পরপর তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন আনোয়ারুল আজীম আনার। তিনি ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বুধবার (২২ মে) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
গত ১২ মে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারতে গিয়েছিলেন আনার। পরদিনই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। এরপর থেকে চলছিল নানা জল্পনা। কিন্তু বুধবার (২২ মে) হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতায় খুন হয়েছেন বাংলাদেশি এমপি, পাওয়া গেছে তার খণ্ড-বিখণ্ড মরদেহ।
যদিও মরদেহ পাওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। তবে আনার যে সত্যিই খুন হয়েছেন, সেটি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের একাধিক মন্ত্রী।
সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলার পার-শ্রীরামপুর গ্রামের ইয়াকুব আলীর চার ছেলের মধ্যে ছোট। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই খেলাধুলা আর ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৮৬ সালে ব্যবসা আর ১৯৮৮ সালে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।
সে সময় বিএনপি নেতা ও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের সঙ্গে থেকে রাজনীতি করেন আনার। ১৯৯২ সালে কালীগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হলে তিনি প্রথম পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালে আব্দুল মান্নান বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিলে আনারও দলটির সক্রিয় কর্মী হন। পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তারা দুজনই এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি ভারতে চলে যান। সেখানে অবস্থানকালে ২০০৪ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর দেশে ফিরে আসেন।
২০০৯ সালে আব্দুল মান্নান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য হন। আর দলের সমর্থনে আনার কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এই পদে থাকা অবস্থায় আব্দুল মান্নানের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ তৈরি হয় তার। ২০১৪ সালে তিনি আব্দুল মান্নানকে পেছনে ফেলে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেই থেকে পর পর তিনবার আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য তিনি।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, আনার তার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছিলেন। তিনি সকাল ৬টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এলাকায় ছুটে বেড়িয়েছেন। নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে তেমন একটা ভাবেননি। এলাকায় কোনো মানুষের মৃত্যুর খবর শুনলে নির্বাচনী এলাকায় থাকলে জানাজায় হাজির হয়ে যেতেন। এভাবে তিনি সকলের প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী জানান, আমরা তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে এসেছি। তার মৃতদেহ ভারতে পাওয়া গেছে। কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা বলতে পারছি না। আমার জানা মতে তার সাথে কারো বিরোধ ছিল না।
কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব হোসেন জানান, আমরা তাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। কিছুতেই মানতে পারছি না। আনারের মতো একজন রাজনীতিবিদকে হারিয়ে কালীগঞ্জবাসীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। যারা আনারকে হত্যা করেছে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক।