
প্রাণী ইঁদুররা মাটিখেকো নয়, বসবাসের জন্য গর্ত করে। খরগোশ, শজারু, শেয়াল, বন্যকুকুর ইত্যাদি প্রাণীরাও তাই করে। জলাশয়ের মাছদের মধ্যে কোনো কোনো প্রজাতিও মাটি খুঁড়ে গর্তে বসবাস করে। অমেরুদন্ডী প্রাণী কেঁচো মাটি খনন করে বসবাস করে। ওরা মাটিখাদক, কিন্তু উর্বরা শক্তিদান করে মাটিকে। আধুনিক চাষের প্রধান যে উপকরণ জৈব সার, কেঁচো সার নামে যার পরিচয় তা কেঁচোরই দান। আমাদের পরিচিত মাছদের মধ্যে বেলে মাছের পোনা অতিক্ষুদ্র বালিকণা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এই মাছের নামকরণও বালি থেকেই এসেছে। তা ছাড়া পাখি বা প্রাণীদের কেউ কেউ খাদ্যের বিষক্রিয়া থেকে আত্মরক্ষার জন্য বিশেষ ধরনের খনিজ মাটি খেয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের একশ্রেণির অর্থলোভী মানুষই বোধকরি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মাটিখেকো প্রাণী। ওদেরই অন্য নাম নরইঁদুর।
মানবসভ্যতার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় মাটিকে খেয়ে ফেলা বা অত্যাচারের অভ্যাস খুব প্রাচীন। কৃষিসভ্যতার বিকাশের যুগে শুধু অরণ্য নয়, তৃণ নয়, প্রকৃতির দান হাজার হাজার পাহাড় ধ্বংস করেছে মানুষ। সমতল খামার ভূমি তৈরি করেছে। এতে ওই এলাকার প্রকৃতির চরিত্রই পাল্টে যায়। সর্বনাশের শুরু শিল্পবিপ্লবের আধুনিক যুগে। শিল্প-কারখানা তৈরি থেকে শ্রমিক কলোনি তৈরিতে পাহাড়কে হত্যা করা হয়। এর ফলে ইউরোপে কোনো এলাকায় ঠান্ডা এবং কোনো এলাকায় উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। আফ্রিকা থেকে দাস সংগ্রহ এবং উপনিবেশের প্রজাদের শাসক দেশে আগমনের ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। প্রয়োজন পড়ে ভূমির। আবাসনের। নগরায়ণের। এর ফলে ইংল্যান্ড, হল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রকৃতির ওপর প্রভুত্ব বিস্তার করে। দুগ্ধ উৎপাদনের নামে, মাখন বা চিজ তৈরির জন্য হল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া গোচারণভূমির জন্য পাহাড় ধ্বংস করেছে। পুঁজিবাদী মুনাফার লোভ প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করেছে।
আধুনিক এই যুগে মহাসমুদ্রের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র তাদের নগর রক্ষার্থে জনবসতিশূন্য ছোট দ্বীপগুলো থেকে মাটি-পাথর সংগ্রহ করতে গিয়ে সাগরবুকে বিলীন করে দিয়েছে অসংখ্য দ্বীপ। মালদ্বীপ তাদের অন্যতম। রাজধানী মালেকে সমুদ্রের ঢেউ থেকে রক্ষার জন্য অন্য রাষ্ট্রের দ্বীপের মাটিও কিনতে হয় তাকে। সমুদ্রবন্দর বা মার্কিন নৌঘাঁটি নির্মাণের নামে মার্কিন এবং চীনারা এভাবে কত যে দ্বীপ গিলে ফেলেছে তার হিসাব নেই। দুর্বল দ্বীপরাষ্ট্রগুলো সাম্রাজ্যবাদী আর আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রের কাছে বাধ্য হয়েছে সামান্য অর্থের বিনিময়ে সার্বভৌম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ লিজ দেওয়ার নামে বিক্রি করে দিতে। একই বলে ভূমি সাম্রাজ্যবাদ। সাম্রাজ্যবাদের এতই ক্ষুধা যে, সে মাটি, পাতাল থেকে মহাকাশের, মহাসমুদ্রের সবকিছু গিলে খায়।
সিঙ্গাপুরের মতো ক্ষুদ্র অথচ ধনী রাষ্ট্র কিংবা চীনাদের অধীন স্বায়ত্তশাসিত হংকংয়ে মাটি বলে কিছু দৃশ্যমান নয়। সবই পায়ের তলায় পিষে মেরেছে অতিকায় বাড়িঘর। বাংলাদেশ আয়তনে খুবই ছোট একটি দেশ। বাঙালি জাতির একমাত্র স্বাধীন দেশ। ধনে-মানে যতই সে বড় হচ্ছে অর্থাৎ পুঁজিবাদ শক্তিশালী হচ্ছে, ততই সর্বগ্রাসী হয়ে উঠছে। এমনিতে দেশটির মাটির চেয়ে মানুষ বেশি, তার ওপর দেশটি পুঁজি আর মুনাফার খুদে দানবে পরিণত হচ্ছে। বাঙালির বেশির ভাগ ওই পুঁজির আর মুনাফার শোষণটা ততটা বুঝতে পারে না, ভাবে ওরা দরিদ্র থেকে বিত্তবান হচ্ছে। ওই যে প্রবাদ আছে‘দাদায় কইছে... ভাই, আনন্দের আর সীমা নাই।’ ৯৫ জনকে ঠকিয়ে ৫ জন যে লুটে নিচ্ছে, বিষয়টা তাদের বুঝিয়ে দেওয়ার রাজনীতিটা দেশে খুবই দুর্বল।
দেশটার সমুদ্র আছে, প্রকৃত অর্থে দ্বীপ বলতে তেমন কিছু নেই। সবেধন নীলমণি যা-ও একটা আছে অতিক্ষুদ্র প্রবাল দ্বীপ, তাতে রাক্ষসের মতো হামলে পড়েছে ভূমি নরইঁদুররা। পর্যটনের নামে ধ্বংস করছে তাকে। মূল্যবান পাথর সংগ্রহের নামে দ্বীপটির ভিত্তিভূমি তলদেশ ইঁদুরের মতো ফোকলা করে দিচ্ছে। একটা ভূকম্পন কিংবা সুনামি আঘাত করলে কখন যে সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাবে, তার ভাবনা ভাবার আবার লোকের অভাব। হায়রে সেন্টমার্টিনস!
তা ছাড়া উপকূল বা নদী মোহনায়, যা ভূমি আছে সবই অত্যন্ত দুর্বল পলিমাটিতে গড়া চরমাত্র। ঔপনিবেশিক যুগ শুরুর আগেই সন্দ্বীপ চরটিকে আবিষ্কার করেছিল পর্তুগীজরা। ওরা বুঝেছিল এর স্থায়িত্ব অনন্তকাল নয়। তাই ধর্মপ্রচারের জন্য একটি গির্জা আর নাবিক-জলদস্যুদের জন্য ক্ষণস্থায়ী আবাস গড়েছিল। তাও টিকল না দুটি কারণে। একটি হচ্ছে দ্রুত ভাঙন, সমুদ্র গ্রাসে দ্রুত ভূমি বিলীন হয়ে যাওয়া। অন্য কারণটি হচ্ছে দিল্লির মুঘল সম্রাটের আক্রমণ এবং ইংরেজ বণিকদের প্রবল চাপ। আজ সেই সন্দ্বীপ সমুদ্রের মহাগ্রাসে পতিত। মাটি কেন, এক দিন তার নামটিও হারিয়ে যাবে। বাঙালি ভূমিগ্রাসীরা এটা বুঝতে চায় না। সন্দ্বীপের বনাঞ্চল আর তৃণভূমি দখল করেছে ভূমিদস্যুরা। প্রাচীন বন কেটে, গভীর শেকড় প্রবাহী আদিম তৃণকে ধ্বংস করে দ্রুত ঘটাচ্ছে ভূমিক্ষয়। সর্বনাশ যে দ্রুত এগিয়ে আসছে তা বুঝতে চায় না ওরা। রুদ্র প্রকৃতি যে চরাঞ্চলকে গ্রাস করে ক্রমেই এগিয়ে আসছে মূল ভূখ-ের দিকে তা হয়তো টের পাচ্ছে নোয়াখালী-বরিশালের স্থানীয় দরিদ্র মানুষ। ওরা দুর্বল, কিছু করার নেই তাদের।
শুনতে যতই খারাপ লাগুক, স্বাধীনতার অনেক উদ্দেশ্যের ভেতর গোপন যে উদ্দেশ্যটি ছিল তা হচ্ছে বিত্তবান হওয়া আর ক্ষমতাবান হওয়া। অর্থ-বিত্তের সঙ্গে চুরি-চামারি, লুটপাট, দুর্নীতির গভীর সম্পর্ক। টাকা বানানোর জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিহীন হচ্ছে মাটি বা বালি লুণ্ঠন। বিষয়টি বাঙালি প্রথম জানল একাত্তরের পর। নগরায়ণ বা পরিকাঠামো উন্নয়নের জোয়ার আসে সরকারি ও বেসরকারি খাতে। দ্রুত উদ্ভব ঘটে ঠিকাদার নামক মানবপ্রজাতির। ওদের হাত ধরেই রাজধানী শহর ঢাকার সীমানা সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। নদী-নালা, বিলঝিল জাদুমন্ত্রের মতো হাওয়া। এমন একটি নদী নেই যার তলদেশের বালি থেকে দুই পাড়ের মাটি লুণ্ঠিত না হচ্ছে। নদীর স্তব্ধতা, নির্জনতা খানখান করে নদীগর্ভ থেকে তোলা হচ্ছে বালি, যন্ত্র বা ড্রেজারের মাধ্যমে। অপরিকল্পিতভাবে এই বালি উত্তোলনের ফলে বর্ষার শুরুতেই শুরু হয় নদীভাঙন। বিনেপয়সায় নদীগর্ভ আর চরের বালিখাদান দখল করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন এত সহজে আর কোথায় হচ্ছে? ওপরমহল আর পোষা মাস্তান বাহিনী, এই হচ্ছে পুঁজি।
রাতের নির্জনতাকে উচ্চনাদে কাঁপিয়ে শত শত ট্রাকবোঝাই বালি অন্ধকার বিদীর্ণ করে ছুটছে শহরে। এরাই আবার ফিরে আসছে শস্যভূমির মাটি দরিদ্র মানুষকে দুপয়সা দিয়ে বা ভয় দেখিয়ে দখল করে তুলে নিয়ে যথাস্থানকে ভরাট করে বাড়িঘর বানানোর কাজে। শুধু কাঁচামাটি দিয়ে কাজ হয় না। দরকার শক্ত বা পোড়ামাটি অর্থাৎ ইট। ইট তো আর শূন্য আসমান থেকে নেমে আসে না। তৈরি করতে হয় ব্রিকফিল্ডে। মাইলের পর মাইল শস্যভূমির বুক খামচে মাটি তুলে আর নদীর পলিমাটি লুট করে ইট পোড়ানো হয়। ইটের বড় বড় ভাটা দেখলে দূর থেকে মনে হয় ধরিত্রীর বুকে জ¦লছে এক মহাশ্মশান। সভ্যতা পুড়ে রক্তবর্ণ অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে। ইট তো নয়, পৃথিবীর জমাট রক্তে তৈরি রক্তশিলা।
বাংলাদেশের শস্যদায়িনী প্রকৃতির দান পলিমাটির অর্ধেক আজ লোহিতবর্ণ পাথর বা ইট হয়ে গেছে। মাতৃভূমির বুকের রক্তমাংস আগুনে পুড়ে বাঙালি আজ নগরবাসী উন্নত জাতিতে পরিণত হচ্ছে! শুধু কি তাই? তা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করছে বুক চেতিয়ে। নর্থ-ইস্ট ইন্ডিয়া বা উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা, মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ডের মতো রাজ্যগুলোতে সেই ইট, যা বাংলাদেশের পলল মাটি দিয়ে তৈরি, তা রপ্তানি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক নদীগুলো তাদের জলপ্রবাহকে দেশান্তরে পাঠায়, সেই জল প্রাকৃতিক নিয়মে সমুদ্র, বৃষ্টি, মেঘ হয়ে বর্ষায় ফিরে আসে বারবার।
কিন্তু কয়লা, গ্যাসপোড়া মাটির ইট, তা সাধারণ হোক চাই কী উন্নত সিরামিক ইট হোক, রপ্তানি হলে সে আর কি তার ধরিত্রী মাতার বুকে ফিরে আসে? আসে না তো, তা হলে? মাতৃভূমির বুক পরিণত হয় যে পোড়ামাটির অনুর্বর খানাখন্দে, মৃত মাটির কঙ্কালে, সে কি আর কোনো দিন যৌবন ফিরে পায়? পায় না। একাত্তরের বাঙালি শহীদের রক্তে ভেজা উর্বর মাটি নিয়েও মুনাফার বাণিজ্য করতে এতটুকু দ্বিধা করে না। এ না হলে আর বাঙালি!
বুড়িগঙ্গা। ইতিহাসের সাক্ষী। বাংলার প্রথম শহীদ এবং শেষ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা এই নদীর বুক বেয়েই মুর্শিদাবাদ থেকে ঢাকা নগরীতে এসেছিলেন। শেষবারের মতো খাসমহলে ফিরেও যান। শহীদ বাংলার নবাবের স্মৃতিময় বুড়িগঙ্গার বুকের জলতলের মাটি আজ অদৃশ্য, অস্পর্শ। হাজার হাজার টন প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্যে নদীর তলদেশ ঢাকা পড়ে গেছে। নদীর দুই তীরের মাটি অদৃশ্য। দ্রুত সংকীর্ণ নালায় পরিণত হচ্ছে এককালের প্রমত্তা বুড়িগঙ্গা। শত কি দুইশত বছর পর এ নদী নগর বর্জ্যবাহী নালায় পরিণত হবে। মাটি রাক্ষসের উদরে চলে গেছে নদীপাড়ের মাটি। বড় বড় অট্টালিকার পদতলে পদভারে আর্তনাদ করছে বুড়িগঙ্গা। বাঙালির শুধু নগরসভ্যতার স্মৃতি নয় বুড়িগঙ্গা। বাঙালির প্রবহমান ইতিহাস, তার সংস্কৃতি, সাহিত্য, অর্থনীতি এবং রাজনীতির সাক্ষ্য বহন করে এ নদী। প্রাচীন বাংলার প্রথম মানচিত্র এঁকেছিলেন যে রেনেল সাহেব তার নদ-নদীর সঙ্গে বুড়িগঙ্গারও নাম ছিল। আক্ষেপ এই, বাঙালি তার জাতীয় ঐতিহ্যের এই নদীটিকে হত্যা করে তার রক্তমাংস গিলে-চিবিয়ে খেয়েছে। প্রাচীন গ্রিকদের ইতিহাসে, মুঘল-সুলতানি ইতিহাসে, গুপ্তযুগের ইতিহাসে এবং ইংরেজদের ইতিহাসে বুড়িগঙ্গা যৌবনবতী নদী ছিল। বার্ধক্য অর্থে নয়, বরং আদরের বালিকা অর্থে তার নাম হয় বুড়িগঙ্গা। ভূমিদস্যু বা মাটিগ্রাসীরা চির কৈশোরের এই নদীটাকে বাঁচতে দিল না। সে যেন ধর্ষিত বিধ্বস্ত করুণ বালিকা।
আমার জন্ম নদী শীতলক্ষ্যা। শীতলক্ষ্যা আমার অস্তিত্ববিশ্ব। আমার সাহিত্যের, চিন্তা-চেতনা-দর্শনের অসীম এক জগৎ সে। মাতৃগর্ভ থেকে তার প্রসবের স্থান বরমী-কাপাসিয়া। ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী কালিবানার নদী থেকে সে জাত। সেখানে গেলে দেখা যায় বালিদস্যুদের ড্রেজার কীভাবে খুঁড়ে খাচ্ছে তার অতল জলের বুক। নদীর কলজে-হৃৎপিন্ড-ফুসফুস চিবিয়ে খাচ্ছে বালিদস্যুরা। বর্ষায় পাড় ভাঙছে। অচেনা হয়ে যাচ্ছে শীতলক্ষ্যার জন্মশয্যা। শীতলক্ষ্যার জন্ম তো বালি-মাফিয়াদের মুনাফার জন্য হয়নি? হয়নি ঢাকা শহরের অট্টালিকা নির্মাণের জন্য? কিন্তু পুঁজিবাদী মুনাফার শক্তি-রহস্য যে বড় জটিল, নির্মম-নিষ্ঠুর। মাটি বা বালির ক্ষুধা যে অন্যসব ক্ষুধার চেয়ে কোনো অংশেই দুর্বল নয়। বরং বলতে হয় ধনতন্ত্রের ভয়ংকর বিভীষণ-বিভীষিকাময় ক্ষুধা। মাটিখেকো নরইঁদুরদের তৈরি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সিস্টেমের ধ্বংস না হলে মাটির এই ধরিত্রী বাঁচবে না। বাঁচানো যাবে না। মহাসংকটে পড়বে বাঙালি। আজ যে উন্নয়নের ঢাকঢোল পিটিয়ে, নহবত বাজিয়ে নৃত্য করা হচ্ছে তার আড়ালে রয়েছে কী? সস্তাশ্রম আর ভূমি গ্রাস করে রপ্তানিমুখী শিল্প স্থাপনের নামে সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির শোষণের ক্ষেত্র তৈরি নয় কি? তার জন্য কি একাত্তরে রক্ত দিয়েছিল মানুষ? এটা কি মিথ্যে যে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশটার মাটি গ্রাস করেছে সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি?
লেখক: কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক
একবিংশ শতাব্দীতে চীনের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উত্থান ও ২০১৩ সালে কাজাখস্তানে প্রস্তাবিত ও ইন্দোনেশিয়া সফরে ব্যাখ্যা করা চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের বেল্ট রোড অ্যান্ড ইনিশিয়েটিভ বা ‘বিআরআই’ প্রকল্প ভারত সাগর থেকে লোহিত সাগর হয়ে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত ভূ-রাজনীতিতে এক অভিনব ভূমিকম্পন তৈরি করেছে। চীনের এই প্রকল্পের বিপরীতে বিশে^র প্রভাবশালী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ বা ‘আইপিএস’ এবং যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সমন্বয়ে একটি সামরিক জোট কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়ালগ বা ‘কোয়াড’ গঠন করে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র কেউই দক্ষিণ এশিয়ার দেশ না হলেও দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে এ দেশ দুটির বর্তমান প্রভাব অনস্বীকার্য। এশিয়ার দুই শীর্ষ অর্থনীতি চীন ও ভারত। সীমান্তে নানা ইস্যুতে বিরোধ সত্ত্বেও চীন-ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক ঈর্ষণীয়। দুই দেশ মার্কিন বলয়ের বিকল্প ‘ব্রিকস’-এর সদস্য। ব্রিকস বিশে^র ২৩ শতাংশ জিডিপি ও ৩২ শতাংশ জিডিপি-পিপিপি নিয়ন্ত্রণ করে। ব্রিকসের নিউ ডেভেলেপমেন্ট ব্যাংকের পুঁজি ১০০ বিলিয়ন ডলার, বার্ষিক ঋণ প্রদান ৩৪ বিলিয়ন ডলার পার করছে। এ ছাড়া নিরাপত্তা সংস্থা সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা বা ‘এসসিও’র প্রভাবশালী সদস্য চীন ও ভারত। ব্রিকস ও সাংহাই করপোরেশনের কমন রাষ্ট্র হলেও চীনের প্রস্তাবিত ‘বিআরআই’ প্রকল্পে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ভারত। যদিওবা বর্তমানে দুদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক ১০০ বিলিয়ন ডলার পার হয়েছে। গত তিন-চার বছরে সীমান্তে বহুবার চীন-ভারত মুখোমুখি হয়ে গেলেও সীমান্তের সে উত্তেজনা দুদেশের বাণিজ্যে খুব একটা আঘাত করতে পারেনি। তবে বাণিজ্য সম্পর্কের বাইরে দুদেশের বাকযুদ্ধ রীতিমতো চলমান ছিল। তাইওয়ানের নতুন সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ভারতীয় প্রতিনিধি পাঠিয়ে নয়াদিল্লি মূলত চীনকে ছেড়ে কথা না বলারই বার্তা দিয়েছে। ‘বিআরআই’কে এড়িয়ে ভারত বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘আইপিএস’ এবং সামরিক জোট ‘কোয়াড’-এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। শুধু তাই নয় ভারত মহাসাগরে চীনকে ঠেকাতে পশ্চিমাদের নির্ভরযোগ্য খুঁটিও ভারত।
তবে এরই মধ্যে ‘বিআরআই’ প্রকল্প দিয়ে চীন দক্ষিণ এশিয়াসহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজস্ব বলয় তৈরি করে ফেলছে। বিআরআই মূলত একটি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প যা রেল, সড়ক ও সাগর পথে ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকাকে সংযুক্ত করবে। এই প্রকল্পের অধীনে চীন আট হাজার কিলোমিটার সড়ক বা রেলপথ নির্মাণ করতে চায়, নিয়ন্ত্রণ করতে চায় বিশ্বের ৪০ শতাংশ জিডিপি। এরই মধ্যে ভারত ও ভুটান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সব কটি দেশের সঙ্গেই চীন বিআরআই নিয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এ ছাড়া বিআরআই প্রকল্পের ছয়টি করিডরের দুটি ‘চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডর’ ও ‘চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর’ যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার ওপর দিয়ে। চীন এই প্রকল্পের অধীনে হংকং, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও মালদ্বীপ হয়ে জিবুতি, সুদান পর্যন্ত সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে একটি সামুদ্রিক অর্থনৈতিক হাব তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। বিনিয়োগ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি করছে। চীন শুধু ব্যবসা করছে না, করছে ভূ-রাজনীতিও। মালদ্বীপে ২০১১ সালের আগে চীনের দূতাবাস না থাকলেও এখন দুদেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। মালদ্বীপে দ্বীপ কিনছেন চীনা বিনিয়োগকারীরা। রাজধানী মালের সঙ্গে বিমানবন্দর দ্বীপ হুলহুলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনকারী ব্রিজসহ বিআরআই প্রকল্পের অধীনে বহু প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ চলছে মালদ্বীপজুড়ে। একসময়কার ‘সিয়েনটো’ ‘সিয়েটো’-এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও মার্কিন মিত্র পাকিস্তান পিংপং কূটনীতির মাধ্যমে চীন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্থাপনে মধ্যস্থতা করেছিল। সে পাকিস্তান এখন বহুলাংশে চীনের দিকে ঝুঁকে আছে। বিআরআই প্রকল্পের অধীনে চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের মাধ্যমে পাকিস্তানে চীন বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে ৬০-৯০ বিলিয়ন ডলার, যা পাকিস্তানের মোট জিডিপির ১৪-২০ শতাংশ।
বিআরআই প্রকল্পের অধীনে শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা সমুদ্রবন্দর বিনিয়োগ ফাঁদে পড়ে চীনের হস্তগত হওয়ার বিষয়টি এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশ আলোচিত হয়েছে। যদিওবা এই দাবির বিপক্ষেও শক্তিশালী মত আছে। কিন্তু এত তুমুল তর্কবিতর্ক শ্রীলঙ্কায় চীনের বাণিজ্য বা বিনিয়োগকে টলাতে পারেনি। কলম্বো বিমানবন্দরের উন্নয়ন ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চীনা বিনিয়োগের কর্মযজ্ঞ চলছে শ্রীলঙ্কায়। শুধু বিনিয়োগ নয় রাজনৈতিক কূটনীতিতেও চীন শ্রীলঙ্কার ছাতা হচ্ছে। যেভাবে চীন বারবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যু, সামরিক সরকারের নানা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা সব নিন্দা প্রস্তাবকে আটকে দিয়ে মিয়ানমারকে বৈশ্বিক কূটনীতিতে চীননির্ভর করে তুলেছে শ্রীলঙ্কায়ও চীন তাই করছে। চীন দক্ষিণ এশিয়ায় একাধিক নীতিতে কাজ করছে কখনো রাজনৈতিক কূটনীতি, কখনো অর্থনৈতিক কূটনীতি, কখনো বা সফট পাওয়ার কূটনীতি নিয়ে তার হেজেমনি প্রতিষ্ঠার কাজ করছে। চীন ও ভারতের মধ্যে ‘বাফার জোন’ হিসেবে কাজ করে ভূবেষ্টিত নেপাল। বর্তমানে নেপালে চীনের বিআরআই প্রকল্পের অধীনে ২৪টি প্রজেক্ট চলমান রয়েছে। তৃতীয় দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করতে নেপালকে চীনা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে পেইচিং। নেপালের সীমান্ত শহর খাসা থেকে তিব্বতের লাসা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ, কাঠমুন্ডু-পোখরান-লুম্বিনি রেল প্রজেক্টের মাধ্যমে নেপালের অর্থনীতি ও যোগাযোগব্যবস্থা বদলের পরিকল্পনা নিয়েছে চীন। এসব প্রকল্প নিয়ে বিতর্কের ছোঁয়া ছিল নেপালের সর্বশেষ হয়ে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনেও। যেখানে নেপালি কংগ্রেস এই ম্যারাথন রেল প্রকল্পের বিপক্ষে কথা বলছে আর বামপন্থিরা এই প্রকল্পকে ‘নতুন নেপাল’ নির্মাণের মাইলফলক বলছে। ফলে কাঠমুন্ডুর রাজনীতিতে দিল্লির পাশাপাশি পেইচিংও এখন একটি চাবি। বাংলাদেশের বহুল কাক্সিক্ষত পদ্মা বহুমুখী সেতুতে বিশ্বব্যাংক বিনিয়োগ আটকে দিলে কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে পাশে দাঁড়ায় চীন। সেতুটির রেলসংযোগ চীনের ‘বিআরআই’ প্রকল্পের অংশ হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্প পেয়েছে চীন, নির্মাণ করছে কর্ণফুলীতে দেশের প্রথম টানেল। চীনের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এভাবে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মতো এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার শতাধিক দেশের হাজারখানেক প্রকল্পে এক ট্রিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ফেলেছে।
চীন বিআরআই প্রকল্পের অধীনে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে চাইলেও কোয়াড রাষ্ট্রসমূহ চীনের রাজনৈতিক বিনিয়োগের আড়ালের ভূ-রাজনীতি মোকাবিলায় বদ্ধ পরিকর। কোয়াড ও পশ্চিমা দেশগুলো এরই মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার যেসব দেশে চীনের বিনিয়োগ বাড়ছে, সেখানে বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে হাজির হচ্ছে। এর ফলে বিআরআই, আইপিএস ও কোয়াডের শক্তি প্রদর্শনের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল হয়ে উঠতে পারে দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগর সমুদ্র অঞ্চল। কেননা উভয় পক্ষ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে প্রভাব তৈরিতে মরিয়া।
লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট
কবে শবে বরাত-কদর? কোন তারিখে শুরু রোজা? এরপর ঈদ! রোজাদার মুসলিমরা এখনো নিশ্চিত নন। এদ্দুর শুনেছেন আগামী ২৩ বা ২৪ মার্চ থেকে রমজান মাস শুরু হতে পারে। এ বিষয়ক সিদ্ধান্ত নিতে রাখা হয়েছে চাঁদ দেখা কমিটি। কিন্তু, বাজার সিন্ডিকেট সব দেখে ফেলেছে। ঈদ-চাঁদ তাদের মুখস্থ। মৌসুম দৃষ্টে তাদের চানরাত চলছে, যা শুরু হয়েছে ঢের আগেই। মৌসুমি বাণিজ্য হাতাতে করণীয়র যাবতীয় ছক আগেই করে শুরু করেছে বাস্তবায়ন। আদা-সাধা থেকে রসুন, বুট, ছোলা, ডাল, তেল, মসলাসহ রোজা-রমজানের জরুরি সব আইটেমের কারসাজি তাদের কব্জায়। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও ডলার সংকট তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। সব কিছুতে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ আর ডলার সংকটের অজুহাত তাদের। কিশোরগঞ্জের শুঁটকি, কুমিল্লার কচুরলতি বা নরসিংদীর লাউয়ের দরেও শোনানো হয় ডলার ক্রাইসিসের কথা। জ্বালানি তেল পরিস্থিতির জন্য রাশিয়া প্রাসঙ্গিক। চাল, আটা-ময়দার চড়া দামের জন্য ইউক্রেনের দুরবস্থা, আর আদা-রসুনে জানানো হয় চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক বিরোধের তথ্য। এসব তথ্য একদম অমূলক বা ভিত্তিহীন নয়। যোগসূত্র অবশ্যই বিদ্যমান। কিন্তু, দোহাই আর অজুহাতের নমুনা বড় নির্মম। এরা অচেনা নয়, কিন্তু অধরা। ক্ষেত্র বিশেষে যেন সরকারের চেয়েও শক্তিশালী। তার মানে সরকার এদের চেয়ে কমজোরি? নিষ্পত্তিহীন প্রশ্ন।
বিলাসিতা পরিহার করে সংযম চর্চা রমজানের মূল শিক্ষা হলেও বাস্তবে মাসটিতে দেশের সিংহভাগ মানুষের ভোগ-চাহিদা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। বিশেষ করে ভোজ্য তেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি, খেজুর, বেগুনের পাশাপাশি মাছ-মাংসের চাহিদা বাড়ে দ্বিগুণের বেশি। এর লাগাম টানার আহ্বান জানানো হলেও নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই অসাধ্য। ঝুঁকিপূর্ণও। নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা নয়, কম খরচের আহ্বান বেশি রাখলেও ভিন্ন অর্থ টেনে আনার ভয় কাজ করে। এর পুরো সুযোগটা নেয় বাজার সিন্ডিকেট। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে হাহাকার ছড়ানো, নিত্যপণ্যের বাজার চড়ানোর অবারিত সুযোগ আপনাআপনিই চলে যায় তাদের হাতে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের জন্য এটি কিছুটা বিষে আক্রান্ত হওয়া বা বিষ খেয়ে বিষ হজম করার মতো দশা। এবার নিত্যপণ্যের বাড়বাড়ন্ত অবস্থার মধ্যে রমজানকে টার্গেট করে সিন্ডিকেট বেশি তৎপর। গত ক’দিন ধরে প্রতিটা দিনই তাদের কাছে চানরাতের মতো। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও ডলার সংকটকে কাজে লাগিয়ে মুনাফাবাজির ষোলোকলা ভরছে তারা। চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, আটা, ময়দা, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, হলুদ, মরিচ, এলাচ ও দারুচিনিসহ প্রায় সবপণ্যেই থাবা বসিয়েছে। নতুন করে কেবল দাম বাড়ায়নি, সামনে মাল পাওয়া কঠিন হবে মর্মে আতঙ্ক তৈরিতেও কামিয়াব হয়ে গেছে।
এরইমধ্যে পরিস্থিতি বিবেচনায় চাহিদার অতিরিক্ত পণ্য না কেনার আহ্বান জানিয়ে ট্রল আইটেম করে ফেলা হয়েছে বাণিজ্যমন্ত্রীকে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা এসেছে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। এতে গা মাখা বা ভয় পাওয়া কবেই ভুলে গেছে কথিত সিন্ডিকেট। জটিলতার মধ্যেও এলসির বহু পণ্য বন্দরে এসেছে-আসছে। ডলার সংকটে চালান খালাসে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে তাও সত্য। এ সত্যকে ভিত্তি ধরে আমদানিকারকদের প্রতিদিন লাখ লাখ ডলার ক্ষতির কথা বেশি বেশি প্রচারের মধ্যে সামনের দিনগুলোতে পণ্যমূল্য আরও বৃদ্ধির বার্তা পাচ্ছে মানুষ। যে পর্যায় বা পেশার মানুষই হোক তারা প্রতিদিনই দ্রব্যমূল্যসহ নানা সংকটের উত্তাপ টের পাচ্ছেন। যেসব এলসি হয়ে গেছে, সেসব পণ্যের অর্থ সময়মতো খালাস করতে পারলে সংকট প্রকট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু, তা প্রকাশের ভাব-ভঙ্গিতে মতলব পরিষ্কার। রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্যের জোগান নিশ্চিত ও দাম সহনীয় রাখতে সরকারের উদ্যোগকে পারলে আড়ালই করে ফেলা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভোজ্য তেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুর ৯০ দিনের সাপ্লায়ার্স বা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় আমদানির সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ীরা। যা ডলার সংকটের এই সময়ে এলসির অনিশ্চয়তা কিছুটা কমেছে। কিন্তু, সুযোগের অপেক্ষমাণদের তৎপরতা কমেনি।
কথাচ্ছলে বলা হয়ে থাকে, মুক্তবাজারে সরকার হস্তক্ষেপ করে না বা করতে পারে না। বাজার অর্থনীতি নিয়ে এ ধরনের আরও কিছু কথামালা প্রচলিত আছে। এসব কথার মধ্যে এন্তার ফাঁকফোকর। আগে-পিছে প্রচুর পরিমাণে ‘যদি, কিন্তু, তবে’ লুকানো এসব কথার পিঠে কথার সঙ্গে কিছু প্রশ্নও রয়েছে। বাজারে হস্তক্ষেপের চেয়ে এখানে বাজার নষ্টের হোতাদের শায়েস্তা করা বেশি প্রাসঙ্গিক। সেইক্ষেত্রে কেবল হস্তক্ষেপ নয়, প্রয়োজনে পদক্ষেপও প্রত্যাশিত। এটি সরকারের বিশেষ দায়িত্বও। যে কারণে ধরপাকড়-জরিমানাসহ অভিযান চলে এদের বিরুদ্ধে। কিন্তু, সুফলটা কাক্সিক্ষত মাত্রায় আসে না। অভিযানকারীরা চলে যাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে বাজার দুর্বৃত্তরা বেঁকে বসে। পারলে আগের চেয়ে আরেকটু বেশি করে। কেবল চিনি-পেঁয়াজ, নুন-মরিচ নয়; কচুরলতি-শুঁটকির বাজারও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলে। জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম, মজুদ, সরবরাহের নিয়ন্ত্রকও তারা। এদের রুখতে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একগুচ্ছ জরুরি নির্দেশনা জারি করাই আছে। নির্দেশনাগুলো কম-বেশি পালন হলেও এদের দমানো যাচ্ছে না। এই ছিনিমিনি, চালবাজিসহ বাজার পরিস্থিতির হোতারা অজানা-অচেনা নয়।
বহুদিন ধরে ‘চক্র-গোষ্ঠী’ ধরনের নামে সম্বোধন করা হতো এদের। গত বছর কয়েক ধরে ডাকা হয় ‘সিন্ডিকেট’ নামে। এদের কারণে সিন্ডিকেট নামের সুন্দর শব্দটির অর্থ বদলে গেছে। সিন্ডিকেট শব্দটি ফরাসি ভাষা থেকে আগত। উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ সিন্ডিকাস থেকে। ব্যাখ্যায় সিন্ডিকেট হলো: ব্যক্তি, কোম্পানি, করপোরেশন বা সংস্থার একটি স্ব-সংগঠিত গোষ্ঠী যা কিছু নির্দিষ্ট ব্যবসায় লেনদেন করার জন্য অথবা একটি অংশীদারত্বমূলক স্বার্থ অনুসরণ বা প্রচারের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়। অভিধানে সিন্ডিকেটের প্রথম সংজ্ঞা হচ্ছে, ব্যবসায়িক উদ্যোগ বা সংগঠিত সংস্থাগুলোর একটি যৌথ প্রকল্প যা যৌথ মূলধন প্রয়োজনের জন্য গঠিত। কিন্তু, বাস্তবে এখানে অর্থটা ভিন্ন। বলার অপেক্ষা থাকছে না, কিছু লোকের কাণ্ডকীর্তিতে ‘সিন্ডিকেট’ শব্দটির ব্যবহার প্রায়ই অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত অর্থ হয়ে গেছে। অথচ এক সময় সিন্ডিকেট শব্দটি স্মার্ট ছিল। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে সিন্ডিকেট-অ্যাসোসিয়েটস ধরনের শব্দ ব্যবহারে জৌলুশ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার বলতে অন্যরকম গর্ব হতো। এখন ব্যবহার হয় ‘দুষ্টচক্র’ অর্থে। দেশে সিন্ডিকেট বলতে এখন বোঝায়, মধ্যস্বত্বভোগী। তারা এ সমাজেরই অংশ। আমাদের চারপাশে বা মধ্যেই তাদের বিচরণ। কিন্তু, নিজেকে বা নিজেদের ‘সিন্ডিকেট’ বলে পরিচয় দেয় না। আবার কেউ আঙুল তুলে তাদের সিন্ডিকেট নামে ডাকে না। কিন্তু, নাম-ঠিকানাসহ জানে, চেনে। সরকারের দিক থেকেও সিন্ডিকেট শব্দ ব্যবহার হয়। এই সিন্ডিকেট সাহেবদের কর্মপরিধি কেবল চাল, ডাল, পেঁয়াজ, মাছ, মাংস, তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, চিনি, লবণসহ নিত্যপণ্য নিয়ে নয়। পরিবহন, ব্যাংক-বীমা, গ্যাস-বিদ্যুৎ, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, ঠিকাদারি, সরকারি কেনাকাটাসহ প্রায় সব সেক্টরেই। এদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য-চিকিৎসাও। একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মিলে উদ্দেশ্য হাসিল করে চলছে তারা। শুধু সাধারণ মানুষের জীবন নাজেহাল নয়, সরকারকেও অক্টোপাসের মতো গিলে ফেলার অবস্থা করে দিচ্ছে এ সিন্ডিকেট।
বিভিন্ন সেক্টরে ঘটনাচক্রে নানান সিন্ডিকেটের কথা আসে। সিন্ডিকেট নেই কেবল গরিব ভোক্তাদের। এরাই হচ্ছে টার্গেট গ্রুপ। তাদের উদ্দেশ্য করে সিন্ডিকেট বেশ ক্রিয়াশীল। নিজেদের স্বার্থে এরা যেকোনো সময় জনগণকে জিম্মি করে ভোগান্তিতে ফেলতে কার্পণ্য করে না। এরা এক সেক্টরেও থাকে না। দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারেও এরাই। মানবপাচার, খুন, গুম, ধর্ষণ ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডও চলে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। মৌসুম দৃষ্টে সেক্টর বদলায় অদৃশ্য শক্তির মতো। বিভিন্ন সেক্টরে মামুরা আর খালুরার মতো তারা তারাই করে যাচ্ছে নানা অপকর্ম।
চুরির ওপর সিনাজুরিতে এরা কেবল ক্রেতাকুলকে নয়, গোটা দেশ এমনকি সরকারকেও কাহিল করে চলছে। কিন্তু, সরকার সিন্ডিকেটকে সেই অনুপাতে কাবু করতে পারে না। জনগণের সঙ্গে পরিচয় করিয়েও দেয় না। শনাক্ত করার পদক্ষেপও নেয় না। পরিণামে দমনের চেষ্টা করেও কুলাতে পারে না। অথচ সিন্ডিকেটের কাজের দায়-বদনামের সিংহভাগ গড়ায় সরকারের ওপর। অজুহাতে পাকা এই চক্র করোনা মৌসুমে দাবড়িয়েছে সব সেক্টর। এরপর রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধকে আশীর্বাদ হিসেবে পাকাপোক্তভাবে ভর করেছে খাদ্য থেকে ওষুধ পর্যন্ত যাবতীয় নিত্যপণ্যে। যথারীতি গত ক’দিন ধরে তাদের যাবতীয় কর্মযজ্ঞ রমজানকে ঘিরে।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন
আমাদের সমাজে কি সহিষ্ণুতা কমে যাচ্ছে? এ শুধু রাজনৈতিক পরমতসহিষ্ণুতার প্রশ্ন নয়, সমাজের সব স্তরে সব খানেই যেন সহিষ্ণুতার বড় অভাব। আর তার বিপরীতে যেকোনো ঘটনা-দুর্ঘটনাতেই আমরা যেন দ্রুতই উত্তেজিত হয়ে পড়ছি, উত্তেজনা ছড়িয়ে দিচ্ছি আর সংঘাত-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছি। এমন বাস্তবতার খোঁজ পাওয়া যাবে পথে-ঘাটে বাজারে-বিপণিতে হরহামেশাই। অবস্থা দেখে মনে হয় সবাই যেন আপ্তবাক্য হিসেবে সংঘাত উসকে দেওয়া সেই পুরনো গ্রামীণ বচনই মেনে নিয়েছে যে ‘হাত থাকতে মুখে কি!’ এমন সহিংস প্রবণতা যেন সংক্রামক হয়ে গেছে সারা দেশের নগর-বন্দর-জনপদে। এই প্রবণতার পরিণতি যে কত ভয়াবহ হতে পারে সেটা দেখা যায় কোনো সংঘাত যখন জনতার মধ্যে ছড়িয়ে যায় তখন। জনতা একবার উত্তেজিত হয়ে পড়লে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। প্রশ্ন জাগছে যে, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে রবিবার সড়ক দুর্ঘটনায় এক কারখানা শ্রমিকের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় ৩০০ গাড়ি ভাঙচুর এবং সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা কি এমন সহিংস প্রবণতারই ফল নাকি এর নেপথ্যে রয়ে গেছে আরও গূঢ় কোনো কারণ?
সোমবার দেশ রূপান্তরে ‘৩০০ গাড়ি ভাঙচুর ৪ ঘণ্টার যানজটে নাভিশ্বাস’ প্রতিবেদনে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ঘটনাপ্রবাহে যে ভয়াবহ সন্ত্রাসের চিত্র ফুটে উঠেছে সেটা মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টকর। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, কালিয়াকৈরে সড়ক দুর্ঘটনায় এক নিরাপত্তাকর্মী নিহতের ঘটনার পর তার প্রতিবাদে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে প্রায় তিন শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর চালিয়েছেন কারখানার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এতে প্রায় অর্ধশত পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রী আহত হয়েছেন। এ সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপাশে প্রায় ১৫-১৬ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন ইজতেমাগামী মুসল্লিসহ পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা। রবিবার সকালে ওই মহাসড়কে ট্রাকচাপায় আজাদুল ইসলাম (৪৫) নিহত ও তিন শ্রমিক আহত হন। এর পর থেকে মহাসড়কে বিক্ষোভ করতে থাকেন শ্রমিকরা। ট্রাকটিতে আগুন দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর শুরু করেন তারা। এরপর ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। খেয়াল করা দরকার, এই দুর্ঘটনা এবং পরবর্তী সহিংসতার সঙ্গে মহাসড়কের ওই অংশে ফুট ওভারব্রিজ না থাকার মতো একটা বিষয়। এলাকাবাসী, কারখানার শ্রমিক, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর ওই এলাকায় কোনো ফুটওভার ব্রিজ না থাকায় মাহমুদ জিন্স লিমিটেড, নুর গ্রুপের রাইয়ান নিট কম্পোজিট লিমিটেড, নাগ্ররাসহ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ওই স্থানে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পার হন। ফলে প্রায়ই ওই স্থানে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন শ্রমিকসহ স্থানীয়রা। পোশাক কারখানার কর্র্তৃপক্ষ মহাসড়কের ওই স্থানের দুপাশে নিরাপত্তাকর্মী রেখেছেন। প্রতিদিনের মতো সকালে কারখানায় কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন শ্রমিকরা। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীরা লাল নিশান উড়িয়ে যানবাহন থামানোর চেষ্টা করেন। এদের মধ্যে মাহমুদ জিন্স লিমিটেড কারখানার নিরাপত্তাকর্মী আজাদুল ইসলামও নিশান উড়িয়ে শ্রমিক পারাপার করছিলেন। এ সময় তাদের নিশান উপেক্ষা করে পাথরভর্তি দ্রুতগতির একটি ট্রাক তাকেসহ চারজন শ্রমিককে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিরাপত্তাকর্মী আজাদুল ইসলাম মারা যান।
কালিয়াকৈরে ট্রাকচাপায় আজাদুলের মৃত্যু এবং পরবর্তী অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতা থেকে এটা স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান যে, ‘লাল নিশান’ উড়িয়ে মহাসড়ক পারাপারের মতো একটি অগ্রহণযোগ্য ব্যবস্থাপনার কারণেই সেখানে ট্রাকচাপায় ওই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। প্রশ্ন হলো, একটি শ্রমঘন শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের মহাসড়ক পারাপারের নিয়মিত ব্যবস্থা হিসেবে এমন ‘লাল নিশান ব্যবস্থা’ কীভাবে বৈধতা পেল? সেখানকার কারখানা মালিকরা কেন স্থানীয় প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে শ্রমিকদের মহাসড়ক পারাপারের জন্য স্থায়ী সমাধান হিসেবে সেখানে ফুটওভার ব্রিজ তৈরির পদক্ষেপ নিলেন না? নিজ নিজ কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে সেটাই করণীয় ছিল কারখানা মালিকদের। অন্যদিকে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, একটি পাথরবোঝাই ভারী ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে এক নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যু সহকর্মীদের ক্ষোভের কারণ হবে। কিন্তু সেই ক্ষোভের কারণে বহু মানুষের মধ্যে সহিংসতা ও সংঘাতকে আরও ছড়িয়ে দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। উত্তেজনা থেকে সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর ফুটওভার ব্রিজের মতো একটা কাঠামোর সংকট কীভাবে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে তার শিক্ষা নেওয়ারও তাগিদ দিচ্ছে কালিয়াকৈরের ঘটনা। কালিয়াকৈরের এই লাল নিশান থেকে যদি শিক্ষা না নিই তবে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি সারা দেশেই চলতে থাকবে।
১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে শহীদ হন ‘শহীদ মতিউর’ নামে খ্যাত মতিউর রহমান মল্লিক। তার জন্ম ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি ঢাকায়। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি কারফিউ ভেঙে ছাত্ররা মিছিল বের করলে পুলিশ সেই মিছিলে গুলি চালায়। তখন শহীদ হন ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান। এরপর ২৪ জানুয়ারি ঢাকা আবার মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠলে সেদিন পুলিশ গুলি চালায়। তখন পুলিশের গুলিতে নিহত হন ঐতিহ্যবাহী স্কুল নবকুমার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়। কিশোর সৈনিক শহীদ মতিউরের রক্ত বৃথা যায়নি। তার রক্তের ধারা বেয়েই ঊনসত্তরের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান তুঙ্গস্পর্শী হয়, আর তারই পরিণতিতে স্বৈরাচারী আইয়ুবের ক্ষমতার অবসান ঘটে। এর পরেই আসে সত্তরের নির্বাচন, নির্বাচনে বাঙালির বিজয়, ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে পরবর্তী স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খানের নানা ছলচাতুরী, প্রতারণা এবং সবশেষে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম। কিশোর শহীদ মতিউর শুধু ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানেরই এক অদম্য প্রেরণাশক্তি নয়, বাঙালির মহান মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসেও তার আত্মদান চিরদিন অম্লান থাকবে।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে হাইড্রোলিক পাওয়ার স্টেশনে তীব্র পানির সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাবৃষ্টি এবং তীব্র তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে। ৫টি ইউনিটের মধ্যে কোনরকমে মাত্র ১টি ইউনিট সচল রেখে সর্বনিম্ন ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের জানান, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি জানান, পানির অভাবে কেন্দ্রের সব ক’টি ইউনিট সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিটটি চালু রাখা হয়েছে। এই ইউনিট হতে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এই কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল থাকলে প্রায় ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। সেখানে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট।
এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, বছরের এই সময়ে কখনই পানি এতো নিচে থাকে না। এ বছর এখনো বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়ায় খুবই বিপাকে পড়তে হয়েছে আমাদের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। আমরাও বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত প্রকৌশলী জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ৭৩ দশমিক ৬২ ফুট (মিন সি লেভেল) ছিল। রুলকার্ভ অনুযায়ী এসময় হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ২০ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর বৃষ্টিপাত না হলে এই সংকট হতে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জানান প্রকৌশলীরা।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, অনাবৃষ্টি, বন উজার হওয়া, কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা সংকটের কারণে পানি তলানিতে চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে এমন বিপর্যয় ঘটেছে। সঙ্গতকারণে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পানি কমে যাওয়ার ফলে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। হ্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি উপজেলার সাথে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাসকারী নুরুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টিপাত না হলে হ্রদে পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই দ্রুত সময়ে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করা প্রয়োজন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা যেমন বাড়বে তেমনি এই সমস্যা থেকে কিছুটা সমাধান পাওয়া যাবে।
বিলাইছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন জানান, বিলাইছড়িতে নৌপথ বন্ধ মানেই জীবন ও জীবিকার দুর্বিষহ অবস্থা। আমরা বিলাইছড়িবাসীই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি হ্রদের পানি কমে যাওয়ায়। বৃষ্টি হতে যত দেরি হবে আমাদের কষ্ট তত বেশি দীর্ঘায়িত হবে।
তিনি বলেন, হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বাজারের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বড় বোটতো আসতেই পারছে না, ছোট ছোট বোটে পণ্য পরিবহনে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, পর্যাপ্ত পণ্যও আনা যাচ্ছে না। আবার অনেক দূর থেকে পণ্য বাজারে তুলতে শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সাপ্তাহিক বাজারও এখন ঠিকমতো জমছে না। কারণ দূর থেকে মানুষজন আসতে পারছে না। এখন বৃষ্টি হওয়া ছাড়া পানি বাড়ার তো আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।