শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

দুঃসময়েও এক হতে পারেনি রাজশাহী আওয়ামী লীগ

  • জেলা আওয়ামী লীগের কোন প্রতিবাদ কর্মসূচি নেই
  • উপজেলাসহ সব ইউনিটিতেই বিভক্তি প্রকট
  • বিভিন্ন দিবসে আলাদা আলাদা অনুষ্ঠান করেন শীর্ষ নেতারা
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৪, ০২:৫০ পিএম

দলের দুঃসময়েও এক হতে পারেনি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা এখনও এক হয়ে কোনো অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। দলের আয়োজনে কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচিও নেই।  

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের দ্বিধাবিভক্তি অনেক আগে থেকেই স্পষ্ট। জাতীয় কিংবা দলীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসের প্রতিটিতেই সামনে আসে দলীয় কোন্দলের চিত্র। উপজেলাসহ সব ইউনিটিতেই বিভক্তি প্রকট। প্রতিটি উপজেলাতেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলয় আলাদা। বিভিন্ন দিবসে আলাদা আলাদা অনুষ্ঠান করেন শীর্ষ নেতারা।    

এমনকি এ বছর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও সম্মিলিতভাবে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আলাদা আলাদা কর্মসূচিতে অতিথি হয়ে যোগ দেন। এদিকে ছাত্র আন্দোলন ইস্যুতে সারাদেশে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কেন্দ্রীয় নির্দেশনার পরও রাজশাহীতে নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো আভাস নেই।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের রাজনৈতিক সহিংসতা শুরুর পর নাশকতার প্রতিবাদে রাজশাহীর দু-একটি এলাকা ছাড়া বেশিরভাগ এলাকাতেই তেমন কোনো কর্মসূচি পালন করা হয়নি। ছাত্র আন্দোলন ঘিরে নাশকতা সৃষ্টির পরই রাজশাহী নগরীতে শক্ত অবস্থানে দেখা গেছে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য রাজশাহীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে। তিনি বেশ কয়েকদিনই শহরে নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। তিনি অসহায় মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ কর্মসূচিও পালন করেছেন। সংসদ সদস্যদের মধ্যে সব থেকে বেশি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদকে। পবা ও মোহনপুর উপজেলায় সক্রিয়ভাবে মাঠে কর্মসূচি পালন করতে দেখা যাচ্ছে তাকে। এই দুই উপজেলায় তিনি বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ সভা করেছেন এবং বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করে বিএনপি জামায়াতের নাশকতার বিষয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। অন্য সংসদ সদস্যকে সেভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের খবর পাওয়া যায়নি। গত কয়েক দিনে রাজশাহী-৬ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচির খবর পাওয়া না গেলেও গত মঙ্গলবার তিনি বাঘায় একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণ করেন। একই দিন শাহরিয়ার আলম একটি বিদ্যালয়ের ভবন উদ্বোধন করেন।  

রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ দারা এর মধ্যে সরকারি সফরে রাজশাহী আসেন এবং সার্কিট হাউজে মতবিনিময় করেন। দুর্গাপুরে তিনি একটি অনুষ্ঠানেও যোগ দেন। রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান বাদশা মেয়র লিটনরে সঙ্গে কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।    

এদিকে খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ ডাবলু সরকারের দূরত্ব অনেক দিনের। তবে দুঃসময়ে এই দুই নেতাকেও একই মঞ্চে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে দেখা যাচ্ছে। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল ও তার অনুসারীরাও এখন ডাবলু সরকারের সঙ্গে একসাথে কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। এটি স্থানীয়ভাবে বেশ আলোচিত হচ্ছে। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলয় এখনও একসাথে কোনো কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ায় দলের ভেতরে কথা চলছে যে, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধানের নির্দেশও উপেক্ষা করছেন জেলার নেতারা। 

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ তার নির্বাচনী এলাকা পবা ও মোহনপুরে যেসব প্রতিবাদ কর্মসূচি করছেন, সেগুলোর বেশ কয়েকটিতে অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার। মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও অংশ নিচ্ছেন তিনি। 

রাজশাহী জেলা সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা অবশ্য মানতে চান না যে, জেলায় প্রতিবাদ হচ্ছে না বা জেলা সভাপতির সঙ্গে তার কোনো দূরত্ব আছে। তিনি দাবি করেন, সবগুলো উপজেলাতেই কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে।  

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, ‌‌‘এখন আমাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রাখার সুযোগ নেই। তবে সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদের সঙ্গে এখনও দেখা হয়নি। জেলা কমিটির পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচিও নেওয়া হয়নি। তবে মহানগরের কর্মসূচি, রাজশাহীর কিছু উপজেলার কর্মসূচিতে আমি অংশগ্রহণ করেছি।’  

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত