নবজাতক হত্যা মানবিকতার অবক্ষয়
শাহীন হাসনাত | ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
আজকাল প্রায়ই ডাস্টবিন, সড়ক-মহাসড়ক কিংবা ফুটপাতে নবজাতক পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি চিকিৎসার জন্য এনে হাসপাতালে নবজাতক রেখে সটকে পড়ছে অভিভাবকরা। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং মর্মান্তিক! এমন কয়েকটি খবর গত সপ্তাহে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ওয়ারী এলাকার হেয়ার স্ট্রিট এলাকার এক উঁচু ভবন থেকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলা হয় এক নবজাতককে। পরেরদিন হাসপাতালে মারা যাওয়া নবজাতকটি প্রথমে টিনশেডের ওপর পড়ে, সেখান থেকে ছিটকে মাটিতে পড়ে। রবিবার (২৮ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক নবজাতককে রেখে পালিয়ে গেছেন তার বাবা-মা পরিচয়দানকারী নারী ও পুরুষ। তাদের নাম-পরিচয় জানার আগেই শিশুটিকে হাসপাতালের লেবার রুমে রেখে কৌশলে পালিয়ে যায় তারা। এর আগেরদিন শনিবার (২৭ নভেম্বর) পটুয়াখালীর গলাচিপায় নদীর ধারে কাপড় দিয়ে প্যাঁচানো এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার হয়। আর নভেম্বরের শুরুতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের শৌচাগার থেকে এক নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ২৫ অক্টোবর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় এলাকা থেকে পুলিশ আরও এক নবজাতকের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ছয়টি ছোটমণি নিবাসে ২০১৭ থেকে ২০২১ পর্যন্ত চার বছরে ১০ হাজার ৮৯৮ জন পরিত্যক্ত শিশু আশ্রয় পেয়েছে। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি পরিত্যক্ত শিশু পাওয়া যায় চট্টগ্রামে ৩ হাজার ১৬২ জন। তারপর সিলেটে ২ হাজার ৪৭৪ জন। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ঢাকা ১ হাজার ৫৩৬ জন। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, করোনাকালে পরিত্যক্ত শিশুপ্রাপ্তি চট্টগ্রামে ২১ শতাংশ, সিলেটে ১৯ শতাংশ এবং ঢাকাতে ২৫ শতাংশ বেড়েছে।
উপরোক্ত পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট, অনৈতিক সম্পর্কের কারণে জন্ম নেওয়া এসব শিশুকে হাসপাতালে, ডাস্টবিনে, রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড কিংবা গণশৌচাগারে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষ ফেলে যাওয়া এসব শিশুদের কোনো নিঃসন্তান দম্পতি দত্তক নিলেও শিশুগুলোকে কারা ফেলে দিচ্ছে, সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। অথচ এর কোনো সুরাহা হয়েছে বলে জানা যায়নি। এমন বীভৎস ও পৈশাচিক অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
পৃথিবীর সব প্রান্তের প্রত্যেক পরিবারেই অনাগত সন্তানকে ঘিরে উৎসবের আমেজ ও নানা উৎসাহব্যঞ্জক ভাবনা পরিলক্ষিত হয়। এটাই স্বাভাবিক রীতি। মানবতার ইতিহাসে এ রীতি চলে আসছে বংশ পরম্পরায়। কিন্তু এই রীতির বিপরীত চিত্রটি এখন আর দুর্লভ নয়। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, ওই চিত্রটি অন্ধকারের। সেখানে নেই ন্যূনতম স্নেহ-ভালোবাসার বন্ধন। আছে কেবল ঘৃণা, লোকলজ্জা, সমাজের চোখ রাঙানি ও তিরস্কারের কষ্টগাথা। ফলে জন্মের পর মা-বাবার কোলের বদলে অনেক নবজাতকের ঠাঁই হয় ডাস্টবিনে, ড্রেনে, ফুটপাতে ও হাসপাতালের আঙিনায়। অনেককে আবার পৃথিবীর আলো দেখার আগেই হত্যা করা হয়। সবচেয়ে কষ্টসাধ্য কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম সন্তান জন্ম দেওয়া। যিনি মা হয়েছেন একমাত্র তিনিই জানেন দুঃসহ এই কষ্ট ও বেদনার ব্যাপকতা। অথচ সেই মা-ই তার নাড়ি-ছেঁড়া ধনকে এভাবে ফেলে দিতে পারে? হ্যাঁ, পারছে এখন। আপাতত রাস্তায় পাওয়া নবজাতকের পরিসংখ্যান দেখলে এটা স্পষ্ট।
আল্লাহতায়ালা ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। মাকে করেছেন পরম সম্মানের; অথচ সেই মা-ই তার নাড়ি-ছেঁড়া ধনকে এভাবে ফেলে দিচ্ছে। এটা মানবতার অবক্ষয় বৈ অন্য কিছু নয়। এমন ঘটনা এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের চিত্র নয়, নয় মানবতার সভ্য হওয়ার আলামত। বস্তুত সমাজের সব ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়া নৈরাজ্য, নৈতিক অবক্ষয় এবং বিশৃঙ্খলার বলি হচ্ছে এসব নবজাতক। প্রতিদিন নিত্যনতুন মাত্রায় উন্মোচিত হচ্ছে সমাজের বিকৃত চেহারা। সে সঙ্গে বেরিয়ে পড়ছে মানবিকতার অধঃপতনের ভয়াবহ চিত্র। এসব নৈরাজ্য এবং পাশবিক উন্মত্ততা, নৈতিক মানবিকতার বিকাশের ঘাটতি এবং আদর্শবাদের পতনের ফলে একের পর এক এ জাতীয় ঘটনা ঘটছে।
ইসলাম ভ্রƒণহত্যা ও শিশুহত্যাকে অন্য হত্যার মতো অপরাধ বলেই গণ্য করে। অন্য ধর্মেও এসব কাজ অপরাধ বলে বিবেচিত। ধর্ম যেমন প্রত্যেক শিশুকে দিয়েছে বঁাঁচার অধিকার, ঠিক আমাদের রাষ্ট্রীয় আইনেও রয়েছে তাদের বাঁচার অধিকার। জাতিসংঘ শিশু সনদ অনুচ্ছেদ-৬ এ বলা হয়েছে- ১. প্রতিটি শিশুর বেঁচে থাকার জন্মগত অধিকারকে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলো স্বীকৃতি দেবে; ২. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র শিশুর বেঁচে থাকার এবং উন্নয়নের জন্য যথাসম্ভব সর্বাত্মক নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করবে। ইসলাম যেখানে সন্তানদের যত্ন করে লালন-পালনের কথা বলে, সেখানে এই নবজাতকদের হত্যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আল্লাহর প্রতি আস্থা ও পরকালে বিশ্বাসী কেউ এমন নির্মম কাজ করতে পারে না। সামাজিক অবক্ষয় ও নৈতিক অধঃপতন কতটা হলে এভাবে নবজাতক হত্যার উপলক্ষ তৈরি হয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অভাবের তাড়নায় শিশু বিক্রির খবর পত্রিকার পাতায় এলেও অভাবের তাড়নায় নবজাতক ফেলে যাওয়ার খবর এখন পর্যন্ত পত্রিকায় আসেনি। মূলত অবৈধ সম্পর্কের ফলে জন্ম নেওয়া সন্তানদেরই এভাবে ফেলে রাখা হয় সামাজিকভাবে মুখ রক্ষার খাতিরে বা পরিবারের সম্মান বাঁচাতে।
ইসলামে ব্যভিচার ও অবাধ যৌনাচারকে মারাত্মক অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ব্যভিচার বলতে বোঝায় ইসলামি বিধান মোতাবেক বিয়ে ছাড়া অবৈধ পন্থায় যৌন সম্পর্ককে। এটা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কোরআনে কারিম ও হাদিস শরিফে এ সম্পর্কে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।’ সুরা বনি ইসরাঈল : ৩২
বস্তুত এমন মনোভাব মানুষের মূল্যবোধের বিপর্যয় বৈ অন্য কিছু নয়। এ ধরনের নিষ্ঠুরতা ও অপরাধীদের বিকৃত মনোভাব এসবেরই বহিঃপ্রকাশ। মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে ব্যক্তিজীবন ও সমাজ জীবন পরিচালনার জন্য যে বিধিবিধান ও নির্দেশনা উপহার দিয়েছেন, তার মধ্যেই নিহিত রয়েছে আমাদের কল্যাণ। বিষয়টি উপলব্ধি করলেই তবে সবার মঙ্গল।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
শেয়ার করুন
শাহীন হাসনাত | ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

আজকাল প্রায়ই ডাস্টবিন, সড়ক-মহাসড়ক কিংবা ফুটপাতে নবজাতক পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি চিকিৎসার জন্য এনে হাসপাতালে নবজাতক রেখে সটকে পড়ছে অভিভাবকরা। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং মর্মান্তিক! এমন কয়েকটি খবর গত সপ্তাহে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ওয়ারী এলাকার হেয়ার স্ট্রিট এলাকার এক উঁচু ভবন থেকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলা হয় এক নবজাতককে। পরেরদিন হাসপাতালে মারা যাওয়া নবজাতকটি প্রথমে টিনশেডের ওপর পড়ে, সেখান থেকে ছিটকে মাটিতে পড়ে। রবিবার (২৮ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক নবজাতককে রেখে পালিয়ে গেছেন তার বাবা-মা পরিচয়দানকারী নারী ও পুরুষ। তাদের নাম-পরিচয় জানার আগেই শিশুটিকে হাসপাতালের লেবার রুমে রেখে কৌশলে পালিয়ে যায় তারা। এর আগেরদিন শনিবার (২৭ নভেম্বর) পটুয়াখালীর গলাচিপায় নদীর ধারে কাপড় দিয়ে প্যাঁচানো এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার হয়। আর নভেম্বরের শুরুতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের শৌচাগার থেকে এক নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ২৫ অক্টোবর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় এলাকা থেকে পুলিশ আরও এক নবজাতকের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ছয়টি ছোটমণি নিবাসে ২০১৭ থেকে ২০২১ পর্যন্ত চার বছরে ১০ হাজার ৮৯৮ জন পরিত্যক্ত শিশু আশ্রয় পেয়েছে। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি পরিত্যক্ত শিশু পাওয়া যায় চট্টগ্রামে ৩ হাজার ১৬২ জন। তারপর সিলেটে ২ হাজার ৪৭৪ জন। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ঢাকা ১ হাজার ৫৩৬ জন। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, করোনাকালে পরিত্যক্ত শিশুপ্রাপ্তি চট্টগ্রামে ২১ শতাংশ, সিলেটে ১৯ শতাংশ এবং ঢাকাতে ২৫ শতাংশ বেড়েছে।
উপরোক্ত পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট, অনৈতিক সম্পর্কের কারণে জন্ম নেওয়া এসব শিশুকে হাসপাতালে, ডাস্টবিনে, রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড কিংবা গণশৌচাগারে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষ ফেলে যাওয়া এসব শিশুদের কোনো নিঃসন্তান দম্পতি দত্তক নিলেও শিশুগুলোকে কারা ফেলে দিচ্ছে, সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। অথচ এর কোনো সুরাহা হয়েছে বলে জানা যায়নি। এমন বীভৎস ও পৈশাচিক অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
পৃথিবীর সব প্রান্তের প্রত্যেক পরিবারেই অনাগত সন্তানকে ঘিরে উৎসবের আমেজ ও নানা উৎসাহব্যঞ্জক ভাবনা পরিলক্ষিত হয়। এটাই স্বাভাবিক রীতি। মানবতার ইতিহাসে এ রীতি চলে আসছে বংশ পরম্পরায়। কিন্তু এই রীতির বিপরীত চিত্রটি এখন আর দুর্লভ নয়। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, ওই চিত্রটি অন্ধকারের। সেখানে নেই ন্যূনতম স্নেহ-ভালোবাসার বন্ধন। আছে কেবল ঘৃণা, লোকলজ্জা, সমাজের চোখ রাঙানি ও তিরস্কারের কষ্টগাথা। ফলে জন্মের পর মা-বাবার কোলের বদলে অনেক নবজাতকের ঠাঁই হয় ডাস্টবিনে, ড্রেনে, ফুটপাতে ও হাসপাতালের আঙিনায়। অনেককে আবার পৃথিবীর আলো দেখার আগেই হত্যা করা হয়। সবচেয়ে কষ্টসাধ্য কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম সন্তান জন্ম দেওয়া। যিনি মা হয়েছেন একমাত্র তিনিই জানেন দুঃসহ এই কষ্ট ও বেদনার ব্যাপকতা। অথচ সেই মা-ই তার নাড়ি-ছেঁড়া ধনকে এভাবে ফেলে দিতে পারে? হ্যাঁ, পারছে এখন। আপাতত রাস্তায় পাওয়া নবজাতকের পরিসংখ্যান দেখলে এটা স্পষ্ট।
আল্লাহতায়ালা ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। মাকে করেছেন পরম সম্মানের; অথচ সেই মা-ই তার নাড়ি-ছেঁড়া ধনকে এভাবে ফেলে দিচ্ছে। এটা মানবতার অবক্ষয় বৈ অন্য কিছু নয়। এমন ঘটনা এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের চিত্র নয়, নয় মানবতার সভ্য হওয়ার আলামত। বস্তুত সমাজের সব ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়া নৈরাজ্য, নৈতিক অবক্ষয় এবং বিশৃঙ্খলার বলি হচ্ছে এসব নবজাতক। প্রতিদিন নিত্যনতুন মাত্রায় উন্মোচিত হচ্ছে সমাজের বিকৃত চেহারা। সে সঙ্গে বেরিয়ে পড়ছে মানবিকতার অধঃপতনের ভয়াবহ চিত্র। এসব নৈরাজ্য এবং পাশবিক উন্মত্ততা, নৈতিক মানবিকতার বিকাশের ঘাটতি এবং আদর্শবাদের পতনের ফলে একের পর এক এ জাতীয় ঘটনা ঘটছে।
ইসলাম ভ্রƒণহত্যা ও শিশুহত্যাকে অন্য হত্যার মতো অপরাধ বলেই গণ্য করে। অন্য ধর্মেও এসব কাজ অপরাধ বলে বিবেচিত। ধর্ম যেমন প্রত্যেক শিশুকে দিয়েছে বঁাঁচার অধিকার, ঠিক আমাদের রাষ্ট্রীয় আইনেও রয়েছে তাদের বাঁচার অধিকার। জাতিসংঘ শিশু সনদ অনুচ্ছেদ-৬ এ বলা হয়েছে- ১. প্রতিটি শিশুর বেঁচে থাকার জন্মগত অধিকারকে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলো স্বীকৃতি দেবে; ২. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র শিশুর বেঁচে থাকার এবং উন্নয়নের জন্য যথাসম্ভব সর্বাত্মক নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করবে। ইসলাম যেখানে সন্তানদের যত্ন করে লালন-পালনের কথা বলে, সেখানে এই নবজাতকদের হত্যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আল্লাহর প্রতি আস্থা ও পরকালে বিশ্বাসী কেউ এমন নির্মম কাজ করতে পারে না। সামাজিক অবক্ষয় ও নৈতিক অধঃপতন কতটা হলে এভাবে নবজাতক হত্যার উপলক্ষ তৈরি হয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অভাবের তাড়নায় শিশু বিক্রির খবর পত্রিকার পাতায় এলেও অভাবের তাড়নায় নবজাতক ফেলে যাওয়ার খবর এখন পর্যন্ত পত্রিকায় আসেনি। মূলত অবৈধ সম্পর্কের ফলে জন্ম নেওয়া সন্তানদেরই এভাবে ফেলে রাখা হয় সামাজিকভাবে মুখ রক্ষার খাতিরে বা পরিবারের সম্মান বাঁচাতে।
ইসলামে ব্যভিচার ও অবাধ যৌনাচারকে মারাত্মক অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ব্যভিচার বলতে বোঝায় ইসলামি বিধান মোতাবেক বিয়ে ছাড়া অবৈধ পন্থায় যৌন সম্পর্ককে। এটা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কোরআনে কারিম ও হাদিস শরিফে এ সম্পর্কে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।’ সুরা বনি ইসরাঈল : ৩২
বস্তুত এমন মনোভাব মানুষের মূল্যবোধের বিপর্যয় বৈ অন্য কিছু নয়। এ ধরনের নিষ্ঠুরতা ও অপরাধীদের বিকৃত মনোভাব এসবেরই বহিঃপ্রকাশ। মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে ব্যক্তিজীবন ও সমাজ জীবন পরিচালনার জন্য যে বিধিবিধান ও নির্দেশনা উপহার দিয়েছেন, তার মধ্যেই নিহিত রয়েছে আমাদের কল্যাণ। বিষয়টি উপলব্ধি করলেই তবে সবার মঙ্গল।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক