বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

বিয়ের ৩০ বছর পালন করছেন না ওমর সানী

আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৭:২৯ পিএম

আজ চিত্রনায়ক ওমর সানী ও নায়িকা মৌসুমী দম্পত্তির বিয়ের ৩০ বছর পূরণ হলো। বিশেষ এই দিন বেশ আয়োজন করেই পালন করতে চেয়েছিলেন ওমর সানী। কিন্তু সেটা আর হলো না। দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে সব পরিকল্পনা বাদ দিয়েছেন। তবে দোয়া চেয়েছেন সকলের। 

বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে ওমর সানী বলেন,  আজ ২রা আগস্ট আমাদের বিবাহ বার্ষিকী, আলহামদুলিল্লাহ ৩০ বছর পার করলাম। খুব ইচ্ছে ছিল অনেক বড় করে সবার সাথে শেয়ার করব, কিন্তু হলো না চারিদিকে লাল শুধু লাল এর মধ্যে আমাদের হাসিটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। কোনও আয়োজন নয় যদি পারেন মন থেকে দোয়া করবেন আমাদের জন্য।

কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবির মহরতে দুজনের প্রথম দেখা। তত দিনে ওমর সানীর প্রথম সিনেমা মুক্তি পেলেও মৌসুমীর তখনো শুটিংই শুরু হয়নি। তাঁদের প্রথম কথা হয় মৌসুমীর বাসায়। সেটা ১৯৯২ সালের ঘটনা। কেয়ামত থেকে কেয়ামত তখনো রিলিজ হয়নি। নতুন একটি সিনেমায় ওমর সানীর বিপরীতে মৌসুমীকে নিতে চাইলেন পরিচালক শেখ নজরুল ইসলাম । সে বিষয়ে কথা বলতেই সানীকে নিয়ে মৌসুমীর বাসায় হাজির হলেন পরিচালক। মৌসুমীরা তখন মোহাম্মদপুরের হ‌ুমায়ুন রোডে থাকেন। ড্রয়িংরুমে বসার ২০ মিনিট পর মৌসুমী এসে বসলেন।

সানীর উদ্দেশে বললেন, ‘সানী ভাই, আপনার চাঁদের আলো তো আমরা সবাই দেখলাম। বেশ ভালো করেছেন। কিন্তু আমি তো এই ছবিটা করতে পারছি না। অন্য কমিটমেন্ট আছে।’ মন খারাপ করে বাসায় ফিরলেন নায়ক।

১৯৯৩ সালে মুক্তি পায় কেয়ামত থেকে কেয়ামত। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর ওমর সানী ও মৌসুমীকে নিয়ে একটি সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা করে চার–পাঁচজন প্রোডাকশন ম্যানেজার। মোহাম্মদপুরে একটি শুটিং স্পটে ওমর সানীর সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা।

বললেন, ‘আমরা একটা সিনেমা বানাব, দোলা। নাম শুনেই ওমর সানী বললেন, ‘না না। নারীপ্রধান ছবি করব না।’ ওমর সানীর চার-পাঁচটি ছবি তখন সুপারহিট। না বলার পরও গল্পটা শুনে ভালো লাগল, রাজি হয়ে গেলেন সানী। দোলা সিনেমা দিয়ে জুটি গড়লেন মৌসুমী–সানী।

সিলেটে আউটডোরে শুটিং করতে গিয়ে দুজনের মনোমালিন্য হলো। কাজ শেষ করে ঢাকায় ফিরলেন তাঁরা। ওমর সানী বলেন, ‘এরপর কেন জানি মেয়েটার জন্য মায়াই লাগল। যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি ধাক্কা দিয়েছিল, সেটা ওর (মৌসুমীর) ব্যক্তিত্ব। ওই সময় অন্য যাঁরা কাজ করতেন, তাঁদের থেকে আলাদা। তাঁর বাবাও ছিলেন খুব স্মার্ট ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। পুরো পরিবারের প্রতি আলাদা একটা শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হলো। ভেতরে-ভেতরে হয়তো ভালোবাসাও জন্মে গেল।’

 ২ নভেম্বর শুটিং শেষ করে রাত সাড়ে দশটার দিকে সানীকে দাওয়াত দিতে গেলেন নায়িকা, ‘হিরো, কালকে আমার জন্মদিন। দুপুরে আমার সঙ্গে খাবেন।’

দাওয়াত পেয়ে চিন্তাতেই পড়ে গেলেন সানী, ‘মৌসুমীকে কী দেওয়া যায় ভাবছিলাম। এমন অজপাড়াগাঁ, কিছুই তো নেই। গলায় তখন সাড়ে তিন–চার ভরি ওজনের একটা স্বর্ণের চেইন ছিল। হঠাৎ সেটা খুলে ওর হাতে দিয়ে দিলাম। বললাম, আমি তোমায় কি যে দেব? এখানে তো ফুলটুলও কিছুই নেই। ও তো হতবাক। বললাম, এটাই তোমার উপহার। আমি তোমাকে দিচ্ছি, তুমি এটা রাখো। মা আমাকে এই চেইনটা দিয়েছিলেন।’

আত্ম অহংকার মুক্তির পর একটি ম্যাগাজিনে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে ওমর সানী মুখ ফসকে বলে ফেলেন, ‘আমি ওকে (মৌসুমী) ভালোবাসি। ও আমাকে ভালোবাসে কি না জানি না।’ ওমর সানীর সাক্ষাৎকার পড়ে মৌসুমী অবাক । সানীকে বললেন, ‘এটা বলা কি আপনার ঠিক হলো?’ সানীর উত্তর, ‘বলেছি তো বলেছিই। ঠিক হইছে কি না, জানিটানি না। কইয়াই তো ফালাইছি। ভালোবাসা না হইলে যাও, তুমি তোমার মতো কাজ করো, আমি আমার মতো। মানুষ যদি কিছু বলে আমারে বলবে।’

ওমর সানীর মা মৌসুমীকে ভীষণ পছন্দ করে ফেলেছেন। ছেলের বউ যে বানাবেন, এ কথা বলেও দিয়েছেন। মৌসুমীর শুটিংয়ে মাঝেমধ্যে তাঁর নানিও আসতেন। সানীর মায়ের সঙ্গে মৌসুমীর নানির একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাঁরা দুজনই উদ্যোগী হলেন। মৌসুমী বললেন, ‘নানি বলতেন, ছেলেটাকে আমার পছন্দ। ওর সঙ্গে তোকে বিয়ে দেব। তিনিই ছিলেন দুই পরিবারের মূল মধ্যস্থতাকারী।’ তবে মৌসুমীর মা কখনোই চাননি, ফিল্মের কেউ তাঁর মেয়েকে বিয়ে করুক। এরপর একটা পর্যায়ে তিনিও রাজি হলেন।

 একদিন সানীদের বাসায় মৌসুমীকে নিয়ে হাজির তাঁর নানি। সানীর মাকে বললেন, এক্ষুনি কাজি ডাকেন, আজই ওদের বিয়ে দেব।’ কাজি ডেকে সেদিনই বিয়ে হলো। দিনটা ছিল ১৯৯৫ সালে ৪ মার্চ। মৌসুমী ও ওমর সানীর বিয়ের খবর কেউ জানতেন না। ওমর সানী বলেন, ‘বিয়ের পর দুজনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কাজ চালিয়ে যাব, তাই কাউকে জানাইনি। তবে দুজন পরিচালক বিয়ের খবরটা জানতেন।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত