শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

কাশ্মীর ইস্যুতে সুর বদল করল পাকিস্তান

আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:১৩ এএম

জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলায় ২৬ জন নিহতের ঘটনায় সরগরম ভারতের রাজনীতির মাঠ। এই ঘটনার জেরে প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে একদিকে যেমন উত্তেজনা বেড়েছে, অন্যদিকে দুপক্ষের মধ্যে সামরিক সংঘাতের শঙ্কাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কাশ্মীমের নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত-পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনাও অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি উভয় দেশের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে কথার যুদ্ধ তো আছেই। সবমিলিয়ে দুই দেশের মধ্যকার চলমান এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির জেরে সম্ভাব্য হামলার শঙ্কায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এমনটাই জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ আসন্ন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। যদিও পরে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজকে দেওয়া পৃথক আরেকটি সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, তার বক্তব্য ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এদিকে, নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে আজাদ কাশ্মীরের লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি)-এর কাছে একটি ভারতীয় কোয়াডকপ্টার ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, গত সোমবার রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর কুপওয়ারা ও বারামুল্লা জেলার বিপরীত অঞ্চলগুলোতে এবং আখনুর সেক্টরে বিনা উস্কানিতে ছোট অস্ত্রের গুলিবর্ষণ করেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীও এই উসকানির তাৎক্ষণিক জবাব দেওয়ার দাবি করেছে। এ নিয়ে টানা পঞ্চম দিনের মতো নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলি করল চিরবৈরী দুই দেশের সেনারা। এর আগে, তুতমারি গালি এবং রামপুর সেক্টরের বিপরীত এলাকায় এলওসি বরাবর গত ২৬ ও ২৭ এপ্রিল রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী গোলাগুলি করেছে।

এদিকে, ভারতের যেকোনো আগ্রাসী পদক্ষেপের জবাব দিতে পাকিস্তান প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। গত সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। খাজা আসিফ বলেন, আমরা আমাদের বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করেছি। কারণ, এখন এটি (সম্ভাব্য হামলা) অত্যাসন্ন হয়ে উঠেছে। তাই এমন পরিস্থিতিতে কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আর সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পেহেলগামে হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। খাজা আসিফ বলেন, ভারত হামলা করতে পারে এমন আশঙ্কার বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে। তবে কী কারণে শিগগিরই হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেননি খাজা আসিফ। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, পাকিস্তান সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আমাদের অস্তিত্বের ওপর সরাসরি হুমকি এলে তবেই কেবল পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হবে। পরে সামা টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফ বলেন, মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা উচিত। কারণ, দ্রুতই যুদ্ধ শুরু হতে পারে। আগামী এক, দুই, তিন বা চার দিনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরিষ্কার আশঙ্কা রয়েছে।

যদিও পরে নিজের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেন, আমি বলেছিলাম পরবর্তী দুই-তিন দিন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটা বলিনি যে যুদ্ধ নিশ্চিতভাবেই শুরু হবে। তিনি আরও জানান, বার্তা সংস্থাটি ইতিমধ্যে ভুল সংশোধনের কাজ শুরু করেছে। খাজা আসিফ বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে বিপদ ঘনিয়ে আসছে। তবে এটি যে অনিবার্য, আমি তেমন কিছু বলিনি। তিনি জানান, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর মতো পাকিস্তানও কোনো বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি এড়ানোর এবং বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করার চেষ্টা করছে। তবে তিনি এও বলেছেন যে, যদি দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হয় বা যুদ্ধ চাপানো হয়, যেকোনো যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পাকিস্তান সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি)-এর কাছে একটি ভারতীয় কোয়াডকপ্টার ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন এ তথ্য জানায়। পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের দাবি, কোয়াডকপ্টারটি সীমান্তের ওপার থেকে নজরদারি চালানোর চেষ্টা করছিল। তখনই পাকিস্তানি সেনারা দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে সেটিকে গুলি করে নামিয়ে আনে। সূত্রের বরাতে ডন জানায়, কোয়াডকপ্টারটি আজাদ কাশ্মীরের ভিম্বার জেলার মানাওয়ার সেক্টরে নজরদারির চেষ্টা করছিল।

জম্মু ও কাশ্মীরের সরকার সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলটির অন্তত ৪৮টি রিসোর্ট এবং অর্ধেকের বেশি পর্যটন গন্তব্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, কাশ্মীরের শান্ত উপত্যকা ও মনোরম পর্বতের জন্য পরিচিত অন্তত ৪৮টি রিসোর্ট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পাশাপাশি বুদগামের দুধপত্রী, অনন্তনাগের ভেরিনাগের মতো বেশ কয়েকটি পর্যন্ত গন্তব্যও পর্যটকদের জন্য বন্ধ করা হয়েছে। এনডিটিভি জানিয়েছে, গত মঙ্গলবারের আগেও পেহেলগাম শহরের বাজারগুলো পর্যটকদের ভীড়ে ঠাসা ছিল, কিন্তু এখন পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। কাশ্মীরের স্থানীয় বাসিন্দাদের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস পর্যটন। কিন্তু ওই সন্ত্রাসী হামলার পর পর্যটকদের মধ্যে কাশ্মীর ছাড়ার হিড়িক পড়েছে, অনেক পর্যটক তাদের আসন্ন ভ্রমণ সূচি বাতিল করেছেন। এই পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের পর্যটন নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার মধ্যে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। স্থানীয়দের আশঙ্কা, পর্যটনের এই হঠাৎ পতন তাদের আয়ের উৎস ও জীবনযাপনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত