দেশের পুঁজিবাজারে অব্যাহতভাবে কমছে বিদেশি বিনিয়োগ। চলতি বছরের ১১ মাসের মধ্যে আট মাসেই বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। সর্বশেষ নভেম্বরেও পুঁজিবাজারে তাদের শেয়ার বিক্রি বেড়েছে। বছর শেষ না হতেই ৪৯২ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছে তারা।
পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপকরা জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা আর ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে তারা পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, চলতি নভেম্বরে বিদেশিরা ৩২৩ কোটি ৮৪ লাখ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয় করেছেন। বিপরীতে ৩৪৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন তারা। নিট বিনিয়োগ প্রত্যাহারের পরিমাণ ছিল ২২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এর আগে অক্টোবরে ২০১ কোটি টাকার বিনিয়োগ তুলে নেয় বিদেশিরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউসের পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপক জানান, বিনিয়োগ প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার বিষয়টি বিদেশিদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
তিনি জানান, অন্যান্য দেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকলেও সেখানে ঢালাওভাবে বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয় না। যেমন- শ্রীলঙ্কায় সরকার গঠন নিয়ে রাজনীতি উত্তপ্ত হলেও সেখানে কিন্তু বিদেশিরা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেনি। তবে বাংলাদেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক বেশি সহিংসতা হয়। এবারো তেমন শঙ্কা থাকায় বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন বিদেশিরা।
অপর এক পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নকেও দায়ী করেন। এছাড়াও বিদেশিদের বিনিয়োগ তুলে নেয়ার নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ড মার্কেটে সুদের হার বৃদ্ধির প্রভাবও রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
চলতি বছর বিদেশিদের শেয়ার বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় তাদের নিট বিনিয়োগ নেমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১২ কোটি টাকায়। ২০১৭ সাল শেষে তাদের নিট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা।
বিদেশিদের শেয়ার বিক্রি বেড়ে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পুঁজিবাজারে। ব্যাংক খাত ছাড়াও গ্রামীণফোন, বাটা স্যু, ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, বিএসআরএম লিমিটেড, বার্জারের মতো শক্ত মৌলভিত্তির কোম্পানি থেকেও তারা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। এতে সূচকের পতনও ত্বরান্বিত হচ্ছে।
বিদেশিদের পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় চলতি বছর ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচকটি ১৫ শতাংশ পয়েন্ট হারিয়েছে। এ সময় সূচকটি ৬২৪৪ পয়েন্ট থেকে ৫২৯৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৪ হাজার ২৮৪ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয় করেছেন বিদেশিরা। বিপরীতে ৪ হাজার ৭৪১ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেন। এতে এ সময়ে নিট ৪৯২ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেন বিদেশিরা।
এরমধ্যে চলতি বছর পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি নিট বিদেশি বিনিয়োগ হয় জানুয়ারিতে। ওই সময় বিদেশিরা নিট বিনিয়োগ করে ১৮৭ কোটি টাকা। আর সর্বোচ্চ ২৮৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ তুলে নেয় মে মাসে।