কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা করেছে ছাত্রলীগ। এতে নেতৃত্ব দেন চবি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি শরিফ উদ্দিন। তিনি শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ সিএফসির অনুসারী। এছাড়াও হামলার নেতৃত্ব দেন কনকর্ড গ্রুপের অনুসারী আবরার শাহরিয়ার। এসময় তাদের উভয়কে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর তেড়ে এসে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে দেখা যায়। রবিবার (১৪ জুলাই) রাত সাড়ে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস কনফারেন্সের বক্তব্য প্রচার হওয়ার পরপরই কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টে সমবেত হন। এ সময় তারা “তুমি কে আমি কে— রাজাকার, রাজাকার; চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার” ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খবর প্রচার হলে বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে জিরো পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। রাত সাড়ে এগারোটার সময় আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের ককটেল বিস্ফোরণে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় আতঙ্কিত শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। এতে নেতৃত্ব দেন চবি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী শরিফ উদ্দিন এবং শাখা ছাত্রলীগের কনকর্ড গ্রুপের অনুসারী আবরার শাহরিয়ার। অভিযুক্ত শরিফ উদ্দিন বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের দৈনিক হারে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত আছেন। শরিফ ও আবরারের নেতৃত্বে সুমন নামের এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। সুমন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী। এছাড়া একজন নারী শিক্ষার্থীসহ ছাত্রলীগের হামলায় আরও অন্তত তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পরে কোটা সংস্কারের পক্ষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এসময় উপস্থিত ছাত্রলীগের কর্মীরা জিরো পয়েন্ট এলাকা দখলে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারো উপস্থিতি দেখা যায় নি। হামলার পরে কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ঘটনাস্থলে প্রক্টরিয়াল বডির কোনো সদস্যকে সেখানে দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ চবি শাখার সভাপতি ও সিএফসি গ্রুপের অনুসারী শরিফ উদ্দিন, কনকর্ড গ্রুপের অনুসারী আবরার শাহরিয়ারের নেতৃত্বে আমাদের উপর হামলা করা হয়। এ সময় শরিফ উদ্দিন আমাদের সাথে থাকা ছাত্রীদের অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শরিফ উদ্দিন বলেন, আন্দোলনকারীদের একজন আমাকে বলে এলাকার একটা ছেলেকে মারধর করা হচ্ছে। তাই আমি তাকে বাঁচাতে গিয়েছি। আমি কাউকে মারধর করিনি। তবে তিনি গণমাধ্যমে বলেন, রাজাকার নিয়ে স্লোগান হয়েছে, তাই তিনি প্রতিরোধ করেছেন।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় চবি ছাত্রলীগের কনকর্ড গ্রুপের অনুসারী আবরার শাহরিয়ার বলেন, এতদিন পর্যন্ত আন্দোলনকারী কোনো শিক্ষার্থীর গায়ে আমরা হাত তুলিনি। আজ শিক্ষার্থীরা রাজাকার, রাজাকার বলে স্লোগান দিচ্ছিল। ছাত্রলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে তারা উসকানিমূলক স্লোগান দিচ্ছিল। তারা আমাদের দিকে তেড়ে আসলে আমরা প্রতিহত করেছি।
‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ চবির সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আজকে যে কথাটা বলেছেন সেটাতে বোঝা যায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছাড়া সবাই রাজাকার। এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমন্বয় করে রাত সাড়ে ১১টার দিকে জিরো পয়েন্টে মিছিলে গেলে এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ২-৩ জন আহত হয়। তারপরে আমরা সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক রাসেল জানান, আমরা মিছিল করছিলাম, তখন আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এতে আমাদের একজন নারী শিক্ষার্থীও আহত হন। এছাড়া আমাদের উপর ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিজের অসুস্থতার বিষয় তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. অহিদুল আলম বলেন, ক্যাম্পাসে কী হয়েছে আমি জানি না।