চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ মোট নয় প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে তারা এসব মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ
এ ছাড়াও চসিকের ৪১টি ওয়ার্ডে সাধারণ ও ১৪টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে মোট ২৭৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে-সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২২০ জন ও সংর¶িত কাউন্সিলর পদে ৫৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এসব দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান।
২৯ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী হয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী। বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হয়েছেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন।
মনোনয়নপত্রের সাথে জমা দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, চসিক মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর চেয়ে সম্পদসহ বেশ কিছু খাতে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন।
হফলনামায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের মামলা না থাকলেও এমবিবিএস ডিগ্রিধারী ডা. শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালত ও নগরের বিভিন্ন থানায় ৪৮টি মামলা রয়েছে। যেগুলো বর্তমানে বিচারাধীন।
হলফনামায় রেজাউল করিম চৌধুরীর নামে মোট ৭১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩৮ টাকা অস্থাবর সম্পদ দেখানো হলেও ডা. শাহাদাতের নামে অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ২৩ লাখ ৯ হাজার ২২৭ টাকা। এ ছাড়া নানাখাতে রেজাউল করিম চৌধুরীর নিজের ও নির্ভরশীলদের মিলে বার্ষিক আয় ৮ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ টাকা হলেও শাহাদাত হোসেনের পেশাগত ও নানা ভাড়া থেকে বার্ষিক আয় ২০ লাখ ৭৪ হাজার ৬২৫ টাকা। যা রেজাউল করিমের চেয়ে ডা. শাহাদাতের দ্বিগুণের বেশি।
হলফনামা অনুসারে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর মোট অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে আছে নগদ ১ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৪০৯ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৭ লাখ ৮ হাজার ৫৩৯ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৩২ লাখ ২৭ হাজার ৯০ টাকা। পোস্টাল, সেভিংসে নিজ নামে না থাকলেও স্ত্রীর নামে আছে ২০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড।
রেজাউল করিমের নিজ নামে রয়েছে একটি ৪ লাখ টাকা দামের মোটর গাড়ি। স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর মধ্যে বিবাহসূত্রে নিজ নামে ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের ২০ তোলা স্বর্ণ ও স্ত্রীর নামে ৬০ হাজার টাকা মূল্যমানের ৪০ তোলা স্বর্ণ আছে।
বিবাহসূত্রে নিজ নামে ১০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও এক লাখ টাকার আসবাবপত্র আছে তার। অন্যান্য অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূলধন ২ লাখ টাকা ও ফার্মের মূলধন দশ লাখ ৬ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে অন্যান্য অস্থাবর সম্পত্তি মেসার্স চৌধুরী ইলেকট্রনিক্স ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ফার্মের মূলধন ২ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকা ও ঋণ হিসেবে প্রদত্ত চার লাখ টাকা।
রেজাউল করিম চৌধুরীর নিজের বার্ষিক আয় বাড়ি এপার্টমেন্ট, দোকান থেকে ৪ লাখ ১৪ হাজার টাকা, ব্যবসায় নিজের কোনো আয় না থাকলেও নির্ভরশীলদের আয় তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ফার্মের শেয়ার থেকে নিজের আয় দুই হাজার ১০০ টাকা ও নির্ভরশীলদের আয় ৫০ হাজার ৩০০ টাকা।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে রেজাউল করিম চৌধুরীর নিজের নামে কৃষি ও অকৃষি জমি না থাকলেও স্ত্রীর নামে রয়েছে ২ গন্ডা দুই কড়া অকৃষি জমি। দালান, আবাসিক ও বাণিজ্যিক সম্পদের মধ্যে নিজ নামে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ভূমির ওপর আবাসিক গৃহমূল্য এক লাখ টাকা ও যৌথ মালিকানার ক্ষেত্রে প্রাপ্ত চার ভাগের এক অংশ। নিজ নামে চারটি এপার্টমেন্ট যার মূল্য এক কোটি নয় লাখ ১৬ হাজার ৬৬৭ টাকা।
এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর নামে কোন ঋণ ও দেনা নেই।
চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাট এলাকার খ্যাতনামা বহদ্দার বাড়ির হারুন অর রশীদ চৌধুরী বড় সন্তান রেজাউল করিম চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বি.এ। রাজনৈতিক জীবনে কোনো মামলা-মোকদ্দমার মুখোমুখি হননি তিনি। পেশায় ব্যবসায়ী এ রাজনীতিবিদ মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী।
অন্যদিকে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী ডা. শাহাদাতের বাৎসরিক আয় ২০ লাখ ৭৪ হাজার ৬২৫ টাকা। এর মধ্যে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান বা অন্যান্য ভাড়া বাবদ নিজের আয় ৩ লাখ ৫৩ হাজার ২৫ টাকা, পেশাগত আয় ১৭ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা।
ডা. শাহাদাতের নিজ নামে অস্থাবর সম্পদ দেখান হয়েছে ৪ কোটি ২৩ লাখ ৯ হাজার ২২৭ টাকা। এর মধ্যে নিজের নগদ টাকা আছে ১৫ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের নামে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার ২৭৭ টাকা, নিজের নামে বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভূক্ত ও তালিকাভূক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার বাবদ ৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৫০ টাকা।
শাহাদাতের নিজের নামে ১১ লাখ ৮০ হাজার মূল্যমানের কার (ফিল্ডার-টয়োটা) ও ২৭ লাখ ২০ হাজার মূল্যমানের ভি-৭৩ মডেলের পুরনো জিপ গাড়ি আছে। ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের নিজের নামে স্বর্ণালঙ্কার আছে। ইলেকট্রনিক সামগ্রীর মধ্যে নিজ নামে ২৫ হাজার টাকা মূল্যমানের ফ্রিজ ও ২৫ হাজার টাকা মূল্যমানের টিভি আছে। খাট, সোফা সেট, আলমিরা, ওয়ারড্রোব মিলিয়ে নিজ নামে ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র আছে। অন্যান্য সম্পদের মধ্যে ট্রিটমেন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিজের ব্যবসায়িক মূলধন ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯০ হাজার ৬০০ টাকার সম্পদ আছে।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে ডা. শাহদাতের নিজ নামে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ আছে। এর মধ্যে নিজ নামে ১৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ১৮ শতক এবং ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ১ দশমিক ৫ কাঠা অকৃষি জমি আছে। নিজ নামে ৬৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকার আটতলা বিশিষ্ট একটি দালানের এক অংশ আছে। এ ছাড়া ৩৫ লাখ টাকা দামের একটি এপার্টমেন্ট আছে শাহদাতের।
ব্যাংক ঋণের মধ্যে শাহদাতের নিজ নামে উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড প্রতিষ্ঠানে ৩ কোটি ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে ২৯ লাখ ৮১ হাজার ১৩২ টাকা ঋণ আছে।
চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া থানাধীন পশ্চিম বাকলিয়ার ডিসি রোড এলাকার আহমদুর রহমানের ছেলে শাহাদাত হোসেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এমবিবিএস ডিগ্রিধারী। পেশায় একজন চিকিৎসক। তার বিরুদ্ধে আদালত ও নগরের বিভিন্ন থানায় ৪৮টি মামলা বিচারাধীন আছে।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে চসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ২৯ মার্চ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই ১ মার্চ। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৮ মার্চ। প্রতীক বরাদ্দ ৯ মার্চ।