জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, স্বাগত সাতাশি
আন্দালিব রাশদী | ২৩ জুন, ২০২২ ০০:০০
১৯৭৪ সালে সদ্য স্কুল পাস তরুণ হিসেবে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সদ্য প্রকাশিত ‘অনতিক্রান্ত বৃত্ত’ দিয়ে আমার ‘সিইচৌ’ পাঠ শুরু। আটচল্লিশ বছর পরও দেখছি এবং তার লেখাতেও পড়ছি বৃত্তটি অনতিক্রান্তই রয়ে গেল।
দরবারে ভাঁড় ও বুদ্ধিজীবীর আকাল হতে কখনো দেখা যায় না। তারা বর্জ্য ও হালুয়ার তফাৎ করেন না, বর্জ্য ভক্ষণ করেও হালুয়ার ঢেকুর তোলেন; দলদাসরাই যখন পাল্লায় সওয়ার, নিতান্ত সংখ্যালঘু হাতে গোনা ক’জন যতটা সম্ভব ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করেন, আঁধারকে আঁধার এবং কোদালকে কোদালই বলেন। সংখ্যালঘুদের একজন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ২৩ জুন ২০২২ তিনি সাতাশি ছুঁতে যাচ্ছেন। ১৯৭১-পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশ কেমন? গণতন্ত্রের চেহারাটা কেমন? ২০২১ সালে ডেইলি স্টার বাংলাকে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন: ‘শাসক শ্রেণি জনগণের সম্মতি নিয়ে দেশ শাসন করে না। কখনো কখনো তারা জোর-জবরদস্তির ভেতর দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে নেয়। যখন ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে তখনো জনগণের স্বার্থ দেখবে এমন লোকেরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয় না; ভোটে জেতে তারাই যাদের টাকা আছে। টাকাওয়ালারা নির্বাচনে টাকা খরচ করে, জেতে এবং জিতে আরও বেশি ধনী হয়। তা ছাড়া এমন ঘটনাও তো ঘটে যে, ভোটার আসে না, ভোট দেয় না, তবু কথিত জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়ে যান এবং দেশ শাসন করেন। বুদ্ধিজীবীরা কথা বলেন ঠিকই, বলতে হয়, নইলে তারা বুদ্ধিজীবী কেন; কিন্তু তাদের অধিকাংশই কথা বলেন লাইন ধরে। একদল থাকেন সরকারের পক্ষে, কথা বলেন ইনিয়েবিনিয়ে, সরকারের মুখ চেয়ে। এরা হয়তো ইতোমধ্যেই সুবিধা পেয়েছেন, নয়তো পাবেন বলে আশা করছেন। সরকারের বিরুদ্ধে যারা বলেন তারাও আশাবাদী; আশা রাখেন যে এখন পাচ্ছেন না ঠিকই, কিন্তু আগামীতে সুদিন আসবে এবং তখন সুবিধা পাবেন। তবে তাদের কথায় তেমন জোর থাকে না। প্রথমত, গণমাধ্যম তাদের তেমন একটা পাত্তা দেয় না, কেননা গণমাধ্যমের মালিকরা সরকারের বিরুদ্ধে যেতে চায় না, ভয় পায়। দ্বিতীয়ত, সরকার নিজের বিরুদ্ধ মত পছন্দ করে না।’
২৩ জুলাই ২০১৫ সালে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জোর দিয়ে তারই কিছু পুরনো কথা নতুন করে বলেছেন: ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের পর্যায় যেটি হয়ে গেছে আমি এ বিষয়ে বই লিখেছি, যার চতুর্থ সংস্করণ চলছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রয়োজন ছিল ১৯৭১ সালে। জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে মানুষকে একত্র করল এবং একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হল। কিন্তু এরপর তো আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই। জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র চাই না। জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র এখন দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে, এই রাষ্ট্র তো চাই না। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই যেখানে বাঙালি অবাঙালি সকলের সমান অধিকার থাকবে। বৈষম্যই প্রধান শত্রু।’ জাতীয়তাবাদের বুলি, তা বাঙালি-ই হোক বা বাংলাদেশি, চেতনাস্পৃষ্ট বুদ্ধিজীবীরা তার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করতে পারেন, এ নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে জঙ্গনামাও রচিত হতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বৈশ্বিক রাজনৈতিক-ভৌগোলিক অর্থনৈতিক শক্তিগুলো জাতীয়তাবাদকে একটি দুর্বল এবং কখনো কখনো বাতিলযোগ্য প্রপঞ্চে পরিণত করেছে। ওরহান পামুক জাতীয়তাবাদের প্রতি যে ‘ট্রিবিউট’ পেশ করেছেন তার সারকথা হচ্ছে: আন্তঃদেশীয় ফুটবলে হেরে যাওয়া দেশের সমর্থকরা বিজয়ীদের ওপর যে বেধড়ক আক্রমণ পরিচালনা করে তা-ই হচ্ছে জাতীয়তাবাদ। সেই সাক্ষাৎকারটিতে তিনি আরও বলেছেন: ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ আছে, কিন্তু তার এখন আর দেওয়ার কিছু নেই। আমার রাষ্ট্রের প্রধান সমস্যা কী? একটি সমস্যা হলো নদীর সমস্যা। আমাদের চুয়ান্নটি অভিন্ন নদীর প্রবাহ যে শুকিয়ে আসছে সেটা নিয়ে কি জাতীয়তাবাদীরা কথা বলছে? হিন্দির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কি তারা কথা বলছে?’ নরেন্দ্র মোদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দিতে বক্তৃতা দিয়ে গেলেন। পাকিস্তানের কেউ যদি উর্দুতে বক্তৃতা দিতেন আমরা মানতাম? মোদিকে আমরা হাততালি দিলাম। জাতীয়তাবাদের কথা বললে জাতীয়তাবাদের প্রধান উপাদান তো ভাষা। উর্দু কোনোভাবেই বাংলার জন্য আগ্রাসী ভাষা নয়, এখন এমনকি পাকিস্তানের জন্যও নয়। আমাদের ভাষা আন্দোলনকে খাটো না করেও ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু কোনো পাঠক অবশ্যই জানবেন উর্দুর বিরুদ্ধে সিন্ধুর রাস্তায় নামার প্রশ্নে আন্দোলনকারীদের ১৯৫২ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি, ১৯৪৮-এর শুরুতে জিন্নাহর নিজ প্রদেশে উর্দু হটাও আন্দোলন শুরু হয়। তাদের চাওয়া: উর্দু নয় সিন্ধি হবে রাষ্ট্রভাষা। উর্দু বহিরাগতের ভাষা, ভারতের ভাষা। সিন্ধুর চিফ মিনিস্টার আইয়ুব খুরো চাননি তার প্রদেশে উর্দু চাপিয়ে দেওয়া হোক। তিনি গভর্নর জেনারেলকে অমান্য করলেন, কেন্দ্র ক্ষুব্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে অযোগ্যতার অভিযোগ এনে ২৬ এপ্রিল ১৯৪৮ চিফ মিনিস্টারের পদ থেকে বহিষ্কার করল। বলাই বাহুল্য, আমাদের রাজনৈতিক শক্তি তখন কেন্দ্র-তোষণ ও তাঁবেদারিতেই ব্যস্ত। জিন্নাহ যে সময় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার ঘোষণা দেন, তখন পাকিস্তানের উর্দুভাষীর সংখ্যা সাড়ে তিন শতাংশের বেশি নয়। জিন্নাহর ঘোষণাটি ৬২ বছর পর ২০১০ সালে লাহোর হাইকোর্টে ‘ঢাকা ডিক্লারেশন’ রিট পিটিশন আকারে উপস্থাপিত হয়: পাকিস্তান সরকার জাতির পিতার নির্দেশ মানেনি, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করছে, উর্দুকে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেনি। ২০১১ সালে সরাসরি ‘কায়েদে আজম’-এর বিরোধিতা করে একটি সংবিধান সংশোধন বিল উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংবিধানের ২৫১ ধারায় যেখানে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে, সেখানে আটটি প্রধান ভাষা প্রতিস্থাপিত হবে।
ঢাকা ঘোষণার এমন মারাত্মক পরিণতি হতে পারে ঘোষক ভাবতে পারেননি। উর্দু ভাষার ব্যবহার পাকিস্তানে কমে এসেছে, উর্দুর আদি বাসস্থান ভারতে গত দু’দশকে কেবল উর্দু মাধ্যম স্কুলের সংখ্যা ১৫০ থেকে ২২টিতে নেমে এসেছে। বুদ্ধিজীবীরা মুখ খুলবেন না। ততদিনে তাদের বাঙালি নাতি-নাতনিদের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি প্রতিষ্ঠিত; প্রথম ভাষা, ভুল বুঝবেন না, বাংলা নয়, ইংরেজি। বাংলা ভাষাই যেখানে অর্থনৈতিক বিবেচনায় অগুরুত্বপূর্ণ ভাষা, বুদ্ধিজীবীদের সন্তান, তাদের সন্তান যখন বাংলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে জাতীয়তাবাদের ধুয়া তুলে জাতির কী লাভ হবে? বুদ্ধিজীবীরাও জানেন তাদের আপন রক্তের মানুষজনের মঞ্জিলে মকসুদে রয়েছে মাইগ্রেশনউত্তর আমেরিকায়, অস্ট্রেলিয়ায়, টাকায় না কুলালে অন্তত মালয়েশিয়ায়।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী অপর একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘যারা প্রথাগত রাজনীতি করে তারা ক্ষমতা দখলের রাজনীতি করে।’ তিনি অভ্রান্ত কথাটিই বলেছেন, আর যারা রাজনীতি করছেন তারাও ভুল করছেন না, কারণ ক্ষমতায় যেতে না পারলে রাজনীতি করার ‘সুফল’ তো ঘরে তুলতে পারবেন না। প্রথাগত রাজনীতির বাইরে যদি কেউ রাজনীতি করে থাকেন, বাংলাদেশ অভিজ্ঞতা আমাদের দেখিয়েছে তারা করেছেন মূলত ক্ষমতাসীন দলের লেজুড়বৃত্তি। লেজুড়বৃত্তি করেও কাঁধে পর্যাপ্ত চেকনাই সংযোগ করা যায়, কথিত আদর্শের ‘খেতাপুড়ে’ বিলীন হওয়া যায় কথিত ‘মেইনস্ট্রিমে’। এই রাজনীতিবিদদের সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী চেনেন, তারাও একসময় কার্ল মার্কস আওড়েছেন। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তার একাধিক রচনায়, এমনকি ‘জাতীয়তাবাদ সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি ১৯০৫-১৯৪৭’ গ্রন্থে গণতান্ত্রিক সমাজের সমর্থনে পর্যাপ্ত যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। ভোটের গণতন্ত্রের নামে আমাদের গণতন্ত্র ‘সুপ্রতিষ্ঠিত’। বস্তুত গণতন্ত্রের অন্যতম মানদ- যে হতে পারে যেকোনো কালের ক্ষমতাসীনদের সহনশীলতাএটি পুস্তকে থাকতে পারে, চর্চায় নেই। প্রয়াত ভারতীয় কার্টুনিস্ট ‘কমন ম্যান’ আর কে লক্ষণ এঁকেছেন: রাষ্ট্র জোর করে গলা দিয়ে গণতন্ত্র ঢুকিয়ে দেয়।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এই ভয়ংকরের ওপরই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, সতর্ক করে দিয়েছেন, আমরা তাকে উপেক্ষাই করেছি। তার ‘এগুবার পথ ও পাথেয়’ শিরোনামের একটি নিবন্ধ থেকে উদ্ধৃত করছি : ‘স্বাধীনতার প্রশ্ন আমাদের জন্য নতুন নয়, পুরাতন বটে। ব্রিটিশ উপনিবেশের আধিপত্যের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালে যে স্বাধীনতা এলো সেটা প্রকৃত স্বাধীনতা নয় বুঝতে মানুষের বিলম্ব ঘটেনি। প্রথম কারণ স্বাধীনতার সংগ্রাম শেষ পর্যন্ত পরিণত হয়েছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়, যার পেছনে ব্রিটিশদের উসকানি এবং সামনে ছিল প্রতিষ্ঠিত হিন্দু মধ্যবিত্তের সঙ্গে উদীয়মান মুসলিম মধ্যবিত্তের স্বার্থগত দ্বন্দ্ব। স্বাধীন বঙ্গকে ভাগ করে ফেলল, দাঙ্গায় মানুষ প্রাণ দিল, উৎপাটিত হলো কিন্তু স্বাধীনতা যে মুক্তি আনতে পারবে বলে আশা করা হয়েছিল সেটা আর দেখা গেল না। পূর্ববঙ্গের মানুষের জন্য স্বাধীনতা যে অর্থবহ হয়নি তার প্রমাণ তো বাংলাভাষা এবং সেই সঙ্গে যে আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ও শোষণভিত্তিক সমাজব্যবস্থা আগে ছিল তাতে কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না।’
১৯৪৭-এ পূর্ব বাংলার জন্য চারটি বিকল্প চিন্তা করা যেত: প্রথমত তখনই স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে আবির্ভূত হওয়া, দ্বিতীয়ত পাকিস্তানের দুর্বল পূর্বাঞ্চলীয় ডানা হিসেবে টিকে থাকা, তৃতীয়ত শুরু থেকেই রাজনীতির গতি বদলে বৃহত্তর স্বাধীন বাংলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা, চতুর্থত নিকোলাস টোমালিনের হিসেবে ভারতের অংশ হিসেবে রয়ে যাওয়া। কেন বৃহত্তর স্বাধীন বাংলা হয়নি বা হওয়া সম্ভব ছিল না সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর গ্রন্থটিই তার শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাদাতা। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ও পাকিস্তানই তার প্রমাণ করেছে। ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাও যে শেষ পর্যন্ত কামিয়াব হয় না বাংলাভাষাই তার প্রধান সাক্ষী। ১৯৪৭-এর স্বাধীনতার রক্তাক্ত ক্ষত পাঞ্জাব ও বাংলার দাঙ্গা। বাংলার দাঙ্গা যত মর্মন্তুদই হোক না, নির্বিকার বুদ্ধিজীবী সমাজকে তা কমই স্পর্শ করেছে। সৃজনশীল লেখকদেরও তেমন করেনি। হাতে গোনা দু’একটি গল্প ছাড়া জোর গলায় বলার মতো একটি উপন্যাসও বাঙালিদের হাতে উঠে আসেনি। খুশবন্ত সিংয়ের একটি চরিত্র আফসোস করতে করতে বলল, আগে আমরা ব্রিটিশের গোলামি করতাম, তাদের জায়গায় বসবে পাকিস্তান ও হিন্দুস্তানের শিক্ষিতজনেরা, আমরা এখন তাদের গোলামি করব। ধর্মীয় সম্প্রীতির যত গালগপ্পো আমরা মারি না কেন সাতচল্লিশ-পূর্ব ভারতে হিন্দু-মুসলমানের সামাজিক একাত্মতা সামান্যই ঘটেছে। সাম্প্রদায়িকতার উপাদান বরাবরই ছিল, সমাজ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা তা চেপে রাখতে পেরেছে, অদক্ষতা সাম্প্রদায়িকতার নগ্নরূপ দেখিয়ে ছেড়েছে। একসময় স্বঘোষিত দলনফর বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা এক হাজার একশ ছুঁয়েছে। এক দলের দাস্যবৃত্তিতে একশত হলে অন্য দলে সহস্র হবে, এতে অবাক হওয়ার কী আছে। বুদ্ধির গুণগত মান নিয়ে যত প্রশ্নই থাকুক বুদ্ধিজীবী উৎপাদনের প্রশ্নে নিষ্ফলা নয় এই বাংলাদেশ। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এই শুমারির বাইরের একজন। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী যখন লিখেন সাহিত্য তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখে। তার সাথে একমত না হওয়ার মতো বিষয় অবশ্যই আছে, আমারও আছে। কিন্তু তিনি যখন সাহিত্যে ফিরে আসেন আমার আরাধ্যজনকে সহজেই খুঁজে পাই।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক
শেয়ার করুন
আন্দালিব রাশদী | ২৩ জুন, ২০২২ ০০:০০

১৯৭৪ সালে সদ্য স্কুল পাস তরুণ হিসেবে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সদ্য প্রকাশিত ‘অনতিক্রান্ত বৃত্ত’ দিয়ে আমার ‘সিইচৌ’ পাঠ শুরু। আটচল্লিশ বছর পরও দেখছি এবং তার লেখাতেও পড়ছি বৃত্তটি অনতিক্রান্তই রয়ে গেল।
দরবারে ভাঁড় ও বুদ্ধিজীবীর আকাল হতে কখনো দেখা যায় না। তারা বর্জ্য ও হালুয়ার তফাৎ করেন না, বর্জ্য ভক্ষণ করেও হালুয়ার ঢেকুর তোলেন; দলদাসরাই যখন পাল্লায় সওয়ার, নিতান্ত সংখ্যালঘু হাতে গোনা ক’জন যতটা সম্ভব ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করেন, আঁধারকে আঁধার এবং কোদালকে কোদালই বলেন। সংখ্যালঘুদের একজন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ২৩ জুন ২০২২ তিনি সাতাশি ছুঁতে যাচ্ছেন। ১৯৭১-পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশ কেমন? গণতন্ত্রের চেহারাটা কেমন? ২০২১ সালে ডেইলি স্টার বাংলাকে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন: ‘শাসক শ্রেণি জনগণের সম্মতি নিয়ে দেশ শাসন করে না। কখনো কখনো তারা জোর-জবরদস্তির ভেতর দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে নেয়। যখন ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে তখনো জনগণের স্বার্থ দেখবে এমন লোকেরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয় না; ভোটে জেতে তারাই যাদের টাকা আছে। টাকাওয়ালারা নির্বাচনে টাকা খরচ করে, জেতে এবং জিতে আরও বেশি ধনী হয়। তা ছাড়া এমন ঘটনাও তো ঘটে যে, ভোটার আসে না, ভোট দেয় না, তবু কথিত জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়ে যান এবং দেশ শাসন করেন। বুদ্ধিজীবীরা কথা বলেন ঠিকই, বলতে হয়, নইলে তারা বুদ্ধিজীবী কেন; কিন্তু তাদের অধিকাংশই কথা বলেন লাইন ধরে। একদল থাকেন সরকারের পক্ষে, কথা বলেন ইনিয়েবিনিয়ে, সরকারের মুখ চেয়ে। এরা হয়তো ইতোমধ্যেই সুবিধা পেয়েছেন, নয়তো পাবেন বলে আশা করছেন। সরকারের বিরুদ্ধে যারা বলেন তারাও আশাবাদী; আশা রাখেন যে এখন পাচ্ছেন না ঠিকই, কিন্তু আগামীতে সুদিন আসবে এবং তখন সুবিধা পাবেন। তবে তাদের কথায় তেমন জোর থাকে না। প্রথমত, গণমাধ্যম তাদের তেমন একটা পাত্তা দেয় না, কেননা গণমাধ্যমের মালিকরা সরকারের বিরুদ্ধে যেতে চায় না, ভয় পায়। দ্বিতীয়ত, সরকার নিজের বিরুদ্ধ মত পছন্দ করে না।’
২৩ জুলাই ২০১৫ সালে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জোর দিয়ে তারই কিছু পুরনো কথা নতুন করে বলেছেন: ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের পর্যায় যেটি হয়ে গেছে আমি এ বিষয়ে বই লিখেছি, যার চতুর্থ সংস্করণ চলছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রয়োজন ছিল ১৯৭১ সালে। জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে মানুষকে একত্র করল এবং একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হল। কিন্তু এরপর তো আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই। জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র চাই না। জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র এখন দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে, এই রাষ্ট্র তো চাই না। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই যেখানে বাঙালি অবাঙালি সকলের সমান অধিকার থাকবে। বৈষম্যই প্রধান শত্রু।’ জাতীয়তাবাদের বুলি, তা বাঙালি-ই হোক বা বাংলাদেশি, চেতনাস্পৃষ্ট বুদ্ধিজীবীরা তার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করতে পারেন, এ নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে জঙ্গনামাও রচিত হতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বৈশ্বিক রাজনৈতিক-ভৌগোলিক অর্থনৈতিক শক্তিগুলো জাতীয়তাবাদকে একটি দুর্বল এবং কখনো কখনো বাতিলযোগ্য প্রপঞ্চে পরিণত করেছে। ওরহান পামুক জাতীয়তাবাদের প্রতি যে ‘ট্রিবিউট’ পেশ করেছেন তার সারকথা হচ্ছে: আন্তঃদেশীয় ফুটবলে হেরে যাওয়া দেশের সমর্থকরা বিজয়ীদের ওপর যে বেধড়ক আক্রমণ পরিচালনা করে তা-ই হচ্ছে জাতীয়তাবাদ। সেই সাক্ষাৎকারটিতে তিনি আরও বলেছেন: ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ আছে, কিন্তু তার এখন আর দেওয়ার কিছু নেই। আমার রাষ্ট্রের প্রধান সমস্যা কী? একটি সমস্যা হলো নদীর সমস্যা। আমাদের চুয়ান্নটি অভিন্ন নদীর প্রবাহ যে শুকিয়ে আসছে সেটা নিয়ে কি জাতীয়তাবাদীরা কথা বলছে? হিন্দির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কি তারা কথা বলছে?’ নরেন্দ্র মোদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দিতে বক্তৃতা দিয়ে গেলেন। পাকিস্তানের কেউ যদি উর্দুতে বক্তৃতা দিতেন আমরা মানতাম? মোদিকে আমরা হাততালি দিলাম। জাতীয়তাবাদের কথা বললে জাতীয়তাবাদের প্রধান উপাদান তো ভাষা। উর্দু কোনোভাবেই বাংলার জন্য আগ্রাসী ভাষা নয়, এখন এমনকি পাকিস্তানের জন্যও নয়। আমাদের ভাষা আন্দোলনকে খাটো না করেও ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু কোনো পাঠক অবশ্যই জানবেন উর্দুর বিরুদ্ধে সিন্ধুর রাস্তায় নামার প্রশ্নে আন্দোলনকারীদের ১৯৫২ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি, ১৯৪৮-এর শুরুতে জিন্নাহর নিজ প্রদেশে উর্দু হটাও আন্দোলন শুরু হয়। তাদের চাওয়া: উর্দু নয় সিন্ধি হবে রাষ্ট্রভাষা। উর্দু বহিরাগতের ভাষা, ভারতের ভাষা। সিন্ধুর চিফ মিনিস্টার আইয়ুব খুরো চাননি তার প্রদেশে উর্দু চাপিয়ে দেওয়া হোক। তিনি গভর্নর জেনারেলকে অমান্য করলেন, কেন্দ্র ক্ষুব্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে অযোগ্যতার অভিযোগ এনে ২৬ এপ্রিল ১৯৪৮ চিফ মিনিস্টারের পদ থেকে বহিষ্কার করল। বলাই বাহুল্য, আমাদের রাজনৈতিক শক্তি তখন কেন্দ্র-তোষণ ও তাঁবেদারিতেই ব্যস্ত। জিন্নাহ যে সময় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার ঘোষণা দেন, তখন পাকিস্তানের উর্দুভাষীর সংখ্যা সাড়ে তিন শতাংশের বেশি নয়। জিন্নাহর ঘোষণাটি ৬২ বছর পর ২০১০ সালে লাহোর হাইকোর্টে ‘ঢাকা ডিক্লারেশন’ রিট পিটিশন আকারে উপস্থাপিত হয়: পাকিস্তান সরকার জাতির পিতার নির্দেশ মানেনি, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করছে, উর্দুকে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেনি। ২০১১ সালে সরাসরি ‘কায়েদে আজম’-এর বিরোধিতা করে একটি সংবিধান সংশোধন বিল উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংবিধানের ২৫১ ধারায় যেখানে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে, সেখানে আটটি প্রধান ভাষা প্রতিস্থাপিত হবে।
ঢাকা ঘোষণার এমন মারাত্মক পরিণতি হতে পারে ঘোষক ভাবতে পারেননি। উর্দু ভাষার ব্যবহার পাকিস্তানে কমে এসেছে, উর্দুর আদি বাসস্থান ভারতে গত দু’দশকে কেবল উর্দু মাধ্যম স্কুলের সংখ্যা ১৫০ থেকে ২২টিতে নেমে এসেছে। বুদ্ধিজীবীরা মুখ খুলবেন না। ততদিনে তাদের বাঙালি নাতি-নাতনিদের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি প্রতিষ্ঠিত; প্রথম ভাষা, ভুল বুঝবেন না, বাংলা নয়, ইংরেজি। বাংলা ভাষাই যেখানে অর্থনৈতিক বিবেচনায় অগুরুত্বপূর্ণ ভাষা, বুদ্ধিজীবীদের সন্তান, তাদের সন্তান যখন বাংলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে জাতীয়তাবাদের ধুয়া তুলে জাতির কী লাভ হবে? বুদ্ধিজীবীরাও জানেন তাদের আপন রক্তের মানুষজনের মঞ্জিলে মকসুদে রয়েছে মাইগ্রেশনউত্তর আমেরিকায়, অস্ট্রেলিয়ায়, টাকায় না কুলালে অন্তত মালয়েশিয়ায়।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী অপর একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘যারা প্রথাগত রাজনীতি করে তারা ক্ষমতা দখলের রাজনীতি করে।’ তিনি অভ্রান্ত কথাটিই বলেছেন, আর যারা রাজনীতি করছেন তারাও ভুল করছেন না, কারণ ক্ষমতায় যেতে না পারলে রাজনীতি করার ‘সুফল’ তো ঘরে তুলতে পারবেন না। প্রথাগত রাজনীতির বাইরে যদি কেউ রাজনীতি করে থাকেন, বাংলাদেশ অভিজ্ঞতা আমাদের দেখিয়েছে তারা করেছেন মূলত ক্ষমতাসীন দলের লেজুড়বৃত্তি। লেজুড়বৃত্তি করেও কাঁধে পর্যাপ্ত চেকনাই সংযোগ করা যায়, কথিত আদর্শের ‘খেতাপুড়ে’ বিলীন হওয়া যায় কথিত ‘মেইনস্ট্রিমে’। এই রাজনীতিবিদদের সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী চেনেন, তারাও একসময় কার্ল মার্কস আওড়েছেন। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তার একাধিক রচনায়, এমনকি ‘জাতীয়তাবাদ সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি ১৯০৫-১৯৪৭’ গ্রন্থে গণতান্ত্রিক সমাজের সমর্থনে পর্যাপ্ত যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। ভোটের গণতন্ত্রের নামে আমাদের গণতন্ত্র ‘সুপ্রতিষ্ঠিত’। বস্তুত গণতন্ত্রের অন্যতম মানদ- যে হতে পারে যেকোনো কালের ক্ষমতাসীনদের সহনশীলতাএটি পুস্তকে থাকতে পারে, চর্চায় নেই। প্রয়াত ভারতীয় কার্টুনিস্ট ‘কমন ম্যান’ আর কে লক্ষণ এঁকেছেন: রাষ্ট্র জোর করে গলা দিয়ে গণতন্ত্র ঢুকিয়ে দেয়।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এই ভয়ংকরের ওপরই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, সতর্ক করে দিয়েছেন, আমরা তাকে উপেক্ষাই করেছি। তার ‘এগুবার পথ ও পাথেয়’ শিরোনামের একটি নিবন্ধ থেকে উদ্ধৃত করছি : ‘স্বাধীনতার প্রশ্ন আমাদের জন্য নতুন নয়, পুরাতন বটে। ব্রিটিশ উপনিবেশের আধিপত্যের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালে যে স্বাধীনতা এলো সেটা প্রকৃত স্বাধীনতা নয় বুঝতে মানুষের বিলম্ব ঘটেনি। প্রথম কারণ স্বাধীনতার সংগ্রাম শেষ পর্যন্ত পরিণত হয়েছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়, যার পেছনে ব্রিটিশদের উসকানি এবং সামনে ছিল প্রতিষ্ঠিত হিন্দু মধ্যবিত্তের সঙ্গে উদীয়মান মুসলিম মধ্যবিত্তের স্বার্থগত দ্বন্দ্ব। স্বাধীন বঙ্গকে ভাগ করে ফেলল, দাঙ্গায় মানুষ প্রাণ দিল, উৎপাটিত হলো কিন্তু স্বাধীনতা যে মুক্তি আনতে পারবে বলে আশা করা হয়েছিল সেটা আর দেখা গেল না। পূর্ববঙ্গের মানুষের জন্য স্বাধীনতা যে অর্থবহ হয়নি তার প্রমাণ তো বাংলাভাষা এবং সেই সঙ্গে যে আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ও শোষণভিত্তিক সমাজব্যবস্থা আগে ছিল তাতে কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না।’
১৯৪৭-এ পূর্ব বাংলার জন্য চারটি বিকল্প চিন্তা করা যেত: প্রথমত তখনই স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে আবির্ভূত হওয়া, দ্বিতীয়ত পাকিস্তানের দুর্বল পূর্বাঞ্চলীয় ডানা হিসেবে টিকে থাকা, তৃতীয়ত শুরু থেকেই রাজনীতির গতি বদলে বৃহত্তর স্বাধীন বাংলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা, চতুর্থত নিকোলাস টোমালিনের হিসেবে ভারতের অংশ হিসেবে রয়ে যাওয়া। কেন বৃহত্তর স্বাধীন বাংলা হয়নি বা হওয়া সম্ভব ছিল না সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর গ্রন্থটিই তার শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাদাতা। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ও পাকিস্তানই তার প্রমাণ করেছে। ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাও যে শেষ পর্যন্ত কামিয়াব হয় না বাংলাভাষাই তার প্রধান সাক্ষী। ১৯৪৭-এর স্বাধীনতার রক্তাক্ত ক্ষত পাঞ্জাব ও বাংলার দাঙ্গা। বাংলার দাঙ্গা যত মর্মন্তুদই হোক না, নির্বিকার বুদ্ধিজীবী সমাজকে তা কমই স্পর্শ করেছে। সৃজনশীল লেখকদেরও তেমন করেনি। হাতে গোনা দু’একটি গল্প ছাড়া জোর গলায় বলার মতো একটি উপন্যাসও বাঙালিদের হাতে উঠে আসেনি। খুশবন্ত সিংয়ের একটি চরিত্র আফসোস করতে করতে বলল, আগে আমরা ব্রিটিশের গোলামি করতাম, তাদের জায়গায় বসবে পাকিস্তান ও হিন্দুস্তানের শিক্ষিতজনেরা, আমরা এখন তাদের গোলামি করব। ধর্মীয় সম্প্রীতির যত গালগপ্পো আমরা মারি না কেন সাতচল্লিশ-পূর্ব ভারতে হিন্দু-মুসলমানের সামাজিক একাত্মতা সামান্যই ঘটেছে। সাম্প্রদায়িকতার উপাদান বরাবরই ছিল, সমাজ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা তা চেপে রাখতে পেরেছে, অদক্ষতা সাম্প্রদায়িকতার নগ্নরূপ দেখিয়ে ছেড়েছে। একসময় স্বঘোষিত দলনফর বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা এক হাজার একশ ছুঁয়েছে। এক দলের দাস্যবৃত্তিতে একশত হলে অন্য দলে সহস্র হবে, এতে অবাক হওয়ার কী আছে। বুদ্ধির গুণগত মান নিয়ে যত প্রশ্নই থাকুক বুদ্ধিজীবী উৎপাদনের প্রশ্নে নিষ্ফলা নয় এই বাংলাদেশ। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এই শুমারির বাইরের একজন। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী যখন লিখেন সাহিত্য তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখে। তার সাথে একমত না হওয়ার মতো বিষয় অবশ্যই আছে, আমারও আছে। কিন্তু তিনি যখন সাহিত্যে ফিরে আসেন আমার আরাধ্যজনকে সহজেই খুঁজে পাই।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক