রোববার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

সেরুয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়

প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছর পর প্রথম পুনর্মিলনী

আপডেট : ১০ জুন ২০২৫, ১১:৩৩ এএম

১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠার পর বগুড়ার শেরপুর উপজেলার স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ সেরুয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান হয়েছে। সোমবার (৯ জুন) সকালে জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের পর শুরু হয়ে দিনব্যাপী চলে এ আয়োজন। কয়েক দশক পর সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, আড্ডা, আলাপচারিতা, কুশল বিনিময়, স্মৃতিচারণায় মেতে ওঠেন বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধনে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে স্মৃতিকাতরময়।

বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, বগুড়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা, শেরপুর উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আলহাজ শফিকুল আলম তোতা স্মৃতিরোমন্থন করতে গিয়ে বলেন, শুরুতে এক হিন্দু ভদ্রলোকের দেওয়া ১০ শতক জমিতে এই বিদ্যালয়টি আমরা শুরু করি। ওই সময় হরতাল চলায় আমি মোটরসাইকেলে করে রাজশাহী গিয়ে আবেদন দিয়ে আসি। বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে এটির যাত্রা শুরু হয়। এরপর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একটি বিল্ডিং অনুমোদন দেন।  ওই সময় বগুড়া-৫  (শেরপুর-ধুনট) নির্বাচনী এলাকার তৎকালীন এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ একটি স্কুল উদ্বোধনের জন্য ধুনটে যাবেন। আমাকে তার সফরসঙ্গী করলেন তখনই আমি তাকে বললাম অন্য এলাকায় স্কুল উদ্বোধনের জন্য আমি আপনার সাথে যাচ্ছি অথচ, আমার এলাকাতেই একটি হাইস্কুল নেই। তখন তিনি আমাকে আশ্বাস দিলেন এবং এলাকার বিএ পাশ করাদের তালিকা চাইলেন। সে তালিকার সাত্তার ভাইকে (শেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মৃত) বলামাত্র তিনিইও স্কুল হওয়ার পক্ষে মত দিলেন। এভাবে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ ভাইয়ের সহায়তায় স্কুলটির যাত্রা শুরু হয়। আমার বয়স শেষ প্রায় মৃত্যুপথযাত্রী, আমি চাই আমাদের অবর্তমানে তোমরা সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যালয়টিকে এগিয়ে নিবে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে শেরুয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষাবিদ নূরুল ইসলাম জিন্নাহ। তিনি বলেন, তিনি যখন এ বিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন তিনি টগবগে যুবক। তখন এটি ছিল বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়। তখন থেকেই তিনি শিক্ষার্থীদের মানুষের মত মানুষ হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।

সাবেক শিক্ষার্থী (৪০তম বিসিএস) ক্যাডার কৃষি মন্ত্রণালয় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউট কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম রানা, পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এসে বন্ধুদের খোঁজ করছিলেন। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এখানে পড়াশোনা করেছেন। চাকরির কারণে সহপাঠীদের সাথে আর দেখা হয়না। আজ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন পুরনো বন্ধুদের খোঁজে। অনুষ্ঠানে এসে খুব আনন্দ পেয়েছেন বলে জানান তিনি।

এই বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে স্টার মার্ক পাওয়া গোল্ড মেডেলিস্ট সরকারি কর্মকর্তা সাবেক ছাত্রনেতা নজরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের চারপাশে আখ ও বাঙ্গিখেত ছিল। ছাত্রাবস্থায় অনেক আখ ও বাঙ্গি খেয়েছেন। পরে প্রধান শিক্ষক ও জমির মালিকের কাছে অপরাধের জন্য ক্ষমাও চেয়েছে। এমন আরো সহস্র স্মৃতির রোমন্থন করেন অনেকে।

সাবেক শিক্ষার্থী সিলেটের মইনউদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের প্রভাষক (জীববিজ্ঞান) মো. আশরাফুল আলম রাকিব বহু বছর পর বিদ্যালয়টির আঙিনায় এসে স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠেন তিনি। অনুষ্ঠানে আসার পর পুরোনো সহপাঠী ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় তার। একই রকম ভালো লাগার কথা জানান তিনি।

প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম জিন্নাহর সভাপতিত্বে ও সাবেক শিক্ষার্থী সাবেক ইউপি সদস্য আরমান আলীর সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম, শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, মাওলানা সামসুল হক, শ্রী উজ্জল দাস, শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার, হাবিবা খাতুনসাবেক শিক্ষার্থী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আবু সুফিয়ান, সাবেক শিক্ষার্থী সাবেক ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ, সাবেক শিক্ষার্থী সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম শাওন, সাবেক শিক্ষার্থী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কবির হোসেন, রেজাউল করিম হবি, সাবেক শিক্ষার্থী ডেন্টিষ্ট জেসমিন আক্তার জলি, সাবেক শিক্ষার্থী সোহেল রানা, ইমন তানভীর, আসিফ ইকবাল, আরাফাত রহমান প্রমূখ।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত