রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

জুমার দিনের আমল

আপডেট : ০৯ মে ২০২৫, ১২:০৫ এএম

জুমার দিন হাতের নখ কাটা, সুন্দর করে গোসল করা, পরিষ্কার ও উত্তম পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, মসজিদে আগে যাওয়া, মেসওয়াক করা সুন্নত। মসজিদে প্রবেশ করেই বসার আগে প্রথমে দুই রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’-এর নামাজ আদায় করা এবং ইমামের দিকে মুখ করে বসে মনোযোগ সহকারে ইমামের খুতবা শোনা উত্তম।

সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যি ক্ত জুমার দিন সুন্দরভাবে গোসল করবে, অতঃপর তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার করবে, তারপর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, অতঃপর নামাজ আদায় করবে এবং চুপ করে মনোযোগ সহকারে ইমামের খুতবা শুনবে, তাহলে দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়কার তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (আবু দাউদ)

জুমার দিনে ফজরের ফরজ নামাজে প্রথম রাকাতে সুরা সাজদা এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা দাহর তেলাওয়াত করা সুন্নত। রাসুল (সা.) নিয়মিত এ আমলটি করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) জুমার দিন ফজরের নামাজে প্রথম রাকাতে সুরা সাজদা এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা দাহর পাঠ করতেন। (সহিহ বুখারি) তবে কেউ যদি সুরা সাজদা ও সুরা দাহর পড়তে সক্ষম না হয়, তাহলে সে কোরআনের যেকোনো সুরা থেকে পড়বে।

জুমার দিনে দরুদ পাঠের ফজিলত অনেক। পরিভাষায় দরুদ বলতে বোঝায় রাসুল (সা.)-এর প্রতি দোয়া ও সালাম প্রেরণ করা। রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করা একটি মর্যাদাপূর্ণ আমল। দরুদ পাঠের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত অত্যধিক। রাসুল (সা.)-এর নাম উচ্চারিত হলে তার প্রতি দরুদ পাঠ করা আমাদের কর্তব্য। আর জুমার দিন রাসুল (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা মুস্তাহাব। দরুদ পাঠের মধ্যে মুমিনদের জন্য অনেক কল্যাণ, রহমত ও বরকত নিহিত রয়েছে। দরুদ পড়লে গুনাহ মাফ হয়। দরুদ পাঠ করার ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা নবীর ওপর দরুদ প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তার ওপর দরুদ পড়ো এবং তার প্রতি যথাযথভাবে সালাম প্রেরণ করো।’ (সুরা আহজাব ৫৬)

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা জুমার দিন আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের পাঠকৃত দরুদ জুমার দিন আমার কাছে ফেরেশতাদের মাধ্যমে পেশ করা হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করবে, সে কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে।’ (বায়হাকি)

গুনাহের কথা স্মরণ করে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাকে ইস্তিগফার বলা হয়। আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর কেউ যদি কোনে মন্দ কাজ করে বা নিজের প্রতি জুলুম করে, এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু হিসেবে পাবে।’ (সুরা নিসা ১১০) জুমার দিন হলো পাপ মোচনের সুবর্ণ সুযোগ। তাই এদিন বেশি বেশি ইস্তিগফার করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। জুমার দিন সুরা কাহাফ পাড়ার ফজিলত অনেক। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে, তার (ইমানের) নুর এ জুমা হতে আগামী জুমা পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (মিশকাত) অপর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে তাকে দাজ্জ ালের অনিষ্ট হতে নিরাপদ রাখা হবে। (সহিহ মুসলিম)  সর্বোপরি জুমা হলো মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই এ নামাজের প্রতি আমাদের খুব যতœবান হতে হবে। অযথা অলসতা করে কোনো মুসলমানের জন্য জুমার নামাজ ত্যাগ করা উচিত হবে না। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করার তওফিক দান করুন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত