
বাজার বলতে শুধু কোনো স্থান নয়, বাজার বলতে বোঝায় ব্যবস্থা। অর্থনীতি না বুঝলেও সাধারণ মানুষ এখন এটা হাড়ে হাড়েই বোঝেন। আবার মুক্তবাজার অর্থনীতি নিয়ে উচ্ছ্বাস, বিতর্ক, আশঙ্কা আর বিরোধিতা চলেছে এবং চলছে। যারা প্রবল সমর্থক পুঁজিবাদের এবং বিশেষত মুক্তবাজারের পক্ষে, তারা বলেছেন এবং বলেই চলেছেন বাজার চলবে বাজারের নিয়মে। সরকারের কিছু করার নেই। সরকার শুধু সহায়তা করবে কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। জিনিসের দাম নির্ভর করবে চাহিদা ও জোগানের ওপর ভিত্তি করে। যদিও চাহিদা ও জোগানের ওপর নির্ভর করার কথা একেবারেই অর্থনীতির গোড়ার বিষয়, কিন্তু বাজারের দিকে তাকালে মনে হয় তার নমুনা খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
এখানে কত চাহিদা, জোগানের পরিমাণ কত, কে সরবরাহ করবে, বিপণন করবে, কে ভোক্তা কোনো হিসাবই কাজ করে না। সব কিছুই অর্থহীন হয়ে পড়ে বাজার নিয়ন্ত্রকের ভূমিকার কারণে। এই বাজার নিয়ন্ত্রক এখন সিন্ডিকেট। কোন ক্ষেত্রে নেই তারা? কাঁচা মরিচের দাম হাজার টাকা স্পর্শ করল, ভারত থেকে আমদানির ট্রাক আসতে না আসতেই তা নেমে দাঁড়াল ৩০০ টাকায়।
দুদিন পরেই আবার ঊর্ধ্বগামী মরিচের দাম। এর কি ব্যাখ্যা কেউ জানে না? পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও একই ভেলকিবাজি লক্ষ করা গেল। পেঁয়াজের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম নয়, পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হতে না হতেই দাম বেড়ে গেল হু হু করে। আবার সেই আমদানি! ভারত থেকে আমদানির ঘোষণাতেই কমে গেল দাম।
এটা চাহিদা সরবরাহের কোনো তত্ত্বে ব্যাখ্যা করা যায়? শেষমেশ বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। দেশের মানুষ যা বোঝার তা বুঝে গেলেন। সিন্ডিকেটের প্রবল ক্ষমতার কাছে সাধারণ মানুষের বিপুল অসহায়ত্ব।
কোরবানি ঈদ এলেই প্রতি বছর চামড়া নিয়ে সংকট তৈরি হয়। সরকার এ বছর ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দর ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ও খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করেছিল। অথচ পুরনো তথ্য ঘাঁটলে দেখা যায়, আজ থেকে ১০ বছর আগে ২০১৩ সালে ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৮৫ থেকে ৯০ টাকা আর খাসির চামড়ার দর ৫০ থেকে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
সে বছর রাজধানীতে ছোট আকারের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে প্রতিটি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ১ হাজার ৮০০ থেকে আড়াই হাজার এবং বড় আকারের গরুর চামড়া আড়াই হাজার থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। এরপর ২০১৪ সালে চামড়া ব্যবসায়ীদের তিন সংগঠন মিলে চামড়ার দর ২০১৩ সালের তুলনায় কিছুটা কম প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৭০ থেকে ৭৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল।
কিন্তু বাজারে তখনো পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে না পারায় বাস্তবে বেশি দরে বিক্রি হয়েছিল, সেবার পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তায় লবণবিহীন প্রতি বর্গফুট চামড়াই বিক্রি হয়েছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকায়।
কিন্তু এরপর পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকল। প্রতি বছর চামড়ার দর শুধু কমেছেই। কমতে কমতে ২০১৯ সালে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে, অনেকে চামড়া ফেলে দিয়েছিলেন বা মাটিতে পুঁতে ফেলেছিলেন। এরপরের বছরগুলোয় চামড়া ফেলে দেওয়ার ঘটনা না ঘটলেও এক দশক আগের তুলনায় অনেক কম দরেই বিক্রি হয়েছে।
ফলে দরিদ্র প্রান্তিক মানুষেরা ধারাবাহিকভাবে বঞ্চিত হলেও লাভবান হয়েছেন আড়তদার, ব্যবসায়ী আর ট্যানারি মালিকরা। কিন্তু একটা বিষয় তো মাথায় আসতেই চায় না, গত দশ বছরে গরু-ছাগলের দাম বেড়েছে বহুগুণ, মাংসের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে কিন্তু চামড়ার দাম গেল কমে! কী ব্যাখ্যা এর? আর কে-ই বা দেবে সে ব্যাখ্যা? আবার চামড়ার দাম কমলেও চামড়ার তৈরি জুতা, ব্যাগ ও অন্যান্য সামগ্রীর দাম কি কমেছে? কমেনি বরং বেড়েছে।
সরকারের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা হিসাবে ঢাকায় মাঝারি আকারের ২৫ বর্গফুটের একটি লবণ দেওয়া চামড়ার দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩৭৫ টাকা। এই হিসাব থেকে লবণ, মজুরি ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৩০০ টাকা বাদ দিলে ওই চামড়ার আনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় ৯৫০ থেকে ১ হাজার ৭৫ টাকা।
কিন্তু ঈদের দিন যেসব জায়গায় চামড়ার প্রধান বিক্রির পসরা বসে সেখানকার খবর নিয়ে দেখা গেছে পরিস্থিতি ভিন্ন। পুরান ঢাকার পোস্তাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মাঝারি আকারের চামড়া বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকার মধ্যে; অর্থাৎ সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে মানুষ সে দামে বিক্রি করতে পারেনি। নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে।
এ তো গেল ঢাকার কথা। ঢাকার বাইরে চামড়ার দর আরও অনেক কম। চট্টগ্রামে এবার বড় গরুর চামড়া ৪৫০ থেকে ৬০০ আর মাঝারি গরুর চামড়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর রাজশাহীতে গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায়। তবে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হয়েছে খাসির চামড়ার ক্ষেত্রে, এই চামড়ার ক্রেতা পাওয়াই মুশকিল।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাত্র পাঁচ টাকা বা তারও কম দামে প্রতি পিস খাসির চামড়া বিক্রি হতে দেখা গেছে। অথচ আমাদের দেশের ব্লাক বেঙ্গল গোটের চামড়া নাকি বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট।
যে ব্যাপারটা লক্ষণীয় তা হলো, সরকার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেই গত বছরের তুলনায় এ বছর গরুর চামড়ার দর প্রতি বর্গফুটে মাত্র ৩ টাকা বৃদ্ধি করেছিল, যা শতাংশের হিসাবে মাত্র ৬ শতাংশ আর খাসির চামড়ার কোনো মূল্য বৃদ্ধি করা হয়নি।
সাধারণ হিসেবেই দেখা যায়, চামড়ার মূল্যবৃদ্ধির এই হার সরকার ঘোষিত মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম এবং ডলারের বিপরীতে টাকার যে পরিমাণ অবমূল্যায়ন হয়েছে, তার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।
তাহলে দেখা যায়, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে ব্যবসায়ীরা এক বছর আগে যে পরিমাণ ডলার আয় করতেন, তা থেকে টাকা আসত প্রতি ডলারে ৮৬ দশমিক ৪৫ টাকা, বর্তমানে যা ১০৮ দশমিক ৫ টাকা। তাহলে ব্যবসায়ীরা যেখানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে আগের চেয়ে ডলারপ্রতি ২৫ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি আয় করছেন, সেখানে কাঁচা চামড়ার মূল্য গত বছরের তুলনায় মাত্র ৬ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছিল এবং সেটাও মানুষ পায়নি।
বাংলাদেশে প্রতি বছর যত পশু জবাই হয়, তার অর্ধেকই হয় কোরবানির সময়। কোরবানির পশুর দাম নিয়েও চলে নানা কারসাজি। ধরা যাক, একটা মাঝারি আকৃতির গরু যার মাংস হতে পারে ১০ মণ। তার দাম হাঁকা হয় ৮ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা। কেন এত দাম চাওয়া হয় বা কেন এত দামে বিক্রি হয়? আবার বাজারে মাংসের দাম কেন ৮০০ টাকা কেজি।
যদি এসব প্রশ্নের উত্তর না খুঁজে বাজার দর অনুযায়ী হিসাব করি তাহলেও তো ১০ মণ মাংস হতে পারে এ রকম গরুর দাম ৪ লাখ টাকার বেশি হওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। আর খামারিদের হিসাবে প্রতি কেজি মাংস উৎপাদনে খরচ ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। তাহলে তো ২ লাখ টাকার বেশি দাম হওয়ার কথা নয়। পশুখাদ্যের সিন্ডিকেট, পথে পথে চাঁদা সব কিছুর প্রভাব পড়ে মাংসের দামের ওপর।
যে কারণে ভারত, পাকিস্তান তো বটেই, যে ইউরোপের উদাহরণ দিতে আমাদের দেশের কর্তাব্যক্তিরা পছন্দ করেন তাদের দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মাংসের দাম অনেক বেশি। আর মাংস উৎপাদনের হিসাব? সেও তো এক গোলমেলে ব্যাপার। মাথাপিছু দৈনিক মাংসের চাহিদা ১২০ গ্রাম। তাহলে ১৮ কোটি মানুষের জন্য বছরে মাংসের চাহিদা ৭৮ লাখ টন কিন্তু সরকার বলছে উৎপাদন নাকি ৮৪ লাখ টন।
অর্থাৎ ৬ লাখ টন উদ্বৃত্ত থাকার কথা। কিন্তু কত শতাংশ মানুষ প্রতিদিন মাংস খেতে পারেন আর তাদের মধ্যে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা কত এই প্রশ্নের উত্তর কি পাওয়া যাবে? দ্রব্যমূল্য, উৎসব, ত্যাগ আর মানুষের পুষ্টি সবকিছুর ওপরেই তো সিন্ডিকেটের থাবা। মুক্তবাজার অর্থনীতি বহাল রেখে মানুষ কি এই বাজার সন্ত্রাসের কবল থেকে বাঁচতে পারবে?
লেখক: রাজনৈতিক সংগঠক ও কলামিস্ট
গত মাসের শুরুর দিকের কথা। সেদিন ছিল রবিবার। দুপুর ১টা। প্রতিদিনের মতো সম্পাদকীয় মিটিং। সহকর্মীসহ সম্পাদকের রুমে। শুরু হলো কথা বলা। উপসম্পাদকীয় এবং সম্পাদকীয় চূড়ান্ত হলো। এরপর কথা প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন বললেন একটা বিষয় শুরু করলে কেমন হয়? আমরা বললাম কী!
তিনি বললেন যদি আমাদের ‘চিন্তা’ পাতায় ষাট-সত্তর দশকের জনপ্রিয় কলাম লেখকদের কলামগুলো রিপ্রিন্ট করি, তাহলে কেমন হয়? আমরা চমকে উঠলাম! বললাম দারুণ হবে। এ সময়ের কলাম লেখক এবং সাংবাদিকরাও তাতে উপকৃত হবেন। তিনি কিছুক্ষণ ভাবলেন। এরপর বললেন তাইলে আপনি লেখাগুলো সংগ্রহ করার দায়িত্ব নেন! তখনই বললাম এ বিষয়ে পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ সম্ভবত সহযোগিতা করতে পারবেন। তিনি তার সঙ্গে যোগাযোগ করে কলামগুলো সংগ্রহের কথা বললেন।
মঙ্গলবার এ বিষয়ে কিছু ভাবলাম। পিআইবিতে যাওয়ার আগে গেলাম দৈনিক সংবাদে। পুরানা পল্টনের সেই অফিসে। সেখানে যাওয়ার পর জানা গেল, সাধারণের জন্য কোনো পত্রিকা সংগ্রহে নেই। পুরনো সব পত্রিকা মালিকপক্ষের কাছে। এরপর সেখান থেকে পিআইবি। দেখা হলো, মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদের সঙ্গে। তিনি অসম্ভব সমাদর করলেন। শুনলেন প্রয়োজনের কথা। বললেন আমাদের এখানে আছে। তবে সেটা ১৯৮৩ সাল থেকে। এর আগের পত্রিকা দরকার হলে বাংলা একাডেমি বা আর্কাইভে যেতে হবে। পরদিন মিটিংয়ে বিষয়টি সম্পাদককে জানালাম। তিনি বললেন এখন কী করবেন? বাংলা একাডেমির কথা বলা হলো। তিনি মাথা নাড়লেন।
পরদিন প্রধান ফটোসাংবাদিক শাহাদাৎ পারভেজের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলো। তিনি অসম্ভব উৎসাহ নিয়ে বললেন কোনো সমস্যা নেই। এ বিষয়ে বাংলা একাডেমিতে আমি আপনার সঙ্গে যাব। পরদিন দুপুরে শাহাদাৎ পারভেজকে ফোন করা হলো। জানালেন, এই মুহূর্তে তিনি বাংলা একাডেমিতেই আছেন। তাড়াতাড়ি যেন যাই। একাডেমির লাইব্রেরিতে ছিলেন তিনি। বললেন এই রুমে পাওয়া যাবে না। ওটা আরেক বিল্ডিংয়ে।
পাশেই স্যাঁতসেঁতে একটি বিল্ডিং। নাকে আসছে বাজে গন্ধ। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে গেলাম আমরা। পারভেজ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সব বললেন। তিনি জানালেন এখন তো সময় নেই। ৩টার সময় বন্ধ হয়ে যাবে। বাকি আছে ১০ মিনিট। এ সময়ের মধ্যে কতটুকু কী করবেন? বললাম সমস্যা নেই। আগে বলেন আপনাদের সংগ্রহে দৈনিক ইত্তেফাক কত সাল থেকে আছে? তিনি বললেন ১ নভেম্বর, ১৯৬৪। তিনি দ্রুত সেই ফাইল বের করলেন। বললেন পৃষ্ঠাগুলো খুব নরম। পানি দিয়ে কোনোভাবেই পাতা উল্টানো যাবে না।
পত্রিকা উল্টাতেই পাওয়া গেল ভীমরুলের মিঠে-কড়া! পর দিনের পত্রিকায় মোসাফিরের রাজনৈতিক মঞ্চ। শাহাদাৎ একের পর এক লেখার ছবি তুলছেন। এভাবে অনেকগুলো। ততক্ষণে সময় শেষ। আমাদের বলা হলো পরদিন সকালে আসার জন্য। সেই কলামগুলো অনেক যত্নে, ফটোশপে নিয়ে সাইজ করলেন শাহাদাৎ। এরপর দেওয়া হলো আমাদের কাছে। সেখান থেকে পাঠানো হলো কম্পিউটারে।
লেটার ব্লকে ছাপা সেই সময়ের ইত্তেফাক নিয়ে কিছু বলা দরকার। ৪ পৃষ্ঠার পত্রিকার মাস্টহেডে রয়েছে ২টি তারিখ। বামে যেদিন পত্রিকা ছাপা হচ্ছে, সেইদিন দেওয়া। ডানে দেওয়া পরদিনের তারিখ। বোঝা গেল, সেই সময় পূর্ব পাকিস্তানের যোগাযোগ ব্যবস্থা কেমন ছিল? কারণ নির্ধারিত দিনে পত্রিকা পেতেন শুধু ঢাকার পাঠক। সারাদেশের পাঠক পেতেন পরদিন। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, সেই সময়ের কলামে কোনো শিরোনাম ছিল না! শুধু একটি মোটিভ আর ছদ্মনাম!
মূলত যে কারণে দেশ রূপান্তরের এই উদ্যোগ, তা হচ্ছে ক্ষুরধার লেখার সঙ্গে বর্তমানের সংযোগ স্থাপন। একই সঙ্গে সাংবাদিক এবং পাঠকদের মধ্যে একটি গঠনমূলক চেতনা প্রতিষ্ঠা করা। তাদের মধ্যে এমনও চিন্তার উন্মেষ ঘটতে পারে লেখার চাতুর্য এবং কীভাবে ইতিহাসের সঙ্গে বর্তমানকে মিশিয়ে ভয়ংকর শব্দবাণে অত্যাচারীকে আঘাত করতে হয়! আজও ভাবতে অবাক লাগে, শিরোনামহীন এই লেখাগুলোই কাঁপিয়ে দিয়েছিল স্বৈরশাসকের ভিত।
সাংবাদিকতা জীবনের ৩৪ বছরে মনে পড়ে না, জাতীয় কোনো পত্রিকায় এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ সময়ের পাঠক ও তরুণ সাংবাদিকরা যদি তাদের কলামগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়েন তবেই আমাদের চেষ্টা সার্থক হবে। একই সঙ্গে প্যারাসাইট কলাম লেখার ঢেউ, উল্টে যেতে পারে। কলাম লিখতে হলে পড়াশোনা এবং সমসাময়িক বিষয় সম্পর্কে ধারণা রেখে, প্রখর চিন্তা নিয়ে শব্দবাণ ছুড়ে দিতে কজন কলাম লেখক পারেন! যিনি পারেন, তিনি এবং তার লেখা পায় অমরত্বের ছোঁয়া। এ সময়েও কিছু উপসম্পাদকীয় লেখক বেড়ে উঠেছেন, তুখোর চিন্তাশক্তি আর শব্দের চাতুর্য নিয়ে এটিই আমাদের জন্য বিরাট পাওয়া।
লেখক : সাংবাদিক
এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ হচ্ছে ডেঙ্গু। সাধারণত গ্রীষ্মম-লীয় দেশগুলোতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এডিস মশার কামড় এড়িয়ে চলাই এর হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এডিস মশাকে এড়িয়ে চলা কঠিন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু বিশ্বের অনেক দেশেই একধরনের বৈশ্বিক আপদ হিসেবে পরিণত হয়েছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শরীরে জ¦র, বমি, মাথাব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে মানুষ। যদিও অধিকাংশই সুস্থ হয়ে উঠছে। কিন্তু এর ফলে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর হারও কম নয়। প্রতি বছর মৃত্যু হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের। আর কোটি কোটি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। বর্ষাকালে এই রোগের প্রভাব আরও বাড়ে। যে কারণে কোনোভাবেই যাতে এডিস মশা বংশ বিস্তার না করতে পারে, সে ব্যাপারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা হয়।
এর মধ্যেই আবার গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষে স্কুল-কলেজ খুলছে আজ। ডেঙ্গুর এমন প্রকোপের সময় আরও দুই সপ্তাহ পর স্কুল-কলেজ খুললে কী এমন ক্ষতি হতো? নিশ্চয়ই ছেলেমেয়েরা ক্লাসের মধ্যে বসে থাকবে না! খুব স্বাভাবিকভাবেই তারা দৌড়াদৌড়ি করবে, খেলাধুলা করবে এবং ফুলের টবের সামনে যাবে। আর তখনই হবে মশার পোয়াবারো।
এডিস মশা দিনে কামড়ায়। ফলে মশার জন্য মোক্ষম সময়ই খুলে দেওয়া হচ্ছে স্কুল-কলেজ। এ যেন রোগকে আলিঙ্গন করা! এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ কীভাবে নেয়, তা আমাদের বোধগম্য নয়। একই সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরাও এ বিষয়ে আতঙ্কিত। শুক্রবার প্রকাশিত দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মাউশি অধিদপ্তরের পাঁচ দফা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, খেলার মাঠ ও ভবনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মাঠ কিংবা ভবনে জমে থাকা পানি দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য যেসব ফুলের টব রাখা হয়েছে, সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। এডিস মশার প্রজননস্থলে যাতে পানি জমতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ এবং শিক্ষকদের ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়গুলো প্রত্যহ শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে।
খুব ভালো কথা। কিন্তু প্রতিটি স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ এই নির্দেশনা পালন করছে কি না, তা কোন কর্তৃপক্ষ দেখভাল করবে? মাউশির নির্দেশনায় এ বিষয়টির সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা থাকলে ভালো হতো। মাউশি কর্তৃপক্ষ কি এই দায়িত্ব শুধু নির্দেশনার মধ্যেই সম্পন্ন করতে চাইছে!
অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করে এই রোগের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে হবে। এটা কম-বেশি সবাই জানেন। বলতেই হয়, ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতিতে স্কুল-কলেজ খুলে দিয়ে মাউশি কর্তৃপক্ষ মশার বৃহস্পতি যেন তুঙ্গে ওঠাল। হতে পারে এই মুহূর্তে স্কুল-কলেজ খুলে দিয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে আরও বৃদ্ধি করার সুযোগ করে দিল। এর ফলে কোন কর্তৃপক্ষের বড় ধরনের লাভ হবে, তা রহস্যজনক। তবে সরকারের উচ্চপর্যায়ে এ বিষয়ে অতিদ্রুত সর্বজনীন সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। অভিভাবকরা যাতে তাদের সন্তান নিয়ে কোনো ধরনের দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কের মধ্যে না থাকেন, তা দেখা কর্র্তৃপক্ষের দায়িত্ব। মাউশি কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। না হলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কোনো আতঙ্ক ছড়াতে থাকে, এতে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে সরকারকেও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে। এটা কোনো ধরনের সাবোটাজ কি না, সে বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া দরকার। অবশ্যই জনগণের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা শতভাগ। মনে রাখতে হবে, এর ফলে যেন কোনো ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি না হয়। পাশাপাশি এ বিষয়ে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করে স্থূল রাজনীতি করাও হবে হাস্যকর। ডেঙ্গু কিন্তু কোনো দল বোঝে না, এটা মনে রাখলেই ভালো।
ভারতীয় রাজনীতিবিদ জ্যোতি বসুর জন্ম ১৯১৪ সালের ৮ জুলাই কলকাতায়। তার বাবার নাম নিশিকান্ত বসু ও মা হেমলতা বসু। তাদের পরিবারের আদি নিবাস ছিল ঢাকা জেলার (বর্তমান নারায়ণগঞ্জ) সোনারগাঁয়ে। ১৯২০ সালে তিনি ধর্মতলার লোরেটো স্কুলে ভর্তি হন। ১৯২৫ সালে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকেই সিনিয়র ক্যামব্রিজ (নবম শ্রেণি) পাস করেন। ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর ইংরেজি সাহিত্যে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। গ্র্যাজুয়েশন শেষে ১৯৩৫ সালে আইন বিষয়ে উচ্চশিক্ষার্থে তিনি যুক্তরাজ্যে যান। লন্ডনে অবস্থানকালে ভারতীয় ছাত্রদের নিয়ে গড়ে ওঠা লন্ডন মজলিসের তিনি ছিলেন প্রথম সম্পাদক। মিডল টেম্পলে ব্যারিস্টারি অর্জনের পর ১৯৪০ সালে তিনি ভারতে ফিরে আসেন এবং কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। তিনি ছাত্রাবস্থায় কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হন। ১৯৪০ সালে গ্রহণ করেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ। দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী হন। ১৯৭৭ সালের ২১ জুন শপথ নেন পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। ১৯৯৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নাম বিবেচিত হলেও তিনি পার্টির সিদ্ধান্তে সেই পদ প্রত্যাখ্যান করেন। টানা ২৩ বছর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০০০ সালে অবসর নেন। ২০০৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক ডি.লিট সম্মান প্রদান করে। ২০০৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বাড়িতে পড়ে গিয়ে কপালে ও মাথায় আঘাত পান। ভর্তি হন হাসপাতালে। ১৭ দিন অসুস্থতার পর ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি তার জীবনাবসান হয়।
পেশোয়ার হইতে শুরু। তারপর সর্বত্র একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি সমানে চলিয়াছে। কনভেনশন লীগের সুপ্রিম লিডার জনাব আইয়ুব খানের পেশোয়ার জনসভায় দুই লক্ষ ও রাওয়ালপিন্ডির জনসভায় তিন লক্ষ লোকের সমাগম বলিয়া দাবী করা হয়। পেশোয়ারের জনসভার বিবরণ দিতে গিয়া কনভেনশন দলের কোন কোন মুখপাত্র যে অচিন্তিতপূর্ণ বিকারের পরিচয় দেন, তার সত্যই তুলনা নাই। পেশোয়ারের জনসভা সম্পর্কে বলা হয় যে, দ্বিগি¦জয়ী গ্রীক বীর আলেকজান্ডারের পর তথায় আর কখনো এত জন-সমাগম ঘটে নাই।
আলেকজান্ডার ও জনাব আইয়ুবের নামের আদ্য অক্ষরের মিল কনভেনশন দলীয় প্রচারকদের কতটা মুগ্ধ করিয়াছিল বলা কঠিন, তবে আলেকজান্ডারের নাম উল্লেখ করিয়া, আইয়ুব জনসভার বিপুলতা সম্পর্কে একটা বিরাট ধারণা সৃষ্টি করাই ছিল তাঁহাদের মূল উদ্দেশ্য। অথচ স্তাবকতার তাগিদে তাঁহারা এই ঐতিহাসিক সত্যটি ভুলিয়া গিয়াছিলেন যে, ভারত উপমহাদেশ আক্রমণের সময় আলেকজান্ডারের সৈন্য-সংখ্যা ছিল তিরিশ হাজারেরও কম এবং আলেকজান্ডার বা তার সেনাদল আদৌ পেশোয়ারে পদার্পণই করেন নাই।
অবশ্য এক অর্থে বোধকরি তুলানাটাকে যথার্থ বলিয়াই গণ্য করিতে হয়। পেশোয়ারের জনসভায় এই লক্ষ লোকের সমাগম ঘটিয়াছিল বলিয়া মূলত দাবী করা হইলেও আসলে কত লোক হইয়াছিল, কনভেনশন লীগের প্রচারকরাও তাহা জানেন। আর জানেন বলিয়াই হয়তো তাহারা আলেকজান্ডারের উদাহরণটি উত্থাপন করেন। বস্তুত, কনভেনশন লীগাররা যখন ‘লাখ লাখ’ বলিতে বলিতে গলদঘর্ম হইয়া উঠেন, তখন আমাদের মনে পড়িয়া যায় পুঁথি সাহিত্যের সেই অপূর্ব উক্তিটি : ‘লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতার, শুমার করিয়া দেখি চল্লিশ হাজার।’ শুমার করিয়া দেখিলে আইয়ুব সাহেবের লক্ষ লক্ষ লোক আসলে কত হাজারে নামিয়া আসে, তার একটি খবর বাহির হইয়াছে পত্রান্তরে। খবরটি আইয়ুব সাহেবের রাওয়ালপিন্ডির জনসভা সম্পর্কে। বলা হইয়াছে যে, জনসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পরই উচ্চতর পর্যায়ে হিসাবের পালা শুরু হয়। ‘হিসাব’ করিয়া তাঁহারা ঠিক করেন যে, জনসভায় তিন লক্ষ লোকের সমাবেশ ঘটে। অতঃপর সেই ‘হিসাবটি’ বেতার কেন্দ্রে এবং সংবাদপত্রসমূহে পাঠাইয়া দেওয়া হয়। আর তারপর বেতার ও প্রচারপত্রসমূহে তিন লাখের ঐকতান।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রাওয়ালপিন্ডির আইয়ুব-সভায় কত লোক হইয়াছিল, উক্ত সংবাদপত্রের প্রতিনিধি নিজের অভিজ্ঞতা হইতে তার একটি হিসাব উপস্থিত করিয়াছেন। তিনি লিখিয়াছেন : ‘কয়েক বৎসর পূর্বে করাচী স্টেডিয়ামে টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হইবার পর এক বিপুল জনস্রোতকে স্টেডিয়াম হইতে বাহির হইয়া আসিতে আমি দেখিয়াছিলাম। বিক্রীত টিকিট হইতে সরকারীভাবে হিসাব করা হইয়াছিল যে, উক্ত টেস্ট ম্যাচে চল্লিশ হাজার দর্শকের সমাগম ঘটে। রাওয়ালপিন্ডিতে জনাব আইয়ুবের জনসভায় লোকসমাগম হইয়াছিল তার চাইতে অনেক কম।
সামরিক শাসনের পর রাওয়ালপিন্ডিতে জনাব কাইউম খান যে সভা অনুষ্ঠান করেন, তার চাইতেও লোক কম হইয়াছিল জনাব আইয়ুবের জনসভায়। শেখ আবদুল্লার সাম্প্রতিক পাকিস্তান সফরকালে রাওয়ালপিন্ডিতে যে জনসমাগম ঘটে, জনাব আইয়ুবের জনসভা ছিল তার অর্ধেক। আর মিস ফাতেমা জিন্নার জনসভার তুলনায় জনাব আইয়ুবের জনসভায় লোকসংখ্যা ছিল এক-তৃতীয়াংশেরও কম।’
অবস্থাদৃষ্টে ইহাই প্রতীয়মান হয়, কনভেনশন লীগের স্তাবক সম্প্রদায় স্থির করিয়াছেন যে, তাহাদের মহান নেতার অপূর্ব মহিমা কিছুতেই তাহারা ক্ষুন্ন হইতে দিবেন না। জনসভায় লোকসমাগম আসলে যতই হোক, হিসাবের খাতা ঠিক রাখিতে হইবে। সুপ্রিম লিডারকে বুঝাইতে হইবে যে, তাহার চাইতে জনপ্রিয় লোক দেশে আর দ্বিতীয়টি নাই।
ফলে যেখানে চল্লিশ হাজার লোক হয়, সেখানে কনভেনশনী প্রচারকরা উহাকে তিন লাখ, যেখানে ষাট সত্তর হাজার লোক, সেখানে উহাকে পাঁচ লাখ ইত্যাদি বলিয়া সমন্বয়ে চীৎকার করা হইতেছে। আর আইয়ুব খান সাহেবও সেই প্রচারকদের এমন বিশ্বাস করিতেছেন যে, তিনি নিজেই উদ্যোগী হইয়া কোন কোন ক্ষেত্রে আরো এক লাখ দুই লাখ যোগ করিতেছেন। পল্টনের জনসভায় কত লোক হইয়াছিল, সকলে তাহা স্বচক্ষে দেখিতে পাইয়াছে। অথচ পরদিন কনভেনশনী প্রচারপত্রগুলিতে দাবী করা হয় যে, উহাতে নাকি পাঁচ লক্ষ লোকের সমাগম ঘটিয়াছিল। আইয়ুব সাহেব স্বয়ং উদ্যোগী হইয়া উহার সহিত আরো দুই লক্ষ যোগ করিয়া প্রচার করেন যে, তাহার জনসভায় নাকি সাত লক্ষ লোকের সমাগম ঘটিয়াছিল। তিনি পল্টনের লোক ধারণের ক্ষমতার কথা বুঝিলেন না। ঢাকার লোকসংখ্যার কথা চিন্তা করিলেন না। বাাহির হইতে লোক আসিলে, কত লোক আসিতে পারে, স্টিমার-লঞ্চ ইত্যাদির সাহায্যে কত লোকের আসা সম্ভব, সেসব কথা ভাবিলেন না। এমনকি নিজের দুই চোখকে পর্যন্ত বিশ^াস করিলেন না। তাহাকে যাহা বুঝানো হইলো তাহাই তিনি বুঝিলেন।
কনভেনশন লীগারদের লোক সংগ্রহের পদ্ধতিটি ইতিমধ্যে দেশবাসীর নিকট এতই সুপরিচিত হইয়া গিয়াছে যে, তৎ সম্পর্কে বোধকরি বেশী কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না। পেশোয়ারের জনসভায় কীভাবে লোক সংগৃহীত হইয়াছিল, তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ শুনুন : ‘পেশোয়ারের জনসভার নির্ধারিত তারিখের দুই সপ্তাহ পূর্ব হইতেই লোক সংগ্রহের তৎপরতা চলে। রাত-দিন সমানে উক্ত উৎপরতা চালানো হয়। বহুসংখ্যক ট্রাক যোগাড় করা হয়; অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিনা ভাড়ায়।
বর্তমানে যারা মৌলিক গণতন্ত্রী আছেন, তাঁহাদিগকে লোক সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়। টাকার কোন সমস্যা ছিল না। দূর-দূরান্ত হইতে মানুষ সংগ্রহ করিয়া পেশোয়ারে আনা হয়। তাহারা প্রেসিডেন্টের সভায় হাজিরা দেয় তৎপর লব্ধ অর্থে জিনিসপত্র কেনা কাটা করে, ঘুরিয়া ঘুরিয়া শহরটি দেখে। এমনিভাবে পরের পয়সায় একটি দিন উপভোগ করিয়া তাঁহারা ফিরিয়া যায়। মিলসমূহ এবং উপজাতীয় এলাকাসমূহ হইতেও লোক সংগ্রহ করা হয়।’ একই ঘটনা ঘটে রাওয়ালপিন্ডিতে, লাহোরে, ঢাকায়, যশোর এবং সর্বত্র। তবে যশোরের ব্যাপারে কিঞ্চিৎ গোলমাল হইয়া গেল বলিয়া মনে হয়। জনাব আইয়ুবের যশোরের জনসভার জন্য বহু দূর-দূরান্তের অঞ্চল হইতে লোক সংগ্রহ করা হয়। তাহাদিগকে বিনা পয়সায় যাতায়াত, বিনা পয়সায় খাওয়া-দাওয়া এবং সিনেমা আমোদ স্ফূর্তির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
বেচারারা ভাবিয়াছিল, পরের পয়সায় যদি একটা দিন আনন্দ-স্ফূর্তি করিয়া লওয়া যায়, মন্দ কি! আইয়ুব সাথে কি বলেন শোনা হোক না হোক, বিনা পয়সায় সিনেমা ত দেখা হইবে। কিন্তু আমোদ-স্ফূর্তির প্রলোভন দেখাইয়া শেষে বেচারাদের একেবারেই পথে বসানো হইয়াছে। এমনকি ফিরিয়া যাইবার রাস্তা ভাড়াটি পর্যন্ত নাকি দেওয়া হয় নাই। কনভেনশন লীগারদের এই কীর্তিতে ক্ষুব্ধ হইয়া অবশেষে তাহারা বিক্ষোভ প্রদর্শনে বাধ্য হয়।
এমনিভাবেই কনভেনশন লীগাররা জনসভায় লাখো-লাখো লোকের সমাগম ঘটাইতেছেন। কনভেনশন লীগের এই কান্ড-কীর্তির সত্যিই তুলনা নাই।
ভুক্তভোগীদের উদ্দেশ্যে একটি কথা বলা প্রয়োজন। কথাটি এই যে, ইহাদের প্রতিশ্রুতিতে তাহাদের বিশ্বাস করা ঠিক হয় নাই। যাহারা দেশবাসীকে সকল প্রকার অধিকার হইতে বঞ্চিত করিয়াছেন, যাহাদের আমলে সমাজ জীবনের প্রতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির বিস্তার ঘটিয়াছে, যাহাদের আমলে মদ জুয়া ইত্যাদির ওপর কর হ্রাস পায় অথচ তামাক-সুপারির ওপর কর বসে, যাহাদের আমলে কোটিপতি মিল মালিকরা কোটি কোটি টাকা মুনাফা করেন, অথচ শিক্ষকগণ অনশন ধর্মঘট করিয়াও বেতন বাড়াইতে পারেন না, যাঁহারা মুখে জনগণ জনগণ করেন অথচ কাজে-কর্মে জনসাধারণ অজ্ঞ-মূর্খ ও গরু-ভেড়ার শামিল বলিয়া মনে করেন, তাহাদের কোন প্রতিশ্রুতিতে তা সে যত সামান্য প্রতিশ্রুতিই হোক, কাহারো বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করিবার অবকাশ নাই।
এই গণবিরোধীদের হাত হইতে জনতার ভাগ্যকে মুক্ত করিতে হইবে। নইলে কোন মানুষেরই ভবিষ্যৎ নিরাপদ নয়, কোন মানুষেরই মর্যাদা নিঃশঙ্ক নয়।
লেখক: আহমেদুর রহমান
দৈনিক ইত্তেফাক, ১ নভেম্বর ১৯৬৪
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২ নভেম্বর। পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা, কানাঘুষা; শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
বর্তমান উপাচার্যই আবার দায়িত্ব পাবেন নাকি নতুন কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে এ আলোচনাই চলছে এখন। আলোচিত হচ্ছে কয়েকজন শিক্ষকের নামও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন কানাঘুষারও অবসান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পদে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্য থেকেই কাউকে বাছাই করার বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। গুণী কোনো শিক্ষক উপাচার্যবিষয়ক আলোচনার মধ্যে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা হবে কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সিনেট নির্বাচিত তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন।
রীতি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেটের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। কিন্তু এবার সিনেট অধিবেশন হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য অধিবেশন ডাকবেন কি ডাকবেন না; ওপর মহলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানেন না। উপাচার্য নিজেও বিষয়টি খোলাসা করছেন না।
অধ্যাদেশের ১১(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমন অসুস্থতা, ছুটি, অপসারণ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হলে একজনকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যাদেশের নিয়ম অনুসরণ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হোক। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং আগামী নির্বাচনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন উপাচার্যের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘ভিসি প্যানেল নিয়ে আলোচনা নেই। উপাচার্যও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে আমাদের জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তাদের মধ্য থেকেই কারোর পরবর্তী উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এ বিষয়ক আলোচনায় রয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান। পরে প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর উপাচার্য পদে পুনর্নিয়োগ পান তিনি। সাত বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সামলাচ্ছেন তিনি। দুই মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকার নজির নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই তার দায়িত্ব পালনের শেষ দেখছেন অনেকে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষকদের মধ্যেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন তিনি।
ইমেরিটাস অধ্যাপক বা অন্য কোনো গুণী শিক্ষক নেই উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায়। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গুণী শিক্ষকদের সামনে আনার যে ধরনের কাঠামো থাকা উচিত তা নেই। যারা তোশামোদ করতে পারে, অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে, তাদেরই প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়ে আসা হয়। সত্যিকারের গুণী শিক্ষক এবং অনেক ভালো গবেষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা কখনো প্রশাসনের দায়িত্বে আসতে পারেন না। তারা ব্যক্তিত্বের জলাঞ্জলি দিতেও রাজি নন।’
অতীতে উপাচার্যদের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটা ভারসাম্য ছিল। এখন তা নেই। এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদগুলো দেওয়া হয়।
পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন বা ভিসি প্যানেল নিয়ে আগ্রহ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের। বিএনপিঘোষিত এক দফাতেই তারা মগ্ন। যদিও সিনেটে তিনজন প্রতিনিধি থাকায় সুযোগ তাদেরও রয়েছে। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন না হলে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিষয়ে ভাবছি না। এ বিষয়ে আমাদের ফোকাস নেই। আমাদের ফোকাস হচ্ছে এ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিবর্তন আসবে।’
শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও সাংগঠনিকভাবে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা নীল দল এখনো এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিনি। যথাসময়ে দলের সভায় এ নিয়ে কথা হবে। মনোনয়ন কে পাবেন, তার আলোচনাও সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ তিনজন বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন। আমরা উনাদের সমর্থন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ীই সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।’
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের গতি অনুযায়ীই সব চলবে। এ বিষয়ে যাদের ভাবা প্রয়োজন তারা অবশ্যই ভাববেন।’ সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন হলে আমরা ডাকি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।