মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

ক্যারিবীয়দের গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়া জয় বাংলাদেশের

আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৪:২৪ পিএম

স্পিনে নাস্তানাবুদ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও অসহায় আত্মসমর্পণ। ক্যারিবীয়দের গুঁড়িয়ে টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয়ের আনন্দে ভাসল বাংলাদেশ।

ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিনেই রোববার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এক ইনিংস ও ১৮৪ রানে হারায় সাকিব আল হাসানের দল। টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের দেড় যুগের ইতিহাসে এই প্রথম ইনিংস ব্যবধানের জয় পেল বাংলাদেশ। এর আগে সবচেয়ে বড় জয় ছিল ২২৬ রানের, ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে।

বাংলাদেশের ইতিহাস গড়া এই জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করা মেহেদী হাসান মিরাজের। দুই ইনিংসে ৩৬ ওভারে ১১৭ রানে ১২ উইকেট নিয়ে অতিথিদের একাই ধসিয়ে দেন এই অফস্পিনার। এক টেস্টে বাংলাদেশের কোনো বোলারের সেরা নৈপুণ্য। দ্বিতীয় সেরা নৈপুণ্যটাও মিরাজের। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে ১৫৯ রানে ১২টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ২০০ রানে ১২ উইকেট নিয়ে এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে এনামুল হক জুনিয়র।

তৃতীয় দিন ১৫ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম সেশনেই তাদের উইকেট গেছে ৯টি!

মিরাজের ঘূর্ণিতে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১১১ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর ক্যারিবীয়দের বড় পরাজয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। ৩৯৭ রানে পিছিয়ে ফলোঅনে পড়া দলটি দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ২১৩ রানে।

দিনের প্রথম আঘাত হানেন মিরাজ। তার বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হন শিমরন হেটমায়ার। দুই রান পরই সপ্তম উইকেট হারিয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ঘাতক মিরাজ। মাত্রই রানের খাতা খোলা দেবেন্দ্র বিশুকে সাদমান ইসলামের ক্যাচে পরিণত করেন এই অফস্পিনার।

দলীয় ৯২ রানে মিরাজের বলে কেমার রোচ কট বিহাইন্ড হলে অষ্টম উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলীয় ১১০ রানে মাটি কামড়ে থাকা শ্যান ডোরিচকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মিরাজ। উইকেট ছাড়ার আগে আগের দিন ১৭ রানে অপরাজিত থাকা ডোরিচের ব্যক্তিগত সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭৫ বলে তিন চারে ৩৭।

দলীয় স্কোরে এক রান জমা পড়তেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে দাড়ি টানেন সাকিব। এই লেগ স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউ হন এগারো নম্বরে ব্যাট করতে নামা শেরমন লুইস।

১৬ ওভারে ৫৮ রানে সাত উইকেট নেন মিরাজ। টেস্টে এক ইনিংসে এটা তার ক্যারিয়ার সেরা ফিগার। বাকি তিন উইকেট সাকিবের।

দ্বিতীয় ইনিংসেও শুরুতে খেই হারায় উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা। দলীয় দুই রানেই বোল্ড হন ওপেনার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। ছয় রানের সময় অপর ওপেনার কিরন পাওয়েলকে বোল্ড করেন মিরাজ।

এই রেশ না কাটতেই সাকিবের বলে ছাড়া হন চার নম্বরে ব্যাট করতে নামা সুনীল আমব্রিস। দলীয় ২০ রানে রোস্টন চেইস মিরাজের শিকার হলে লাঞ্চের আগেই চার উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের খুব কাছে চলে আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

দ্বিতীয় ইনিংসে অতিথিদের হয়ে একাই লড়েছেন শিমরন হেটমায়ার। মিরাজের বলে উইকেট ছাড়ার আগে টি-টোয়েন্টি স্টাইলে ব্যাট চালান তিনি। নয় ছক্কা ও এক চারে ৯৩ রান করেন ছয় নম্বরে নামা এই ব্যাটার। তার বিদায়ের সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ছিল ৮ উইকেটে ১৬৬।

তাইজুল ইসলামের বলে টেইলএন্ডার লুইস (২০) এলবিডব্লিউ হলে থামে উইন্ডিজ ইনিংস। ইতিহাস গড়া জয়ের আনন্দে মাতে বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় ইনিংসে ২০ ওভারে ৫৯ রানে পাঁচ উইকেট নেন মিরাজ। ৪০ রানে তিন উইকেট নেন তাইজুল। একটি করে উইকেট নেন সাকিব ও নাঈম হাসান।

এর আগে চট্টগ্রাম টেস্টে ৬৪ রানের জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। ঢাকা টেস্ট জেতায় দুই ম্যাচের সিরিজটি ২-০ ব্যবধানে নিজেদের করে নিল স্বাগতিকরা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫০৮

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৩৬.৪ ওভারে ১১১ (আগের দিন ৭৫/৫) (হেটমায়ার ৩৯, ডোরিচ ৩৭, বিশু ১, রোচ ১, ওয়ারিক্যান ৫*, লুইস ০; সাকিব ১৫.৪-৪-২৭-৩, মিরাজ ১৬-১-৫৮-৭, নাঈম ৩-০-৯-০, তাইজুল ১-০-১০-০, মাহমুদউল্লাহ ১-১-০-০)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: (ফলো-অনে পড়ে) ৫৯.২ ওভারে ২১৩ (ব্র্যাথওয়েট ১, পাওয়েল ৬, হোপ ২৫, আমব্রিস ৪, চেইস ৩, হেটমায়ার ৯৩, ডোরিচ ৩, বিশু ১২, রোচ ৩৭*, ওয়ারিক্যান ০, লুইস ২০; সাকিব ১৪-৩-৬৫-১, মিরাজ ২০-২-৫৯-৫, তাইজুল ১০.২-১-৪০-৩, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৬-০, নাঈম ১৪-২-৩৪-১)

ফল: বাংলাদেশ ইনিংস ও ১৮৪ রানে জয়ী

সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে জয়ী

ম্যাচ সেরা: মেহেদী হাসান মিরাজ

সিরিজ সেরা: সাকিব আল হাসান

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত