পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রামের কৃষক সোহাগ মৃধা ছয় বছর ধরে নিজের সন্তানের মতো যত্ন করে লালন-পালন করেছেন একটি ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়। ভালোবেসে নাম দিয়েছেন ‘কালো মানিক’। বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় সেই কালো মানিককে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কোরবানির উপহার হিসেবে দিতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
বেগম জিয়াকে ষাঁড় উপহার দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোহাগ মৃধার বাড়িতে ভিড় করেন শত শত উৎসুক মানুষ। আয়োজনটিও ছিল জাঁকজমকপূর্ণ। প্রায় ৫০ জন কর্মী সাদা গেঞ্জি পরেছেন, যাতে বিএনপির লোগো ছাপা। সঙ্গে ছিল ব্যান্ডদল, যারা ঢাকের বাদ্য, বাঁশি ও কাঁশার শব্দে এলাকা মুখর করে তোলে। কয়েকটি মিনি ট্রাক সাজানো হয়েছে তাজা ধানের শীষ দিয়ে, ট্রাকের সামনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা ছাড়াও ছিল ঈদ উপহারসংবলিত বিএনপির ব্যানার। ট্রাকের ভেতরে বাজছিল ঢাক, আর চলছিল নাচ। এমনই আনন্দ-উৎসবমুখর পরিবেশে বেগম জিয়াকে উপহার দিতে ষাঁড়টি নিয়ে ঢাকার পথে রওনা দেন সোহাগ ও তাঁর সঙ্গীরা।
সোহাগ মৃধা জানান, ছয় বছর আগে স্থানীয় চৈতা বাজার থেকে একটি গাভী কেনেন তিনি। গাভীটি কয়েক দিনের মধ্যে একটি বাছুরের জন্ম দেয়। বাছুরটি কিছুটা বড় হলে তিনি গাভীটি বিক্রি করে দেন এবং বাছুরটিকে নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন শুরু করেন। দীর্ঘ ছয় বছরের যত্নে ষাঁড়টির ওজন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪০০ কেজিতে। কালো হলেও আকর্ষণীয় হওয়ায় ভালোবেসে নাম রাখেন ‘কালো মানিক’। ষাঁড়টি বেগম জিয়াকে উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সে মোতাবেক সকালে ঢাকার ফিরোজায় বিএনপি নেত্রীর বাসভবনের উদ্দেশে যাত্রা করেন। তবে বেগম জিয়া উপহারটি গ্রহণ করবেন কি না, সে বিষয়ে এখনও অনিশ্চিত তিনি।
ষাঁড় উপহার দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই শতাধিক মানুষ ভিড় করেন সোহাগের বাড়িতে। দরিদ্র হয়েও বিএনপি নেত্রীকে উপহার দেওয়ার মতো এই বিরল ভালোবাসা ও ত্যাগের জন্য সোহাগের প্রশংসা করছেন অনেকে।
পার্শ্ববর্তী শ্রীনগর গ্রামের রবিউল হোসেন বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে গরু উপহার হিসেবে নিয়ে যাওয়ার খবর শুনে এখানে এসেছি। সোহাগ মৃধার আয়োজন দেখে মনটা ভরে গেছে।’
সুবিদখালী গ্রামের আতিক মিয়া বলেন, ‘সোহাগ মৃধা দরিদ্র শ্রেণির একজন কৃষক। আসলে বড় মন না থাকলে এভাবে বড় ত্যাগ সম্ভব নয়। ঢাকঢোল আর নাচ-গানের মধ্য দিয়ে ষাঁড়টি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আশা করি বেগম জিয়া এটি গ্রহণ করবেন।’
সোহাগ মৃধা বলেন, ‘২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ নেত্রীকে এক কৃষক গরু উপহার দিয়েছিলেন। তখনই প্রতিজ্ঞা করি, আমার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও আমি আমার ষাঁড়টি উপহার দেব। ষাঁড়টিকে সন্তানের মতো লালন করেছি। সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাইয়ে বড় করেছি। আমার নেত্রীর উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পেরে আমি শুকরিয়া আদায় করছি। তিনি গ্রহণ করুন বা না করুন, আমি ষাঁড়টি তাঁর বাসভবন পর্যন্ত নিয়েই যাব।’
আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বলেন, ‘সোহাগ মৃধা গরিব হয়েও পণ করেছে এই ষাঁড়টি বেগম জিয়াকে উপহার দেবে। আমরা ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছি।’
মির্জাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলাউদ্দিন মাসুদ বলেন, ‘সবুজ ঘাস ও খড় কুটো খাইয়ে ষাঁড়টিকে তৈরি করেছেন সোহাগ মৃধা। এ কালো মানিক এই জেলার সবচেয়ে বড় গরু। লালন-পালনের পুরো সময় তাকে আমরা সহযোগিতা করেছি।’