যে ১৯৭৮ সালের ‘ড্রাগন কিং অপারেশন’-এ বাস্তুচ্যুত ২০০০০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। জিয়াউর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে পরিচালিত বাংলাদেশ তখন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং নিজস্ব সামরিক শক্তির যুগপৎ প্রদর্শনীর মাধ্যমে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সমর্থ হয়। ১৯৯১-৯২ সালে অনুপ্রবেশ ঘটে ২৫০০০০ রোহিঙ্গার। ‘ক্লিন অ্যান্ড বিউটিফুল নেশন’ ছদ্মনামে পরিচালিত এই জাতিগত নির্মূলকরণ অভিযানে বিতারিত রোহিঙ্গাদের, খালেদা জিয়া সরকারের দূরদর্শিতায় সম্পূর্ণ ফেরত পাঠানো সম্ভব হলেও, ২০১৭-এর আগস্ট থেকে অদ্যাবধি ১৩৫০০০০ রোহিঙ্গা এই মুহূর্তে বাংলাদেশে বসবাস করছে। যাদের আশ্রয় দিয়ে পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তিতে নোবেল পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকায়, এদের প্রত্যর্পণে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করার কারণে বিষয়টি এখন ঝুলে গেছে।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার নিজস্ব নাগরিক বলে স্বীকার করে না। ১৯৪৮ সালে বার্মার স্বাধীনতার পর যদিও স্বল্পসময়ের জন্য তারা, এমনকি সংসদ সদস্য পর্যন্ত নির্বাচিত হয়েছিল, কিন্তু ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইনের ক্যুর মাধ্যমে গঠিত সরকার, বারমান সংস্কৃতি এবং বৌদ্ধ ধর্মকে বার্মার সমগোত্রীয় জাতিগোষ্ঠীর একমাত্র পরিচয় হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস নিলে, রোহিঙ্গারা অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। ১৯৮২ সালে তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার মাধ্যেম সব অধিকার বিলুপ্ত করা হয়। এই হতভাগ্য মানুষগুলোকে লালন পালন করা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ জাতিসংঘসহ বাইরের কিছু অনুদান পাওয়া সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের পেছনে বাংলাদেশকে প্রতি বছর ১.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হয়।

রোহিঙ্গাদের সম্মানজনকভাবে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য, চীন-ভারত এবং আমেরিকার হস্তক্ষেপ হতো সবচেয়ে কার্যকর। কিন্তু বেশকিছু বাস্তবতার কারণে চীন রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে আদাজল খেয়ে লাগতে পারছে না। মিয়ানমারে চীনের বিনিয়োগ প্রায় ৯৮ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে অনেকগুলোর কাজ শেষ হলেও, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রায় ২০টি প্রকল্প আছে, যার সাতটি সম্পূর্ণ ‘এথনিক আর্মড অরগানাইজেশনের’ অঞ্চলে পড়েছে। রাখাইনের কিয়াকফিউ গভীর সমুদ্রবন্দর থেকে চায়নার কুনমিংয়ের সঙ্গে সংযুক্ত তেল এবং গ্যাস পাইপলাইন দুটি, চায়নার কৌশলগত সম্পদ। এ ছাড়া কিয়াকফিউ বন্দর ব্যবহার করে চীন, মালাক্কা প্রণালিতে ইউএস মিলিটারির কড়া নজরদারি এড়িয়ে, ভারত মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার, ভূ-রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে পারে। একইভাবে, জান্তা এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে চলমান যুদ্ধে উভয়ের কাছে বিপুল অঙ্কের অস্ত্র বিক্রির সুযোগ চীন পেয়েছে। এ রকম বহুবিধ বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত সম্পর্কের স্বার্থে চীন নীরব আছে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করে।

ভারতও নিজ স্বার্থে নীরব থাকছে। কারণ সে মিয়ানমারে প্রায় ৭৪২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যার মধ্যে সিত্তে গভীর সমুদ্রবন্দরে তার বিনিয়োগ ৫০০ বিলিয়ন ডলার। চুপ থাকার এই নীতি অনুসরণ করে সে একই সঙ্গে জান্তা এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সমর্থন অর্জন করতে চায়। আমেরিকাও এই যাত্রায় অর্থনৈতিক সাহায্য করলেও, কৌশলগত কারণে সরাসরি মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সংঘাতে যেতে চায় না। কারণ তাতে করে তার সামনে অস্ত্র বিক্রি বা প্রভাব বিস্তারের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তা নস্যাৎ হয়ে যাবে। এই অবস্থায় আরাকান আর্মি বিভিন্ন সময়ে দেওয়া হুমকির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, যদি কোনো মিস অ্যাডভেঞ্চার করতে চায়, তার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের প্রায় এক-দশমাংশ প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ অঞ্চল। দীর্ঘ ২৪ বছর বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন শান্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে, শ্বাপদসংকুল পরিবেশে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, এই অপার সম্ভাবনাময় অঞ্চলটির সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাত শতাধিক বীর সদস্য এই যুদ্ধে শহীদ হন, আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন অনেকে। কিন্তু শাশ্বত দেশপ্রেমে উজ্জীবিত সেনাসদস্যরা থেমে থাকেনি। তাদের দুঃসাহসিক অভিযানে শান্তিবাহিনী যখন কোণঠাসা, নিয়মিত অস্ত্র সমর্পণের মাধ্যমে পরাজয়ের প্রহর গুনছে, তখন কার নির্দেশে শেখ হাসিনা অস্ত্র সমর্পণের নাটক করেছিল, তা আজও রহস্যাবৃত। কিন্তু এর সঙ্গে নোবেলপ্রাপ্তির যোগ থাকার গুজবটি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অথচ ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষর হওয়া এই চুক্তি ঘিরে, এখনো পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত হয়ে আছে। চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর ২৩৯টি সেনা ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাহাড় ছাত্র জনসংহতি সমিতি ভেঙ্গে তৈরি হয় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। আবার চুক্তিটিতে চাকমা মারমা ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা হলেও বাকি ১১টি গোষ্ঠী রয়ে যায় অবহেলিত। অন্যদিকে উপরোক্ত এই তিন নৃগোষ্ঠীও জড়িয়ে পড়ে অন্তর্কোন্দলে। একপর্যায়ে অন্যান্য ছোট ছোট নৃগোষ্ঠীও নিজেদের দাবিতে উচ্চকিত হয়ে ওঠে। 

প্রথমে ভূমি অধিকারের কমন প্ল্যাটফর্ম থেকে তাদের দাবি বিস্তৃত হতে থাকে, সব সেনানিবাস এবং সেনাসদস্য প্রত্যাহার থেকে শুরু করে, আনুপাতিক হারে চাকরি এবং অন্যান্য সুবিধাদি প্রদান পর্যন্ত। নাথান বোম নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা এক তরুণ জো নৃগোষ্ঠীর ছয়টি উপজাতিকে নিয়ে গড়ে তুলে একটি এনজিও। পরবর্তীকালে সে গঠন করে রাজনৈতিক সংগঠন, কুকি ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এবং রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণ করতে ২০১৮-এর নির্বাচনে অংশ নেয়। কিন্তু আনুমানিক মাত্র দশ হাজার সমর্থকের ভোটে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া সম্ভব না জেনে, সে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর উত্থান ঘটে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সশস্ত্র সংগঠনের।

২০২২ সালে গঠিত এই বাহিনী এই পর্যন্ত বেশকিছু দুঃসাহসিক অভিযানে অংশ নিয়েছে। নাথান বোম রোয়াংছড়ি ব্যাংক লুটের পর থেকে মিজোরামে লুকিয়ে আছে। এদিকে তাদের বাড়বাড়ন্ত আকাক্সক্ষা থেকে জন্ম নিয়েছে অলিক স্বপ্ন। বাংলাদেশের বোমরা ভারতের মিজোরামে কুকি এবং মিয়ানমারে চিন নামে পরিচিত। বাংলাদেশের রুমা, আলিকদম, থানচি এমন নয়টি উপজেলা, মিজোরাম এবং মিয়ানমারের কাচিন প্রদেশ নিয়ে গঠিত হবে, ভবিষ্যতের গ্রেটার কুকি ল্যান্ড এটাই এখন তাদের স্বপ্ন । আর এভাবেই পার্বত্য চট্টগ্রাম আবার অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা করছে অস্ত্র সরবরাহকারী বৃহৎ শক্তিগুলো। নাথান বোমকে আশ্রয় দিয়ে ভারত আবারও, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিছিন্ন করার অপচেষ্টার সঙ্গে লিপ্ত হয়েছে। এই পরিকল্পনা আমাদের অকুতোভয় অফিসার এবং সৈনিকরা সফলভাবে নস্যাৎ করে দেবে বলে আমাদের স্থির বিশ্বাস আছে।

করণীয়

বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর কোনো বিকল্প নেই। সামরিক খাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ ব্যতিরেকে দেশের সীমানা সুরক্ষিত রাখা সম্ভব নয়। কাজেই কূটনৈতিক আলোচনার পাশাপাশি রণপ্রস্তুতি, যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়ক শক্তি হিসেবে কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বে, বিশেষ করে আমেরিকার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, যাদের শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি বিশ্বব্যাপী তাকে অর্থনৈতিকভাবে নিরংকুশ প্রভাব বিস্তারে সহায়তা করেছে। আমাদের প্রায় শত্রুবেষ্টিত ভূখ-ে প্রাপ্ত অফুরন্ত সম্পদকে হেফাজত করার জন্য ন্যূনতম রক্ষণাত্মক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকা একান্ত প্রয়োজন।

কূটনৈতিক দক্ষতা : আমাদের বিগত ১৬ বছর একটি দেশের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীলতার কারণে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে এবং পশ্চিমা বিশ্বে দরকষাকষির ক্ষেত্রে, আমরা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি। আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ প্রকল্প, ভারতকে প্রদত্ত রেল অথবা রেড করিডর, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে নিজ দেশের চেয়ে ভারতীয় জাহাজগুলোকে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার মতো অসংখ্য বিষয় ল, আমাদের কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করে। কাজেই কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এক দল দেশপ্রমিক, দৃঢ়, ঋজু ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে হবে।

অর্থনৈতিক দুর্বলতা : শক্তিশালী সামরিক শক্তির পাশাপাশি শক্তিশালী অর্থনীতি হচ্ছে, যেকোনো দেশের বৈশ্বিক অবস্থানের পেছনে মূল ইন্ডিকেটর। বাংলাদেশের মতো ছোট এবং ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে অবস্থিত একটি দেশ, উদীয়মান অর্থনীতির চটকদার মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে, সাময়িক সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক সমীহ আদায় করে নিয়েছিল। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের বানোয়াট অর্থনৈতিক ডাটাগুলো, বাস্তবে রূপ দেওয়ার সক্ষমতা আমাদের আছে। প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জি হুজুরদের সরিয়ে দিয়ে, প্রকৃত দেশপ্রেমিক এবং যোগ্য লোকদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রতিস্থাপন করা।

বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ গঠন

পতিত স্বৈরাচার সরকার শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। জিপিএ-৫-এর ঘূর্ণিপাকে হারিয়ে গেছে আমাদের অমিত সম্ভাবনা। পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে যুগোপযোগী করার মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মগুলোকে ‘গ্লোবাল সিটিজেন’ হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে, আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। আমরা জঙ্গি, উগ্রবাদী এহেন অনেক উদ্দেশ্যপূর্ণ প্রচারণা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মোকাবিলার মাধ্যমে, নিজেদের গ্রহণযোগ্য ইমেজ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হব।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি দেশের ইমেজের ওপর, সেই দেশটির সামরিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকটাই নির্ভর করে। এর সঙ্গে কূটনৈতিক পারঙ্গমতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দায়বদ্ধতা যোগ হলে, একটি দেশ এবং সমাজ দ্রুত এগিয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ তাইওয়ান বা সিঙ্গাপুরের কথা বলা যায়। বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তির সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলে, অনেক শক্তিশালী প্রতিবেশীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, তারা শনৈঃশনৈ উন্নতি করছে। উত্তর কোরিয়ার মতো অস্থিতিশীল পরমাণু শক্তির হাতের নাগালে থেকেও, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দেশে পরিণত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবাই সামরিক দিক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে ‘আয়রনক্ল্যাড’ সম্পর্ক গড়ে তুলে, প্রায় অর্ধশতাব্দী জুড়ে তার সুফল ভোগ করছে।

বাংলাদেশ এ মুহূর্তে এমন এক ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে, উন্নতির চরম শিখরে ওঠার পথ যেমন দৃশ্যমান, ঠিক এর বিপরীতে তেমনি, আঞ্চলিক শক্তিদ্বয়ের পরস্পরবিরোধী আচরণের জেরে, অবনতির ঘূর্ণাবর্তের পাকে পরে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবলভাবে উপস্থিত। আমাদের সঠিক পথ বেছে নেওয়ার সময় সমাগত প্রায়। বর্তমানে আমাদের শক্তির ভরকেন্দ্রে আছেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার বিশাল ব্যক্তি ইমেজ। আমাদের রয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সুশিক্ষিত এবং প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী। নবতর সংযোজন হয়েছে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের অমিততেজা তরুণ প্রজন্ম, যাদের আকাশ সমান দেশপ্রেম আমাদের নিঃশঙ্কচিত্তে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগায়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অগুনতি, অসংখ্য দেশপ্রেমিক জনতা, ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের আগে-পরে যাদের মেধা, মনন, দেশপ্রেম বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থানকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এত সব ইতিবাচকতার একমাত্র যোগফল হতে পারে সব জরা, ব্যাধি, ব্যর্থতা পেছনে ফেলে সামনের সময়টায় ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ প্রমাণ করার।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও চেয়ারম্যান, ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (এফএসডিএস)

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত