ভারতে লোকসভা নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকি। ২০১৯ সালের মে বা এপ্রিল মাসে এই নির্বাচনের আগেই চলতি বছরের ডিসেম্বরে আছে একাধিক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। নির্বাচনে জিততে দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ ইতোমধ্যে নানা অদ্ভুত এবং উদ্ভট ধরনের প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজিপি) এক নারী এমপি প্রতিশ্রুতি দেন, তাকে পুনরায় নির্বাচিত করা হলে বাল্যবিয়ে কোনো বাধা থাকবে না। রাজস্থানের বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি দলের মনোনয়ন পান।
শনিবার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানায়, রাজ্যের পালি জেলার সোজাত অঞ্চলের পিপালিয়া কালা গ্রামে এক সম্মেলনে শোভা চৌহান নামে এই বিজেপি নেত্রী বলেন, “সোজাতের সংরক্ষিত আসনে যদি আমাকে নির্বাচিত করা হয়, তাহলে বাল্যবিয়েতে পুলিশ কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করবে না।”
তার এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সারাদেশে বিশেষ করে রাজ্যজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় দেওয়াসি সম্প্রদায়ের প্রতি উদ্দেশে তিনি এই বক্তব্য দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
বাল্যবিয়েকে প্রথা হিসেবে দেখে দেওয়াসিসহ রাজস্থানের অনেক সম্প্রদায়। এ কারণে রাজ্যটিতে বাল্যবিয়ে অন্যতম সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। অনেক সময় পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়ে যায় বাল্যবিয়ে।
ভিডিওতে এই বিজেপি নেত্রীকে বলতে দেখা যায়, “আমাদের হাতে আছে ‘সত্য এবং সংগঠন’। অতএব ক্ষমতায় আসলে কোনভাবেই বাল্যবিয়েতে পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে দেব না।”
এদিকে শোভার এই ভাইরাল বক্তব্যকে আমলে নিয়েছে পালির জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর সুধির কুমার শর্মা জানান, শোভার বক্তব্য আপত্তিকর।
জেলার নির্বাচন কমিশন জানায়, এ ঘটনা তদন্ত করে দেখা হবে এবং ভিডিও বক্তব্যের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, বাল্যবিয়ে মোকাবেলা এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতজুড়ে। ২০১৬ সালে ইন্ডিয়া স্পেন্ডের এক পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে দেশটির প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম দ্য ওয়্যার জানায়, ভারতে প্রতিবছর ১০ বছর বয়স হওয়ার আগেই প্রায় এক কোটি ২০ লাখ শিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়। এর মধ্যে ৮৪ শতাংশই হিন্দু আর বাকি ১১ শতাংশ মুসলিম। দেখা গেছে, ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মিরের জনসংখ্যার সমান বাল্যবিয়ের এই সংখ্যা।
পরিসংখ্যানটিতে দেখা যায়, বাল্যবিয়ের ৬৫ শতাংশের শিকার হচ্ছে মেয়ে শিশু, যাদের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ ৮৪ হাজার। শিক্ষাবঞ্চিত থাকা, কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও দারিদ্র্যতার কারণে মেয়েরা বেশি বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে। শিক্ষাবঞ্চিত প্রতি ১০ জনের আটজন মেয়ে শিশুই বাল্যবিয়ের শিকার।