কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের পর বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে দেশ। তবে এই সবুজায়ন রক্ষায় মুখ্য ভূমিকা রাখছে রাসায়নিক সার কিংবা বালাইনাশকের ব্যবহার। ধারণা করা হয় দেশের বালাইনাশকের ব্যবহার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার। কিন্তু এর পুরোটাই আমদানি নির্ভর হয়ে গড়ে উঠেছে। ফলে দেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। এবার দেশের টাকা যেন দেশেই থাকে সে ব্যবস্থায় স্থানীয়ভাবেই মানসম্পন্ন বালাইনাশক উৎপাদনে করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের (বিএএমএ) নেতারা।
তারা বলছেন, আমাদের চেষ্টায় দেশেই বালাইনাশক বানানো যাবে এবং স্বল্পমূল্যে তা বিক্রয় করা যাবে। আর এটি করতে পারলেই দেশের টাকা আর বাইরের কোম্পানিদের দেওয়া লাগবে না। গত মঙ্গলবার কুমিল্লায় আয়োজিত নিরাপদ ও মানসম্পন্ন খাদ্য উৎপাদন বিষয়ক কর্মশালায় এসব কথা বলে বিএএমএ নেতারা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা সরাসরি কৃষকদের সাথে থেকে তাদের সহযোগিতার জন্য কাজ করছি। মাঠ পর্যায় গিয়ে অনেক সময় আমদানিকৃত বালাইনাশকের কার্যকারিতা ২ শতাংশের নিচে পেয়েছি। এজন্য আমাদের কৃষক ও কৃষি ক্ষতির মুখে পড়েছে।
কৃষক ও কৃষি রক্ষায় আমদানিকৃত বালাইনাশকের ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার এখনই সময় দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের কৃষিখাত রক্ষায় এখনই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বালাইনাশক ব্যবহার জরুরি। আমাদের অনেক তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিএএমএসহ আমাদের সকলের সহযোগিতা খুব বেশি দরকার।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ বলেন, কৃষি দেশের মাটি মানুষের সাথে মিশে আছে। কৃষি এছাড়া আমাদের বড় কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ নেই। আর দেশের কৃষিতে ব্যবহৃত বালাইনাশক পুরোটাই আমদানি নির্ভর। এতে দেশের অনেক টাকা বিদেশি কোম্পানির পকেটে চলে যাচ্ছে। তাদের আমাদের দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক ভূখণ্ডের নয়, বরং মানব সম্পদের। দেশের মানুষ ও কৃষির সক্ষমতা বাড়াতে নিজেদের তৈরি প্রোডাক্টের ওপর প্রাধান্য দিতে হবে। তাছাড়া সরকারও চাচ্ছে দেশীয় শাক বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে। এজন্য আমাদের ঐক্যের প্রয়োজন। তাহলে আগামীর কৃষি হবে স্মার্ট ও রপ্তানিমুখী।
সভাপতির বক্তব্যে বিএএমএ সভাপতি কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কৃষকরা কম মূল্যে সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন পেস্টিসাইড পাবে যদি আমরা এর উৎপাদন দেশেই করতে পারি। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ স্লোগানে দেশেই বালাইনাশক উৎপাদন শুরু হয়েছে, অচিরেই আমরা বালাইনাশক উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হব এবং রপ্তানি করতে পারব।