
মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম পার্বণ কোরবানির ঈদ। অতীত আর বর্তমানের এই ঈদ পালনে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। এখন কোরবানি ঈদে পশু কোরবানি দেওয়া ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটাও সত্য, কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য খুব কম লোকেরই থাকে। আমাদের মোট জনসমষ্টির ১৫ ভাগ পরিবারে কোরবানি ঈদ আসে উদযাপনের বারতা নিয়ে। বাকি ৮৫ ভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠদের পক্ষে আর্থিক কারণে কোরবানি দেওয়া সম্ভব হয় না। গ্রামে ভাগে কোরবানি দেওয়ার প্রচলন অতীতেও ছিল, আজও আছে। কিন্তু সামাজিক জীবনে পরস্পর বিচ্ছিন্ন শহরের মানুষেরা ভাগে কোরবানি দেয় না। দিলেও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির খুবই নগণ্য অংশ। আমাদের দেশে কোরবানির পশুর ক্ষেত্রে গরুই বেশি। নিম্নমধ্যবিত্তদের একটি অংশ অর্থনৈতিক কারণে খাসি কোরবানি দেয়। আমাদের দেশে কোরবানি দেওয়া–না দেওয়ার ওপর মানুষের সামাজিক মর্যাদাও নির্ভর করে। এই সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় ঋণ করেও অনেকে কোরবানি দেন। কোরবানির গরু নিয়েও এক ধরনের সামাজিক প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যায়। কে কয়টি এবং কত বড় গরু কোরবানি দিচ্ছে এ নিয়ে ঠান্ডা প্রতিযোগিতাও দেখা যায়। অর্থাৎ ধর্মীয় বিধানের চেয়েও সামাজিক মর্যাদার অংশ হয়ে পড়েছে কোরবানি দেওয়া-না দেওয়ার বিষয়টি।
ব্যক্তিগতভাবে ইরাকের বিভিন্ন প্রদেশ ও শহরে পাঁচ বছর ছিলাম। কোরবানির ঈদের দিন বাগদাদ, বসরা, মশুল, কিরকুক, রামাদি, ফালুজা, আল-কাইম, আকাসাত পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শহরে ঘুরে পশু কোরবানি দেওয়ার দৃশ্য কখনো দেখিনি। এ নিয়ে স্থানীয়দের জিজ্ঞেস করলে তারা জানিয়েছিল, ‘হ্যাঁ, আমরা নিশ্চয় কোরবানি দিই। তবে সেটা হজের সময়। পশু কোরবানি দেওয়া হজের আনুষ্ঠানিকতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে প্রতি বছর পশু কোরবানি দিই না। প্রতি বছর পশু কোরবানি দেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিধান নেই।’
আমাদের দেশের মানুষের প্রোটিন চাহিদা পূরণে গরুর মাংস ছিল তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে সস্তা খাবার। কিন্তু গত কয়েক বছরে ক্রমান্বয়ে গরুর মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের পক্ষে গরুর মাংস খাওয়া আর সম্ভব হয় না।
পাশর্^বর্তী দেশ ভারতের অনেক প্রদেশে গরু জবাইকে কেন্দ্র করে নানা অঘটনের দৃষ্টান্ত রয়েছে। অনেক প্রদেশে আইনসিদ্ধ উপায়ে এটা নিষিদ্ধ। বিজেপি ক্ষমতা গ্রহণের পর বিজেপি-শাসিত রাজ্যে এবং অন্যান্য রাজ্যেও গো-হত্যা নিষিদ্ধ করেছে। অবিভক্ত বঙ্গে মুসলমানের সংখ্যা ৫২ শতাংশ এবং হিন্দুর সংখ্যা ছিল ৪৮ শতাংশ। তুলনামূলক মুসলমান জনসংখ্যার সংখ্যাধিক্য অঞ্চলে গরু জবাই নিয়ে তেমন বিরোধ-বিরোধিতা তখন ছিল না। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ পৃথক রাষ্ট্রের অধীনে হলেও সেখানে অতীতের মতো এখনো গরু জবাই হয়। পূর্ববঙ্গে মুসলিম সংখ্যাধিক্যের কারণে গরু জবাই নিয়ে কখনো বিরোধ সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। আমরা যে অল্প মূল্যে গরু এবং গরুর মাংস কিনতে পারতাম তার প্রধানতম কারণ ছিল ভারতবর্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়, বৌদ্ধ, জৈন প্রভৃতি সম্প্রদায় গো-মাংস খায় না বলে।
কলকাতায় গেলে দেশের চেয়ে প্রচুর সস্তায় গরুর মাংস খাওয়া সম্ভব হয়। বিহারি মুসলিম হোটেলগুলোতে গরুর মাংসের নানা পদের গুরুপাকের রান্না মাংস ভীষণ স্বল্পমূল্যে খাওয়া যায়। মাত্র বছর পূর্বে আগের দামের চেয়ে দ্বিগুণ দামে হোটেলে গরুর মাংসের বিক্রি দেখে দোকানিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। দোকানি হিন্দিতে যা বলেছিল তার বঙ্গানুবাদ হচ্ছে, কলকাতায় মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশাপাশি ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরাও গরু খাওয়া শুরু করার পর গরুর মাংসের মূল্য বেড়ে গেছে। এ ছাড়া সব ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব তো রয়েছেই। সেটাও গরুর মাংসের মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
ভারতের বর্তমান শাসক দল হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি। এই দলটি নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভে ক্ষমতায় এসেছে। বহির্বিশ্বে গো-মাংস রপ্তানিতে দেশটি শীর্ষে অবস্থান করলেও কয়েক বছর আগে বিজেপি সরকার ধর্মীয় বাংলাদেশে গরু রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এতে আমাদের দেশে গরু এবং গরুর মাংসের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বলে চোরাইপথে কিন্তু গরু আসা রোধ হয়নি।
বাংলাদেশে গরুর চাহিদা বিবেচনায় ভারতের খামারিরা গরু পালনে দীর্ঘকাল যাবৎ জীবিকা অবলম্বন করে এসেছে। বাংলাদেশের গরুর বাজারের ওপর প্রচুর ভারতীয় খামারিরা নির্ভরশীল। হঠাৎ গরু রপ্তানি বন্ধে ভারতীয় খামারিদের জীবন-জীবিকাও হুমকির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ আগাগোড়া ভারতীয় গরুনির্ভর বলেই দেশে গরুর খামার ব্যবসায়ীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পায়নি। দেশীয় খামারিদের গরু পালন ব্যয়সাপেক্ষ বলেই গরুর প্রকৃত মূল্য না পাওয়ার আশঙ্কায় গরু পালনে খামারিরা উৎসাহী হয়নি। ভারতীয় গরুর মূল্য দেশীয় খামারে পালিত গরুর মূল্যের চেয়ে অধিক কম হওয়ায় গরু পালনে আমাদের খামারিদের অনীহা ছিল। তবে ভারত সরকার গরু রপ্তানি বন্ধ করার পর বাংলাদেশে গরু ব্যবসায়ী-খামারিদের মধ্যে গরু পালনে আশাপ্রদ সাড়া পড়েছে। চোরাইপথে ভারতীয় খামারিদের গরু আসা কমলেও, বন্ধ নেই। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকেও গরু আসে।
ভারতের গরু না আসার কারণে আমাদের দেশে গরু উৎপন্ন ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। গত ক’বছরে আমাদের দেশে উৎপাদিত গবাদি পশুর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার গবাদি পশুর খামারিদের জন্য ৫ শতাংশ সুদে ঋণসুবিধা প্রদানও এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। কোরবানি ঈদের চাহিদা দেশীয় গরু দিয়ে মেটানো যাবে বলে মত দিয়েছে খামারি, মাংস, চামড়া ব্যবসায়ী সংগঠন এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। তারা পর্যাপ্ত গবাদিপশু মজুদের কথাও বলছেন বটে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এত দ্রুত বা কম সময়ে কোরবানি ঈদে গবাদি পশুর চাহিদা দেশের গবাদিপশু দিয়ে পূরণ সম্ভব হবে না।
দেশে কোরবানি ঈদে গবাদি পশুর প্রয়োজন এক কোটির অধিক। এই বিশাল চাহিদা দেশে পালিত গবাদিপশু দিয়ে পূরণ হবে না। ঘাটতি পড়বে। যদিও ঘাটতির সুযোগটি নিতে মধ্যস্বত্বভোগী, পাইকার ও খামারিরা গ্রহণের অভিপ্রায়ে ঈদে গবাদি পশুর ঘাটতি হবে না বলে জোর প্রচার চালায়।
আমরা নিশ্চয় গবাদি পশুর পরনির্ভরতা অতিক্রম করে স্বাবলম্বী হবো। কিন্তু সে জন্য সময়ের প্রয়োজন। যা দু-চার বছরে সম্ভব হবে না। পূর্বে ভারত থেকে ২৫-৩০ লাখ গরু এলেও গত ঈদের সময় এসেছিল মাত্র আড়াই-তিন লাখ গরু। এ কারণে গত কোরবানি ঈদের বাজেট কারও পক্ষেই রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। গরু কিনতে সবারই বাজেট ঘাটতি হয়েছিল।
বাংলাদেশ গবাদি পশুর চাহিদায় স্বয়ংসম্পূর্ণ দাবি করা হলেও গরু এবং গরুর মাংসের দর কমার কিন্তু কোনো সম্ভাবনা নেই। দরবৃদ্ধি ঘটবে অন্যান্য খাদ্যপণ্যের মতো। আসলে বাজার ব্যবস্থায় ঘাটতি এবং মজুদদারির কারসাজিতে দরবৃদ্ধির ঘটনা আমাদের অভিজ্ঞতাজুড়ে রয়েছে। গরুর ক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটবে না, সে নিশ্চয়তা কিন্তু নেই। আমাদের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সততার লক্ষণ খুবই ক্ষীণ।
বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা। বছর ঘুরতেই এটা হাজারে অতিক্রম করলে বিস্মিত হবো না। দেশে খাদ্যপণ্যের দর আকাশচুম্বী হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কোনো শাসকের শাসনামলে বাজার ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা অতীতেও ছিল না, ভবিষ্যতে থাকবে, সেটাও আশা করা যাবে না। আমাদের ব্যবসায়ীরা শাসকশ্রেণির অবিচ্ছেদ্য অংশ বলেই তাদের মুনাফা নিয়ন্ত্রণে কোনো সরকারই এ যাবৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
‘পরীমণিকে কাঁদিয়ে ছাড়ল লাইভ প্রেজেন্টার’ সংবাদ শিরোনাম হিসেবে এটি কেমন? আমার ধারণা বেশ ভালো। এই বাক্যের মধ্যে পরীমণিকে দেখা যায় শক্তিমতী নারী হিসেবে, যাকে কাঁদিয়ে ছাড়তে হয় এবং তা করতে পারে দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যম। ‘লাইভে এসে কাঁদলেন পরীমণি’ লিখলে ব্যাপারটা অন্যরকম মনে হতো। না, এমন কোনো সংবাদ শিরোনাম আমার চোখে পড়েনি, তবে পড়তে কতক্ষণ!
সোশ্যাল মিডিয়া, নিউ মিডিয়া, সিটিজেন জার্নালিজম এই সমস্ত টার্মস এখন আর নতুন নেই। কিন্তু তথ্য, সংবাদ, সংবাদ পরিবেশন, সংবাদের নীতি-নৈতিকতা থেকে শুরু করে অডিয়েন্স পর্যন্ত এই সময়ে নানা রকম চেহারা নিচ্ছে। এর কারণই সম্ভবত মিডিয়ার এই এত রকম ডাইমেনশন আর সে-সবের এত রকম ব্লেন্ডিং।
যা বলছিলাম, চিত্রনায়িকা পরীমণিকে শক্তিমতী নারী হিসেবে পারসিভ করার, দেখার বা দেখানোর কারণ কী? এটা করপোরেট ফেমিনিজমের যুগ এই সময়ে নারীবাদ অত্যন্ত হট টপিক। এমন একটা নারীবাদী ভঙ্গিই দেখা যায় পরীমণির ইমেজে। এমন ইমেজ মিডিয়াই তৈরি করে দিয়েছে যে পরীমণি একটা শক্ত মেয়ে। একের পর এক খবর তৈরি করা মদ্যপান, প্রেম, বিয়ে, বিচ্ছেদ ইত্যাদি সম্পর্কে খোলামেলা অবস্থান, মাতলামি করে জেলখানা থেকে ঘুরে আসা ইত্যাদি তাকে সাহসী মেয়ে হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করে। এই সমাজে নিজের মতো করে বাঁচতে পারার স্বাধীনতা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে কয়জন? মনের মধ্যে এতখানি মুক্তির আকাক্সক্ষা থাকে কয়টা মেয়ের!
কিন্তু সামান্য মাতলামির জন্য ধরে জেলে পুরে দেওয়ার সময় তার পাশে থাকা আর তার বাচ্চার দাঁত ওঠার মতন অযোগ্য সংবাদ প্রকাশ করে তাকে নিয়ে মিডিয়ার এত বড় জায়গা দখল করানোর ক্ষেত্র প্রস্তুত করা দুটো আলাদা বিষয়। পরীমণি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে হাতে মেহেদী দিয়ে ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’ লিখে মোটামুটি আধুনিক নারীমুক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছেন। যাকে বলে হিরোইজম।
মিডিয়ার এই স্টার সিস্টেমের মধ্যে নারী তারকাদের মধ্যে হিরোইজমের এই ডাইমেনশনটা নতুন। ইংরেজিতে হিরোইজম বলুন আর বাংলায় বীরত্ব বলুন, দুটো শব্দই পুরুষবাচক। নারী তারকাদের কখনো সাহস, অ্যারোগেন্স, স্পর্ধা শো অফ করতে হয় না, তাদের শো অফ করতে হয় দুঃখ, সতীত্ব, নম্রতা ইত্যাদি। উদাহরণ দিচ্ছি এর আগে বাংলার আর এক চলচ্চিত্র অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস নিজের এক বছরের ছেলেকে নিয়ে লাইভে এসে কান্নাকাটি করে প্রচুর সহানুভূতি আদায় করেছিলেন।
সেই সময়েই মিডিয়ার এই ভূমিকা নিয়ে খটকা লেগেছিল। লিখেওছিলাম সে কথা। লাইভটা যারা দেখেননি তাদের জন্য একটু বিশদে বলা যেতে পারে। অপু বিশ্বাস বেশ হাসিখুশি মুডেই কথা শুরু করেন। লাইভের ব্রেকের পর তার কোলে দেখা যায় শাকিব খানের ঔরসে জন্মানো অপুর এক বছর বয়সী শিশুপুত্রকে অপু শাকিব খানের বিবাহিত স্ত্রী হওয়ার খবর এবং সন্তান জন্মানোর খবর সামনে এনে সিনেমার সতী নারীর মতন আঁচল পেতে শাকিবকে ফিরে পেতে চান। ফিরে পেতে চাওয়ার কারণ শাকিব ততদিনে বুবলী নামের আর এক নায়িকার সঙ্গে প্রেম করছিলেন। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য বুবলীও কয়েক বছর পর এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেন। অপু সতীত্ব, বিবাহিত স্ত্রীর মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গে ধর্মান্তরিত হওয়ার ত্যাগ উল্লেখ করতেও সম্ভবত ভুল করেননি। বুবলীও নির্ভুলভাবে তার জন্মগতভাবে মুসলিম পরিচয়ের গরিমা তুলে ধরেন।
পরীমণি যেহেতু ‘সাহসী মেয়ে’, তিনি এই ধরনের ভিকটিমহুড প্লে করবেন না বলে আশা করা গেলেও দেখা গেল এই চেনা সূত্র ধরেই হাঁটছেন তিনিও। সতী ও ত্যাগী নারীর বহুল প্রচলিত ছকের মধ্যে থেকে পরীমণি, স্বামী রাজের কমফোর্ট নিশ্চিত করতে নানুভাইকে দেশের বাড়ি শিফট করার কথা বলতে বলতে কান্না চাপতে ব্যর্থ হন। মোট কথা নারীকে ত্যাগ করতে হবে, যে যত কম্প্রোমাইজ করতে পারবে, যে যত স্যাক্রিফাইস করতে পারবে সে নারী ঘর সংসারের জন্য তত যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে, স্ত্রী হিসেবে স্টার মার্ক বা এ প্লাস। এমন এ প্লাস বউ ফেলে বাইরে চিল করতে যাওয়া স্বামীকেও নিশ্চয়ই সমাজ ছেড়ে কথা বলবে না, যতই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হোক না কেন! কেননা সতীত্বের বা ত্যাগের যে মহিমার কথা বললাম তা পুরুষতান্ত্রিক ফ্রেমওয়ার্কের সেট করা স্ট্যান্ডার্ডকেই ফুলফিল করে।
করপোরেট মিডিয়ার যুগে এই সব কনটেন্ট যথেষ্ট এন্টারটেইনিং হলেও মূলত আগাছার মতনই। বা বলা যেতে পারে জাংকফুডের মতন। জাংকফুড দিয়ে পেট ভরে রাখলে শিশুরা স্টেপল ফুড আর খেতে পারে না, দেখতে স্বাস্থ্যবান লাগলেও শিশুদের শরীরে থেকে যায় অপুষ্টি। তেমনই এই সব জাংক খবর দিয়ে সøট ভরে রাখলে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের জন্য সময়ের এবং/অথবা স্থানের টানাটানি হয়। ডিজিটাল মাধ্যমে স্থানের স্বল্পতার কথা বাদ দিলেও সময়ের বিষয়টি থেকেই যায়।
কিন্তু মিডিয়াগুলো কি সে কথা ভাবছে? গণমাধ্যম যে কেবল তথ্য সংগ্রহ করে সত্য পরিবেশন করে তা তো নয়। বরং জনমানুষের চিন্তাচেতনাও শেপ করে মিডিয়াই। ফ্যাক্ট চেকিং জাতীয় শব্দের উদ্ভব নতুন না হলেও সেদিনের কথা। একটা সময় ছিল যখন মানুষ পত্রিকার পৃষ্ঠায় ছাপা প্রত্যেকটা শব্দ চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করত। বর্তমানে পরিস্থিতি তেমন না থাকলেও মিডিয়া মানুষের জীবনকে প্রবলভাবেই প্রভাবিত করতে পারে। গণমাধ্যম কি এখন এই ক্ষমতার অপব্যবহার করছে না!
লাইভের প্রেজেন্টার এক পর্যায়ে পরীমণিকে প্রস্তাব করেন যে তিনি চাইলে অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকে অ্যারেঞ্জ করা যেতে পারে একটা লাইভ যেখানে এই দুজন সামনা-সামনি কথা বলতে পারবেন। অপু বিশ্বাসের লাইভের ব্রেকের পর শিশুপুত্রকে দেখে যে বিবমিষা আমার হয়েছিল, প্রায় একই রকম বিবমিষা বোধ হলো এই কথাটি শুনে। মিডিয়ার যা সব কাজ আমরা জানি, তার মধ্যে তথ্য ও সংবাদের মতন বিনোদন দেওয়া একটা অন্যতম প্রধান কাজ হলেও, কারও সংসারে অশান্তি হলে সালিশ করা সম্ভবত পড়ে না। তবে কেউ বলতে পারে, এটা বিনোদনের মধ্যেই পড়ে। সত্য বটে, বাঙালি আজও রাস্তায় ঝগড়া দেখলে দাঁড়িয়ে যায়। বড় বড় তারকাদের সেক্সুয়াল জেলাসি ও দাম্পত্য কলহ মেটানোর বিচার সালিশে মোড়ল হিসেবে আবির্ভূত হয়ে টিআরপি কামিয়ে নেওয়ার সুযোগ মিডিয়াগুলোই বা ছাড়বে কেন?
লেখক : সাহিত্যিক ও লেখক
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব। সম্পৃক্ত ছিলেন বাংলাদেশের সংবিধান, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট প্রণয়নের কাজে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সপ্তম গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রথম উপাচার্য। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, বাজার ব্যবস্থাপনা ও সদ্য ঘোষিত প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে দীর্ঘক্ষণ খোলামেলা কথা বললেন দেশ রূপান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সহকারী সম্পাদক তাপস রায়হান
দেশ রূপান্তর : বর্তমানে দেশে মার্কিন ডলারের সংকট চলছে। আপনার কি মনে হয়, খোলাবাজারে ডলার ছেড়ে দিলে এই সংকটের মুখোমুখি হতে হতো না?
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : না, আমার তা মনে হয় না। খোলাবাজারে ডলার ছেড়ে দেওয়ার সময় এখনো আসেনি। আমি তা মনে করি না। আমরা পরামর্শ দিয়েছিলাম, ম্যানেজ থ্রোটটা আরও ভালোভাবে করার জন্য। মাল্টিপল এক্সচেঞ্জ রেট পৃথিবীর কোথাও এখন নেই। এটা হওয়া মানেই, মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভ করার একটা সুযোগ করে দেওয়া। এরপর বলা যায়, ১০-১২ বছর ধরে টাকাটাকে অতি মূল্যায়িত করে, ভালো করিনি। যেখানে ১০ বছরে ভারত প্রায় ৭৫ শতাংশ অবমূল্যায়িত করে তাদের মুদ্রা, সেখানে আমরা ১০ বছরে করি মাত্র ২৭ ভাগ। এতে টাকাটা অবমূল্যায়িত হওয়ার ফলে রপ্তানির প্রতিযোগিতা যেমন হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি।
দেশ রূপান্তর : না হওয়ার কারণ কী?
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : এর কারণ হলো, টাকা অতি মূল্যায়নের ফলে ৮৬ টাকার ডলার ১০৬ টাকায় চলে যায়। ফলে হঠাৎ করে বেশি হয়ে যায় অ্যাডজাস্টমেন্টটা। এরপর যদি রপ্তানি ডলারের একদাম হয়, রেমিট্যান্সের ভিন্ন দাম হয় এবং আমদানির ক্ষেত্রে আরেক দাম হয় তখন ব্যবসায়ী মহল এর সুবিধা নেয়। মনে রাখতে হবে, আমদানির ক্ষেত্রে কিন্তু ডলারের দাম কম ছিল। তখন ব্যবসায়ী মহল এর সুবিধা নিয়েছিল। এটা কি সরকার ভুল করে করেছে, নাকি ব্যবসায়ী মহল সরকারকে ম্যানিপুলেট করেছে সেটা আমার পক্ষে বলা মুশকিল। তবে কাজটা ভালো হয়নি। তারপরও অন্যান্য দেশের তুলনায়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং বিনিময় হার নিরাপদ স্থানে রয়েছে।
আজ থেকে ২৫ বছর আগে শ্রীলঙ্কা তাদের বৈদেশিক মুদ্রাকে বাজারভিত্তিক করেছিল। তখন সবাই বাহবা দিয়েছিল। তারা অনেক ঋণ নিয়েছে, বিভিন্ন দেশ থেকে। এমন সব বড় বড় প্রকল্প করেছে, যেখান থেকে কোনো আয়-রোজগার নেই। তাতে ঋণের কিস্তি আটকে গেছে। আমাদের কিন্তু তা নয়। এর জন্য সরকারপ্রধান অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। এটা অনেক বড় ধরনের কৃতিত্ব। তিনি মেগা প্রকল্প হাতে নিলেও এমনভাবে নেননি, যেগুলো শুধুই দায়। যতগুলো হয়েছে, হচ্ছে সবকিছু থেকেই কিন্তু আয় হচ্ছে। তবে ডেথ সার্ভিস রেশিও যদি ২০% এর বেশি হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু বিপদ।
দেশ রূপান্তর : ‘ডেথ সার্ভিস রেশিও’ টার্মটা ব্যাখ্যা করলে ভালো হয়?
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : এটা হচ্ছে বিদেশি ঋণের জন্য প্রতি বছর যে সুদ বৈদেশিক মুদ্রায় দিতে হয় এবং মূল ঋণের যে অংশটা পরিশোধ করতে হবে সেটা রপ্তানি আয়ের যে অনুপাত, সেটা ২০ হলেই বিপদ। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত রেশিও ১০-এর বেশি হয়নি। এখন এটা পাঁচের চেয়েও কম আছে। বেশ নিরাপদ। কিন্তু কিছু মেগা প্রকল্পের আয় শুরু না হলে, দায় বেড়ে যাবে। তখন সমস্যা হবে। আমাদের পরামর্শ হচ্ছে যাদের কাছ থেকে আমরা ঋণ নিয়েছি, সেটা পুনঃতফসিল করা। এটা হলে আর কোনো চিন্তা নেই।
দেশ রূপান্তর : দেখা যাচ্ছে মূল্যস্ফীতিও হয়েছে, ডলারের দামও বেড়েছে। দুই কূলই গেল। তাই কি?
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : না না। বিষয়টা এত সরলীকরণ করা ঠিক হবে না। ব্যাপারটা এত সহজ নয়। মূল্যস্ফীতি অনেক কারণে হয়েছে। একটি হচ্ছে, টাকার দাম কম থাকলে, সুদের হার যদি কম হয়, তখন মানুষ বেশি বেশি ধার করবে। একইসঙ্গে মানুষের আয়-ব্যয়ের মধ্যে কোনো ভারসাম্য আনা যাচ্ছে না। একদিকে জিনিসের দাম বাড়ছে, আরেকদিকে মানুষের আয় সেই পরিমাণে বাড়ছে না। ফলে ঋণ করতে হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ, সুদের হার বাড়িয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে অজ্ঞাত কারণে, নয়-ছয় রেখে দেওয়া হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই সুদের হার বাড়ানো হচ্ছে না। এটা কিন্তু মূল্যস্ফীতির বড় একটা কারণ। এরপর বলা যায় হ্যাঁ, সারা পৃথিবীতেই মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। আমাদের অনেক পণ্য আমদানি করতে হয়। সেই প্রভাব পড়বে না! ফলে মূল্যস্ফীতির অঙ্কটা কিন্তু জটিল। চট করে কোনো কিছু বলা সম্ভব না। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের স্বার্থটা বড় করে দেখা হয়েছে। তাদের অনেকে তো ব্যাংকেরও মালিক।
দেশ রূপান্তর : তাহলে এই দায়টা মূলত কোন পক্ষের?
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : সবকিছু বাদ দিলে, দায় তো কিছুটা সরকারের পলিসির। আবার অনেক কৃতিত্বও আছে।
দেশ রূপান্তর : বিভিন্ন দেশে যে পণ্যের দাম কমছে, আমাদের দেশে সেই পণ্যের মূল্য বাড়ছে। এর কারণ কী?
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : পুরোটাই মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে হচ্ছে। এছাড়া মার্কেট পলিসিতেও কিছু দুর্বলতা আছে। বাজার মনিটরিংয়ে সমস্যা রয়েছে।
দেশ রূপান্তর : আপনি কি বলতে চাইছেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে সরকারের পলিসিতে কোনো ভুল নেই? পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট!
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : বাজার ব্যবস্থাপনা আরও কড়াকড়ি করলে, ফড়িয়াদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে এটা হতো না। বাড়ত বটে, তবে এত বাড়ত না। সব দেশেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আমাদের দেশে বেশি বেড়েছে। আমাদের তদারকি কম, বাজার মনিটরিং আরও ভালো হলে এটা হতো না। একটা কথা মনে রাখতে হবে আমাদের অর্থনীতি কিন্তু অত্যন্ত শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে যে যাই বলুক, সহজেই দুর্বল করা সম্ভব না।
দেশ রূপান্তর : এর মানে, আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট মজবুত?
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : কোনো সন্দেহ নেই। আমরা কিন্তু ভারতের মাথাপিছু আয়কেও ছাড়িয়ে গেছি। মনে রাখতে হবে আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা অনেক সূক্ষ্মভাবে করা হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : আমরা একটু এবারের বাজেট প্রসঙ্গে আসি। আপনার কি মনে হয়, উত্থাপিত বাজেট জনবান্ধব?
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : বাজেটে কি বলা হয়েছে, এটি গণবান্ধব? হা হা হা। তবে চূড়ান্ত বিশ্লেষণে কিন্তু এই বাজেট দেশের জন্য মঙ্গলজনক। বাজেট থেকে যে উপকারটা আসবে, সেটা বেশি আসা উচিত গরিব মানুষের জন্য। এটা এককথায় কিন্তু বলা কঠিন। তবে সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টা বেড়েছে। এতে অবহেলিত মানুষ উপকৃত হবে। এটা অনেক ভালো হয়েছে। তবে বৈষম্য, দারিদ্র্য দূর করা বা কর্মসংস্থানের বিষয়ে বাজেটে বিস্তারিত উল্লেখ পাইনি। মূল্যস্ফীতি কমানোর তেমন পরিকল্পনাও নেই। এছাড়া বাজেট ঘাটতি শতকরা ৫.২ ভাগ। এর সিংহভাগ আসবে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে। সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যত বেশি ঋণ করবে, তত বেশি মূল্যস্ফীতি দেখা দেবে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো টাকা নেই। সেখান থেকে ঋণ নিতে হলে, টাকা ছাপাতে হবে। টাকা ছাপালেই মূল্যস্ফীতি দেখা দেবে। অথবা ঋণটা আসবে ব্যাংকিং খাত থেকে। সেখান থেকে সরকার ঋণ নিলে ব্যক্তি খাতের ঋণে টান পড়বে। এর ফলে আবার বিনিয়োগ কমে যেতে পারে।
দেশ রূপান্তর : এই মুহূর্তে অর্থনীতির বড় কোনো সংকট আছে?
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : একটা হচ্ছে রাজস্ব জিডিপি। যেভাবেই হোক, রাজস্ব বাড়াতে হবে।
দেশ রূপান্তর : কীভাবে?
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : রাজস্ব বাড়ানোর সহজ কিছু পথ আছে। সরকার কেন তা করছে না, তা জানি না। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সরকার অনেকগুলো ট্রাইব্যুনাল করেছে। সেই ট্রাইব্যুনালকে আরও ক্ষমতা দিতে হবে। এনবিআরকে চাপ দিতে হবে। করজাল এবং মানি লন্ডারিং নিয়ন্ত্রণ করতে হবে শক্ত হাতে। করের হার না বাড়িয়ে, করের বিস্তারটাকে আরও বাড়ানো দরকার।
দেশ রূপান্তর : একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। আপনি ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট যখন বিদেশ যান, তখন বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব ছিলেন। সেই সময়ের কথা পরিষ্কার মনে আছে?
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : এটা তো ভোলা যাবে না। আমরা ৩ জন বঙ্গবন্ধুকে তখন ছেড়ে যাচ্ছিলাম। কর্নেল জামিল যাবেন, ডিজিএফআইয়ের প্রধান হয়ে। আর মনোয়ারুল ইসলাম ছিলেন, যুগ্ম সচিব। বঙ্গবন্ধুর সমস্ত কেনাকাটার দায়িত্বে ছিলেন। আমরা আমেরিকার বোস্টনে যাব, পিএইচডি করতে। ১৪ আগস্ট রাতে, গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু ৩২ নম্বরে যাবেন। দেখলেন- একটা কালো গাড়ি তার জন্য প্রস্তুত। অথচ গাড়ি ছিল ৩টা। মন খারাপ করে বললেন ফরাস, আজ ওরা কালো গাড়িটা দিল? এমনিতেই মনটা খারাপ। অনেক ধরনের খবর পাচ্ছি। অনেক উপদেশও পাচ্ছি। এসব বলতে বলতে তিনি গাড়িতে উঠলেন। তখন সেখানে রাষ্ট্রপতির ২জন সচিব অজানা কারণে অনুপস্থিত ছিলেন। যদিও তাদের থাকার কথা ছিল।
দেশ রূপান্তর : ২ জনের নাম বলা যাবে?
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : একজন এম. এ রহিম, আরেকজন এম. এ সাত্তার। দুজনই এখন প্রয়াত। পরে শুনেছি, সেইসময় তারা নাকি বিদেশি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তবে রাষ্ট্রপতির দেওয়া বিদায় অনুষ্ঠানে কেন তারা অনুপস্থিত থাকলেন এটা নিয়ে তখনই প্রশ্ন উঠেছিল। তারা কিন্তু এখনো বিতর্কিত। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর, এই ড. সাত্তারই শে^তপত্র কমিটির প্রধান হিসেবে, ৩২ নম্বরে অনুসন্ধান চালালেন। তিনি সেখানে ৪৪ হাজার টাকা আর ছোট্ট একটা শেখ কামালের বিয়ের মুকুট পেয়েছিলেন। তাতে কী হলো? একজন রাষ্ট্রপতির বাড়িতে এসব থাকতেই পারে। কিছুই পায়নি এই কারণে, দেশ-বিদেশের যত উপঢৌকন তিনি পেয়েছিলেন, সব আমার হাত দিয়েই তোশাখানায় চলে যেত। ঐ রকম সৎ, স্বচ্ছ, দেশপ্রেমিক মানুষ আজ পর্যন্ত আমি দেখিনি।
দেশ রূপান্তর : সবশেষে কোনো কথা আছে?
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : এই দেশের মানুষ, দেশকে ভীষণ ভালোবাসে। তারা ভালো থাকুক, শান্তিতে থাকুক।
নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) স্বাধীন ও সার্বভৌম দাবি করে বলা হয়ে থাকে নির্বাচনের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার ও ক্ষমতা তার আছে। কিন্তু এসব দাবির সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই বললেই চলে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় সংসদে উত্থাপিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী প্রস্তাবটি নিয়ে ইতিমধ্যে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। আপত্তি জানিয়েছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে ইসির আইনি ক্ষমতা খর্ব করে প্রকারান্তরে প্রতিষ্ঠানটিকে ‘নখদন্তহীন’ অকার্যকর একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলো।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এ বিষয়ে বলেছে, প্রস্তাবিত সংশোধনী পাস করা হলে কমিশনের কাছে নির্বাচনী আইনের লঙ্ঘনের কারণে যৌক্তিক বিবেচিত হলে যে কোনো নির্বাচনী এলাকায় চলমান নির্বাচন বাতিলের যে ক্ষমতা বিদ্যমান আইনে রয়েছে, তা কেড়ে নেওয়া হবে।
জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১(এ) ধারায় বলা আছে, ‘নির্বাচন কমিশন যদি সন্তুষ্ট হয় যে, নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন এবং চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সংগত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না, তাহলে যেকোনো ভোটকেন্দ্র বা ক্ষেত্রমতো সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোটগ্রহণসহ নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে।’ সংশোধনীতে আরপিওর ৯১ ধারার (এ) উপধারায় নির্বাচন বা ‘ইলেকশন’ শব্দের বদলে ‘পোলিং’ শব্দ প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ‘ইলেকশন’ শব্দ দিয়ে পুরো নির্বাচনপ্রক্রিয়া বোঝায়। অর্থাৎ তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত সময়টা হলো ‘ইলেকশন’। আর ‘পোলিং’ হলো শুধু ভোটের দিন। এই সংশোধনী পাস হলে ইসি অনিয়মের কারণে শুধু ভোটের দিন কোনো ভোটকেন্দ্র বা পুরো সংসদীয় আসনের ভোট বন্ধ করতে পারবে। কিন্তু ‘ইলেকশন’ শব্দটি থাকলে ভোটের আগেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইসি ভোট বন্ধ করতে পারত। তাই এখানে তাদের ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে। সংশোধনীতে আরও বলা হয়েছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণা করার পর কোনো আসনের পুরো ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না ইসি। যেসব ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ আসবে, শুধু সেসব (এক বা একাধিক) কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করতে পারবে। এরপর তদন্তসাপেক্ষে ওই সব কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে, সেসব কেন্দ্রে নতুন নির্বাচন দিতে পারবে ইসি।
আরপিও সংশোধনের প্রস্তাবটি অনুমোদনের পর এখন এটি জাতীয় সংসদে বিল আকারে তোলা হবে। বিল পাস হলে এটি আইনে পরিণত হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাইবান্ধার মতো পরিস্থিতি এড়াতে এ কৌশল নিয়েছে সরকার। ইসির পদাধিকারীরা সিসিটিভি ক্যামেরায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে বেশিরভাগ কেন্দ্রে অনিয়ম ও কারচুপির ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন এবং পুরো নির্বাচনটি স্থগিত ঘোষণা করেন। বাংলাদেশে এটা ছিল ব্যতিক্রমী ঘটনা। আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে গাইবান্ধার মতো পরিস্থিতি হলে সরকার ইসির গাইবান্ধার পদক্ষেপে বিপদে পড়বে। কেননা, ইসি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেটা করতে পারে। এ বিষয়টি বিবেচনা করেই সরকার পুরো আসনে ভোট বাতিলের ক্ষমতা ইসিকে দিতে চায় না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
২০০০ সালে এক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে ইসি তদন্তসাপেক্ষে বাতিল করতে পারবে। ফলে এ পর্যায়ে এসে আইনিভাবে ইসির ক্ষমতা ছেঁটে ফেলা হলো বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সুপ্রিম কোর্টে রায় থাকার পরও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কীভাবে এটা করল তা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনার সুযোগ রয়েছে। সিদ্ধান্তটি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। জাতীয় নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে অচলাবস্থার মধ্যে এই সংশোধনী নির্বাচন কমিশনকে আরও অসহায় অবস্থায় ফেলতে পারে। কারণ, এই সংশোধনী কার্যকর হলে কমিশনের ক্ষমতা আরও কমে যাবে, যা কখনোই কাম্য হতে পারে না। নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তাও বাড়াবে। এ কারণে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে ইসির ক্ষমতা খর্ব করা থেকে সরকারের বিরত থাকাই ভালো হবে।
১৯০১ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন লেখক ও শিক্ষাবিদ প্রমথনাথ বিশী। তার বাবার নাম নলিনীনাথ বিশী ও মা সরোজবাসিনী দেবী। সেকালে শান্তিনিকেতন ছিল অফুরন্ত প্রাণপ্রবাহের প্রতীক। ১৯১০ সালে ৯ বছর বয়সে তার ছোট ভাইকে নিয়ে শান্তিনিকেতনে আসেন এবং রবীন্দ্রনাথের ছায়ায় ব্রহ্মবিদ্যালয়ে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। সেখানে তিনি একনাগাড়ে ১৭ বছর অধ্যয়ন করেন। মেধা, প্রখর বুদ্ধি, অধ্যয়ননিষ্ঠা ও কবি-প্রতিভা ইত্যাদি গুণাবলির জন্য তিনি রবীন্দ্রনাথের স্নেহ লাভ করেন। প্রাইভেটে এমএ পরীক্ষা দিয়ে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। গদ্য-পদ্যে তিনি সমান দক্ষ।
প্রকৃতি ও নারীপ্রেম তার কবিতায় মনোজ্ঞভাবে উপস্থিত। তার মতো এত সনেট বাংলায় আর কেউ লেখেননি। হাস্যরসাত্মক নাটক লেখায়ও তিনি
কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। ইতিহাসাশ্রিত উপন্যাস এবং সামাজিক উপন্যাস দুই রকম রচনাই তিনি লিখেছেন। কবিতা, নাটক, উপন্যাস, রম্যরচনা ইত্যাদি লিখলেও তার মূল খ্যাতি রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ ও সাহিত্য সমালোচক হিসেবে। তিনি মধুসূদন এবং বঙ্কিম সাহিত্যেরও দক্ষ আলোচক। নানা বিষয়ে তার বইয়ের সংখ্যা একশর কাছাকাছি। কখনো স্বনামে, কখনো বা ছদ্মনামে প্র. না. বি., শ্রীকমলা-কান্ত শর্মা, মাধব্য, স্কট টমসন, হাতুড়ি, অমিত রায়, পরিহাস কেশবম
প্রভৃতি ছদ্মনামে লিখেছেন। রাজনীতির অঙ্গনেও বিচরণ ঘটেছে তার। ১৯৬২-৬৮ সাল পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য ও ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। ‘কেরী সাহেবের মুন্সী’ বইটির জন্য তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি সম্মানজনক আনন্দ পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮৫ সালের ১০ মে তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
বিশ্বজুড়ে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী আজ সোমবার (০২ অক্টোবর) ঢাকার বাতাসের মান ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’। এদিন সকাল ১০টার দিকে ১২৯ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে ঢাকা।
এসময় ১৮৩ স্কোর নিয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। ১৬২ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। ১৬০ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। ১৫৬ স্কোর নিয়ে চতুর্থ ভারতের আরেক শহর করাচি। ১৫৩ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইতালির মিলানো।
এ ছাড়া একইসময়ে একিউআই স্কোর ১১৭ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে চীনের উহান। ১১৩ স্কোর নিয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর। ১১২ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। ১০৯ স্কোর নিয়ে দশম স্থানে রয়েছে সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।