
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী দাবি করেছেন বাজেট সবার জন্য। বাজেট সবার জন্যই হয়। যেহেতু সম্পদ সীমাবদ্ধ, অতএব কার পক্ষে বেশি সম্পদ বরাদ্দ করা হলো বা বেশি সম্পদ কীভাবে ব্যবহার করা হলো তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এবার বাজেটের আগে কাকে নিয়ে বসা হয়েছে জানি না। বাজেটে অংশীজনদের অংশগ্রহণ নেই।’
গতকাল বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ও সিপিডি আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪ : অসুবিধাগ্রস্ত মানুষগুলো কী পেল?’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপের সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মানিত ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এতে বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বলা হয় প্রত্যেক বাজেটের পর আমরা গৎবাঁধা সমালোচনা করি। ডাক্তারকে গিয়ে যদি বলেন একই রোগের ভিন্ন ওষুধ দেন। তাহলে ডাক্তারের মুশকিল হয়ে যাবে। রোগটা তো একই। গত ১০ থেকে ১৫ বছরে বাজেট অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার একটি দলিল বা মাধ্যম হিসেবে কতখানি উন্নতি করল!’
তিনি বলেন, ‘বাজেট ব্যবস্থাপনায় ২০০৬ সালে একশর মধ্যে আমরা ৩৮তম ছিলাম, পয়েন্ট ছিল ৬৪। আর এখনকার পরিস্থিতিতে আমরা ৯৫তম। শুধু অবস্থানের দিক থেকেই ক্রমাবনমন হয়নি। আমাদের যে স্কোর তার ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করা হয়। অর্থনৈতিক নীতি-কৌশলের গুণমান এর মধ্যে নেই।’
দেবপ্রিয় বলেন, ‘পৃথিবীতে বড় বাজেটের ১৪৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩৭তম। বড় বাজেটের মধ্যে সরকার খরচ করে ৩২ দশমিক ২ শতাংশ। আর বাংলাদেশ সরকার ব্যয় করে ১৫ বা ১৬ শতাংশ। ২০২২ সালে ১৫ দশমিক ০২ শতাংশ জিডিপি করার কথা থাকলেও হয়েছে ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ। বাকি প্রায় ২ শতাংশ কে দেবে?’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে কর আহরণের যে গতি ছিল তা পড়ে গেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আবারও একইভাবে কমে গেছে। আমরা বলি, গণতান্ত্রিক জবাবদিহির ঘাটতি হলে সরকারের কর আহরণ, উন্নয়ন ব্যয় উভয়ই নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়।’
সিপিডির এ ফেলো বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিবিএস এক ধরনের কথা বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয় আরেক পরিসংখ্যান দিচ্ছে। তাহলে কি ডান হাত-বাম হাত একসঙ্গে কাজ করছে না? এরকম হলে কিন্তু বাজার বেত্তমিজি করবে।’
তিনি বলেন, ‘এবার রাজস্ব আদায়ের মরিয়া চেষ্টা দেখা গেছে। সরকারের হাতে খরচ করার মতো টাকাও নেই, ডলারও নেই। খরচ করার টাকা সংগ্রহ করতে চাচ্ছে তারা। আইএমএফ বলেছে, প্রতি বছর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্ব বাড়াতে হবে। আইএমএফের প্রথম সমীক্ষা হয়ে গেছে। দ্বিতীয় সমীক্ষা বছরের শেষের নাগাদ হবে। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেতে হলে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। লক্ষণীয় বিষয়, এত মরিয়া চেষ্টার পরও আধা শতাংশ বর্ধিত করের লক্ষ্যমাত্রা বাজেটে প্রাক্কলন করা সম্ভব হয়নি।’
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘রাজস্ব আহরণে যে পদক্ষেগুলো নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে ২ হাজার টাকা সারচার্জসহ অন্যগুলো নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষকে প্রভাবিত করবে নেতিবাচকভাবে।’
তিনি বলেন, ‘রিটার্ন সনদ পেতে ২ হাজার টাকাÑ এটা কেউ দেয়? কত টাকা এর থেকে আদায় হবে? কেউ বলছে এক হাজার কোটি টাকা আদায় হতে পারে। কার্যত এটি থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা আদায় হতে পারে। আগে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হতো, সর্বশেষ মুহিত সাহেব স্থায়ী কমিটির সভাপতিদের ডেকে বৈঠক করতেন। এবার তাও হয়েছে কি না, আমরা জানি না।’
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের যে সম্পদ আছে তার বণ্টনে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা জরুরি। এনবিআর কত টাকা আয় করতে পারল, কত টাকা সাশ্রয় করা যায়, তাও গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। আমাদের ১ হাজার ২৫০টির মতো প্রকল্প আছে, যার মধ্যে ৮৭৮টি ২০২৪ সালে শেষ করতে হবে। অধিকাংশই আগের প্রকল্প। এই যে ক্যারিওভার প্রকল্প, এগুলোর কারণে সমস্যা আরও প্রকটিত হচ্ছে। শুধু বাজেট প্রণয়ন নয়, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও অনেক বৈসাদৃশ্য আছে। এগুলো এখন প্রতীয়মান হচ্ছে।’
জলবায়ু ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘অন্যসব মন্ত্রণালয়ের মতো জ্বালানি ও জলবায়ু নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দের সঙ্গে বাস্তবায়নের ফারাক থেকে যায়। আমরা আইএমএফের ঋণের আওতায় রয়েছি। তাদের শর্ত অনুযায়ী ১১টি খাতে সংস্কার করতে হবে। এর মধ্যে জলবায়ু খাতে সংস্কারের শর্তও রয়েছে। বাজেটে আমরা সেটির প্রতিফলন দেখতে পাইনি।’
অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘এবারের বাজেটে দরিদ্র মানুষরা বা যাদের পিছিয়ে রাখা হয়েছে তারা অদৃশ্য। তাদের জন্য বেশি কিছু দেখতে পাচ্ছি না। দরিদ্র হয়ে জন্মায় বলেই তারা বাজেটে বঞ্চিত।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করতে ঘুরেফিরে সংলাপের বিষয়টি আসছে। ক্ষমতাসীনদের তরফ থেকে প্রভাবশালী যেসব দেশ বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের বারবার সংলাপের রাস্তা বাতলেছেন। সেই রাস্তায় না চলে দফায় দফায় অনীহা দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হঠাৎ গত মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের জনসভা থেকে বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমুর জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপে বসা সংক্রান্ত বক্তব্য ঘিরে আবার আলোচনায় এসেছে বিষয়টি। অবশ্য এ প্রস্তাব বিএনপির প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমুর মাধ্যমে আসা প্রস্তাবটি হাওয়া থেকে আসেনি। এটা যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে তৃতীয়পক্ষকে সামনে এনে দায় এড়ানোর এক ধরনের কৌশল হতে পারে।
১৪ দলের জনসভায় আমু বলেছেন, প্রয়োজনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। এ নিয়ে সরকারের তিনজন মন্ত্রী গতকাল কথা বলেছেন। দুজন বলেছেন, এমন কোনো সংকট হয়নি জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপ করতে হবে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সংকট সমাধানে আলোচনার বিকল্প নেই।
তবে বিএনপি আমুর এ প্রস্তাবকে আপাতত আমলে নিচ্ছে না। দলটির নেতারা বলেছেন, লিখিত প্রস্তাব দিলে ভেবে দেখবেন তারা।
প্রভাবশালী যেসব দেশ বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়, তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের বারবার সংলাপের রাস্তা বাতলেছেন। সেই রাস্তায় না চলে দফায় দফায় অনীহা দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংলাপে অনীহার কারণও উল্লেখ করেছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটি। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছিলেন। ফলে পথ হারিয়েছিল সংলাপ আলোচনা। তারা পরে গত মঙ্গলবার হঠাৎ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের জনসভা থেকে বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু সংলাপ বিষয়ে বক্তব্য দেন।
কূটনীতিতে দক্ষ কয়েকজন রাজনীতিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ কোনো সংস্থা নয় যে, কারও প্রস্তাবে মধ্যস্থতায় আসতে রাজি হয়ে যাবে। মধ্যস্থতা চেয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সহযোগিতা চাইলেই কেবল আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি সাড়া দিতে পারে। সুতরাং সরকারেরও সায় রয়েছে এ প্রস্তাবে। তার আগে প্রতিক্রিয়া যাচাই করা রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সুফল পাবে মনে করলে সরকার সে পথে যেতে পারে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের দুই সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, সংলাপের ব্যাপারে একেবার অনীহা থাকলে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়ার মতো নেতা আমির হোসেন আমু নয়। সংলাপের ব্যাপারে সরকারের ভেতর-বাইরে অবস্থান যাই থাকুক, আমুর প্রস্তাবে সরকারের ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের ইশারা ছাড়া হয়নি।
এ প্রস্তাবের এক দিন পর গতকাল দলীয় একটি আলোচনা সভায় আমির হোসেন আমু বলেন, ‘এটা আওয়ামী লীগের বাড়ির দাওয়াত না যে, দাওয়াত করে এনে খাওয়াব। আলোচনার জন্য কাউকে বলা হয়নি, কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি।’ বর্ষীয়ান এ নেতা বলেন, ‘নির্বাচন হবে সংবিধানের ভিত্তিতে। সেই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে বলা যায়। কিন্তু আলোচনার জন্য নয়।’ এর আগে মঙ্গলবার ১৪ দল আয়োজিত জনসভায় তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি। কিছুটা কৌশলী বক্তব্য রেখেছেন গতকাল।
এ পর্যায়ে সংলাপের প্রস্তাব উদ্দেশ্যবিহীন মনে করে না ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাও। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ পর্যায়ে বিএনপিও কী প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটাও দেখার আছে। প্রস্তাব গ্রহণ করলে এক ধরনের কৌশলে যাবে, প্রস্তাব নাকচ করলে দেশি ও বিদেশি মহলে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে এক ধরনের সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। সেই আশায়ও নতুন করে এ প্রস্তাব দিয়ে থাকতে পারেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ এ নেতা।
সূত্র জানায়, আলোচনায় উঠে এসেছে সরকার বা আওয়ামী লীগ এক ধরনের চাপে পড়েছে। আর সেই চাপ সামলে নির্বাচন তুলে নিতে সংলাপের রাজনীতিকে কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ‘ব্যাকফুটে’ খেলে চার বা ছক্কা হাঁকাতে চায় বলে সংলাপের আওয়াজ দিয়েছে মাঠে। আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থাকে মধ্যস্থতায় রেখে সংলাপের আলোচনা নতুন কোনো শক্তিকে আলোচনায় আনার কৌশলও হতে পারে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতা ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের একাধিক নেতাও দেশ রূপান্তরকে বলেন, শীর্ষ পর্যায়ের ইশারা ছাড়া আমু এমন প্রস্তাব কোনোভাবেই দেননি। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের পথ দেখিয়ে মূলত তৃতীয়পক্ষকে আনতে পারে, রাজনীতিতে সে আলোচনা তুলতে চেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের মধ্যমসারির নেতাদের একটি অংশ যদিও দাবি করেন, তাদের দলের প্রভাবশালী এ নেতার বক্তব্য সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো ধারণা নেই। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমির হোসেন আমু জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের যে প্রস্তাব দিয়েছেন সে সম্পর্কে তাদের পর্যায়ের নেতাদের কোনো ধারণা থাকার কথা নয়।’ দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মি আহমেদ বলেন, ‘এ বক্তব্য সম্পর্কে তারও কোনো ধারণা নেই।’
অবশ্য নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, একেবারেই হাওয়া থেকে এমন প্রস্তাব আসেনি। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মাধ্যমের প্রত্যাশা তো আছেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংলাপ হতে পারে। হয়তো হবেও। কিন্তু সেই সময় এখনো আসেনি।’
আওয়ামী লীগ সিনিয়র নেতারা মনে করেন, সংলাপ ও আলোচনায় সমস্যা সমাধানে কখনই আগ্রহী নয় বিএনপি। ফলে সংলাপের ডাক দিয়ে দায় থেকে মুক্ত হতে পারবে আওয়ামী লীগ। সেই কৌশলে সংলাপ আয়োজনে গেলে ক্ষতি কি? সেই পরিকল্পনা থেকে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে আমু সেই পথ দেখিয়েছেন। তাছাড়া হঠাৎ যে চাপে পড়েছে সরকার সেখান থেকে বেরিয়ে আসা যায় কি না, সেটাও দেখা যাবে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের প্রস্তাবে।
তবে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল দলীয় একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আমরা আলোচনা করব, এটা নিজেদের সমস্যা, নিজেরাই সমাধান করব। বিগত নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী সংলাপের আহ্বান করেছিলেন। যেখানে বিএনপি দুবার সংলাপে অংশ নিয়েছিল। আলোচনার জন্য জাতিসংঘ কেন মধ্যস্থতা করবে? আমাদের দেশে এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়নি যে জাতিসংঘের এখানে হস্তক্ষেপ করতে হবে।’
একইদিন রাজধানীতে আরেকটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘রাজনৈতিক যেকোনো সমস্যা সমাধানে আলোচনা প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ দল হিসেবে সব দলকে নিয়ে আলোচনা করে সমাধানে বিশ্বাসী।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণের ক্ষমতায় চলতে হবে। আর জনগণের ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে হলে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই আলোচনার বিকল্প কিছু নেই।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলছেন, লিখিত কোনো প্রস্তাব আসে সেটার জবাব কী দেওয়া যায় তা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে ওই প্রস্তাবে অবশ্যই ‘নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক’ যে নামেই ডাকা হোক, তা এজেন্ডায় থাকতে হবে।
ওই নেতা বলেন, গত মে মাসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিলেন। যদিও ৯ মে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর থেকে দুই দলের আলোচনায় বসা না বসা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা রয়েছে।
গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে আলোচনার একপর্যায়ে এ প্রসঙ্গে এক নেতা জানান, হয়তোবা তাদের (ক্ষমতাসীনদের) কাছ থেকে প্রস্তাব (সংলাপ) আসতে পারে। কেননা সম্প্রতি তারা নরম সুরে কথা বলছে। তবে স্থায়ী কমিটির প্রায় সব সদস্যই এজেন্ডা ছাড়া সেই আলোচনায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে মত দেন।
সিনিয়র এক নেতা তার মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে বৈঠকে বলেন, ২০১৮ সালে শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে আমরা তার সঙ্গে সংলাপে বসেছিলাম। সেই সংলাপে যেসব কথা তিনি দিয়েছিলেন, সেগুলোর একটাও তারা রক্ষা করেননি। আর ২০১৪ সালে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতায় ৫ জানুয়ারি নিয়মরক্ষার নির্বাচন বলা হলেও ক্ষমতা এসে আর নির্বাচন দেয়নি আওয়ামী লীগ। তাই এবার বসতে হলে এজেন্ডা নিয়ে বসতে হবে। অপেক্ষাকৃত জুনিয়র এক নেতা বলেন, হঠাৎই আওয়ামী লীগ সংলাপের বিষয়ে কথা বলছে না। তারা বলতে বাধ্য হচ্ছে। আমাদের করণীয় ঠিক রেখেই তাদের সঙ্গে বসতে হবে। ওই এজেন্ডায় খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। উনি (আমির হোসেন আমু) আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল স্পোকস ম্যান কি না এটা আমি জানি না। আমরা উনার বক্তব্যকে গুরুত্ব দেব কেন? আমি এর বেশি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’
জামালপুরের সরিষাবাড়ীর সোহরাব হাসান ও তার স্ত্রী হজে যাওয়ার জন্য চার দিন আগে ঢাকায় আসেন। আশকোনার একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন তারা। গত সোমবার তাদের ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভিসা না হওয়ায় তারা এখনো যেতে পারেননি। তাদের এজেন্ট বলেছেন, তিন-চার দিনের মধ্যে ভিসা হয়ে যাবে এবং বিমানের একটি ফ্লাইটে জেদ্দায় যাবেন তারা।
সোহরাব হাসানদের মতো অন্তত ১৬ হাজার হজযাত্রীর ভিসা এখনো হয়নি। কবে হবে তা-ও কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাব বলছে, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই সবার ভিসা সম্পন্ন করা হবে।
মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবারের মধ্যেই সবার ভিসার বিষয়টি শেষ করতে বলেছিল। তা না হলে এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল। অন্যদিকে সৌদি সরকার বাংলাদেশকে লাল তালিকাভুক্ত করার হুঁশিয়ারি দিয়ে সতর্কবার্তা পাঠায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ৮ হাজার হজযাত্রীর ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আরও তিন দিন সময় চেয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
গতকাল আশকোনায় হজক্যাম্পে সরেজমিনে কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, এজেন্সিগুলোর খামখেয়ালিপনায় ভিসা পেতে দেরি হচ্ছে। যাদের ভিসা হচ্ছে না তারা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। মন্ত্রণালয় আশার বাণী শোনাচ্ছে। ভিসাসহ আরও কিছু অভিযোগে ৯০টি হজ এজেন্টকে শোকজ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের আইনের আওতায় আনারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়।
অপরদিকে, হজযাত্রী সংকট থাকায় বিমানের শিডিউল কিছুটা এলোমেলো হওয়ার পাশাপাশি ফ্লাইট বাতিলও হয়েছে। এসব ফ্লাইট নতুন করে চূড়ান্ত করছে বিমান। তা ছাড়া ফ্লাইটের সøট পেতে সৌদি আরবে চিঠি পাঠিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ১৬ দিনে ২৮ হাজার ৬৩১ জন হজযাত্রীকে সৌদি আরবে নিয়ে গেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
আশকোনা হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আল্লাহর ঘরে যাওয়ার জন্য যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন, সবাইকে ২২ জুনের মধ্যে সৌদি আরব পাঠানো হবে। এখনো যাদের ভিসা হয়নি, তাদের আমরা সব ধরনের সহায়তা করছি। আমরাও অভিযোগ পাচ্ছি। আবার তা সমাধানও করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, যেসব এজেন্সি ঘাপলা করছে, তাদের নজরদারি করা হচ্ছে। এখনো সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া করেনি ১৬৯টি হজ এজেন্সি। তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুত বাড়ি ভাড়া করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জানা গেছে, চলতি বছর ১ লাখ ২২ হাজার ২২১ বাংলাদেশি হজ পালন করার অনুমতি পেয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯০ জন হজযাত্রীর ভিসা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ১৬ হাজারের মতো হজযাত্রীর ভিসা হয়নি। মক্কা-মদিনা বাড়িভাড়া, মোয়াল্লেমসহ সৌদি আরবের দেওয়া বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে না পারায় ভিসা পেতে দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। তা ছাড়া ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে হজ এজেন্সিগুলোকে সৌদি আরব আরও কিছু শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে ফ্লাইটের টিকিট, প্রবেশ ও বের হওয়ার রুট এবং আসা-যাওয়ার তারিখ নিশ্চিত করা অন্যতম। কিন্তু এজেন্সিগুলো শর্ত পূরণ না করায় হজযাত্রীদের ভিসা পেতে দেরি হওয়ায় হজ ফ্লাইট নিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। বিমানের প্রায় প্রতিটি হজ ফ্লাইটইকে খালি আসন নিয়ে ছেড়ে যেতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে যাত্রীর সংকট দেখা দেওয়ায় বাতিল হয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট। সমস্যা সমাধানে সপ্তাহখানেক আগে সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তওফিক আল-রাবিয়াহ চিঠি পাঠিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানকে। এরপর ধর্ম মন্ত্রণালয় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কয়েক দিন আগে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া অন্যতম।
সূত্র জানায়, গতকাল বুধবারের মধ্যে ৮০ শতাংশ ভিসা সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশকে কড়া সতর্কবার্তা দেয় সৌদি আরব। অন্যথায় বাংলাদেশকে সৌদি আরবের বিধিনিষেধে পড়তে হতে পারে। এমনকি সৌদি সরকারের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা না মানলে বাংলাদেশকে লাল তালিকাভুক্তও করা হতে পারে। সৌদি সরকারের এই নির্দেশনার বিষয়টি জানিয়ে সেখানকার বাংলাদেশ হজ অফিস ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি পাঠায়। এর পরই মন্ত্রণালয় হজ এজেন্সিগুলোকে জরুরিভিত্তিতে ভিসা কার্যক্রম শেষ করার তাগিদ দেয়।
বিমানের মার্কেটিং শাখার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়েছে মূলত হজ এজেন্সিগুলোর কম পয়সায় প্যাকেজ ঠিক রেখে অতিরিক্ত মুনাফা লোটার মানসিকতায়; বিশেষ করে মদিনায় এ বছর মসজিদের আশপাশের বাংলাদেশি-অধ্যুষিত এলাকার সস্তার হোটেলগুলো সব ভেঙে দেওয়ায় এখন হজযাত্রীদের জন্য দামি বাড়ি ভাড়া নিতে হচ্ছে। এই বাড়তি ব্যয় এড়াতে এজেন্সিগুলো লম্বা সময়ের প্যাকেজের পরিবর্তে স্বল্পমেয়াদি প্যাকেজ নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করছে। ঢাকায় হজযাত্রীদের ভিসা আবেদনের সময় সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়ার রসিদ প্রদর্শন না করলে ভিসা দেওয়া হয় না। এতে বেকায়দায় পড়ে হজ এজেন্সিগুলো। তারা হজ ঘনিয়ে আসার আগের সাত দিন ও শেষ হওয়ার প্রথম সাত দিনের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনার হিসাব মাথায় রেখে বাড়িভাড়া নেয়। এই একটা কারণেই ঢাকার হজ এজেন্সিগুলো এখন শেষ মুহূর্তে হজযাত্রীদের জন্য বাড়িভাড়া নিয়ে ভিসার আবেদন করার কৌশল নিয়েছে। এতে হজযাত্রী সংকটে বিমান ও সাউদিয়ার বেশ কটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। এজেন্সিগুলো চাইছে স্বল্প মেয়াদি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রতি হজযাত্রীর কাছ থেকে ৪০-৫০ হাজার টাকা লাভ করতে চায়। তাদের এই মুনাফাকেন্দ্রিক কৌশলের দরুন এত দিন প্রায় অর্ধেক ভিসা সম্পন্ন করা হয়নি।
গতকাল আশকোনায় হজক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে, তারা ভিসার বিষয়ে ক্যাম্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন। তবে কড়াকড়ি থাকায় অনেকে ভেতরে ঢুকতে পারছিলেন না। ফরিদপুরের আবদুর রহমান বলেন, এলাকার একটি এজেন্সিকে প্রায় ৮ লাখ টাকা দিয়েছেন। তারা সঠিক সময়ে ভিসা করতে পারেনি। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে ঝগড়াও হয়েছে। তারা জানিয়েছে, তারা জোর দিয়ে বলেছে যে তিন দিনের মধ্যে ভিসার ব্যবস্থা করবে। ওই এজেন্সির লোকজনকে হজক্যাম্পে তলবও করা হয়েছে। তাদের সামনেই বলেছেন, ভিসার ব্যবস্থা করতে না পারলে যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেবেন তারা। এখন অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছেন রহমান।
এ বিষয়ে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান, সৌদি আরব এমন কৌশল সব সময় নিয়ে থাকে। এ নিয়ে নানা ধরনের আতঙ্ক ছড়ায়। অথচ ৮০ ভাগ ভিসা বুধবার পর্যন্ত হয়ে গেছে। এই হিসাবে আর মাত্র সর্বোচ্চ ১৬ হাজার হজযাত্রী বাকি রয়েছে। এ নিয়ে অযথা কোনো দুশ্চিন্তা বা আশঙ্কা করার কিছু নেই; বরং এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় হজ ব্যবস্থাপনা আরও সুন্দর ও সফলতার সঙ্গেই শেষ করতে পারবেন তারা। তিনি বলেন, শেষ সময়ে এসে ভিসা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। ভিসার জন্য সৌদি আরবের দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে প্রতিটিই পূরণ করতে হয় এজেন্সির মালিকদের। একটিও পূরণ করতে ব্যর্থ হলে তারা ভিসা দেয় না।
শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘আমরা তথ্য পাচ্ছি অনেক এজেন্সি এসব শর্ত পূরণ করতে পারেনি বলে তাদের ভিসা দিচ্ছে না। হাবের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।’
বিমানের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনো অনেক হজযাত্রীর ভিসা হয়নি তা সত্য। তবে এজেন্সিগুলো আগাম টিকিট বুকিং দিয়ে রেখেছে।’ তিনি জানান, ১৬ দিনে ২৮ হাজার ৬৩১ জন হজযাত্রীকে জেদ্দা ও মদিনায় পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার পাঠানো হয়েছে ১ হাজার ৭০৫ জনকে। ২২ জুন শেষ ফ্লাইট।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসা আনাসহ নানা কারণে ৯০টি হজ এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। ওই নোটিসে বলা হয়, হজ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব এজেন্সিকে তাদের নিজেদের সব হজযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত হজযাত্রীদের ভিসা ইস্যু করেনি; যা সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় অসহযোগিতার শামিল। এ ধরনের অব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় বিঘœ সৃষ্টি করেছে এবং সরকারের হজ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা উপেক্ষিত হয়েছে, যা ‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১’-এর পরিপন্থী। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণ বিদ্যমান বলেও নোটিসে জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো সঠিকভাবে দিতে না পারলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সব হজযাত্রীকে পরিবহনে নতুন করে আরও পাঁচটি ফ্লাইটের সøট দিতে সৌদি সিভিল এভিয়েশনকে অনুরোধ জানাতে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করে চিঠি পাঠানো হয়েছে কিছুদিন আগে। হজ এজেন্সিগুলোর কারণে এ পর্যন্ত বিমানের কটি ফ্লাইট ধারণক্ষমতার কম যাত্রী নিয়ে পরিচালিত হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়েছে, তা জানাতে সংস্থাটির এমডিকে মঙ্গলবার চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
ফ্লাইটের সøটের বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু ফ্লাইট না যাওয়ায় ক্যাপাসিটি লস হয়েছে। ওই ফ্লাইটগুলোতে যতসংখ্যক যাত্রী যাওয়ার কথা ছিল তা কমে গেছে। এ জন্য কিছু ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
গত এক বছরে দেশে গবাদি পশুর খাদ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। এ কারণে পশুপালনে খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে খরচ বেশি হয়েছে। এর প্রভাব পড়বে এবারের কোরবানির পশুর হাটে। গত বছরের তুলনায় এবার দাম কমপক্ষে ১০ শতাংশ বাড়বে বলে মনে করছেন খামারিরা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার কোরবানির জন্য পশু মজুদ রয়েছে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ। কোরবানি হতে পারে ১ কোটি ৫ লাখ পশু। চাহিদাপূরণ পুরোপুরিই হবে। এবারও আশপাশের দেশ থেকে পশু আমদানি করতে হবে না। খামারিরা জানান, পশুপালনে ঘাস, ভুসি, ভুট্টা, সয়াবিন মিল, রাইস পলিশ, ধানের কুঁড়া, ভুট্টার দানা প্রভৃতি খাবার লাগে। পশুখাদ্যের বেশিরভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশুখাদ্যের দাম বেড়েছে। ৫০ কেজির এক বস্তা পশুখাদ্যের দাম গত বছরের তুলনায় এবার ২০০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়েছে।
সাভারের ভাকুর্তার নীল এগ্রো খামারের স্বত্বাধিকারী মো. রিপন তরফদার নিয়াম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এক বছরে পশুখাদ্যের দাম ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। পশুপালনের খরচও বেড়েছে। এজন্য এবার পশুর দাম গতবারের চেয়ে ২০-২৫ শতাংশ বাড়বে। যে গরু গত বছর এক লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার সেটি ১ লাখ ২০ বা ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর ধরে কোরবানি উপলক্ষে পশুপালনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি। গত দুই বছর যে হারে পশুখাদ্যের দাম বেড়েছে তাতে এ ব্যবসা আর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এবার কোরবানিতে খামারের সব গরু বিক্রি করে দেব। এরপর দুধের গরু পালন করব। এতে নিয়মিত আয় হবে। খাবারের দাম বাড়লে দুধের দামও বাড়বে।’
সাভারের ভাকুর্তার সিয়াকো এগ্রোর কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, তাদের খামারে শুধু গরু পালন করা হয়। এদের গমের ভুসি, ধানের কুঁড়া, ভুট্টার দানা, গমের গুঁড়ো ও সবুজ ঘাস খাওয়ানো হয়। বাজার থেকে কেনা খাবারের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়েছে। খামারের পাশে কিছু জমি লিজ নিয়ে ঘাস চাষ করা হয়েছে। ঘাসের দাম না বাড়লেও ঘাস চাষে ব্যবহৃত সারের দাম বেড়েছে। সেটা ধরলে গড়পড়তা একই অবস্থা।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার পশুখাদ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ গুণ। খামারিদের পশুপালন অনেক ব্যয়বহুল হয়েছে। এর প্রভাব কোরবানির হাটে পড়বে। গতবারের চেয়ে কোরবানির পশুর দাম ন্যূনতম ১০ শতাংশ বাড়বে।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এক বছরে গবাদি পশুর খাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। এ কারণে কোরবানি পশুর দাম কিছুটা বাড়তে পারে। তবে চাহিদার তুলনায় পশুসংখ্যা বেশি হওয়ায় দাম খুব বাড়াতে পারবেন না ব্যবসায়ীরা।’
তিনি বলেন, ‘সরকার কয়েক বছর ধরে দেশি পশুতে কোরবানি নিশ্চিত করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এখন আর আশপাশের দেশ থেকে পশু আনতে হয় না। তবে গত দুই বছর পশুখাদ্যের দাম মাত্রাতিরিক্ত বাড়ায় পশু-উৎপাদনে খামারিরা হতাশ হয়েছে। তবে এবার দেশে ঘাস উৎপাদনে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী, আগামীতে কোরবানির পশুপালনে খাদ্যের বাজার সহনীয় থাকবে, যার প্রভাব কোরবানির পশুর হাটে দেখা যাবে।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, গত বছর দেশে কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ১ কোটি ২১ লাখ। কোরবানি হয়েছিল ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি পশু। উদ্বৃত্ত ছিল ২১ লাখ ৪৯ হাজার ২৩৭টি পশু। এ বছর গত বছরের তুলনায় কোরবানির পশু প্রায় চার লাখ বেশি রয়েছে। এবার কোরবানির পশুর চাহিদা হতে পারে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৫ লাখ। এবার প্রায় ২০ লাখ পশু উদ্বৃত্ত থাকবে আশা করা যায়।
তারা জানান, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ দিয়ে দেশের চাহিদা পূরণ হয়েছে। এবারও হবে।
তারা জানান, ২০১৮ সালে দেশে কোরবানির গরুর সংখ্যা ছিল ৪২ লাখ ৬৭ হাজার ৮২৬টি, ২০১৯ সালে ৪৩ লাখ ৯১ হাজার ৭৪০, ২০২০ সালে ৪৩ লাখ ৪০ হাজার ২৭৮, ২০২১ সালে ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৯৪, ২০২২ সালে ছিল ৪৪ লাখ ৩৭ লাখ ৯১৫াট এবং এবার কোরবানির উপযোগী গরুর সম্ভাব্য সংখ্যা প্রায় ৪৬ লাখ। ২০১৮ সালে কোরবানির উপযোগী ছাগলের সংখ্যা ছিল ৬১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৮টি, ২০১৯ সালে ছিল ৬৩ লাখ ২১ হাজার ১২৭, ২০২০ সালে ছিল ৬৪ লাখ ৩১ হাজার ৫৩, ২০২১ সালে ছিল ৬৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯৬৮, ২০২২ সালে ছিল ৬৫ লাখ ৭৩ হাজার ৯১৫টি এবং এবার কোরবানির উপযোগী ছাগলের সংখ্যা প্রায় ৬৭ লাখ। এ ছাড়া এবার কোরবানির উপযোগী ভেড়ার সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ ও মহিষের সংখ্যা দেড় লাখের বেশি।
ঢাকার দুই সিটিতে বসছে ১৮টি কোরবানির পশুর হাট : এবারও ঢাকার দুই সিটিতে কোরবানির পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) একটি স্থায়ী হাটসহ ৯টি হাট বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও (ডিএসসিসি) একটি স্থায়ী হাটসহ ৯টি হাট বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছে।
ডিএনসিসির ৯ হাট : ডিএনসিসির অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের মধ্যে থাকছে উত্তরা দিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টর সংলগ্ন বউবাজার এলাকা, মিরপুর সেকশন-৬-এর ইস্টার্ন হাউজিং এলাকা, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং আফতাবনগর ব্লক-বি থেকে এইচ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদনগর) সংলগ্ন খালি জায়গা, মোহাম্মদপুরের বসিলা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা-সংলগ্ন খালি জায়গা এবং ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাচকুড়া ব্যাপারীপাড়ার রহমাননগর আবাসিক প্রকল্প এলাকা। এসবের বাইরে দেশের সর্ববৃহৎ গবাদি পশুর হাট গাবতলীতে থাকছে কোরবানির পশুর বিশেষ আয়োজন। ইতিমধ্যে সব হাটের ইজারা চূড়ান্ত করেছে ডিএনসিসি। পশু বিক্রির হাসিল শতকরা পাঁচ টাকা। ঈদের দিনসহ পাঁচ দিন কোরবানির হাট বসানোর অনুমোদন পাবেন ইজারাদাররা।
ডিএসসিসির ৯ হাট : ডিএসসিসির অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের মধ্যে থাকছে পোস্তগোলা শ্মশানঘাট-সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, মেরাদিয়া বাজার-সংলগ্ন খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা ও কমলাপুর স্টেডিয়াম-সংলগ্ন খালি জায়গা, যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজ-সংলগ্ন খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাকস্ট্যান্ড-সংলগ্ন খালি জায়গা, লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা ও আমুলিয়া মডেল টাউনসংলগ্ন খালি জায়গা। এসবের বাইরে ডিএসসিসির সারুলিয়া স্থায়ী কোরবানির পশুর হাটে থাকছে কোরবানি পশুর বিশেষ আয়োজন। পশু বিক্রির হাসিল থাকছে শতকরা পাঁচ টাকা। ঈদের দিনসহ পাঁচ দিন হাট পরিচালনার জন্য নির্ধারিত জায়গা ব্যবহারের অনুমোদন পাবেন ইজারাদাররা। ডিএসসিসি ইতিমধ্যে ছয়টি হাটের ইজারা চূড়ান্ত করেছে। বাকি দুটি হাটের ইজারা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।
বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি নতুন ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে যোগ দিয়েছেন। গত কয়েক দিনের নাটকীয়তা শেষে গত রাতে নিজে এ ঘোষণা দেন তিনি।
স্প্যানিশ দৈনিক দারিও স্পোর্টকে মেসি বলেন, ‘আমি ইন্টার মায়ামিতে যাচ্ছি।’ মেসি এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমার ইউরোপের আরেক ক্লাব থেকে প্রস্তাব ছিল। কিন্তু ওই প্রস্তাব দেখিওনি, কারণ আমি ইউরোপে খেললে বার্সেলোনায় খেলতে চেয়েছি। বিশ্বকাপ জেতা ও বার্সাতে না যেতে পারায় এখন সময় যুক্তরাষ্ট্র লিগে খেলার এবং ভিন্নভাবে ফুটবলকে উপভোগ করার। তবে দায়িত্ব থাকবে একই, আকাক্সক্ষা থাকবে জেতার এবং অবশ্যই ভালো করার। তবে আরও শান্তিপূর্ণভাবে।’ মেসি বলেন, ‘বুসকেতস আর জর্দি আলবার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, তাদের সঙ্গে কখনো একই জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারে কথা হয়নি। আমি আমার সিদ্ধান্ত নিজে নিয়েছি।’
শৈশবের ক্লাব বার্সেলোনা থেকে মনের কষ্ট নিয়েই ২০২১ সালে স্পেন ছেড়ে ফ্রান্সের পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। দুই বছর পর আবার বার্সায় ফিরতে চেয়েছিলেন খুব করে। তার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ানো লা ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লের অনুমোদনও দিয়েছিল লা লিগা কর্র্তৃপক্ষ। মেসি চাচ্ছিলেন আগেরবার তাকে যেভাবে চলে যেতে হয়েছিল বার্সেলোনা ছেড়ে, সেটা যেন না হয় পরে।
দুদিন ধরে এ নিয়ে কথাবার্তা হলেও বার্সেলোনা সেই নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। মেসির কাছে ছিল দুটি অপশনÑ সৌদি ক্লাব আল হিলালের দুই বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব, নয়তো মেজর লিগ সকারের ক্লাব ইন্টার মায়ামির প্রস্তাব গ্রহণ করা। আল হিলালকে এক বছরের জন্য অপেক্ষায় থাকতে বলেছিলেন মেসি দুদিন আগে। বাকি ছিল ইন্টার মায়ামির প্রস্তাব। সেটাই গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রে ক্লাব ফুটবল খেলতে যাচ্ছেন।
মেসির সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি হচ্ছে ইন্টার মায়ামির। প্রতি বছর মৌসুম শেষ করে মেসি ক্লাব ছেড়ে দিতে পারবেন, না দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরের বছর খেলবেন। বছরপ্রতি ৫৪ লাখ ডলার পারিশ্রমিক পাবেন।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা এবং সরকারের মন্ত্রীরা বিএনপির সঙ্গে সংলাপের ব্যাপারে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আপাতত আমলে নিচ্ছে না দলটি। বিএনপি নেতারা বলছেন, লিখিত প্রস্তাব দিলে চিন্তা করে দেখবেন তারা। এ ছাড়া ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের সংলাপের বিষয়ে তাদের হতাশা ব্যক্ত করেছেন তারা।
গত মঙ্গলবার রাজধানীতে ১৪ দলের এক সমাবেশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে বিএনপিকে আলোচনার টেবিলে আসার আহ্বান জানান। এরপর গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও একই সুরে কথা বলেন। তবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সংলাপের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এমন কোনো সংকট তৈরি হয়নি যে জাতিসংঘের মধ্যস্থতা নিতে হবে।’
আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা মির্জা ফখরুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মির্জা ফখরুল। তার ভাষ্য, ‘আওয়ামী লীগের আসল অবস্থা আপনারা বুঝতেই পারছেন। এটাই হলো তাদের ক্যারেক্টার।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে বিষয়টির ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘কোথায় কোন সমাবেশে কে কী বলছে সেটার জবাব দেওয়া আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ না। আমরা আমাদের রাজনীতি পরিবর্তন করছি। আমাদের কাছে কেউ লিখিত প্রস্তাব দিলে সেটার জবাব দেওয়ার জন্য তখন ভাবব।’
আওয়ামী লীগ নেতাদের সংলাপের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আমাদের সঙ্গে সংলাপ করেছিলেন। সংলাপে তিনি যে ওয়াদা করেছিলেন তা তিনি রক্ষা করেননি। এখন তার দলের নেতারা কে কোথায় কী বললেন তা নিয়ে আমরা ভাবছি না। আমরা এখন ভাবছি আমাদের চলমান আন্দোলনে কীভাবে সফলতা আনা যায় তা নিয়ে।’
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো সংলাপ সফল হয়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত তারানকোর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা সংলাপ করেছিলেন। তার ফল হিসেবে জাতি একটি একতরফা নির্বাচন পেয়েছিল, যে নির্বাচনে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। এরপর ২০১৮ সালের সংলাপের ফল ছিল ‘দিনের ভোট আগের রাতে কেটে বাক্সে ভরার’ নির্বাচন।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বিশ্বকাপে তামিম ইকবালকে ওপেন থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দিয়ে ফোন করেছিলেন, তামিমের ভাষায় 'বোর্ডের টপ লেভেল' এবং 'ক্রিকেটের সাথে বেশ ইনভলভড' একজন।
তিনি তামিমকে বলেন, ''তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।'
তিনি আবার বলেন, আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করবে।''
তামিমের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? এক টিভি সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এটা জানিনা।'
পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে যদি কেউ বলে থাকে, আমি সিউর তিনি অথোরাইজড পার্সন। আর এরকম কিছু বলে থাকলে আমি খারাপ কিছু বলেছে বলে আমি মনে করিনা। টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলে থাকলে দোষের কি আছে। আমার তো মনে হয় না দোষের কিছু আছে। নাকি এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নাকি আপনি যা চাইবেন তাই করতে পারবেন?।'
বিশ্বমঞ্চে দেশের ক্রিকেটের দূত বলা যায় সাকিব আল হাসানকে। বর্ণিল এক ক্যারিয়ার গড়েছেন তিনি। তিন ফরম্যাটেই তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশের এই তারকা ক্রিকেটার নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে যাচ্ছেন দলের অধিনায়ক হিসেবে। সেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানা গেল কবে তিনি অবসর নিচ্ছেন।
দেশের একটি ক্রীড়াভিত্তিক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবসরের সময় জানিয়েছেন। তার ইচ্ছে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর অবসর ঘোষণা করার। একইসঙ্গে তিন ফরম্যাটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের এই তারা।
নেতৃত্ব ছাড়া ও অবসরের প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলেন, ‘আজকে এখন এই অবস্থায় বলছি, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে খেলবো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দেবো। টেস্টের অবসর শিগগিরই। তবে একেক ফরমেট একেক সময় ছাড়লেও আনুষ্ঠানিক অবসর ঘোষণা করবো ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর।’
অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক-সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি এখনো নিশ্চিত হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাজেটস্বল্পতার যুক্তিতে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষকদল পাঠাতে পারবে না বলেছে। এখন পর্যন্ত আবেদনকারী ২১০টি দেশি সংস্থা বা সংগঠনের মধ্যে ৬৬টিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নির্বাচনের তিন মাসেরও কম সময় বাকি। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সাড়া না পেয়ে তাদের চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানোর কথা ভাবছে ইসি। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন নিয়ে বড় কোনো প্রশ্ন যাতে না ওঠে, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। এ লক্ষ্যে সব চেষ্টাই নির্বাচন কমিশন করবে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে, সেটি বোঝাতে হলে আন্তর্জাতিক মহলে বার্তা পৌঁছাতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে এ বার্তা পৌঁছানোর কাজটি করেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। ইইউ বলে দিয়েছে, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্বাচন-পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, তার জন্য ক্ষেত্রসমীক্ষণে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ প্রতিনিধিদল আসবে। ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল ও তাদের সহায়তাকারীরা ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এবং দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করা নিয়ে টুইটবার্তা এবং বিভিন্ন বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এ বার্তাই দিচ্ছে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু না-ও হতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কাছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পর্যবেক্ষক না পাঠালেও আরও অনেক দেশ আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোকে (আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা) আমন্ত্রণ জানিয়ে অক্টোবরে চিঠি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো হয়। আমরা চাই দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বেশি সংখ্যায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করুক। আমরা আশা করি বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি সংস্থা।
পৃথিবীতে আরও অনেক দেশ আছে।’
আপনারা তো ভোটের জন্য শতভাগ প্রস্তুত কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্বাচনমুখী কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক সংবিধান অনুযায়ী জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। এতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। নির্বাচন কমিশন সেটা হতে দিতে পারে না।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমেরিকা আসবে না বলেনি। আসলে আমরা খুশি হব। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন, সেসব থাকলে যে কেউ আসতে পারে।’
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষক দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচনসংক্রান্ত বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামো, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যে দলীয়করণ হয়েছে, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অতীতেও তা হয়নি। আগামীতে হবে বিশ্বাস করা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তথ্য-উপাত্ত নিয়েই তা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও বলেছে, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। নেতিবাচক মনোভাবই তাদের সিদ্ধান্তে প্রকাশ পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আসেনি। ফলে সেটি আন্তর্জাতিক মানদ-ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। ওই দুটি নির্বাচন সব মহলেই প্রশ্নবিদ্ধ। এখন সরকার বা ইসি যে কথা বলছে, তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নীতির বদল হবে বলে মনে হয় না। আস্থা তৈরি করতে হলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সূত্রগুলো বলছে, তারা নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ইইউকে ছোট পরিসরে হলেও পর্যবেক্ষক পাঠাতে ২৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে কমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এমন প্রতিশ্রুতি সিইসি দিচ্ছেন। সরকারও একই কথা বলছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার ও নির্বাচন কমিশন। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ফলে আস্থার একটা সংকট তৈরি হয়েছে। তা কাটানোর জন্যই ইসি নানা পরিসরে কাজ করছে।
সূত্রমতে, ইইউর নেতিবাচক মনোভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষকদের সন্তেুাষজনক তথ্য তৈরির কাজ করছে ইসি সচিবালয়। মার্কিন দলের মনোতুষ্টির বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে কমিশনের। নির্বাচনী তফসিল থেকে নির্বাচনী ফল ঘোষণা পর্যন্ত সব কর্মকা-, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়গুলো তাদের কাছে তুলে ধরা হবে।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতির সুবিধা হলো তারা নির্বাচনী কাজে জড়িতদের জবাবদিহির মুখোমুখি করে। পর্যবেক্ষকদের কোনো আইনি শক্তি নেই। তবে তারা নৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে প্রার্থীদের সমর্থকদের আচরণও প্রভাবিত হয়। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে ভোটারদের ওপর, তারা আস্থা পান।’
তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা অংশ নেয় না। আগামী নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সব দলের অংশ নেওয়ার বার্তা নেই। সব দলই নিজ অবস্থানে অনড়। এ কারণেই বিদেশিরা আগ্রহ প্রকাশ করছে না।’
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে সাধারণত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, সার্কভুক্ত দেশ, কমনওয়েলথ, ওআইসি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে এমন সংস্থা, মানবাধিকার গোষ্ঠী, ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। ২০১৮ সালে দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন ৩৮ জন, কূটনৈতিক বা বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশে দূতাবাস বা হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের সুযোগ দিতে এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। প্রথমবার দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের মধ্য থেকেই বেশি আবেদন এসেছে বলে জানা গেছে।
গত ১৮ জানুয়ারি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের জন্য প্রথমবারের মতো আবেদন আহ্বান করেছিল নির্বাচন কমিশন। ২১১টি সংস্থা আবেদন করেছিল। গত ৮ আগস্ট প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ৬৮টি সংস্থার তালিকা প্রকাশ করে সংস্থাটি। আপত্তি ওঠায় দুটি সংস্থাকে বাদ দিয়ে শেষপর্যন্ত ৬৬টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেয় কমিশন। এসব সংস্থার ৪২টিই ছিল নতুন। এর আগে তারা কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ করেনি; সংস্থাগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা অর্ধেকের মতো কমে যাওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো ১৫ সেপ্টেম্বর ১০ দিনের জন্য ফের আবেদন আহ্বান করে ইসি। এর সময় শেষ হয়েছে ২৪ সেপ্টেম্বর।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের মতোই বাছাই শেষে দাবি-আপত্তি আহ্বান করা হবে। তারপর চূড়ান্ত হবে কোন কোন সংস্থা নিবন্ধন পাচ্ছে।
ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে।’
২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। ২০১৮ সালে ১১৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল ইসি। পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের পাঁচ বছরের মেয়াদ গত ১১ জুলাই শেষ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য সংশোধিত নীতিমালা : আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য নীতিমালা সংশোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২৬ সেপ্টেম্বর ইসি এই নীতিমালা জারি করেছে। সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো বিদেশি নাগরিক বা সংস্থা বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে তাদের সুশাসন, নির্বাচন, গণতন্ত্র, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সংস্থাগুলোকে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।