কুড়িগ্রামের ভূরঙ্গামারীর বীর মুক্তিযোদ্ধা তরনী কান্ত রায়। তার ডাকনাম ললিত বর্মন। সবাই এই নামেই চেনেন তাকে। বাংলাদেশ বেসামরিক গেজেটে তার মূল নাম থাকলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে ডাক নাম ললিত বর্মন আছে। এতেই বেধেছে বিপত্তি। এই নাম বিড়ম্বনার কারণে সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত বীর মুক্তিযোদ্ধার এই পরিবার।
জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদনও করেছেন তরনী কান্ত রায়। তবে দুই বছর কেটে গেলেও ললিত খাতা কলমে তরনী হয়ে উঠতে পারেননি।
ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের আঙ্গারীয়া গ্রামেরর বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা তরনী কান্ত রায়। বাংলাদেশ বেসামরিক গেজেটে তার নং ১১৮৫ এবং লাল মুক্তি বার্তায় তার নং ৩১৬০৪০৫৪৯। এই তালিকায় নাম রয়েছে তরনী কান্ত রায়। তার জন্ম নিবন্ধন এবং ১৯৭২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য নম্বর পত্রেও এই নাম রয়েছে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রে তরনী কান্ত রায়ের পরিবর্তে ভুলে তার ডাক নাম ললিত বর্মন অন্তর্ভুক্ত হয়।
পরবর্তীতে জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম সংশোধন করতে সকল প্রমাণপত্র, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়ন পত্রসহ নির্বাচন অফিসে আবেদন করেন। দীর্ঘ দুই বছরেও তা সংশোধন হয়নি বলে জানিয়েছেন তরনী কান্ত।
বীর মুক্তিযোদ্ধা তরনী কান্ত বলেন, আমি গৃহ ঋণের জন্য আবেদন করেছি কিন্তু নাম বিভ্রাটের কারণে গৃহ ঋণ পাচ্ছি না। শুধু তাই না, নাম বিভ্রাটের কারণে আমি অন্য কোনো সুবিধাও পাচ্ছি না। পরিবার নিয়ে দুঃচিন্তায় রয়েছি।
জাতীয় পরিচয় পত্রে নাম সংশোধন করতে না পারায় তরনী কান্ত অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী জয়ন্তী রানী।
প্রতিবেশী শংকর বিশ্বাস (৫০), আয়নাল হক (৬০) ও বিসাদী বর্মণ (৪৫) জানান, তরনী কান্তের ডাক নাম ললিত। তরনী কান্ত ও ললিত একই ব্যক্তি।
তরনী কান্ত রায়ের ছেলে অমল চন্দ্র রায় বলেন, আমার বাবার নাম তরনী কান্ত রায়। তবে বাবার ডাক নাম ললিত। যখন জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেসময় বাবার ভালো নাম না শুনেই তারা ললিত বর্মন লেখে। আমরা এতো কিছু বুঝতাম না। নামের সমস্যার কারণে ৮-৯ মাস বাবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ ছিল। পরে আবারও কয়েকমাস থেকে ভাতা পাচ্ছেন। নামের ভুলের কারণে বিভিন্ন সময় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদ্য সাবেক কমান্ডার মহি উদ্দিন আহমেদ জানান, তরনী একজন প্রকৃত ফ্রিডম ফাইটার (এফএফ)। ৬ নম্বর সেক্টরের অধিন ঠাকুরগায়ে সে যুদ্ধ করেছে। ভুলে জাতীয় পরিচয়পত্রে তার ডাক নাম ললিত বর্মন হয়েছে। এটা সংশোধনের জন্য আমি প্রত্যায়নপত্র দিয়েছি।
এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাচন অফিসার সাইফ আহমেদ নাসিম। তিনি এই উপজেলায় নতুন যোগদান করেছেন বলে জানিয়েছেন।
নির্বাচন অফিস জানিয়েছে, পুরো নাম সংশোধনের বিষয়টি উপজেলা অফিসের এখতিয়ারের নেই মধ্যে নেই। এটা জাতীয় নির্বাচন অফিস থেকে করা হয়ে থাকে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গোলাম ফেরদৌস বলেন, এ ব্যাপারে আমাকে কেউ অবগত করেনি। অবগত করলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।