চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার রায়হান হাবীবের বিরুদ্ধে মহাপরিদর্শক (নিবন্ধন অধিদপ্তর) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে উপজেলা দলিল লেখক সমিতি। লিখিত অভিযোগে সাব রেজিস্ট্রারের বদলির আবেদনও জানানো হয়।
দলিল লেখকরা অভিযোগ করেন, ঘুষ ছাড়া কোনো দলিলই রেজিস্ট্রি করেন না সাব রেজিস্ট্রার রায়হান হাবীব। গত মে মাসে তিনি এই অফিসে যোগদানের পর থেকেই চলছে ঘুষের অবাধ বাণিজ্য। আগে থেকে ঘুষের চুক্তি না করে রেজিস্ট্রার সম্পাদন করতে এসে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দলিল লেখক ও জায়গা জমি হস্তান্তর করতে আসা সাধারণ জনগণ। দলিলে কোনো সমস্যা না থাকলেও কিছু না কিছু খুঁত বের করে দলিল ফেরত দিচ্ছেন সাব রেজিস্ট্রার রায়হান হাবীব। ঘুষের চুক্তি ছাড়া যেসব দলিল লেখক রেজিস্ট্রির জন্য দলিল উপস্থাপন করছেন তাদের সাথে এবং দলিল দাতা গ্রহীতার সাথে প্রতিনিয়ত দুর্ব্যবহার করেন তিনি। তখন আর কোনো উপায় না পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই দলিল রেজিস্ট্রির জন্য গ্রাহক ও দলিল লেখকের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়। তখন তিনি অফিসের ঝাড়ুদার ইয়াকুবের সাথে বাইরে গিয়ে কথা বলতে বলেন। সাব রেজিস্ট্রারের ইশারায় দলিলের মূল্য অনুযায়ী ১৫ হাজার থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ চান ইয়াকুব। দরদাম চূড়ান্ত হলে সাব রেজিস্ট্রারকে গ্রীন সিগন্যাল দেয় ইয়াকুব। তখন তিনি আর কিছু যাচাই-বাছাই না করে দলিল সম্পাদন করে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন দলিল লেখক জানান, এমন কোনো দলিল নেই যেটাতে সাব রেজিস্ট্রার ঘুষ নেন না। আমরা সব দলিলেই অনেকটা অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী দশমিক পাঁচ শতাংশ বাড়তি টাকা দিয়ে আসছি। অর্থাৎ একটি দলিলের জমির মূল্য যদি এক কোটি টাকা হয় অফিস খরচ দিতে হয় ৫০ হাজার টাকা। সরকারি ফির বাইরে এটা সম্পূর্ণ বাড়তি টাকা। এটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। সেটা আমরা আগে থেকে দিয়ে আসছি তাই এটা নিয়ে আমাদের আপত্তি নাই। কারণ এটা অলিখিত নিয়ম হয়ে গেছে। অথচ এই নতুন সাব রেজিস্ট্রার স্যার আসার পর যেকোনো ঠুনকো অজুহাতে দলিল ফেরত দিচ্ছে। এবং ঘুষের চুক্তি ছাড়া যারা রেজিস্ট্রির অফিসে দলিল নিয়ে যাচ্ছে তাদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করছেন। তবে ঝাড়ুদার ইয়াকুবের সাথে ঘুষের দরদাম ফাইনাল হলেই কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই দলিল সম্পাদন করে দিচ্ছেন সাব রেজিস্ট্রার। এই নিয়মে আমরা দুই দফায় গত ৬ জুন ও ৯ জুন তারিখে সাব রেজিস্ট্রারের অফিসে বৈঠক করি। দুই দফা বৈঠকে সাব রেজিস্ট্রার স্যারকে অনেক অনুরোধ করেও কোনো লাভ হয়নি। তিনি আমাদেরকে উল্টো ধমকিয়ে বলেন, আমি বিসিএস ক্যাডার, এছাড়াও ৯০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে আমি এখানে এসেছি। আমার উপরে থাকা আরও আটজনকে ডিঙ্গিয়ে আমি এই চেয়ারে বসেছি। আমার ক্ষমতা সম্পর্কে আপনাদের ধারণা থাকা উচিত।
তবে নিজের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাব রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিব। তিনি বলেন, ‘আগে হয়তো ভিন্ন নিয়মে দলিল রেজিস্ট্রি হতো। এখন এনবিআর আমাদেরকে কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়মে দলিল রেজিস্ট্রির নির্দেশনা দিয়েছে। তাই হয়তো দলিল লেখকদের সাথে আমাদের কিছু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ঘুষ গ্রহণ কিংবা ঘুষ প্রদান করে সীতাকুণ্ডে আসা এসব অপপ্রচার। আমার বিরুদ্ধে একটি পক্ষ ক্ষুদ্ধ হয়ে এসব বদনাম ছড়াচ্ছে।
অফিসের ঝাড়ুদার মো. ইয়াকুব বলেন, তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমি চাকরি ছেড়ে দেব।