অ্যাকাডেমিক ভবন সংকটে জামালপুর ও শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। এ কলেজে ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য রয়েছে মাত্র ৩৭টি শ্রেণিকক্ষ। এতে নিয়মিত পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটছে। সময় ভাগ করে পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, অবকাঠামোগত সংকট নিরসনে দ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ করতে হবে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, এ কলেজের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে শ্রেণিকক্ষ, ল্যাবরেটরি এবং সেমিনার কক্ষ মিলিয়ে ১৪৫টি কক্ষের প্রয়োজন। বর্তমান অ্যাকাডেমিক ভবনটি চারবছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেও ওই ভবনেই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। ওই ভবনের ছাদ ফেলে দিয়ে টিনের চালা তৈরি করে সেখানেই ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া কলেজের অডিটরিয়ামও ঝুঁকিপূর্ণ। অডিটরিয়ামে বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ না থাকায় সভা-সেমিনার পরিচালনা করতে সমস্যা হচ্ছে। অবকাঠামোগত সংকটের কারণে এখানেও শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হয়। এ কলেজটি ৪৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং বর্তমানে শিক্ষার্থী ১৪ হাজার। বর্তমানে কলেজটিতে ১৪টি বিষয়ে অনার্স ও ১২টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। আয়তনের দিকে রংপুর কারমাইকেল কলেজের পরেই এ কলেজের অবস্থান।
কলেজের প্রশাসনিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৪৬ সালে ১৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে জামালপুর কলেজ নামে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় কলেজটির। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে তৎকালীন জামালপুর মহকুমা এসডিও পনাউল্লাহ আহাম্মদের প্রচেষ্টায় ও মাদারগঞ্জের দানবীর আশেক মাহমুদ তালুকদারের সহযোগিতায় কলেজটির কার্যক্রম শুরু হয়। পরে কলেজটিকে আশেক মাহমুদ কলেজ নামে নামকরণ করা হয়। প্রথমদিকে কলেজটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়েছে। পরে ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। ওই বছরই বাংলা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রথম অনার্স কোর্স চালু হয়। ১৯৭৯ সালে কলেজটিকে জাতীয়করণ করা হয়।
কলেজের নানা সমস্যার কথা স্বীকার করে অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. হারুন অর রশীদ বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা জরুরি।’
এ ব্যাপারে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শাওন মোল্লা বলেন, ‘আমাদের ক্লাসে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। প্রতিটি বেঞ্চে ৪-৫ জন করে বসতে হয়। এ গরমে গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে। কক্ষ সংকটের কারণে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। পড়াশোনার জন্য শ্রেণিকক্ষ বাড়ানোর দাবি জানাই।’
ইংরেজি বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান নাহিদ বলেন, ‘ক্লাশ রুটিন অনুযায়ী সপ্তাহে চারদিন ক্লাস হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে ক্লাস হয় দুদিন। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে স্টোর রুমের মতো একটি কক্ষে আমাদের ক্লাস হয়। এই পরিস্থিতিতে নতুন শ্রেণিকক্ষ তৈরি খুবই জরুরি।’
এ ব্যাপারে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাকের আহম্মদ চৌধুরী বলেন, ‘পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় ক্লাস নিতে সমস্যা হয়। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে ক্লাস বন্ধ রেখে পরীক্ষা নিতে হয়। শ্রেণিকক্ষ সংকট দূর করতে কমপক্ষে একটি দশতলাবিশিষ্ট অ্যাকাডেমিক ভবন তৈরি জরুরি হয়ে পড়েছে।’
সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো.হারুন অর রশীদ বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে সবার ক্লাস নিয়মিত পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। সপ্তাহে তিনদিন-তিনদিন ভাগ করে একেকটা ইয়ারের ক্লাস হতো। সপ্তাহে দুইদিন ছুটি হওয়ায় এখন সেটাও নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কলেজের মূল অ্যাকাডেমিক ভবন পরিত্যক্ত হয়েছে। পরে ওই ভবনের ছাদ ফেলে টিন দিয়ে শ্রেণিকক্ষ তৈরি করা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষের সংকট দূর করতে প্রতি তলা ২৯ হাজার বর্গফুট আয়তনের দশতলা ভিতের নয়তলাবিশিষ্ট অ্যাকাডেমিক ভবনের নকশা প্রস্তাবনা আকারে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। সেটি অনুমোদিত হলে শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা যাবে।
জামালপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নির্বাচিত নয়টি সরকারি কলেজ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এখানে একটি বড় ধরনের প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এখানে প্রায় ১৬ হাজার ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করেন। কলেজে যে অবকাঠামো রয়েছে এখানে আরও একটা ভবনের প্রয়োজন। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে অডিটরিয়াম ভবনে ক্লাস নেওয়া হয়। এখানে চেয়ার এবং ওপরের টিন নষ্ট। এটা মেরামত-সংস্কার ও নতুন একটা ভবন নির্মাণের জন্য প্রধান কার্যালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ কাজগুলোর সঙ্গে কিছু রাস্তা, গেইটসহ সীমানা প্রাচীরের কাজ করা দরকার। সেটা নিয়ে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে; তিনি আশ্বস্ত করেছেন।