শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

বিএসএমএমইউ

২০ বছর পর বৈধতা পেল ৪৯৭ জনের পদোন্নতি-চাকরি

  • পদোন্নতি: চিকিৎসক ২৪৮, নার্স ৬৯
  • চাকরি নিয়মিতকরণ: প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা ৩০, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ১৫০
  • পদোন্নতি-চাকরি নিয়মিতকরণ হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবাই বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত
  • পরের সিন্ডিকেটে আসছে আওয়ামী লীগপন্থি চিকিৎসকদের বিষয়
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৯ পিএম

নিয়োগের ১৮ থেকে ২০ বছর পর চূড়ান্ত পদোন্নতি মিলল ও চাকরি নিয়মিত হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিত্নবিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রায় ৫০০ চিকিৎসক, নার্স ও প্রথম, তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর। তারা ২০০৩-২০০৬ সালে নিয়োগ পেয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপি ও জামায়াত-সমর্থিত হওয়ার অভিযোগ এনে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাদের পদোন্নতি ও চাকরি নিয়মিতকরণ করা হয়নি।

গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৩তম সিন্ডিকেট সভায় এসব পদোন্নতি ও নিয়মিতকরণের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। এই পদোন্নতি ও নিয়মিতকরণের বৈধতা দেখতে গঠিত সুপারিশ বোর্ড তাদের সুপারিশ উত্থাপন করে। সে পরিপ্রেক্ষিতে পদোন্নতি ও নিয়মিতকরণের বৈধতা দেয় সভা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চিকিৎসক ও সিন্ডিকেট সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব পদোন্নতি ও নিয়মিতকরণের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ বছর এসব চিকিৎসক ও কর্মচারীদের বঞ্চনার অবসান হলো।’

পদত্যাগের ১০ দিন আগে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসকদের চাপের মুখে গত ৮ আগস্ট এক অফিস আদেশ জারির মধ্য দিয়ে এসব চিকিৎসকের পদোন্নতি ও পরে নার্সদের পদোন্নতি এবং কর্মচারীদের চাকরি নিয়মিত করে যান তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক। সে সময় তিনি অফিস না করলেও বাসায় থেকে এসব প্রশাসনিক আদেশ জারি করেন। পরে ১৮ আগস্ট চিকিৎসকদের চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এরপর গত মাসে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২তম সিন্ডিকেট সভায় এসব পদোন্নতি ও চাকরি নিয়মিতকরণের বৈধতা যাচাইয়ে সুপারিশ বোর্ড গঠন করা হয়। সেই বোর্ড গত এক মাস এসব পদোন্নতি ও নিয়মিতকরণের বৈধতা যাচাই-বাছাই করে। পরে গতকালের সিন্ডিকেট সভায় সেই বোর্ডের উত্থাপিত সুপারিশ অনুযায়ী এসব পদোন্নতি ও চাকরি নিয়মিতকরণে বৈধতা দেয় সিন্ডিকেট।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল রাতে তাকে একাধিকবার ফোন করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানের সাড়া পাওয়া যায়নি।

পদোন্নতি ৩১৭ চিকিৎসক-নার্স, চাকরি নিয়মিতকরণ ১৫০ কর্মচারীর : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য জানান, সিন্ডিকেটে ৪৯৭ জনের মতো চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের পদোন্নতি ও চাকরি নিয়মিতকরণের সিদ্ধান্ত পাস হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৪৮ জন চিকিৎসক রয়েছেন। এসব চিকিৎসকের মধ্যে সহকারী অধ্যাপক পদে সবেতনে পদোন্নতি পেয়েছেন ৬৮ জন ও নিয়মিত পদোন্নতি পেয়েছেন ১৪৮ জন। সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ৩২ জন। নার্সদের মধ্যে পদোন্নতি পেয়েছেন ৬৯ জন।

সিন্ডিকেট সভায় ৩০ জন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা এবং ৬৫ জন তৃতীয় শ্রেণির ও ৮৫ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর চাকরি নিয়মিতকরণে বৈধতা দেয় সিন্ডিকেট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সিন্ডিকেট সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হকের দিয়ে যাওয়া পদোন্নতি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি নিয়মিত করার জন্য সুপারিশ করেছে সিন্ডিকেট। এর আগে এসবের বৈধতা যাচাইয়ের জন্য সুপারিশ বোর্ড গঠন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই বোর্ডের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতেই এসব পদোন্নতি ও নিয়মিতকরণের বৈধতা দিল সিন্ডিকেট।’

পরের সিন্ডিকেটে আসছে আওয়ামী লীগপন্থি চিকিৎসকদের বিষয় : আরেক সিন্ডিকেট সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বিরোধী আওয়ামী লীগপন্থি চিকিৎসকদের তালিকা আগেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে জমা দেওয়া হয়েছে। সিন্ডিকেটে উঠলে সেটা বাস্তবায়নে কমিটি হবে। সেটা এজেন্ডায় ছিল। কিন্তু পদোন্নতির বিষয়টি যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। পরে আর সেগুলো নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কয়েক দিনের মধ্যে আরেকটি সিন্ডিকেট সভা ডেকে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। বিত্নবিদ্যালয়ের বিগত সময়ের অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত, বিশ্ববিদ্যালয় বাজেট ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে পরের সিন্ডিকেট সভায়। মোট ৩৮টি এজেন্ডা ছিল। তার মধ্যে ১৮টির মতো শেষ হয়েছে।’

যোগ্যতার পরও পদোন্নতি পাননি : বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পদোন্নতি পাওয়া চিকিৎসক-নার্স ও চাকরি নিয়মিতকরণ হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবাই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের কারণে ড্যাবের চাপের মুখে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব বঞ্চিতদের পদোন্নতি দিতে বাধ্য হয়। গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে তারা পদোন্নতি পাননি। তাদের জুনিয়র ও ব্যাচের সহপাঠীরা এখন সিনিয়র ও অধ্যাপক হয়ে গেছেন।’

পদোন্নতি তালিকায় দেখা গেছে, পদোন্নতিপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা কমপক্ষে ১৫ বছর আগে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য যোগ্যতা অর্থাৎ এমএস ও এমডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্যে সর্বশেষ ২০২২ সালে এমএস ও এমডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন—এমন চিকিৎসকও রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই পদোন্নতি তাদের প্রাপ্য ছিল। রাজনীতি ও ভিন্নমতের কারণে তারা এতদিন এই পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত ছিলেন।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত