ভিসি অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিনের স্বাক্ষরের জন্য ৩ মাস ধরে আটকে আছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) সমাজকর্ম বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা। সব ক্লাস শেষ হওয়ার পরও শুধু ভিসির একটি স্বাক্ষর না থাকায় পরীক্ষাটি সঠিক সময়ে নিতে পারেনি সমাজকর্ম বিভাগ। যদিও একাডেমিক ক্যালেন্ডারে পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ১৫ এপ্রিল নির্ধারিত ছিল। তবে প্রশাসনিক জটিলতায় তা আটকে পড়েছে। যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী সমাজকর্ম বিভাগের একটি কোর্সে পড়িয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, যিনি কোর্সটি পড়ান, সেই শিক্ষকই ওই কোর্সের প্রথম পরীক্ষক হন। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ফাইলে অধ্যাপক রব্বানীকেই প্রথম পরীক্ষক করে প্রস্তাব পাঠানো হয়।
তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিন এতে আপত্তি জানান এবং প্রো-ভিসিকে প্রথম পরীক্ষক থেকে বাদ দিতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে তিনি কোনো লিখিত নির্দেশনা না দিলেও, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যানকে মৌখিকভাবে জানান।
কিন্তু লিখিত নির্দেশনা না থাকায় বিভাগের চেয়ারম্যান বিষয়টি পরিষ্কার করতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে একটি লিখিত চিঠি পাঠান, যেখানে ফাইলের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
পরবর্তীতে প্রো-ভিসিকে প্রথম পরীক্ষক থেকে বাদ না দেওয়ায় উপাচার্য ওই ফাইলে স্বাক্ষর করেননি। এর ফলে প্রায় তিন মাস ধরে ফাইলটি উপাচার্য দপ্তরে আটকে আছে, যার কারণে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কার্যক্রমও পিছিয়ে পড়েছে।
সমাজকর্ম বিভাগের দুজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা সব ক্লাস ও সংশ্লিষ্ট বিষয় শেষ করে বসে আছে শুধু পরীক্ষা নেওয়ার অপেক্ষায়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে চেয়ে এপ্রিলের ২৯ তারিখে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। পরীক্ষা ১৫ এপ্রিল শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতার কারণে শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়তে হবে বলে জানান তারা।
সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান অসীম কুমার নন্দী জানান, আমরা যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে চিঠি দিয়েছে। আমাকে মৌখিকভাবে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল প্রো-ভিসি ক্লাস নেয় কিনা। তবে তাকে সরানোর জন্য লিখিত কোনো চিঠি পাই নি। এ বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে আমার কয়েকবার কথা হয়েছে।
সদ্য সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা একসঙ্গে তখন উপাচার্য ম্যামের কাছে কয়েকটি ফাইল পাঠিয়েছিলাম। কিছুদিন পর তিনি সেগুলো সংশোধনের জন্য ফেরত দেন, আর আমি তা সংশোধন করে পুনরায় জমা দিই। একদিন ভিসি ম্যাম আমাকে ডেকে বলেন— একটি কোর্সে প্রথম পরীক্ষক হিসেবে প্রো-ভিসি স্যারকে রাখা হয়েছে, যা নিয়ম অনুযায়ী ঠিক নয়।
তিনি বলেন, সরকার আমাদের কিছু নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছে, যার ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। আমি তখন বলি— ম্যাম, আমি বিষয়টি জানতাম না। একটু চেয়ারম্যান স্যারের সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছি। এরপর আমি চেয়ারম্যান স্যারের সঙ্গে আলোচনা করি এবং জানতে চাই এটি কি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটায় কিনা। তিনি তখন আগের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিনের উদাহরণ টেনে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। শেষে আমি যখন ভিসি ম্যামকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন— যদি কোনো বিকল্প থাকে তাহলে চেয়ারম্যানকে বলেন, প্রো-ভিসিকে পরিবর্তন করে নতুন ফাইল পাঠাতে।
এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. শূচিতা শরমিন বলেন, আমি কোনো বিষয় নিয়েই আর কথা বলতে চাই না। এ বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।