রপ্তানি বিলের বিপরীতে জনতা ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৭৪৫ কোটি ৬৬ লাখ ৭৯ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পৃথক পাঁচটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদের ও রিমেক্স ফুটওয়্যার এবং জাজ মাল্টিমিডিয়ার চেয়ারম্যান এম এ আজিজসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
রোববার রাজধানীর চকবাজার থানায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ মামলাগুলো দায়ের করে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে গত সপ্তাহে কমিশনের বৈঠকে মামলাগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়।
আসামিদের মধ্যে ক্রিসেন্ট গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাত পরিচালক এবং ব্যাংকের ১৩ কর্মকর্তার নাম রয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- রূপালি কম্পোজিট লেদার লিমিটেডের পরিচালক সামিয়া কাদের নদী, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্ট লিমিটেডের পরিচালক সুলতানা বেগম, পরিচালক রেজিয়া বেগম, রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিটুন জাহান মীরা ও মেসার্স লেক্সকো লিমিটেড পরিচালক মো. হারুন-অর-রশীদ।
এ ছাড়া জনতা ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- নোট প্রস্তুতকারী ও ব্যাংকটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, পরীক্ষাকারী মো. মনিরুজ্জামান, সুপারিশকারী মো. সাইদুজ্জামান, প্রিন্সিপাল অফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমীন (অফিসার ইনচার্জ এক্সপোর্ট), সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. মাগরেব আলী (অফিসার ইনচার্জ এক্সপোর্ট), ব্যবস্থাপক (ফরেন এক্সপোর্ট) মো. খায়রুল আমিন, বাহারুল আলম, এজিএম মো. আতাউর রহমান সরকার, এস এম শরীফুল ইসলাম, ঋণ অনুমোদনকারী ডিজিএম (বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি) মো. রেজাউল করিম, শাখা প্রধান ও ঋণ অনুমোদনকারী ডিজিএম মুহাম্মদ ইকবাল ও এ কে এম আসাদুজ্জামান, প্রধান কার্যালয়ের ডিজিএম কাজী রইস উদ্দিন আহমেদ, তৎকালীন জিএম বর্তমানে ডিএমডি মো. জাকির হোসেন ও বর্তমানে কৃষি ব্যাংকের ডিমডি ও তৎকালীন জনতা ব্যাংকের জিএম ফখরুল আলম।
মামলাগুলোর এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে রপ্তানি না করে ভুয়া নথিপত্র দেখিয়ে এফডিবিপি ও প্যাকিং ক্রেডিট বাবদ ওই অর্থ জনতা ব্যাংক থেকে রপ্তানি ঋণ সুবিধা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। এই টাকা হংকং, থাইল্যান্ড ও দুবাইতে পাচার করা হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
এজাহারে আরও বলা হয়, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্ট লিমিটেডের নামে ৫০০ কোটি ৬৯ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯৯ টাকা, ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের নামে ৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ৯৫ হাজার ১২০ টাকা, লেক্সকো লিমিটেডের নামে ৭৪ কোটি ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৯ টাকা, রুপালী কম্পোজিট লেদারওয়্যার লিমিটেডের নামে ৪৫৪ কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৩৮৪ টাকা ও রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের নামে ৬৪৮ কোটি ১২ লাখ ৫৬ হাজার ৭৪৭ টাকা জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়।
এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সিঙ্গাপুর, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের দায়ে মানিলন্ডারিং আইনে ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদের ও সরকারি ব্যাংকের দুই ডিএমডিসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে পৃথক তিন মামলা দায়ের করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
চকবাজার মডেল থানায় দায়ের করা ৩ মামলায় ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস, রিমেক্স ফুটওয়্যার ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে যথাক্রমে ৪২২.৪৬ কোটি টাকা, ৪৮১.২৬ কোটি টাকা ও ১৫.৮৪ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই মামলায় ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।