‘গাছেরা কি কিছু বলে? অনেকে বলবেন, এ আবার কেমন প্রশ্ন? গাছ কী কোনো দিন কথা বলে থাকে?’ বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর একটি লেখার শুরু এ প্রশ্ন দিয়ে। তার ওই লেখার শিরোনাম ‘গাছের কথা’। গাছের জীবন আছে, এমন আবিষ্কারে সাড়া ফেলে দেওয়া বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু পরবর্তী সময় উদ্ভিদের অনুভূতি নিয়েও গবেষণা করেছেন। তিনি বলেছেন গাছ কথাও বলে।
জগদীশচন্দ্র বসু ছোটদের উপযোগী করে এ ভঙ্গিতে কথাগুলো লিখেছেন। তবে তার পরবর্তী সময় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ও ভাষার বিজ্ঞানীরা জগদীশের এসব কথার প্রমাণ দিয়ে গেছেন। যেমন জার্মান বনবিদ ও লেখক পিটার ওয়েলবেন। গাছ নিয়ে তার বিখ্যাত বইয়ের নাম ‘দ্য হিডেন লাইফ অব ট্রিস’। এ বইয়ে পিটার ওয়েলেবেন দেখিয়েছেন গাছেদেরও সমাজ আছে। মানুষ যেমন একসঙ্গে অনেকজন বসবাস করে আর এর ফলে সমাজ গড়ে ওঠে, গাছেদেরও তেমনি সমাজ গড়ে ওঠে। একসঙ্গে অনেক গাছ মিলে জঙ্গল হয়। এক মানুষ যেমন আরেক মানুষের প্রয়োজনে এগিয়ে আসে, গাছেরাও তেমনি একে অপরের অভাব মেটায়।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গবেষক সুজান সিমার্ড প্রশ্ন করেন, উদ্ভিদের মন আছে কি না। তিনি বলেছিলেন, গাছেদের ভেতর ‘মাতৃ’ গাছের উপস্থিতি আছে এবং তারা বুদ্ধিমান হয়। গাছেদের স্মৃতিও রয়েছে। তিনি একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, গাছেদের ভেতর একজন ‘মা’ থাকে, যে তার ‘সন্তান’দের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে।
তিনি এক গবেষণায় দেখেছেন, গাছেদের মধ্যে শেকড়ের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়। কোনো গাছের কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘাটতি হলে অপর গাছ শেকড়ের মাধ্যমে তা সরবরাহ করে থাকে। শেকড়ে শেকড়ে গাছেদের এই যোগাযোগের সময় এক ধরনের শব্দ হয়, যা শুনতে অনেকটা ‘কররর...’ এ রকম।
পিটার ওয়েবলার বলেছেন, মানুষের সমাজে যেমন একজন বয়স্ক ব্যক্তি থাকে, যাকে সাধারণ অর্থে ‘মুরব্বি’ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এই মুরব্বি হন বয়স্ক, অনেক অভিজ্ঞতা থাকে তার। গাছেদের জঙ্গলেও তেমনি কিছু গাছ থাকে ঝাঁকড়া, যাদের অনেক বয়স; তারা নিজেদের পাতাসহ শরীরে জলীয়বাষ্প সঞ্চয় করে রাখে। যা অনাবৃষ্টির সময় অপরাপর গাছেরা ব্যবহার করে থাকে। এ ছাড়া গাছ মানে তাকে কেন্দ্র করে অপরাপর প্রাণীরা বসবাস করে, অক্সিজেন ও খাদ্য সংগ্রহ করে। সব মিলিয়ে গাছেরা মিলে একটা প্রাকৃতিক সমাজ তৈরি হয়।
বিস্তারিত পড়ুন: গাছের জীবন মানবজীবনের মতো!