জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার, জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত শিবনারায়ণ দাশের দান করা চোখের কর্নিয়ায় আলো ফিরে পেয়েছেন মশিউর রহমান ও আবুল কালাম নামে দুই ব্যক্তি। চোখের আলো পেয়ে তারা শিবনারায়ণ দাশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
গত ১৯ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) মারা যান শিবনারায়ণ দাশ। তার মৃত্যুর পর বিএসএমএমইউ ও সন্ধানী জাতীয় চক্ষু ডোনেশন সোসাইটি তার চোখ থেকে কর্নিয়া সংগ্রহ করে। এরপর রংপুরের মশিউর রহমান এবং চাঁদপুরের আবুল কালাম নামের দুজনের চোখে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করে বিএসএমএমইউর চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাশ ও অন্য সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমান।
আজ সোমবার দুপুরে কর্নিয়া দান ও প্রতিস্থাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য জানায়।
এ সময় বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক বলেন, দেশের মানুষের চোখের কর্নিয়া দান করার ব্যাপারে কুসংস্কার কাজ করে। মানুষ মনে করে পুরো চোখ উঠিয়ে ফেলবে, চেহারা বিকৃত হবে, যা আত্মীয়-স্বজনরা মেনে নিতে পারে না। কিন্তু বিষয়টা এমন নয়। চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করতে চেহারা বিকৃত হয় না। মাত্র ১০ মিনিট সময়ে কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয়। তবে মানুষ এখন আস্তে আস্তে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
উপাচার্য আরও বলেন, শিবনারায়ণ দাশ কর্নিয়া ও তার দেহদান করে গেছেন। এক চোখের কর্নিয়া চাঁদপুরের মশিউর রহমানের চোখে প্রতিস্থাপন করেছি। অন্য চোখের কর্নিয়া রংপুরের আবুল কালামের চোখে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। দান করা কর্নিয়ায় এখন এ দুই ব্যক্তি চোখে আলো ফিরে পেয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, অনেক বড় বড় মানুষ মরণোত্তর চক্ষু দানের জন্য অঙ্গীকার করেছেন। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মানের। এতে করে অসংখ্য মানুষ মরণোত্তর চক্ষু দানে উৎসাহিত হবেন।
ডা. রাজশ্রী দাশ বলেন, শিবনারায়ণ দাস দেশকে একটি লাল-সবুজের পতাকা দিয়েছেন। মৃত্যুর পর দেহ ও চোখ দুটোও দান করেছেন। মরণোত্তর চক্ষুদানে মহত্ত্ব আছে।
ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমান বলেন, দেশে কর্নিয়া দান নিয়ে এখনো ধর্মীয় একটা প্রতিবন্ধকতা আছে। ইরান-সৌদি আরবে পাঁচ থেকে ছয় হাজার কর্নিয়া প্রতিস্থাপন হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এক থেকে দেড় হাজার পর্যন্ত কর্নিয়া প্রতিস্থাপন হয়। এ সংখ্যাটা খুবই কম।
সংবাদ সম্মেলনে চোখের আলো ফিরে পেয়ে অনুভূতি প্রকাশ করেছেন মশিউর রহমান ও আবুল কালাম। এ সময় মশিউর রহমান বলেন, আগের থেকে ভালো দেখতে পাচ্ছি। আমার চোখে সমস্যা ছিল জন্ম থেকেই। শিবনারায়ণ দাশের পরিবারকে ধন্যবাদ জানাই। চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক ভালো লাগছে। দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি ফিরে পেলে দেশের এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করব।
আবুল কালাম বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে বাম চোখে দেখতাম না। কর্নিয়া লাগানোর পর এখন দেখতে পাই। আমার ভালো লাগছে খুব। অপারেশনের আগে চোখে নানা সমস্যা ছিল। এখন নেই। সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে অপারেশন হয়েছে আমার।
এ সময় শিবনারায়ণ দাশের স্ত্রী গীতশ্রী চৌধুরী বলেন, শিবনারায়ণ দাশ মৃত্যুর আগে তার দেহ ও কর্নিয়া দান করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। আমরা তার সেই ইচ্ছে পূরণে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার আত্মীয়-স্বজনরা এটা মেনে নিতে পারেননি। তারা মনে করেছিলেন হয়তো অর্থকষ্টে দেহদান করে গেছেন। কিন্তু না, তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন মৃত্যুর পর দেহ ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। আমাদের ছেলে ও আমারও দেহদান করার ইচ্ছে আছে। তিনি সারা জীবন দেশের কল্যাণে কাজ করে গেছেন।
শিবনারায়ণ দাশের ছেলে অর্ণব আদিত্য দাশ বলেন, আমার বাবা বেঁচে থাকবেন মানুষের মধ্যে। তার চোখের কর্নিয়ায় দুজন আলো দেখছেন, তাদের মধ্যে বাবা বেঁচে থাকবেন। আমার বাবা জীবনের শেষ পর্যন্ত দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চেয়েছেন। দেহ ও কর্নিয়া দানের মাধ্যমে তিনি তার প্রতিফলন দেখিয়েছেন। দেশের মানুষের প্রতি অনুরোধ, আপনারাও অন্যদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসুন, যাতে করে আপনাদের মাধ্যমেও অন্যরা বেঁচে থাকতে পারে।
এ সময় মশিউর রহমান বলেন, আগের থেকে ভালো দেখতে পাচ্ছি। আমার চোখে সমস্যা ছিল জন্ম থেকেই। শিবনারায়ণ দাশের পরিবারকে ধন্যবাদ জানাই। চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক ভালো লাগছে। দৃষ্টিশক্তি কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করব।
আবুল কালাম বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে বাম চোখে দেখতাম না। কর্নিয়া লাগানোর পর এখন দেখতে পাই। আমার ভালো লাগছে খুব। অপারেশনের আগে চোখে নানা সমস্যা ছিল। এখন নেই। সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে অপারেশন হয়েছে আমার।