যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন গত শুক্রবার সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে করা ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। মস্কো এই চুক্তি ভঙ্গ করছে, পাঁচ বছর ধরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। যার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটন প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
ওয়াশিংটনের এমন সিদ্ধান্তের ফলে নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে। শুধু রাশিয়া নয়, চীনও এই প্রতিযোগিতায় নতুন করে নাম লেখাতে পারে। কারণ ১৯৮৭ সালে করা আইএনএফ চুক্তি মানার ক্ষেত্রে চীনও অতীতে কয়েকবার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখায়।
চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার প্রসঙ্গে রাশিয়া বলছে, যুক্তি না শোনা ও সমঝোতায় না আসা প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্র আগেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে আসছিল, বারবার চুক্তি লঙ্ঘন করছিল রাশিয়া।
আইএনএফ চুক্তি অনুসারে, দুই দেশের স্বল্প ও মধ্যপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
রাশিয়া ওই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়ার এই লঙ্ঘন ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ মানুষকে হুমকির মুখে ফেলেছে। আমাদের দায়িত্ব, দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তিতে রাখার সম্মতি আদায়ের জন্য রাশিয়াকে ‘যথেষ্ট সময়’ দেওয়া হয়েছিল।’
তবে আইএনএফ চুক্তি থেকে প্রত্যাহার পরবর্তীতে রাশিয়ার সঙ্গে নতুন কোনো চুক্তি করার পরিকল্পনা ট্রাম্পের আছে কি না তা এখনো জানা যায়নি। ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা আইএনএফ চুক্তির বাইরে নতুন একটি কৌশল খুঁজে বেড়াচ্ছেন এমনটা অনেকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, পরমাণু শক্তিধর সব দেশকে নিয়ে নতুন কোনো চুক্তির প্রস্তাব তুলতে পারেন ট্রাম্প। এ ক্ষেত্রে সব পরমাণু শক্তিধর দেশ নতুন এই চুক্তিতে রাজি হবে কি না তা নিশ্চিত নয়।
আইএনএফ শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে হলেও নতুন চুক্তিটি হতে পারে চীন, ভারত, পাকিস্তান, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই চুক্তি থেকে প্রত্যাহার একটি কৌশল মাত্র। কারণ গত মাসেই যুক্তরাষ্ট্র নতুন মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্মোচন করেছে। কিন্তু চুক্তিবদ্ধ থাকায় এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করা যাচ্ছে না। চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করার পর নতুন চুক্তির দিকে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হলে তা হবে অনেক ব্যয়বহুল। সাবেক প্রেসিডেন্ট রাবাক ওবামার আমলে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র প্রতিযোগিতার নিম্নগতি ট্রাম্পের আমলে ঊর্ধ্বগামী হতে পারে। গত জানুয়ারিতে কংগ্রেসের বাজেটে পরমাণু কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৪৯৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা ট্রাম্পের সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের বাজেটের তুলনায় ৮৭ গুণ বেশি। আগামী ৩০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু খাতে বাজেট গিয়ে দাঁড়াবে এক দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার।