এ মুহূর্তে সরকারের সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে আগের বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের ঋণ ও সুদ পরিশোধের চাপ বেশি। চলতি অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্র সঞ্চয়পত্রে নতুন বিনিয়োগের চেয়ে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পরিমাণ ছিল দেড় হাজার কোটি টাকা বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা ঋণাত্মক। অথচ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে এই খাতে বিনিয়োগ বেশ বেড়েছিল। প্রথম মাস জুলাইয়ে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে এই বিক্রির অঙ্ক ছিল ২ হাজার ৩১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে নিট বিক্রি ঋণাত্মক ধারায় ফেরে; ওই মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকার যে পরিমাণের ধার করেছিল, তার চেয়ে ১৪৮ কোটি টাকা বেশি ব্যয় করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৫৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা ঋণাত্মক। অর্থাৎ এই পাঁচ মাসে যত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে তার চেয়ে ৩ হাজার ৮৫৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা বেশি আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করেছে সরকার। এই অর্থ সরকারের কোষাগার থেকে অথবা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করা হয়েছে।
সুদের হার হ্রাস ও নানা কড়াকড়ির কারণে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেশ কমে গিয়েছিল; বিক্রির চেয়ে সুদ-আসল পরিশোধে ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা বেশি চলে গিয়েছিল।
কিন্তু চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরের বিক্রি বেশ ভালোই বাড়ছিল। সেপ্টেম্বরে এসে ফের ধাক্কা খেয়েছে।
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল গ্রাহকদের পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের সুদ দিতে হয়।
এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে কোনো ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ নিতে পারেনি। উল্টো ৩ হাজার ৮৫৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা কোষাগার থেকে গ্রাহকদের সুদ-আসল বাবদ দিতে হয়েছে।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। নানা ধরনের কড়াকড়ি, সুদের হার হ্রাস এবং মূল্যস্ফীতি বাড়ায় মানুষের সঞ্চয়ে টান পড়ায় বিক্রি কমে যাওয়ায় এই খাত থেকে কাক্সিক্ষত ঋণ পাচ্ছিল না সরকার। সে কারণে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্য কমিয়ে ২০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
কিন্তু অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র থেকে এক টাকাও ঋণ পায়নি সরকার; উল্টো আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের সুদ-আসল পরিশোধ এবং ভাঙানো বাবদ ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা কোষাগার থেকে অথবা ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেছে।