শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

জেলহাজতে বসেই ভূমিদস্যু চক্র নিয়ন্ত্রণ করেন আ. লীগ নেতার ভায়রা ভাই

আপডেট : ২৬ মে ২০২৫, ০৮:২৬ পিএম

বরিশালের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা চকবাজার রোডে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী বিউটি সিনেমা হলের জমি দখলে নিতে জাল দলিল তৈরির অভিযোগ উঠেছে একটি সংঘবদ্ধ ভূমিদস্যু চক্রের বিরুদ্ধে দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। চক্রটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল ওরফে কে কে কামাল, যিনি বর্তমানে জেলহাজতে থাকলেও তার অনুগত ক্যাডার ও আত্মীয়দের মাধ্যমে পুরো অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।  

ভুক্তভোগীরা বলছেন, আদালতের রায় তাদের পক্ষে থাকলেও প্রতিপক্ষের হুমকি, হয়রানি ও মামলা-মোকদ্দমার ভয়ে তারা পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন।

সোমবার (২৬ মে) বেলা ১২ টার দিকে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন ভুক্তভোগী সৈয়দ আশিক চৌধুরী। তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার স্ত্রী।  

তারা জানান, কে কে কামালের দায়ের করা এক মামলায় আদালতের রায় তাদের পক্ষে আসে এবং সে মোতাবেক জমিতে ভবন সংস্কারের কাজ শুরু করেন। কিন্তু কে কে কামালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবুল হাসান কুদ্দুস, কালাম মল্লিক ও রাকিব মল্লিকসহ ছাত্রলীগ নেতা মিরাজুল ইসলামসহ অন্তত ১৫–২০ জন লোক এসে তাদের কাজে বাধা দেয় এবং সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে।

পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন ২০ মে রাকিব মল্লিক বরিশাল মেট্রোপলিটন আদালতে একটি পাল্টা মামলা করেন এবং আশিক চৌধুরী ও তার পরিবারকে আসামি করা হয়। আদালত সেই মামলা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে কোতোয়ালী মডেল থানাকে নির্দেশ দিয়েছে। 

ভূমি দখলের এই ঘটনায় যে রাজনীতির শক্ত হাত রয়েছে, তার প্রমাণ কে কে কামালের পরিচয়েই পাওয়া যায়। তিনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই এবং সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর শ্যালক। ভুক্তভোগীদের দাবি, আ.লীগের শাসনামলে তিনি প্রভাব খাটিয়ে একাধিক জমি নিয়ে বিরোধে জড়িয়েছেন এবং বরিশালে একক আধিপত্য কায়েম করেছেন। তিনি বর্তমানে একাধিক মামলায় জেল হাজতে আছেন।

আশিক চৌধুরী বলেন, বিউটি হলের জমির উপর একই নম্বরের (৬৭২০) অন্তত তিনটি দলিল রয়েছে, যার সবক’টি খুলনার ইসলামকাঠি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বলে দাবি করা হলেও সেখানকার কোনো রেকর্ডে তা নেই। এমনকি চলতি বছরের ২৩ মার্চ বরিশাল সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকেও একটি নতুন দলিল (নং ৩২৯৮) সৃষ্টি করা হয়, যেখানে বলা হয় যে আশিক চৌধুরী ও তার বোন ওই জমি কালাম মল্লিকের স্ত্রী ও অন্যদের কাছে বিক্রি করেছেন ৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা যা সম্পূর্ণ জাল বলে দাবি করেন আশিক। 

ভূমিদস্যু চক্রের অপতৎপরতা থামাতে ইতোমধ্যে আশিক চৌধুরী দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গত ১৮ মে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে কে কে কামালসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।

ভুক্তভোগী পরিবারটি এখন আইন ও প্রশাসনের আশায় দিন কাটাচ্ছে। তাদের আবেদন- এই প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্রের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত হোক এবং আদালতের রায় বাস্তবায়নে প্রশাসন যেন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত