হামলা ভাংচুরের দুইদিন পর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে দর্শনার্থী প্রবেশে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম শুক্রবার (১৩ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এক দর্শনার্থীর হাতে প্রবেশ টিকেট আনুষ্ঠানিক ভাবে ধরিয়ে দিয়ে দর্শনার্থীদের জন্য রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি উন্মুক্ত করে দেন।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) শেখ কামাল হোসেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (রাজশাহী-রংপুর বিভাগ) সাইফুর রহমান, সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন, শাহজাদপুর থানা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. কামরুজ্জামান, শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান, শাহজাদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার মো. মুশফিকুর রহমান, শাহজাদপু থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) আসলাম আলী, শাহজাদপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন হিরু, শাহজাদপুর উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মিজানুর রহমান, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব কাজী শওকত, সঙ্গীত শিল্পী বায়জিদ হোসেন প্রমুখ।
আনুষ্ঠানিক ভাবে খুলে দেওয়ার পর সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, রবীন্দ্র কাছারিবাড়ির মূল ভবন জাদুঘরে কোন প্রকার হামলা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি। যাদুঘরটি সম্পূর্ণ অক্ষত আছে। হামলা হয়েছে মূলত কাছারিবাড়ি জাদুঘরের পাশে অবস্থিত রবীন্দ্র অডিটোরিয়ামে। সেটাও কাছারিবাড়িকে টার্গেট করে নয়। বরং প্রবেশ বা মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের টোকেন নিয়ে এক প্রবাসী দর্শনার্থীর সাথে কাছারিবাড়ির স্টাফদের ব্যক্তিগত অনাকাঙ্খিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তিনি বলেন, কোন মৌলবাদ বা কোন রাজনৈতিক কারণে এ ঘটনা ঘটেনি। এখন রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে আর কোন নিরাপত্তার ঘাটতি নেই উল্লেখ করে তিনি সকল দর্শনার্থীদের জন্য কাছারিবাড়ি পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।
এ সময় তদন্ত কমিটির প্রধান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) শেখ কামাল হোসেন বলেন, ইতোমধ্যেই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। খুব শিঘ্রই ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি হবে। তদন্ত রিপোর্ট দেখে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন বলেন, রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই হামলা ভাঙচুরের সাথে জড়িত ৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুন শাহনেওয়াজ নামের এক দর্শনার্থী পরিবার নিয়ে কাছারিবাড়ি পরিদর্শন শেষে চলে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল পার্কিং ফি নিয়ে গেটম্যানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তাকে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শাহনেওয়াজ বাদী হয়ে শাহজাদপুর থানায় রবীন্দ্র কাছারিবাড়ির কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান সহ কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর দুইদিন পরে এ ঘটনার প্রতিবাদে তার সমর্থকরা গত ১০ জুন শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি কাছারিবাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মিছিলকারিরা উত্তেজিত হয়ে ভিতরে প্রবেশ করে অফিস ও অডিটোরিয়ামে হামলা চালিয়ে দরজা, জানালা ভাংচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পর ১১ জুন থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে দর্শনার্থী প্রবেশ ও পরিদর্শন বন্ধ করে দেয়। ফলে রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি পরিদর্শনে এসে অনেক দর্শনার্থী বিপাকে পড়ে। এরমধ্যে চিত্রনায়ক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জল সস্ত্রীক রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি পরিদর্শনে এসে বিপাকে পড়েন। তারা কাছারিবাড়ির সামনের তালাবদ্ধ গেটের সামনে দাড়িয়ে নিজেদের ছবি তুলে একরাশ হতাশা নিয়ে আবারও ঢাকায় ফিরে যান।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় অভিযান চালিয়ে শাহজাদপুর থানা পুলিশ ও যৌথবাহিনী পৃথকভাবে শাহজাদপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এরা হলেন, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শাহজাদপুর পৌর সদরের রূপপুর নতুনপাড়ার মৃত আবু কাশেমের ছেলে অধ্যাপক আবু শামীম (৬০), পাঠানপাড়ার মৃত শুকুর মাহমুদের ছেলে আশিকুর রহমান আরমান (২২), আব্দুল জব্বারের ছেলে তানভীর হাসান অর্ক (২২), চুনিয়াখালি পাড়ার মৃত আব্দুল্লাহ খানের ছেলে মো. জুবায়ের (২৪), রূপপুর নতুনপাড়ার শাহআলমের ছেলে রিমন (২৪) ও সজিব (২২)। শুক্রবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শাহজাদপুর থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আবু সাঈদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে রবীন্দ্র কাছারিবাড়ির নিরাপত্তা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক জোরদার করা হয়েছে। এখন থেকে পুলিশের একজন এসআই, ৪ জন কনস্টেবল, ৪ জন আনসার ও ৪ জন গ্রাম পুলিশ সার্বক্ষণিক ভাবে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।
অপরদিকে রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি খুলে দেওয়ার পর সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরর্শিদ আলম মূল কাছারিবাড়ি যাদুঘর পরিদর্শন করেন। এছাড়া তিনি কাছারিবাড়ির নিরাপত্তার বিষয়ে খোজখবর নেন।