
বেসরকারি খাতের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ১১৪০ টাকা ঠিক করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। ফলে সারা দেশে এলপি গ্যাস ব্যবহারকারীদের মাসে ১৩০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হচ্ছে।
গ্রাহকের পকেট কেটে এ টাকা নিচ্ছে অপারেটর, খুচরা বিক্রেতা সবাই। এর প্রায় ১০০ কোটি টাকা যাচ্ছে অল্পসংখ্যক অপারেটরের হাতে। বাকি টাকা নিচ্ছে ডিস্ট্রিবিউটর ও খুচরা বিক্রেতারা।
অপারেটর, ডিস্ট্রিবিউটর ও খুচরা বিক্রেতারা বাড়তি টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে এবং একে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছে। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়ার হুঙ্কার দিয়ে প্রতি মাসে নিয়মরক্ষার দর ঘোষণা করে যাচ্ছে। অন্য কারও ক্ষতি না হলেও মাস শেষে বাড়তি দামে এলপিজি কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ভোক্তারা। বাংলাদেশে বছরে গড়ে ১২ লাখ টন এলপি গ্যাস বিক্রি হয়।
যেসব প্রতিষ্ঠান এলপিজি বোতলজাত করে বিক্রি করে তাদের বলা হয় অপারেটর। বর্তমানে অপারেটর হিসেবে ২৮টি কোম্পানি রয়েছে। পরের ধাপে রয়েছে ডিস্ট্রিবিউটর, যারা অপারেটরদের কারখানা থেকে এলপিজি কিনে বিক্রি করে খুচরা বিক্রেতার কাছে। খুচরা বিক্রেতারা সাধারণ ব্যবহারকারী তথা ভোক্তার কাছে বিক্রি করে এলপিজি।
গত মাসে ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজি এলপিজির দাম ছিল ৯৯৯ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে চলতি মাসে ১২ কেজির দাম ১১৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই হারে অন্যান্য ওজনের এলপিজির দামও বাড়িয়েছে কমিশন। মূল্যবৃদ্ধির পরও নির্ধারিত দামে বাজারে এলপিজি পাওয়া যাচ্ছে না।
দেশ রূপান্তরের হাতে ওমেরার একটি কর চালানপত্র এসেছে। তাতে দেখা যায়, গত ২২ আগস্ট এক ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে বিক্রি করা ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম উল্লেখ করা হয়েছে ১১৮০ টাকা, অথচ এ মাসের জন্য কমিশন নির্ধারিত দর (পাইকারি) ১০৪৫ টাকা। সিলিন্ডারপ্রতি ১৩৫ টাকা বেশি নিয়েছে অপারেটর প্রতিষ্ঠানটি। একইভাবে ইউনাইটেড এলপিজি লিমিটেড, টোটাল গ্যাস প্রভৃতি অপারেটরের বিরুদ্ধে বাড়তি দাম নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এবং ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের অন্যতম পরিচালক আজম জে চৌধুরী বাড়তি দাম নেওয়ার কথা অস্বীকার করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে এলপিজি বিক্রি করা অন্যায়। কমিশন প্রতি মাসে যে দাম নির্ধারণ করে দেয়, সে দামেই অপারেটররা এলপিজি বিক্রি করে। বেশি দাম নেওয়ার সুযোগ নেই। এরপরও কোনো অপারেটর বেশি দাম নিলে সে দায় তার। মূলত ডিস্ট্রিবিউটররা ও খুচরা বিক্রেতারা ভোক্তার কাছ থেকে বাড়তি দাম নিয়ে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে অপারেটররা চাহিদামতো এলসি খুলতে না পারায় এলপিজি আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। আগে কোনো অপারেটর মাসে তিন-চারটি চালান আনতে পারলে এখন আনতে পারছে দুটি চালান। এলসি-জটিলতার কারণে চাহিদামতো এলপিজি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এ সুযোগে অনেকে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে ডিস্ট্রিবিউটররা ও খুচরা বিক্রেতারা ক্রাইসিসের সময় ইচ্ছেমতো দাম বাড়ায়। সরবরাহ কম থাকলে দাম এমনিতেই কিছু বাড়ে। তবে অন্যান্য পণ্যের দাম যেভাবে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, সেভাবে এলপিজির দাম বাড়ছে না।’
কমিশন ডিস্ট্রিবিউটর থেকে খুচরা বিক্রেতার কাছে এলপিজি বিক্রির দাম ১০৯৫ টাকা ঠিক করে দিলেও বিক্রি করা হচ্ছে ১২৩০ থেকে ১২৪০ টাকায়। আর খুচরা দর ১১৪০ টাকা হলেও বিক্রেতারা বিক্রি করছেন ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায়।
বাংলাদেশ এলপি গ্যাস ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির অর্থ সম্পাদক তাহের এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবু তাহের কোরাইশী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চলতি মাসে কমিশন দাম নির্ধারণ করার পরও অপারেটররা দুই দফায় এলপিজির দাম বাড়িয়েছে। কমিশন খুচরা যে দর নির্ধারণ করে দিয়েছে তার চেয়ে বেশি দামে আমাদের কিনতে হচ্ছে। এভাবেই চলছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে কমিশনকে অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার পাইনি।’
মিরপুর-১ নম্বর এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম বাবুল জানান, চলতি মাসে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার কিনতে তাকে গুনতে হয়েছে ১৪০০ টাকা।
মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকার বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান জানান, গত ১১ আগস্ট ১৩০০ টাকা দিয়ে ১২ কেজির এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার কিনেছেন তিনি।
বিইআরসি চেয়ারম্যান মো. নূরুল আমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক দরের সঙ্গে অপারেটর, ডিস্ট্রিবিউটর ও খুচরা বিক্রেতাদের মুনাফা যোগ করেই প্রতি মাসে খুচরা দর নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম রাখা আইনত অপরাধ। আমরা মনিটরিং করছি। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে প্রতি মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি। এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এ দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি প্রতিষ্ঠান আরামকো। এ মূল্য বিবেচনায় নিয়ে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি। যদিও কমিশন নির্ধারিত দামে বাজারে এলপিজি মিলে না। দাম বৃদ্ধি-হ্রাস যাই হোক না কেন, বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম রাখেন ক্রেতার কাছ থেকে। দীর্ঘদিন ধরে আবাসিকে প্রাকৃতিক গ্যাস-সংযোগ বন্ধ থাকায় রাজধানীর পাশাপাশি বিভিন্ন শহর ও গ্রামে বিপুলসংখ্যক মানুষ এলপিজির ওপর নির্ভরশীল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারে সেটাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে জনগণ ভালো পরিবেশে ভোট দিয়েছে, ভবিষ্যতে ভালোভাবে ভোট দিতে পারবে। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো চাপ নেই। জনগণ যাকে ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় আসবে।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলা শ্রম আদালতের মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শতাধিক নোবলজয়ীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তির পাঠানো চিঠি প্রসঙ্গেও কথা বলেন শেখ হাসিনা। ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নিজের প্রতি এত আত্মবিশ্বাস থাকলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়ান কেন? তাদের বিবৃতি না দিয়ে বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবী পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলিল-দস্তাবেজ, কাগজপত্র ঘেঁটে দেখুন অন্যায় আছে কি না। এক্সপার্টরা দেখুক, অনেক কিছু পাবেন। সদ্য সমাপ্ত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের নতুন সদস্যপদ না পাওয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনার স্পষ্ট বক্তব্য, এখনই ব্রিকসের সদস্যপদ পেতে হবে সেই ধরনের কোনো চিন্তা ছিল না। সদস্যপদ পেতে সেই ধরনের চেষ্টাও করা হয়নি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দেওয়াসহ কোন কোন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন, কার কার সঙ্গে বৈঠক করেছেন, সফরের অর্জন কী এসব নিয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরই সাংবাদিকদের জন্য প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়। এ সময় তিনি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সিন্ডিকেটের ভূমিকা ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্নের জবাব দেন।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন : অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অংশগ্রহণ বলতে কাদের অংশগ্রহণ? যারা দুর্নীতিবাজ, খুনি, ভোট চোর, ভোট ডাকাত, গ্রেনেড হামলাকারী, জাতির পিতার হত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধী তাদের অশংগ্রহণ? এটা কি জনগণ চায়? তারা অংশগ্রহণ করলেই নির্বাচন বৈধ হবে, অন্য কেউ করলে হবে না, এটা তো হতে পারে না। কারণ তাদের প্রতি রয়েছে মানুষের ঘৃণা।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এটা মাথায় রাখতে হবে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছিল। তারপর থেকে বিএনপি তো ইলেকশন করে না। তারা শুধু বাণিজ্য করে, নমিনেশন বেচে। কিছু টাকা গুলশান অফিস পাবে, পুরানা পল্টন পাবে আর মোটা অঙ্কের টাকা যাবে লন্ডনে। এই তো তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজেরাই নির্বাচনে গণ্ডগোল করবে, মারামারি করবে আর বলবে ইলেকশন করতে পারলাম না। বর্জন করলাম।’
বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে যখন গেলাম, যার সঙ্গে দেখা হয়েছে বলে, কী করে বাংলাদেশ এত উন্নতি করল? আর দেশের এরা এটা বলে না। তারা পরশ্রীকাতরতায় ভোগে। আমি ওটা নিয়ে চিন্তা করি না। যতক্ষণ আছি, দেশের জন্য কাজ করে যাব।’
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। সবকিছুই আইনমতো চলে। কেউ যদি ট্যাক্স না দেয় আর যদি শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করে, শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যদি মামলা করা হয়... আমাদের কি সেখানে হাত আছে, যে মামলা বন্ধ করে দেব? মামলা তো আমরা করিনি। এনবিআর থেকে আয়কর ফাঁকির মামলা করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত লেবাররা মামলা করেছেন।’
সরকারপ্রধান বলেন, দুর্নীতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান করতে বলেছেন, কিন্তু দুর্নীতিবাজ পছন্দের লোক হলে আবার এগুলো নিয়ে কথা আসছে কেন? আইন তো তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
নোবেলজয়ী বলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীতে এমন বহু নোবেল বিজয়ী আছেন, পরবর্তী সময়ে তাদের কাজের জন্য কারাগারে আছেন (যেতে হয়েছে)।
বিবৃতির ফলে আদালত প্রভাবিত হবে কি না, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, পারবে না কেন? আদালত স্বাধীনভাবে চলবে। ভয় পেলে চলবে না। শ্রমিকদের পাওনা তাদের দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘এখন যদি জিজ্ঞেস করি, গ্রামীণ ব্যাংক কিন্তু সরকারি (নিয়মে চলে)। ড. ইউনূস তার এমডি। তাহলে সরকারি বেতনভুক একজন এমডি কীভাবে বিদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন? কীভাবে তিনি এগুলো করেন?’
প্রসঙ্গত, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলা শ্রম আদালতের মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন শতাধিক নোবলজয়ীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
ব্রিকস সদস্যপদ : ব্রিকসের সদস্যপদ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, সদস্যপদ চাইলে পাব না সেই অবস্থাটা নেই। প্রত্যেকটা কাজের একটা নিয়ম থাকে। আমরা সেই নিয়ম মেনেই চলি। আমরা কাউকে বলতে যাইনি আমাদের এখনই সদস্য করেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখানে তো আমার সব রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধানের সঙ্গে দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট, ইন্ডিয়ার প্রাইম মিনিস্টার থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে। লাঞ্চের সময় ব্রাজিল ও সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘের মহাসচিব আমার পাশে ছিলেন। ওই সময় আলোচনা হয় যে, আমরা এই কয়জন নেব। এরপর ধাপে ধাপে সদস্যপদ বাড়াবে।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে আমার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো, আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন ব্রিকস সম্মেলন করবেন। আমাকে আসতে বললেন এবং তখন আমাকে এও বললেন, তারা কিছু সদস্যপদ বাড়াবেন। সেই বিষয়ে আমার মতামতও জানতে চাইলেন। আমি বললাম এটা খুবই ভালো হবে।’
ব্রিকসের ব্যাংক নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে যোগদানের বিষয়ে বাংলাদেশ আগে থেকেই আগ্রহী ছিল বলে উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
ব্রিকস নিয়ে বিরোধী দলের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘জানি যে এই প্রশ্নটা আসবে। বাংলাদেশ কিছু চেয়ে পাবে না, এটা কিন্তু ঠিক নয়। অন্তত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা তো দেশের মর্যাদাটা তুলে ধরেছি। সেখানে আমাদের সেই সুযোগটা আছে। তারা বলতে পারে কারণ বিএনপির আমলে ওটাই ছিল। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের কোনো অবস্থানই ছিল না। সেই সময় বাংলাদেশ মানে ছিল দুর্ভিক্ষের দেশ, ঝড়ের দেশ, ভিক্ষার দেশ। হাত পেতে চলার দেশ। এখন সবাই জানে, বাংলাদেশ ভিক্ষা চাওয়ার দেশ নয়।’
এ সফরের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে গেছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বর্তমান স্যাংশন ও কাউন্টার স্যাংশনের এ যুগে এই সফরের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণসহ বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক দক্ষিণের অবস্থানকারী দেশগুলোর ওপর আরোপিত কৃত্রিম সিদ্ধান্ত এবং বিভাজনের নীতিকে না বলার এখন উপযুক্ত সময়। সর্বজনীন নিয়ম ও মূল্যবোধকে অস্ত্রে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘দক্ষিণের দেশগুলোর ওপর আরোপিত কৃত্রিম সিদ্ধান্তের কারণে আমরা আর ক্ষতিগ্রস্ত হতে রাজি নই। সর্বজনীন নিয়মের নামে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অসমনীতিকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য আমি দক্ষিণের দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছি।’
বাজারের সিন্ডিকেট : দেশে সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কে কত বড় শক্তিশালী আমি দেখব। সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না এটা কোনো কথা নয়। সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না এমন কিছু বাণিজ্যমন্ত্রী বললে তাকে আমি ধরব।’ এ সময় নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেট প্রতিরোধে পণ্য সরবরাহ ও সংরক্ষণে বিকল্প পদ্ধতি নেওয়ার কথা জানান তিনি। এ ক্ষেত্রে বাড়িতে শাকসবজি উৎপাদন ও সেগুলো নিজেরাই সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।
দাম বাড়া প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘কিছুদিন আগে ডিমের দাম বাড়ল। ডিম সেদ্ধ করে রেখে দিলে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। পরে (দাম বাড়লে) সেগুলো ভর্তা করে বা রান্না করে খাওয়া যায়।’
সর্বজনীন পেনশন নিয়ে অপপ্রচার : সর্বজনীন পেনশন নিয়ে অপপ্রচার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের টাকা নিয়ে ইলেকশন ফান্ড গঠন করতে হবে আওয়ামী লীগ এত দীনতায় পড়েনি। সাধারণ মানুষ নিজের খেয়ে নৌকায় ভোট দেয়, এটাই হলো বাস্তবতা। তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীরা পেনশন পান। কিন্তু বেসরকারি চাকরিজীবী বা সাধারণ মানুষ পেনশন পায় না। তাদের কথা চিন্তা করেই এটা করা হয়েছে। পেনশন স্কিমে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এই স্কিমে এখন যে টাকা রাখবে পরবর্তীকালে নির্দিষ্ট বয়সসীমার পর সে টাকা পাবেন। অথবা মাঝখানে কেউ তুলে নিতে চাইলে সেটাও নিতে পারবে।
সবাই সবকিছু সহজে ভুলে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পেনশন স্কিমটি আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল, এখন সেটি বাস্তবায়ন করছি। এটা আওয়ামী লীগ সরকারের জনকল্যাণমুখী কাজ। যারা পরশ্রীকাতর, সবসময় অন্যের দোষ খোঁজে, হতাশায় ভোগে, তারাই ভালো কাজের নেতিবাচক প্রচারণা চালায়।’ জনগণকে এসব মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।
মৌলভীবাজারের লাঠিটিলা পুরোটাই বন। এখানে নানান প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বসবাস। আছে বিরল প্রজাতিও। ভারত সীমান্তের এ বনে নির্দ্বিধায় বেঁচে থাকে তারা। কিন্তু বন্যপ্রাণীদের এ নিরবচ্ছিন্ন পথচলায় বাধা তৈরি করে মানুষের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই বনের ৫ হাজার ৬৩১ একর এলাকায় হবে সাফারি পার্ক। এতে ৩ হাজার মিটার অভ্যন্তরীণ বাউন্ডারি, ৩ হাজার বর্গমিটারে গাড়ি পার্কিং, ১ হাজার ৫৮৮ বর্গমিটারে প্রাণী হাসপাতাল ভবন, ৪ হাজার মিটারের সীমানাপ্রাচীরসহ নানা অবকাঠামো হবে। যে বন অধিদপ্তরের দায়িত্ব বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা, সেই অধিদপ্তরই শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করার উদ্যোগ নিয়েছে।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে ‘বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজার, প্রথম পর্যায়’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি পাঁচ বছরে তিন পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ২৫ কোটি টাকা। প্রথম পর্যায়ের এ প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, লাঠিটিলার চিরসবুজ বনভূমিকে দখলমুক্ত করে বন্যপ্রাণীর বসবাস উপযোগী প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করা। অথচ প্রকল্পের মূল কার্যক্রমগুলোর একটি হলো ৪ হাজার মিটারের বাউন্ডারি ওয়াল ও ৩ হাজার মিটারের অভ্যন্তরীণ বাউন্ডারি তৈরি করা। এ ছাড়া চিত্তবিনোদনের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ তো আছেই। প্রশ্ন উঠেছে, বাউন্ডারির ভেতরে এত মানুষের চলাচল ও অবকাঠামোর মধ্যে বন্যপ্রাণী অবাধে বিচরণ করবে কীভাবে? বাস্তুতন্ত্র স্বাভাবিকভাবে চলবে কীভাবে? লাঠিটিলা নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করা প্রাণীবিদরা বলছেন, এ এলাকার বন ধ্বংস হওয়ার শুরু এখন থেকে নয়। আরও আগে থেকেই বন সংরক্ষণকর্মীরা সেখানে বসতি গড়েছেন, সেখানে এখন ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি হয়েছে। সবগুলোই বনের জায়গা। সরকারের উচিত ছিল বনে সাফারি পার্ক তো নয়ই; বরং সেখানে যেসব মানুষ বসবাস করছে, তাদের উচ্ছেদ করা।
গবেষণা বলছে, দেশের উত্তর-পূর্ব বনাঞ্চলে ৩৬টি ভিন্ন পরিবারের ১২৬টি স্থলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীর তথ্য মিলেছে। গত দুই বছরে এই অঞ্চলে ব্যাঙের দুটি নতুন প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০২১ সালে ক্যামেরায় ছোট নখযুক্ত ভোঁদড় (বিশ্বব্যাপী ঝুঁকিতে) ধরা পড়েছে। ঢোল বা বন্য কুকুর (বিশ্বব্যাপী বিপন্ন) এবং কালো ভালুক, সোনালি বিড়াল ও হগ ব্যাজার নামের এক প্রজাতির শূকরের (বিশ্বব্যাপী ঝুঁকিতে থাকা এই তিন প্রজাতি) উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এই বন নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করে আসছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ আজিজ। তার মতে, এখন যেখানে সাফারি পার্ক করার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে মানুষের বসবাস বেড়ে গেছে। প্রতিনিয়ত সেখানে ঘরবাড়ি হচ্ছে, পাকা বিল্ডিংও করা হচ্ছে। প্রাণী যা ছিল তা আগেই বন ছেড়ে চলে গেছে। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘যেহেতু সেখানে অবৈধভাবে ঘরবাড়ি হয়ে গেছে, সেখানে বন্যপ্রাণীর আসা-যাওয়া খুব কম। আমি কখনোই চাই না কোনো প্রাণী বন্দিদশায় থাকুক। আমাদের ইতিমধ্যে দুইটা সাফারি পার্ক আছে, বিভিন্ন চিড়িয়াখানা আছে। সেখানে নানান ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। সেগুলোর ব্যবস্থাপনা ভালো নয়, প্রাণীর প্রতি যে আচরণ করা দরকার তা করতে না পারায় একপর্যায়ে প্রাণী মারা যায়। বন্দিদশায় বন্যপ্রাণী রেখে আনন্দ পাওয়ার দিন শেষ। আর সাফারি পার্ক হলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ হবে না, শুধু বিনোদন হবে।’
তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, সরকার সেখানে সাফারি পার্কও করার দরকার নেই, মানুষের বসবাসের সুযোগ দেওয়ারও দরকার নেই, সেখানে মানুষের বসবাসের ব্যবস্থাপনা কমিয়ে তাদের পুনর্বাসন করা দরকার।
এই প্রকল্পের যখন সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়, তখন এর বিরোধিতা করে আন্দোলন করেছিল পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। লাঠিটিলার মতো উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যপূর্ণ সংরক্ষিত বনে সাফারি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনার বিপক্ষে পরিবেশকর্মীরা দাবি করেছিরেন, লাঠিটিলা একটি সংরক্ষিত বনভূমি। এখানে কেবল সাফারি পার্কই নয়, কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণেরই সুযোগ নেই। এখানে সাফারি পার্ক করা হলে বনের উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য শুধু ক্ষতিগ্রস্তই হবে না, অনেক বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হারিয়ে যাবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্মাণকাজের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ড্রইং বা ডিজাইন ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি। সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা অনুযায়ী নির্মাণকাজের অনুমোদিত স্থাপত্য নকশা, প্রয়োজনীয় অন্যান্য ডিজাইন এবং প্রাসঙ্গিক বিষয় বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনাপূর্বক প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন চূড়ান্ত করা প্রয়োজন।
তারা বলছেন, প্রকল্পটি গ্রহণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পাদন করা হয়েছে, কিন্তু সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা অনুযায়ী নির্ধারিত ছকে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রণয়ন করে ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি।
এর আগে গত বছরের জুনে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেড (বিইটিএস) সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক করার পক্ষে মতামত দিয়েছে। বিইটিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক করা অযৌক্তিক হবে না।
এই প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ৫ হাজার ৬৩১ একর এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বনভূমি সুরক্ষা করে একটি আন্তর্জাতিক মানের সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠা করা। এ ছাড়া ২৭০ একর এলাকায় কোর সাফারি পার্ক ও সাফারি কিংডম স্থাপন করা; বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর জন্য বিভিন্ন মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর জন্য পরিবেশবান্ধব বেষ্টনী নির্মাণ করা; কোর সাফারি ও সাফারি কিংডম এলাকার বাইরে লাঠিটিলার সমৃদ্ধ চিরসবুজ বনভূমিকে জবরদখলমুক্ত করে বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে হাতি, মেছোবিড়াল, বনরুই, খাটোলেজি বানর, আসামি বানর, গন্ধগকুল, মায়া হরিণ, চশমাপরা হনুমান, ভালুক, শজারু ইত্যাদির বসবাস উপযোগী প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে বায়োডাইভার্সিটি পার্ক স্থাপন।
এ ছাড়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা; অসহায় এতিম ও উদ্ধারকৃত মহা-বিপন্ন হাতি চিকিৎসা ও সেবা প্রদানের মাধ্যমে ৮ একর এলাকায় হাতি উদ্ধার কেন্দ্র স্থাপন করা; ২৫ হেক্টর এলাকায় চারণভূমি স্থাপন; বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ প্রজাতির সংরক্ষণের জন্য ২৫ হাজারটি চারা রোপণের কার্যক্রমও রয়েছে এ প্রকল্পে।
মৌলভীবাজারের বন কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ নাজমুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে বন কেটে সাফারি পার্ক করা হচ্ছে। কিন্তু মূল জায়গায় বনটি বনের জায়গাতেই থাকবে। আর কোর সাফারি পার্ক বলা হচ্ছে। কারণ সেটি রিজার্ভ ফরেস্টের ভেতরেই হচ্ছে। তবে পুরোটাই বন এলাকা। তিনি বলেন, যে জায়গাটি সাফারি পার্কের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে গাছ কাটতে না হয়।
কিন্তু প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রকল্পের জন্য প্রায় কোটি টাকা ব্যয় হবে শুধু কাটার নিয়োগের জন্যই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দুই ধাপে ২৬ জন বৈদ্যুতিক কাটার নিয়োগের জন্য ৬৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এ ছাড়া কাটারের বাকি ব্যয়গুলোর মধ্যে ঘাস কাটার ও তিন ধরনের ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ধরনগুলো স্পষ্ট করা হয়নি।
এই প্রকল্পে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের যেসব ব্যয়ের সুপারিশ করা হয়েছিল তার ধারেকাছেই নেই ডিপিপির ব্যয়। যেমন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সুপারিশ করা হয়েছিল ৩ ধাপে বিদ্যুৎ ব্যয় প্রয়োজন হবে ২০ লাখ টাকা, কিন্তু ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। সুপারিশে ছিল তিন ধাপে পেট্রোল খরচ হবে ১৫ লাখ টাকা, কিন্তু ডিপিপিতে তা ধরা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। তা ছাড়া সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বন্যপ্রাণীর খাদ্য সরবরাহের জন্য ব্যয়ের সুপারিশ ছিল ১ কোটি টাকা, কিন্তু ডিপিপিতে তা ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
এই প্রকল্প প্রস্তাবে কিছু ব্যয় অস্বাভাবিক দেখা গেছে। যেমন একজন ব্যক্তির জন্য বৈদেশিক প্রশিক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা, আরেক ব্যক্তির জন্য অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। শুধু দুই ধাপে দুজনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
প্রথম ধাপের এই প্রকল্পে ১৬৬ জন আউটসোর্সিংয়ের জন্য ব্যয় হবে ২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ওই এলাকার ৩৫টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসন ও স্থানান্তরের জন্য প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
এই প্রকল্পের জন্য দুই ধাপে পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়েছে। ব্যবস্থাপনা ইউনিটের জন্য ২৪০ জনের পরামর্শক সেবা নেওয়া হবে। এতে ব্যয় হবে ৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আবার নকশা পর্যালোচনার জন্য পরামর্শক সেবার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
অধ্যাপক এম এ আজিজ বলেন, যে জায়গায় সাফারি পার্কের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেখানে প্রায় ৩০০ মানুষের ঘরবাড়ি আছে। যারা সেখানে থাকছেন তারা একসময় ফরেস্ট ভিলেজার ছিলেন। যারা একসময় বন বিভাগকে সহযোগিতা করতেন, সেখানে এখন সত্যিকারার্থে বন বলতে যা বোঝায়, এখন তা আর নেই।
সরকার পতনের এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির একাধিক জ্যেষ্ঠ সদস্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। সেখানে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতাদের বৈঠকের গুঞ্জন ছড়িয়েছে রাজনীতিতে। বিএনপি নেতারা সিঙ্গাপুরে থাকাবস্থায় জাতীয় পার্টির এক শীর্ষ নেতা সিঙ্গাপুরে গেছেন, যিনি বিগত কয়েক মাস ধরে সরকারবিরোধী নানা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ভারত সফর করে এসেছেন। ফলে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির ওই নেতার বৈঠকের গুঞ্জন ডালপালা ছড়াচ্ছে।
এমনও গুজব ছড়িয়েছে যে, বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে আগামীতে যে সরকার আসতে যাচ্ছে, সে সরকারে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা জিএম কাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে ভারত সরকার তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সরকারের ভিত কাঁপাতে বিএনপি-জাতীয় পার্টির এ যৌথ ‘বিদেশ মিশন’ এমন গুজবও রয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের কয়েকজন কথা বললেও বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না সরকার।
অবশ্য বিএনপি নেতারা বলছেন, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রাজপথে রাজনৈতিক কর্মসূচিকেন্দ্রিক ব্যস্ততা বাড়বে। এরই ফাঁকে জ্যেষ্ঠ নেতারা আগেভাগেই শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে চান। এ কারণেই নেতাদের সিঙ্গাপুর-যাত্রা।
এর বাইরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও গুঞ্জন রয়েছে যে, সিঙ্গাপুরে তারেক রহমানের বিশেষ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করবেন সেখানে চিকিৎসার জন্য যাওয়া বিএনপি নেতারা। এমনও গুঞ্জন চলছে যে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমানের সঙ্গে বিএনপি নেতারা বৈঠক করছেন।
আপাতত এসব গুঞ্জন চললেও হয়তো সময়ের ব্যবধানে পরিষ্কার হবে বিএনপির বৈঠকের গুঞ্জন ‘নেতাদের সিঙ্গাপুর গমন স্রেফ চিকিৎসা নাকি কোনো ষড়যন্ত্রের মিশন’।
গত ২৪ আগস্ট চিকিৎসার জন্য মির্জা ফখরুল তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম ও তার ছোট মেয়েসহ সিঙ্গাপুরে যান। সেখানে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা হয়। সিঙ্গাপুরের র্যাফেলস হাসপাতালে রাহাত আরা বেগমের অস্ত্রোপচার হয়েছিল। ফলোআপের জন্য তাকেও ওই হাসপাতালে যেতে হয়।
এরপর ২৬ আগস্ট সিঙ্গাপুরে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। তার আগে হঠাৎ করে মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়ায় গত ২৭ জুন সিঙ্গাপুর যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সেখানে তার অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখন চলছে রেডিওথেরাপি। সবার আগে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। সেখান থেকে লন্ডন হয়ে বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন তিনি। তার চিকিৎসা চলমান থাকায় আপাতত দেশে ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্য আবদুল আউয়াল মিন্টু বর্তমানে থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন। দলের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পর গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে ফোনে দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘মানুষের অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যা করছে তা নোংরামি ও অপকৌশল। খুন, গুম, হামলা, মামলা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পর এখন সরকার বিএনপি নেতাদের চরিত্র হননে নেমেছে।’
ভারতের ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে মিন্টু বলেন, ‘এখন পুরো বিশ্ব হাতের মুঠোয়। আমরা যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করি তার মাধ্যমে সারা বিশে^র সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব। এজন্য বিদেশে যেতে হয় না। দেশে বসেই ভার্চুয়ালি আলোচনা করা সম্ভব। তাছাড়া ভারতসহ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঢাকায় অফিস রয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত বৈঠক হয়। তারা তাদের সরকারের হয়ে বিএনপির মনোভাব জানতে চান। আমরা তাদের সর্বশেষ পরিস্থিতি অবহিত করি। বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন স্পষ্টভাবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হয়ে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষাকারী প্রবাসী বিএনপির এক নেতা ফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আলোচনা হতেই পারে। কিন্তু আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারত তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। তাই তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কিংবা জাতীয় পার্টির মতো বিদেশে বৈঠক করার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার রয়েছেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থানের বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বিএনপি নেতাদের দাওয়াত দিয়ে পরিষ্কার করেছেন।’
এরই মধ্যে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আজকে বিএনপি নেতারা দল বেঁধে গেছেন সিঙ্গাপুরে। আবার শুনেছি জাতীয় পার্টির এক গ্রুপও গেছে। ভালো, আলাপ-আলোচনা করুক। রাজনৈতিক আলোচনা দেশে হোক, বিদেশে হোক করবে এটা তাদের অধিকার। তবে ২০১৩-১৪ সালের মতো আগুন নিয়ে বাস পোড়ানো, মানুষ পোড়ানো, রাস্তা পোড়ানো, গাছ পোড়ানো এ রাজনীতি থেকে বিরত থাকুন।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি নেতারা কি আদৌ চিকিৎসা নিতে গেলেন নাকি আবার কোনো ষড়যন্ত্র করতে একসঙ্গে সিঙ্গাপুর গেলেন এটি এখন অনেকের প্রশ্ন।
আওয়ামী লীগের দুই নেতার এ বক্তব্যের জবাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ গত ১৪ বছর ধরে বিরোধী নেতাকর্মীদের খুন, গুম, হামলা, মামলাসহ নানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে। এখন অসুস্থ নেতাদের চরিত্র হননে নেমেছে। আমি নিজেও অসুস্থ। গত কয়েক দিন আগে ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলাম সস্ত্রীক।’ সরকার শিগগিরই মিথ্যাবাদী রাখালের পরিণতি ভোগ করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘সিঙ্গাপুরে জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক হয়েছে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এমন মন্তব্যের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উনি যদি জেনেই থাকেন সিঙ্গাপুরে জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে; তাহলে কখন, কোথায়, কার কার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তা স্পষ্ট করুক। ছবি প্রকাশ করুক।’
এদিকে মুজিবুল হক চুন্নুসহ জাতীয় পার্টির দুই নেতা সিঙ্গাপুর গেছেন। সেখানে তাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলছেন, চুন্নু সস্ত্রীক থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন। সোমবার তিনি চলে এসেছেন। অবশ্য এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করে চুন্নুর বক্তব্য জানা যায়নি।
সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কূটনৈতিক সম্পর্ক এখনো এত শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি যে, চাইলেই সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিতে পারবে। কূটনীতি বোঝা ও বিদেশ লবি মেইনটেইন করার নেতারও অভাব রয়েছে দল দুটিতে। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাতারাতি পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে যে কেউ, সেই দুর্বল পরিস্থিতিতেও নেই সরকার। তারা মনে করেন, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বিদেশ সফর ঘিরে মূলত বিভিন্ন মহল গুজব ছড়ানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। দল দুটির বিদেশ সফর এর বাইরে আর কিছুই নয়।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, সরকারবিরোধী সব মহলের কর্মকা-ের ওপর সরকারের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভারত সফর নিয়ে দলটির গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে এসে সফরসংক্রান্ত কোনো আলোচনা রাজনৈতিক সহকর্মীদের সঙ্গে করেননি কাদের। তবে তাকে যে মুডে দেখা যাচ্ছে তাতে তিনি যে খুবই ভালো মেজাজে আছেন সেটা বোঝা যায়।
দলটির ওই নেতারা বলেন, তারা যতটা বুঝতে পারছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়ে ভারত সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে জিএম কাদের এ নিশ্চয়তা দিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারের যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সেটা ভারত সরকারকে অবহিত করেছেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ভারত সফর সম্পর্কে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারাও মনে করেন, প্রতিবেশী দেশের সরকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতেই জিএম কাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। পাশাপাশি সংসদের বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে ভারত পরামর্শ দিয়েছে তাকে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতেও পরামর্শ দিয়েছে ভারত সরকার। তিনি বলেন, এটি সরকারের জন্য ইতিবাচক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেকোনো দলের নেতা বিদেশ সফরে যেতেই পারেন। তবে সব সফরই যে অর্থবহ, এটা আমি মানি না। ফলে কারা কোথায় গেল তা নিয়ে সরকার ততটা কৌতূহলী বলে মনে করি না।’
তিনি বলেন, ‘সরকার তো এত দুর্বল নয় যে, কেউ বিদেশ গেল আর দেশে ফিরে সব ওলটপালট করে দিল। বিএনপির নেতাদের সিঙ্গাপুর সফর ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ভারত সফর কোনোটাকে গুরুত্বপূর্ণ সফর ভাবে না আওয়ামী লীগ।’
দলটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ সফর কেন, কী, কিছুই জানি না। জানতে চাইও না।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ছয়টি প্রস্তাব দিয়েছেন। একই সঙ্গে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে গণফোরামের উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আসুন ঐক্যবদ্ধ হই’ শীর্ষক সে্লাগানে দলের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ড. কামাল তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ‘৩০ বছর ধরে আমরা এই সংগঠন চালিয়ে আসছি। আজকে জনগণের ঐক্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। আমার একটাই আবেদন, আজকে আমরা জাতীয় ঐক্যের জন্য সবাই একত্রে কাজ করি। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারব। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।’
সভাপতির লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘২০১৪ সালে ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন হয়েছে। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জাতি চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। সংবিধানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। জনগণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তার ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার গঠন করতে চায়। অথচ এই স্বাধীন রাষ্ট্রে জনগণের মৌলিক ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজ সংগ্রাম করতে হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।’
তিনি বলেন, ‘জাতির জন্য আজকে সবচেয়ে বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে গণতন্ত্রহীনতা। বাংলাদেশের জন্মের মূল কথা ছিল গণতন্ত্র। কিন্তু এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র কায়েমি স্বার্থে তা আজ বিপন্ন। এজন্য সামরিক শাসকদের দ্বারা গণতন্ত্র ধ্বংসের কর্মযজ্ঞ কম দেয় নাই। তবে মানুষ আশা করেছিল দেশের সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা ফিরে আসবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাতি লক্ষ করল দেশে গণতন্ত্র না বরং “বলতন্ত্র” কায়েম হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর মানুষ আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু এবারও হতাশ হয়। প্রায় ১৫ বছরে দেশবাসী ক্রমহ্রাসমান গণতন্ত্র প্রত্যক্ষ করছে।’
সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে গণফোরাম যে ৬ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন সেগুলো হলো ১. একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা; ২. গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা; ৩. নির্বাচন সামনে রেখে বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে বাধা না দেওয়া; ৪. নির্বাচনে লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে নির্বাচনকালীন সরকার বাধ্য থাকবে; ৫. বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা এবং ৬. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
সভাপতির বক্তব্যের শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনী সংঘাত থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমি এই ৬ দফা প্রস্তাব করছি।’
এর আগে বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। গণফোরামের সঙ্গে থাকার জন্য উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান ড. কামাল হোসেন। এর আগে সভাপতির লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
স্বাগত বক্তব্যে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘৩০ বছর আগে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, কালো টাকা ও রুগ্ণ রাজনীতির বিপরীতে একটি সুস্থ ধারার রাজনীতির জন্য গণফোরাম সৃষ্টি হয়েছিল। গণফোরাম থেকে বেরিয়ে অনেক নেতা সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতার প্রশ্নে ড. কামাল হোসেন কখনো আপস করেননি।’
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, ‘দেশে অসুস্থ ধারার রাজনীতি চালু হয়েছে। সারা বিশ্বের মানুষ ড. ইউনূস ও ড. কামাল হোসেনকে শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু আমাদের দেশে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয়।’ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বীর-প্রতীক বলেন, ‘যে গণতন্ত্রের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, আজকে দেশে সেই গণতন্ত্র নেই।’
উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান জাহাঙ্গীর, যুব ফোরামের নেতা সাইফুল ইসলাম সজল, প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মোস্তাক আহমেদ, সভাপতি পরিষদের সদস্য মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, সভাপতি পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট এসএম আলতাফ হোসেন, মফিজুল ইসলাম খান কামাল প্রমুখ।
আবদুল কাদের মাসুম। পড়ালেখা করতেন সরকারি তিতুমীর কলেজের ফাইন্যান্স বিভাগে। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর নাখালপাড়ার বাসার সামনে থেকে সাদা পোশাকে একদল লোক তাকে অপহরণ করে। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে আজও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। ছাত্রজীবনে মাসুম রাজনীতি করত না। নিখোঁজের বিষয়টি তার পরিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি করে। ‘দেখছি’ বা ‘খোঁজা হচ্ছে’ এসব আশ্বাস দিচ্ছে পুলিশ। এর মধ্যেই তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে একটি প্রতারক চক্র দুই দফায় ১ লাখ টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে নিখোঁজ হন মিরপুরে সেলিম রেজা পিন্টু নামে ছাত্রদলের এক নেতা। পরিবারের সদস্যরা থানায় অভিযোগ দিলেও কাজ হয়নি। উল্টো প্রতারকরা তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে অর্থ। এ দুটি ঘটনার মতোই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের কাছ থেকে একশ্রেণির প্রতারক অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। মূলত তাদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে পুলিশের কাছে প্রতারণার বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা জানাননি।
২০০৯ থেকে গত ১৪ বছরে সারা দেশে ৬৪৫ জনের মতো ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছে। আবার তাদের মধ্য অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি ফিরে এসেছে। সাদা পোশাকে লোকজন তাদের ধরে নিয়ে গেছে বলে ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। বছরের পর বছর ধরে তারা নিখোঁজ। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। অবশ্য চলতি বছর গুমের সংখ্যা কমে এসেছে। গত সাত মাসে ১০টি গুমের ঘটনা ঘটেছে।
আজ ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। সারা পৃথিবীতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হচ্ছে আজ। ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর গুম হওয়া সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসনস অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স এই আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয়। তাতে ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করা হয়। ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর ৩০ আগস্ট গুম হওয়া মানুষগুলোকে স্মরণ এবং সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য দিবসটি পালন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যমতে, লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে ১৯৭০ ও ’৮০-এর দশকে শুধু অবৈধ অস্ত্র কারবারি ও ভিন্নমতাবলম্বীরাই গুম হতো। কিন্তু বর্তমানে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, মাদক কারবারি ও মানব-পাচারকারীদের মধ্যেও গুমের ঘটনা দেখা যায়। গুম দিবস সামনে রেখে ‘মায়ের ডাক’ নামে একটি সংগঠনের ঢাকায় অনুষ্ঠান করার কথা রয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে যাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের সন্তান, বাবা, মা, বোন বা অন্য স্বজনরা উপস্থিত থাকবেন।
নিখোঁজের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক কোনো নেতাকর্মীকে গুম বা ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। সরকারবিরোধীরা এসব প্রোপাগান্ডা চালিয়ে আসছে। অনেকেই নানা কারণে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ থাকেন। কিছুদিন পর আবার বের হয়ে পরিবারের কাছে চলে যান। আর এসব কা- নিয়েই সরকারবিরোধীরা তৎপর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে ধরে নিয়ে মাসের পর মাস বা বছর ধরে আটকে রাখে না। কোনো মামলায় আটক করলে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যারা অপরাধী তাদেরই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
আবদুল কাদের মাসুমের মা আয়েশা আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। প্রায় সাড়ে আট বছর ধরে সন্তানের মুখ দেখি না। আর দেখতে পাব কি না তাও জানি না। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত ১ লাখ টাকা নিয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয় দিয়ে প্রতারকরা ফোন করেছিল। তারা মাসুমকে ছেড়ে দেবে বলে আশ্বস্ত করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এরকম অনেকের কাছ থেকে তারা অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়ে লাভ কী? এতদিন হয়ে গেল আমার সন্তানকে খুঁজে বের করতে পারেনি। আমার বিশ্বাস একদিন না একদিন ছেলে আসবেই! মাসুম খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল। পড়ালেখার পাশাপাশি সে টিউশনি করত। তার টাকা দিয়ে আমাদের সংসারও চলত। মাসুমের স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়ার। কিন্তু বিনা অপরাধে সে আজ নিখোঁজ। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের কাছে অনুরোধ, আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিন।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নিখোঁজের বিষয়ে তদন্তে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়েছে আমাদের সংগঠন থেকে। গুম বা নিখোঁজ হওয়া সব ব্যক্তিকে অবিলম্বে খুঁজে বের করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া, এ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়েরের জন্য একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং তা ব্যাপকভাবে প্রচার করা, দায়ীদের বিচারের সম্মুখীন করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া, পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, গত তিন বছর ধরে নিখোঁজ বা গুমের সংখ্যা কমে এসেছে। তবে গত ১৪ বছরে সারা দেশে ৬৪৫ জন নিখোঁজ হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। নির্বাচন কেন্দ্র করে সামনের দিনগুলোতে নিখোঁজের ঘটনা বাড়বে বলে আশঙ্কা করছি। গুমের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোকে অস্বীকার না করে এ ধরনের ঘটনার বিচার নিশ্চিতে বিদ্যমান আইন কাঠামোতে পরিবর্তন আনা উচিত। পাশাপাশি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তও করা উচিত।
মিরপুর এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বাতেনের মেয়ে আনিসা ইসলাম জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে জুন মাসে বাবা নিখোঁজ হন। এরপর থেকে তার হদিস নেই। তিনি আর আসবেন কি না, তাও জানেন না। বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন, কেউ বলতে পারছেন না। বাবার খোঁজ করতে করতে প্রতারকদের অন্তত ২ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। তারপরও বাবাকে ফিরে পাননি।
২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর সাজেদুল ইসলামসহ আটজন ঢাকার শাহীনবাগ এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, বিনা কারণে আমার ভাইকে গুম করে রাখা হয়েছে। কী অপরাধ করেছে তাও আজও জানতে পারলাম না। তবে আমার ভাইয়ের একটাই অপরাধ ছিল সে বিএনপির রাজনীতি করত। এখনো আমরা তাকিয়ে থাকি ভাইয়া ফিরে আসবে।
২০১০ সালের ২৪ মার্চ রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী সুজনকে সাদা পোশাকধারী লোকজন তাকে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশ-র্যাবসহ প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে তার স্বজনরা। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল বনানী থেকে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক আনসার আলীকে অপহরণ করে নেওয়া হয়। আজও তাদের সন্ধান মেলেনি। ২০১০ সালের ২৫ জুন ফার্মগেট থেকে আরেক বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমকেও তুলে নেওয়ার অভিযোগ আছে। এখনো তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর নিখোঁজ হন খালিদ হাসান সোহেল। সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হীরু, বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির পারভেজ, তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল সভাপতি আমিনুল ইসলাম জাকির, জাহিদুল করিম তানভীর, পশ্চিম নাখালপাড়ার মাজহারুল ইসলাম রাসেল, মুগদাপাড়ার আসাদুজ্জামান রানা, উত্তর বাড্ডার আল-আমিন, বিমানবন্দর থানা ছাত্রদল নেতা আদনান চৌধুরী ও কাওসার আহমেদ, সবুজবাগের মাহাবুব হাসান, সম্রাট মোল্লা, জহিরুল ইসলাম, পারভেজ হোসেন, মো. সোহেল ও মো. সোহেল চঞ্চল, নিজাম উদ্দিন মুন্না, তরিকুল ইসলাম ঝন্টু, কাজী ফরহাদ, সেলিম রেজা পিন্টু, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন কুসুমসহ অনেকের সন্ধান এখনো মেলেনি।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিরা কোথায় তা খুঁজে বের করা উচিত। এসব সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার যখন আমাদের কাছে আসে, তখন তাদের কোনো সান্ত¡নাই দিতে পারি না। সরকার এসব বিষয় গভীরে গিয়ে তদন্ত করে আসল রহস্য বের করবে তা আশা করছি।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
যুক্তরাষ্ট্র গত মে মাসে ভিসানীতি আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় তারা ভিসানীতি ঘোষণার কার্যকারিতার কথা জানালো। এই ভিসানীতি কার্যকারিতার কথা তারা তখন জানালো যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় গত শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার এক বৈঠকে আবারও বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়।
ওই বৈঠকের পর আজরা জেয়া নিজেই এক্সে (সাবেক টুইটার) সচিত্র একটি পোস্ট দিয়েছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের একটি সাইড ইভেন্টের আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আবারও যুক্ত হতে পেরে সম্মানিতবোধ করছি। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, অংশীদারত্বের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি এবং ৯ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে উদারতার সঙ্গে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছি।’
বৈঠকে আজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তারা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জন্য ১১৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেয়া রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করতে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেন।
জবাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা উচিত, অন্যথায় এই অঞ্চল নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে। কারণ রোহিঙ্গারা ইতিমধ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান এবং মাদক কারবার। রোহিঙ্গারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে কারণ তাদের প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে এবং তারা সেখানে কোনো ভবিষ্যৎ অনুভব করছে না।
একটা বিষয় খেয়াল করলে বুঝা যাবে, উজারা জেয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর পরই বাংলাদেশের উপর যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভিসানীতি কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে। এতে বুঝা যাচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করেছে। তাদের দাবি ছিলো, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, তাদেরকে নিজ দেশ ফিরিয়ে নিতে যত তাড়াতাড়ি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।এ থেকে বুঝতে কোনো অসুবিধা নেই যে, রোহিঙ্গাদের কর্মসংসস্থানের প্রস্তাব সরাসরি ফিরিয়ে দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র নাখোশ হয়েছে। এই প্রস্তাব ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আর কী কী প্রস্তাব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছিল তা আমরা জানি না। মনে হচ্ছে, এমন কিছু প্রস্তাব হয়তো প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছিল যেগুলো তিনি নাকচ করে দিয়েছেন।এবার আসা যাক বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন প্রসঙ্গে। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। অনেকদিন ধরে তারা সেটি বলে আসছে। বাংলাদেশের তরফ থেকেও বার বার জানানো হয়েছে যে, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা হবে। তারপরও তারা ভিসানীতি আরোপ করে সেটি কার্যকর করতে শুরু করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- নির্বাচন তো এখনও হয়নি। তার আগেই কেন ভিসানীতি আরোপ ও কার্যকর করা হলো?
এ থেকে এটা স্পষ্ট যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতেই এসব ভিসানীতি, নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। গণতন্ত্র, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক ভোট শুধুমাত্র ইস্যু। নিজের দেশেই আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করতে নানান কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। নিজের দেশেই যেখানে বাইডেন প্রশাসন প্রশ্নবিদ্ধ সেখানে অন্যদেশের গণতন্ত্র নিয়ে তাদের এতো মাথা ব্যাথা কেন?
বাংলাদেশেই যে তারা প্রথম ভিসানীতি আরোপ বা নিষেধাজ্ঞা জারি করে তা কিন্তু নয়। সাম্প্রতিক অতীত ঘাটলে দেখা যাবে, যুক্তরাষ্ট্র আরও বহু দেশের সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদদের উপর একইভাবে ভিসানীতি এবং নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এটা নতুন কিছু নয়। যেখানেই তাদের স্বার্থ জড়িত সেখানেই তারা একই পথে হেঁটেছে। কিন্তু কোথাও তারা সফল হতে পারেনি। সব জায়গা থেকেই ফিরেছে শূন্য হাতে। আমরা যদি ভেনিজুয়েলা থেকে শুরু করে সিরিয়া, ইরান, মিশর, তুরস্ক, রাশিয়া, বেলারুশের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো এদের সবার উপরই নিষেধাজ্ঞা জারি কিংবা ভিসানীতি আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু খুব একটা ফল হয়নি।তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই সেদেশে সামরিক অভ্যূত্থান হয়েছিল। সেই অভ্যূত্থানে যুক্তরাষ্ট্র ইন্ধন দিয়েছিল। ২০২১ সালে তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সৌলু যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ধনের বিষয়টি স্পষ্ট করেন। ভেনিজুয়েলায় নিজেদের পছন্দের লোক গুইদুকে প্রেসিডেন্ট করতে না পেরে মাদুরোকে বার বার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।পাঠকদেরকে হালের একটা তথ্য দিয়ে রাখি। যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ভারতের মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রের উপরও। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল। বারাক ওবামা ভারত সফরের পর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তার সফরের বেশ কিছু দিন পর ভারত নাসার সঙ্গে চুক্তি করল।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। গুজরাট দাঙ্গার কারণে তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। পরবর্তিতে নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্র তার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যাবে, কারা সরকার পরিচালনা করবে- সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক শুধুই বাংলাদেশের জনগণ। এখানে বাইরের রাষ্ট্র সে যুক্তরাষ্ট্র হোক কিংবা অন্য কোনো দেশ হোক কারোরই হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।
বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যাবে, কারা সরকার পরিচালনা করবে- সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক শুধুই বাংলাদেশের জনগণ। এখানে বাইরের রাষ্ট্র সে যুক্তরাষ্ট্র হোক কিংবা অন্য কোনো দেশ হোক কারোরই হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। যখনই বাইরের কোনো রাষ্ট্র কোনো অজুহাতে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করবে তখনই বুঝতে হবে ওই দেশের বৃহত্তর স্বার্থ আছে। আর এসব নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতি আরোপে এদেশের সাধারণ মানুষের কিছুই যায় আসে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষ নিজেরাই নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্ত করেছে এবং করছে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী নিজামুল হক বিপুল
মানকাডিং আউটের সুবিধাটা দলীয় সিদ্ধান্ত। এটা নেওয়া হবে কি না তা বসে আলোচনা করে দলের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন তামিম ইকবাল। একবার আউট করে আবার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে আনাটা ভালো দেখায় না বলেও মনে করেন এই টাইগার ব্যাটসম্যান।
মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মানকাড আউটের ঘটনা ঘটে। বল হওয়ার আগেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া ইশ সোধিকে মানকাড করেন হাসান মাহমুদ। টিভি আম্পায়ারও তাকে আউট ঘোষণা করেন। কিন্তু ড্রেসিংরুমে ফেরার আগেই অধিনায়ক লিটন দাস তাকে ফিরিয়ে আনেন। তারপরই শুরু হয়ে যায় সমালোচনার ঝড়।
স্বাভাবিকভাবেই প্রসঙ্গটা আসে সংবাদ সম্মেলেনও। দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা তামিম ইকবালের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তাঁকে এভাবে ফিরিয়ে আনা উচিত হয়েছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তামিম সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘এ আউট নিলে… আমার মনে হয়নি ওরও (সোধি) এমন করা উচিত হয়নি। ও যেভাবে বিস্মিত হয়েছে, তারও বিস্মিত হওয়া উচিত নয়। এটা আমরা নেব কি নেব না, এটা অধিনায়কের সিদ্ধান্ত। দুঃখিত, দলের সিদ্ধান্ত। নেব কি নেব না। তবে সে যেভাবে নিয়েছে, তাতে আমি অবাক হয়েছি। এটা ক্রিকেটেরই অংশ।’
এমন আউটের ক্ষেত্রে একটা কথা আসে—ব্যাটসম্যানকে সতর্ক করা। তবে সেটিকেও উড়িয়ে দিয়েছেন তামিম, ‘এখানে ওয়ার্নিংয়ের কিছু নেই। বোল্ড আউটের মতোই। হয়তো তখন অধিনায়ক ভেবেছে আমরা নেব না, এ কারণেই আমরা নেই নাই। এখানে ঠিক বা ভুল নেই। হয় আপনি করবেন, তাতেও ভুল নেই। যদি না করেন, তাতেও ভুল নেই। এটা দলের সিদ্ধান্ত। আমাদের এটা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত, করব কি করব না। কারণ সামনে (এমন) আরও দেখা যাবে।’
এমন দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ম্যাচের ওই পর্যায়ে না হয়ে অন্য কোনো আরও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এমন আউট বাংলাদেশ করত কি না, সে ব্যাপারে তামিম বলেছেন, ‘হয়তোবা (নিতাম)। হয়তোবা না। আমি ভুল দেখি না। নিয়ম আছে এমন। এটা যদি কেউ আমরা নিই বা আমাদের বিপক্ষেও নেয়, আমার মনে হয় না এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত। যেভাবে এখন লোকে দেখায়।’
তামিমের কথা শুনে মনে হবে, মানকাডিং না করার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত বা নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয়নি তাঁদের। এ ব্যাপারে এখন দলের মধ্যে আলোচনা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি, ‘এটা একটা দলীয় সিদ্ধান্ত। আজকের ঘটনার পর আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করব। আমাদের যদি দলীয় সিদ্ধান্ত হয়, আমরা এ ধরনের উইকেট নেব তাহলে নেব, নইলে নেব না। কারণ এটা ভালো দেখায় না, একবার আউট করার পর আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসা।’
সত্তরের দশকেও বাংলাদেশে মোট কতগুলো নদ-নদী, খাল-বিল ছিল? বর্তমানে তার কী অবস্থা? দেশের কাঠামোগত উন্নয়নে কোনো নদ-নদী খাল-বিল গ্রাস করা হয়েছে, এমন নজির নেই বললেই চলে। কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক, এসব সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারের এক ধরনের উন্নাসিকতা রয়েছে। দীর্ঘদিন নদী খনন না করার ফলে, পলি জমে সেখানে জেগে ওঠে চর। তখনই সেখানে শুরু হয় দখল উৎসব। এরপর সেইসব নদী ও খালের বুকে গড়ে ওঠে প্রাসাদোপম অট্টালিকা। এ ছাড়াও অবাধে চলছে নদী ও খাল দখল।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
কে নিষেধাজ্ঞা দেবে বা দেবে না, তা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছেন, তাদের দেশের নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আগামী নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে বিদেশ থেকে যদি কোনো প্রচেষ্টা নেওয়া হয়, দেশের জনগণ তা মেনে নেবে না। নিউ ইয়র্কে স্থানীয় সময় শুক্রবার বেলা ২টায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই সেলফিতে রাজনীতির সব ফয়সালা হয়ে গেছে। দুই সেলফিতে বিএনপির রাতের ঘুম শেষ। তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বা ভিসানীতির পরোয়া আওয়ামী লীগ করে না।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার বিধিনিষেধ আরোপ শুরু করার ঘটনাকে বাংলাদেশের জন্য লজ্জাজনক ও অপমানজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা তারা স্পষ্ট করেনি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজ দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট, তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে বিবৃতিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
অদূরদর্শী পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুফল পাচ্ছে না চট্টগ্রামবাসী। স্মার্ট চট্টগ্রাম গড়তে হলে চাই স্মার্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা। আর সেজন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বাইরে শুধু উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য পৃথক সংস্থা গঠন করতে হবে। গতকাল শনিবার চট্টগ্রামে দেশ রূপান্তর আয়োজিত ‘উন্নয়ন চলছে তবুও কেন শ্রীহীন চট্টগ্রাম’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকরা এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকান্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে ২৭ বছর ঘর-সংসার ছেড়ে দূরে চলে গিয়েছিলেন। সেই ঘরে ফেরার পর নৃশংসভাবে খুন করা হয় তাকে। মোহাম্মদ হাসান নামের এই ব্যক্তি চট্টগ্রামের বাঁশখালীর বাসিন্দা। চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা এলাকা থেকে তার মাথাবিহীন আট টুকরা লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জানায়, জমি লিখে না দেওয়ায় স্ত্রী-সন্তানরা মিলে খুন করেন হাসানকে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
‘আমার একটাই ছেলে। বাড়িতে একটু জায়গা থাকলেও ঘর নাই। আমি ঝালকাঠি শহরে থেকে কোনোভাবে দিন মজুরি করে কোনোভাবে বেঁচে আছি। ছেলেটা ঢাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালাত। আমার তো সব শেষ। থাকার মধ্যে আছে শুধু আমার একমাত্র মেয়ে ও সাত মাসের এই নাতিটা। ছেলেটা পরশু দিন বাড়ি থেকে গেছে। কে জানত এই যাওয়াই ওর শেষ যাওয়া। যাদের অবহেলার কারণে আমার পুত্র, পুত্রবধূ ও নাতনিকে হারিয়েছি তাদের বিচার চাই।’
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই ৮ মাসে ৩ হাজার ৫৬২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩ হাজার ৩১৭ জন। ওইসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৫ হাজার ১৭২ জন। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের দাবি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। কোয়ালিশনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় আওয়ামী লীগের দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আশ্বাসের পর অনশন ভেঙেছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ে ৩১টি মোর্চা। গতকাল শনিবার বিকেলে দুই দিনের গণ-অনশন ও অবস্থান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাবেক সচিব ও আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কবির বিন আনোয়ার সময় সাপেক্ষে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে অনশন ভাঙেন নেতারা।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র হলো ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’। জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ে যেকোনো প্রভাব বলয়ের বাইরে থেকে, সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করেই চলছে বর্তমান সরকার। তবে সবাই বন্ধু হলেও কেউ কেউ বিশেষ বন্ধু। ভারত ও রাশিয়া তেমনই দুটি দেশ। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা কিছু দেশ যখন বিভিন্ন সবক দিতে শুরু করল, ঠিক তখনই ভারত ও রাশিয়া আবারও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে স্পষ্ট করে বার্তা দিয়ে বলেছে, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, ঠিক করবে সে দেশের জনগণ।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
এম সাখাওয়াত হোসেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ও লেখক। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান নির্বাচন কমিশন, নানা রকম কূটনৈতিক তৎপরতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেন এই নির্বাচন বিশ্লেষক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সখ্য চীনকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে তাদের ঐকমত্যে পৌঁছানো শিকে ভাবাচ্ছে না। তবে তাদের সামরিক সহযোগিতা উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে ও চীন সীমান্তে অস্থিরতা বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
গত শুক্রবার দেশ ও বিদেশে একযোগে মুক্তি পেয়েছে পরীক্ষিত চিত্রনির্মাতা দীপংকর দীপনের সিনেমা ‘অন্তর্জাল’। একাধিকবার মুক্তির তারিখ পিছিয়ে অবশেষে বেশ বড়সড় পরিসরেই মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। মুক্তির প্রথম দিনের সন্ধ্যায় ছিল ছবিটির স্পেশাল স্ক্রিনিং। সিনেমার নির্মাতা, তারকাশিল্পীরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শোবিজ অঙ্গনের অনেকেই। ছবিটি দেখে সবাই দারুণ প্রশংসা করেন। নির্মাতার দায় থাকে দুটি জায়গায়।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
কারেন্সি সোয়াপ বা মুদ্রাবিনিময় পদ্ধতির আওতায় নেওয়া ২০ কোটি ডলারের পুরো ঋণ সুদসহ পরিশোধ করে দিয়েছে আর্থিক সংকটে পড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা। গত বৃহস্পতিবার রাতে ঋণের শেষ কিস্তির ৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে দায় মুক্তি পেল দেশটি। এ ঋণের বিপরীতে সুদ বাবদ বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৪৫ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আবুল ফজল চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলাবিশিষ্ট নতুন ভবনের কাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৮ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৩ বছর অতিবাহিত হলেও ভবনটির আংশিক কাজ শেষে বন্ধ রাখা হয়েছে। কবে ভবনটির কাজ শেষ হবে তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
শুরুতেই গোপাল ভাঁড়ের একটা গল্প। ডাকাতের বল্লমের আঘাতে বুক এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে এক ব্যবসায়ী মারা গেছেন। তাকে ঘিরে পরিবারের লোকজন বিলাপ করছে। এমন সময় গোপাল গিয়েছে শেষদেখা দেখতে। মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে মৃতের পুত্রকে গোপাল বলল, ‘আহা মারা গেলেও চোখটা তো বেঁচেছে। চোখে আঘাত লাগলে কি মুশকিলই না হতো!’
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
যুক্তরাজ্যে সিগারেট নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। মূলত পরবর্তী প্রজন্মকে সিগারেট থেকে দূরে রাখতে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ধূমপানমুক্ত দেশ হওয়ার উচ্চাকাক্সক্ষা পূরণের লক্ষ্যেই এমন পরিকল্পনা সুনাকের। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে নানা ধরনের প্রণোদনাও দেবে সরকার।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
দেশে নদ-নদীর সংখ্যা কত এ নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। দখল-দূষণে কত নদী হারিয়ে গেছে সেই সংখ্যাও সুনির্দিষ্টভাবে কারও জানা নেই। দেশের নদ-নদী নিয়ে যখন এমন অবস্থা তার মধ্যে নদীর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন। কমিশনের তথ্য বলছে, দেশের নদ-নদীর সংখ্যা ৯০৭টি। শেষ পর্যন্ত তাদের এ তালিকা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
দিনাজপুর শহরে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয়েছিল বেশ কয়েকটি ঢোপকল। যেগুলো থেকে স্থানীয়রা সুপেয় পানি পান করত। বর্তমানে এগুলোর বেশিরভাগই প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট থাকা কিছু ঢোপকল জরাজীর্ণ ও ময়লা ফেলার স্থানে পরিণত হয়েছে। এ রকম কিছু ঢোপকল স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের হাতের ছোঁয়ায় নতুন রূপ পেয়েছে। তারা ঢোপকলগুলো পরিষ্কার ও রঙ করে নতুনভাবে চালু করেছেন। পৌরসভার সরবরাহ করা পানির লাইনের সংযোগ দিয়ে ঢোপকলগুলো চালু করায় স্থানীয়রা এগুলো থেকে পানি পান করতে পারছেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
বাংলাদেশ সরকারের সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের মোটরযান অকেজো ঘোষণাকরণ নীতিমালা অনুযায়ী পুরনো গাড়ি অকেজো ঘোষণা না করা এবং ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নতুন গাড়ি কেনার অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের বিরুদ্ধে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
কানাডায় খালিস্তানপন্থি শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যার পেছনে ভারতীয় এজেন্টদের হাত থাকার অভিযোগ তদন্তে দিল্লি অটোয়াকে সহায়তা করবে বলে আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র। গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো যে অভিযোগ তুলেছেন, তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই হত্যাকাণ্ড তদন্তে ভারতের কানাডার সঙ্গে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। আমরা চাই জবাবদিহি নিশ্চিত হোক।’
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
নারায়ণগঞ্জে আড়াইহাজার উপজেলায় অবৈধ গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে বাসায় বিস্ফোরণে দুই নারী নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার মধ্য রাতের ওই দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন আরও দুজন। তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। আড়াইহাজার থানা ও হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, নিহত দুর্ঘটনার পরই কানিজ খাদিজা নিপা (২৫) ও তার মা হাসিনা মমতাজ (৫৫) এবং জিয়াউর রহমান সোহান (৪৫) ও তার স্ত্রী চায়না আক্তার সায়েমাকে (৩৫) হাসপাতালে আনা হয়।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
যুগে যুগে দুনিয়ায় এমন কিছু মানুষের জন্ম হয়, যারা তাদের কর্ম, নীতি ও আদর্শের কারণে স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। এমনই একজন ব্যক্তি হলেন শায়খুল হাদিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। যুগ সচেতন আলেম, লেখক, প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও শিক্ষক। তার আরও অনেক পরিচয় রয়েছে। সেসব ছাপিয়ে আদর্শ শিক্ষক হিসেবে তিনি ঠাঁই করে নিয়েছেন। এ মনীষীর বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে লিখেছেন মোস্তফা ওয়াদুদ
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকান্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। আগামী ১ অক্টোবর ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে। তাকে আবারও এক্সটেনশন দেওয়া হবে নাকি নতুন কমিশনার দায়িত্ব পাবেন তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।