সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আলু। বেশ কয়েক বছর আগে দেশে চালের সংকট তৈরি হলে অনেক রাজনীতিবিদ ভাতের পরিবর্তে আলু খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে গত বছর বাজারে আলুর যে উচ্চমূল্য ছিল তা আগে কখনো দেখা যায়নি। সব সময় উৎপাদন উদ্বৃত্ত থাকা সেই আলুই এখন ভোক্তার দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। রেকর্ডমূল্যে কিনতে হচ্ছে চালের পর সবচেয়ে বেশি ভোগের এ খাদ্যপণ্যটি। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, আলুর ঘাটতি না থাকলেও সুযোগ নিচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগী ও কোল্ড স্টোরেজ ব্যবসায়ীরা। তাদের সিন্ডিকেট চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।
গত বছরের অক্টোবরে রেকর্ড ৭০ টাকা কেজিতে আলু কিনতে হয়েছিল ভোক্তাকে। বর্তমানে ভরা মৌসুমে প্রতি কেজি আলু ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বর্তমান দাম বিবেচনায় মৌসুমের পর আগামী কয়েক মাসে আলুর দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা ৭৫-৮০ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে প্রায় সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ১১ লাখ টন। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭ লাখ টন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, দেশে উৎপাদিত আলুর প্রায় ২৫ শতাংশ বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে যায়। উৎপাদন-পরবর্তী ক্ষতি বিবেচনায় নিলে আলুর চাহিদা ও সরবরাহ প্রায় কাছাকাছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার মৌসুমে দুবার বৃষ্টি হয়েছে। এতে করে কোনো কোনো জেলায় আলুর উৎপাদন ব্যয় কিছুটা বেড়েছে। তারপরও গত বছরের চেয়ে এবার বেশি উৎপাদন হয়েছে। আর দেশে যে পরিমাণের আলু উৎপাদন হয়, তার প্রায় অর্ধেক হিমাগারে থাকে। তবে অনেক কৃষক এবার অপরিণত আলু বিক্রি করায় সরবরাহে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে।
দেশে সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদন এলাকাগুলোর মধ্যে মুন্সীগঞ্জ, জয়পুরহাট, বগুড়া, রংপুর অন্যতম। এসব জেলায় প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১৪ টাকা পর্যন্ত। তবে মুন্সীগঞ্জে আবহাওয়া বিরূপ থাকায় এ মৌসুমে আলু উৎপাদনে খরচ বেড়েছে বলে সেখানকার চাষিরা জানিয়েছেন। তবে এসব জেলায় মাঠপর্যায়ে কৃষকরা আলু বিক্রি করেছেন ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে। এসব আলু মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে বাজারে এসে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। ৫ মাসে প্রায় ৩৫-৪০ লাখ টন আলু বাজারে এসেছে। আনুষঙ্গিক খরচ বাদে প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা মুনাফা করেছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। এ হিসাবে ইতিমধ্যেই প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। হিমাগারে থাকা আলু বাজারে এখনো পুরোপুরি আসেনি বলে জানিয়েছে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। আলুর দাম আরও বাড়ার প্রত্যাশা করছেন তারা। হিমাগারের আলু বাজারে এলে এসব সিন্ডিকেটের পকেটে আরও হাজার হাজার কোটি টাকার মুনাফা ঢুকবে।
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর আমরা আলু নিয়ে জেলায় জেলায় অভিযান চালিয়েছি। সেখানে আমরা বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সদস্যদের হাতেনাতে ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে দিয়েছি। অনেক ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু কাজ হয়নি। হিমাগারকেন্দ্রিক একটি বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে, যারা মূলত পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে। কৃষকরা হিমাগারে আলু রাখার পর তার সব ডকুমেন্ট তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। এমনকি কৃষিঋণের নিয়ন্ত্রণও ওই সিন্ডিকেটের হাতে। তারা না চাইলে হিমাগার থেকে পণ্য বের হবে না। এর সঙ্গে হিমাগার মালিকপক্ষও জড়িত। ভোক্তা অধিদপ্তর একা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আলুর ভরা মৌসুম। উৎপাদন ব্যয়, সরবরাহসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার আলুর দাম সর্বোচ্চ ৩৫-৩৬ টাকা হতে পারে। কিন্তু বাজারে ১৫-২০ টাকা বেশি। এ ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট কাজ করলেও আমাদের চাহিদা-সরবরাহের সঠিক তথ্য থাকা দরকার। এটা বের করা তো কোনো রকেট সায়েন্স না।’
তবে আলুর বর্তমান দামে কোল্ড স্টোরেজের কোনো ভূমিকা নেই বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। বরং তিনি কৃষককে দায়ী করেছেন। মোস্তফা আজাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, তাদের আলু এখনো বাজারে আসেনি। দাম বাড়ার মূল কারণ কৃষকরাই বেশি দামে বিক্রি করছেন। তার দাবি, এ বছর কৃষকরা প্রতি কেজি আলুতে ৮ থেকে ১৭ টাকা পর্যন্ত মুনাফা করছেন। প্রতি কেজি আলুতে কৃষকের উৎপাদন খরচ হয়েছে ৮ থেকে ১৭ টাকা। আর ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে তা ২৫ থেকে ৩৫ টাকা দরে কিনে গুদামজাত করেছেন।
মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবুর দাবি, প্রতি কেজি আলু গুদামজাতে গড়ে প্রায় ১০ টাকা ব্যয় হয়। এখন ৪৫ টাকার আলু ব্যবসায়ীরা কত লাভে বাজারে বিক্রি করবেন, সেটি তার ব্যাপার।
আলুর রেকর্ড মূল্য গত বছরের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়েছিল। দাম বাড়তে বাড়তে গত বছরের অক্টোবরে গিয়ে প্রতি কেজি আলু ৭০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সরকার বাধ্য হয়ে আলুর দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু সরকারনির্ধারিত দামে বাজারে আলু বিক্রি না হওয়ায় বাধ্য হয়ে আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। আমদানির অনুমতি দেওয়ার সময় তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রীও বাজারে শক্তিশালী সিন্ডিকেট থাকার কথা স্বীকার করেছিলেন।
এদিকে চলতি বছরের শুরুতে উচ্চমূল্য থাকায় অনেক কৃষক জমি থেকে অপরিণত আলু তুলে বিক্রি করে দিয়েছেন। এ কারণেই অনেকে আলুর সরবরাহে ঘাটতির আশঙ্কা করছেন। অপরিণত আলু বিক্রি করায় চূড়ান্ত হিসাবে উৎপাদন কিছুটা কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত নভেম্বরের শুরু থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আলুর চাষাবাদ শুরু হয়। এর মধ্যে নভেম্বরে আগাম জাতের আবাদ করা হয়। অনেকে অক্টোবরের মাঝামাঝিতেও করে থাকেন। এই আলু ৬৫-৭৫ দিনে পরিণত হয়। আর ডিসেম্বরের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময়ে মূল মৌসুমের আলু রোপণ করে থাকেন কৃষক। সাধারণত পণ্যটি পরিণত হতে সময় লাগে ৯০ দিন। তবে অনেকে এবার ৬০-৬৫ দিনের মাথায় আলু তুলে বিক্রি করেছেন।
মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জানিয়েছেন, এবার অপরিণত আলু বিক্রির পরিমাণ অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। তাই সরবরাহের ঘাটতি হতে পারে। তিনি বলেন, দেশে আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টনের বেশি, কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ৭০ লাখ টন। এরপরও গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশি স্টোরেজ হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর ২৩ লাখ টন আলু কোল্ড স্টোরেজগুলোতে গুদামজাত ছিল। চলতি বছর গুদামজাত হয়েছে ২৫ লাখ টন।
আলু উৎপাদনকারী জেলাগুলোর তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এবার মুন্সীগঞ্জের ছয় উপজেলায় বিলম্বে আলু উত্তোলন শুরু হয়। এতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে আলু তোলা শেষ হয়। এরপর মধ্যস্বত্বভোগী ও ব্যবসায়ীরা আলু কিনে কোল্ড স্টোরেজে মজুদ করেন।
গত রবিবার মুন্সীগঞ্জ শহর বাজারের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আলু উত্তোলনের মৌসুমে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে খুচরা বাজারে আলু বিক্রি করেছেন ৩২ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে। এখন সেই আলু তারা বিক্রি করছেন ৫০ টাকা দরে। প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা লাভে বিক্রি করছেন।
এদিকে, অতিবৃষ্টির কারণে আলুর মৌসুমে প্রথম দফায় এ জেলার কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হন। রোপণ করা আলুবীজ জমিতেই পচে যায়। পরে দ্বিতীয় দফায় আলু রোপণ করেন তারা। এতে খরচ বেশি পড়েছে। জেলা সদরের চরাঞ্চল মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের আমঘাটা গ্রামের চাষি ইব্রাহিম শিকদার জানান, তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে ২৫০ মণ আলু পেয়েছেন। মৌসুমের শুরুতে তিনি মধ্যস্বত্বভোগী বা ব্যবসায়ীদের কাছে ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা আলু বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে। এতে কেজিপ্রতি আলু বিক্রিতে তিনি পেয়েছেন ৩০ টাকা করে। কেজিপ্রতি আলু উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে ২২ থেকে ২৫ টাকা। তিনি বলেন, মধ্যস্বত্বভোগী ও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে জমি থেকে আলু কিনে নিয়েছেন। কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করে সংকট দেখিয়ে পরে তারা বেশি দামে আলু বিক্রি করবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকির হোসাইন জানান, জেলার ৬টি উপজেলায় এ বছর ৩৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। এতে উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৩৬ হাজার ২০০ টন। এ জেলায় ৬৪টি কোল্ড স্টোরেজের মধ্যে সচল রয়েছে ৫৮টি। এই ৫৮ কোল্ড স্টোরেজে ৫ লাখ ৭ হাজার ১৬০ টন আলুর ধারণক্ষমতা রয়েছে। সেই হিসাবে এবার কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণের বাইরে থাকছে উৎপাদনের অর্ধেক আলুই।
তবে কোল্ড স্টোরেজ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সক্ষমতার কম আলু মজুদ করা হয়েছে। জেলা শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুর এলাকার কদম রসুল কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার প্রশান্ত কুমার ম-ল দুলাল দেশ রূপান্তরকে জানান, এই কোল্ড স্টোরেজের ধারণক্ষমতা ৮০ হাজার বস্তা। অথচ মজুদ করা হয়েছে সর্বসাকল্যে ৩২ হাজার বস্তা। পশ্চিম মুক্তারপুর এলাকার আবির অ্যাগ্রো ফুড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজার মাসুদ খান জানান, এই কোল্ড স্টোরেজে ২ লাখ ৮০ হাজার বস্তা ধারণক্ষমতা থাকলেও মজুদ করা হয়েছে মাত্র ১ লাখ ১২ হাজার বস্তা। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা এবার কম আলু মজুদ করেছেন।
জয়পুরহাটে পর্যাপ্ত আলু হিমাগারে মজুদ থাকলেও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। আলুর উৎপাদন খরচ ১৩ থেকে ১৫ টাকা হলেও বাজারে প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৬০ টাকা।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জয়পুরহাটে ১৯টি হিমাগারে ১ লাখ ৮৪ হাজার টন ধারণক্ষমতা। ১২ মে পর্যন্ত জেলার হিমাগারগুলোতে সংরক্ষণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার টন।
সদর উপজেলা কড়ই উত্তরপাড়ার মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আলু তোলার পর আমরা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ বিক্রি করেছি। আমরা সাধারণ দরিদ্র কৃষক হিমাগারে মজুদ করার ক্ষমতা না থাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। আমাদের কাছ থেকে কিনে বড় ব্যবসায়ীরা মজুদ করে পড়ে বেশি দামে বিক্রি করেন।’
কালাই উপজেলার ইসরাত হিমাগারের ম্যানেজার রায়হান আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমানে এখানে স্টিক আলু পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকা (৬০ কেজির) বস্তা, প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে। দেশি পাকড়ি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা (৬০ কেজির) বস্তা, প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে।
বগুড়ায় পর্যাপ্ত আবাদ হলেও এ বছর জেলার বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে জাতভেদে ৫৫ থেকে ৭০ টাকা। এ জেলার হিমাগারগুলোতে আলু মজুদ করেন পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী। এবার বেশি লাভের আশায় মৌসুমি ব্যবসায়ী যোগ হয়েছে আরও ২ শতাধিক।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে বগুড়া জেলায় ৫৫ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে; যা গত বছরের তুলনায় ২ হাজার ৩৫ হেক্টর বেশি। আলু উৎপাদন হয়েছে ১১ লাখ ৯৩ হাজার ৬১৬ টন। প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ পড়েছে নিজের জমিতে ১১ টাকা ও বর্গায় (পত্তনি) ১৩ টাকা।
জেলা কৃষি বিপণন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় বছরে আলুর চাহিদা থাকে গড়ে ২ লাখ ২৫ হাজার টন এবং বীজ আলুর চাহিদা ৭৫ হাজার টন। বাকি আলুর মধ্যে ২ লাখ টনের মতো দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। আর প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার টন আলু মজুদ করেন ব্যবসায়ীরা।
বগুড়ায় ৪৩টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারে ধারণক্ষমতা রয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৬২০ টন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার হিমাগারে আলুর বস্তাপ্রতি (৬৪ কেজি) ভাড়া দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ী পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩২০ টাকা ও কৃষকপর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা।
জেলার কাহালু উপজেলার মুরইল গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম। তিনি ১৫ হাজার টাকা বিঘাপ্রতি (২৯ শতক) বর্গা নিয়ে আলু চাষ করেছেন। তিনি জানান, জমিতে বীজ লাগানো থেকে তোলা পর্যন্ত বিঘাপ্রতি প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া ভালো না থাকায় বিঘাপ্রতি অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি লাল পাকড়ি আলুর চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি প্রায় ৮০ মণ আলু পেয়েছেন। প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ১৩ টাকা। শুরুতে ৮০০ টাকা ও পরে প্রায় ১ হাজার ১০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন।
শিবগঞ্জ এলাকার আলু ব্যবসায়ী শাহ গাজী জানান, এবার আলু কিনেছে ১০৫০ টাকা মণ দরে। হিমাগারে ৬৪ কেজির বস্তা রাখা, শ্রমিক খরচ ও পরিবহনসহ প্রতি কেজি আলুতে তার খরচ হয়েছে ৩২ টাকা।
রংপুরে খুচরাপর্যায়ে বাজারগুলোয় প্রকারভেদে ৪৫ থেকে ৬০ টাকা দরে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ৫৩ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩৫৪ টন। উৎপাদন হয়েছে ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬১২ টন। এ জেলায় হিমাগারের সংখ্যা ৪০টি এবং ধারণক্ষমতা ৪ লাখ ৩০ হাজার ৯২৫ টন। প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকদের খরচ হয়েছে ১৪ টাকা ৭৬ পয়সা।
কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন রংপুর জেলার সভাপতি মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু দেশ রূপান্তরকে জানান, এই মৌসুমে রংপুরের হিমাগারগুলোতে শতকরা ৭০ ভাগ আলু সংরক্ষণ হয়েছে।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১২টি হিমাগার রয়েছে। আর এসব হিমাগারের ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৬ হাজার ১২০ টন। বর্তমানে ধারণক্ষমতার তুলনায় বেশি আলু মজুদ রয়েছে।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি মামুনুর রশীদ খোকা, বগুড়া প্রতিনিধি সাখাওয়াত হোসেন জনি, জয়পুরহাট প্রতিনিধি রেজাউল করিম রেজা, রংপুর প্রতিনিধি তাজিদুল ইসলাম লাল ও দিনাজপুর প্রতিনিধি কুরবান আলী