বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

শেষ দিনে ইংল্যান্ডের চাই ৩৫০ রান, ভারতের ১০ উইকেট

আপডেট : ২৪ জুন ২০২৫, ০১:১৯ এএম

দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছেন রিশাভ পান্ত। আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন লোকেশ রাহুলও। কিন্তু সবকিছুর পরও ভারতীয় ইনিংসের পরিসমাপ্তি যেন স্বেচ্ছা আত্মসমর্পণের এক পর্ব। শেষ ৬ উইকেট মাত্র ৩১ রানের ব্যবধানে। তাতে ৩৬৪ রানে গুটিয়ে গেছে সফরকারীদের দ্বিতীয় ইনিংস। হেডিংলিতে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের লক্ষ্য এখন ৩৭১।

দিনশেষে ৬ ওভার খেলে ২১ রানে কোনো উইকেট না হারানো ইংল্যান্ডকে মঙ্গলবার শেষ দিনে করতে হবে আরও ৩৫০ রান। ইতিহাসে এই লক্ষ্য তাড়ার নজির কম, তবে ইংল্যান্ডই সেটা করে দেখিয়েছে একবার।তাও তিন বছর আগে, একই ভারতের বিপক্ষে এজবাস্টনে, ‘বাজবল’ যুগের সূচনায়।

তবে ভারতের আক্ষেপ থাকতেই পারে। যে অবস্থায় গিয়ে তারা পৌঁছেছিল, সেখান থেকে আরও বড় লক্ষ্য দাঁড় করানো সম্ভব ছিল। চতুর্থ উইকেটে রাহুল-পান্ত জুটি গড়েছিলেন ১৯৫ রানের দৃষ্টিনন্দন এক অংশীদারিত্ব। ভিন্ন দুই মেজাজের ব্যাটার ভিন্ন ঢঙে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন—রাহুল ২০২ বলে, পান্ত ১৩০ বল খেলে।

দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৫ রানে জীবন পাওয়া রাহুল খেলেছেন ১৩৭ রানের ইনিংস, পেয়েছেন নিজের অষ্টম বিদেশের মাটিতে সেঞ্চুরি, যার ছয়টি এসেছে এশিয়ার বাইরে—এ কীর্তিতে তাঁর উপরে এখন কেবল সুনীল গাভাস্কার (১৫)। আর পান্ত করলেন ইংল্যান্ডে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি, উইকেটকিপার হিসেবে যা যৌথ সর্বোচ্চ।

কিন্তু রাহুল আউট হওয়ার পরই যেন ছন্দপতন। প্রথম ইনিংসে যেখানে শেষ পাঁচ ব্যাটার মিলে ২৪ রান করতে পেরেছিলেন, দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ ছয় ব্যাটার করলেন ৩১ রান। ৩৩৩/৪ থেকে ভারত অলআউট ৩৬৪, মাত্র ৭১ বলের ব্যবধানে।

এ সময় চার বলে তিন উইকেট তুলে নিয়ে ভারতীয় ইনিংসে রীতিমতো ছুরি চালান ইংলিশ পেসার জশ টাং। শার্দুল ঠাকুর ও মোহাম্মদ সিরাজকে পরপর দুই বলে ফিরিয়ে পরের বলেই বোল্ড করেন যশপ্রীত বুমরাহকে। আগের ইনিংসেও উইকেটশূন্য থাকা টাং শেষপর্যন্ত এবারও ইনিংসের সোনালি মুহূর্তগুলোতে উঠে এসে ফিরলেন ৩ উইকেট নিয়ে।

এর আগে অবশ্য পান্ত-রাহুলের ব্যাটে চতুর্থ দিনের প্রথম দুই সেশন ছিল ইংল্যান্ডের বোলারদের জন্য শ্বাসরুদ্ধকর। শুবমন গিল ব্যর্থ হলেও রাহুল পায়ের নিচে বল রেখেছেন, মাথার উপর দিয়ে বল উঠলেও হারাননি ধৈর্য। পান্ত প্রথমদিকে কিছুটা ঝুঁকি নিলেও পরে সামলে নিয়ে ব্যাটিং করেছেন দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণে।

রাহুলের ব্যাটে ড্রাইভের সৌন্দর্য ছিল চোখে পড়ার মতো। অসমান বাউন্সের উইকেটেও খেলা চালিয়ে গেছেন সাবলীলভাবে। অন্যদিকে পান্ত যখন ৫০ পেরোলেন, তখন থেকে তাঁর স্ট্রাইক রেট আরও বেড়ে যায়। ২৫ বলে তুলে নেন ৪৪ রান, এরপর তিন অঙ্কে পৌঁছতে ২২ বল লাগলেও দ্রুতই ফিরে পান ছন্দ। জো রুটকে চার, ছয়, চার মারেন পরপর তিন বলে। তবে সেই আগ্রাসনের প্রতিফল পেলেন শোয়েব বাশিরের বলে আকাশে তোলা এক শটে, যা তালুবন্দি করেন জ্যাক ক্রলি।

তবু তখনও ভারতের লিড ছাড়িয়ে গেছে ৩০০, নায়ার-রাহুলের জুটিতে এসেছে আরও ৪৬ রান। কিন্তু এরপরই ধস। রাহুল আউট হলেন আরেকবার বোল্ড হয়ে, এবার কার্সের বলে মিডল স্টাম্প হারিয়ে। নায়ার খেললেন দৃষ্টিকটুভাবে, ফিরলেন ক্যাচ তুলে দিয়ে।

তারপর টাংয়ের ‘র‌্যাবিট শিকার’ আর শেষ জুটিতে জাদেজার লড়াই। জাদেজা এক প্রান্ত ধরে রাখলেও প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ বাশিরকে মারতে গিয়ে টাংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন।

শেষ বিকেলে ইংল্যান্ডের ওপেনাররা কাঁপলেন না মোটেও। চতুর্থ ওভারে জ্যাক ক্রলির পরপর দুই চারেই কেটে যায় উদ্বেগের রেখা। শেষ দিনে আরও উত্তেজনার বার্তা দিয়ে ম্যাচ নিয়ে যাচ্ছে পঞ্চম দিনের নাট্যমঞ্চে।

ভারতের এখন প্রার্থনা, হয়তো বা বৃষ্টি! ইংল্যান্ডের নজরে নতুন আরেকটি রেকর্ড গড়া—যদিও এই লক্ষ্য তাড়া সফল হলে তা হবে তাদের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

তবে ক্রিকেটের ইতিহাস বলে, হেডিংলিতে সব সম্ভব।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত