মূত্রনালির সংক্রমণ বা ইউটিআই এখন সাধারণ বিষয় আর গর্ভাবস্থায় জীবাণু মূত্রনালিতে প্রবেশ করলে মূত্রনালির সংক্রমণ ঘটায়। গর্ভাবস্থার ৬-২৪তম সপ্তাহ সংক্রমণের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সময়। গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রায় ৩১ শতাংশ মহিলার গর্ভাবস্থায় উপসর্গহীন মূত্রনালির সংক্রমণ হয়।
কারণ
অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া : মহিলাদের মূত্রনালি থেকে মলদ্বারের দূরত্ব খুব কম, যার ফলে ঊ-পড়ষর-এর মতো ব্যাকটেরিয়া সহজেই মূত্রনালিতে প্রবেশ করতে পারে। শারীরিক পরিবর্তন : হরমোনের মাত্রা (প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন) ও গর্ভাশয় এবং জরায়ুর আকার বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মূত্রাশয়ে চাপ পড়ে এবং মূত্রনালির মূত্রপ্রবাহ ধীরে হয়। মূত্রাশয় সম্পূর্ণরূপে মূত্র বের করতে পারে না। গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে প্রোটিন, হরমোন ও চিনির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে প্রস্রাবের অমøতা কমে যায়, জীবাণুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। গভাবস্থায় সহবাস করলে অনেক ক্ষেত্রে যোনিপথের জীবাণু মূত্রনালিতে প্রবেশ করতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্রাব আটকে রাখা। নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিস, মূত্রনালিতে পাথর অপারেশন ও দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা।
লক্ষণ
তলপেটে ব্যথা বা টান ধরা।
কাঁপুনি ও জ¦র। মূত্রের সঙ্গে মিউকাস বা রক্ত যাওয়া।
প্রস্রাব করার সময় জ¦ালা যন্ত্রণা। প্রস্রাবে দুর্গন্ধ। প্রস্রাব করার তাগিদ। যৌন সহবাসের সময় যন্ত্রণা। কিডনি সংক্রমিত হলে পিঠে ব্যথা, বমি-বমি ভাব, বমি হওয়া, উচ্চমাত্রায় জ¦র। গর্ভস্থ বাচ্চার নড়াচড়া কমে যাওয়া। মূত্রের পরিমাণ কমে যাওয়া।
জটিলতা ও ঝুঁকিগুলো
নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রসব (প্রি-টার্ম লেবার)। নির্দিষ্ট সময়ের আগে পানি ভেঙে যাওয়া। জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হওয়া। কিডনিতে সংক্রমণ বা পাইলোনেফ্রাইটিস যা, মা ও শিশু উভয়ের জন্যই প্রাণঘাতী।
বারবার সংক্রমণ হওয়া।
কীভাবে নির্ণয় করা হয়
ইউরিন আরএমই ও কালচার (Urine R/ME & Culture)- মূলত প্রতি প্রসব-পূর্ববর্তী ভিজিটে এই পরীক্ষাটি করানো উচিত।
‘ইউটিআই’ নিরাময়ের উপায়
গর্ভাবস্থায় নিরাপদ অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। গুরুতর সংক্রমণে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করা। প্রচুর তরল ও পানি পান করা, যেমন ডাবের পানি, তাজা ফলের রস, বাটার মিল্ক, দুধ, লেবু পানি ইত্যাদি। ভিটামিন সি-যুক্ত তাজা ফল-সবজি : পাতিলেবু, কমলালেবু, ক্যাপসিকাম, বাদাম, ওটস ইত্যাদি খাওয়া। মিষ্টি ছাড়া ক্র্যানবেরির রস, প্রোবায়োটিক যেমন দই, চিজ ও অন্যান্য সাপ্লিমেন্ট- বিটা কেরোটিন, জিংক ইত্যাদি খাওয়া। খাদ্যাভ্যাস থেকে চিনি, পরিশোধিত খাবার, ক্যান্ড জুস, অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন বাদ দিতে হবে। সহবাসের সময় কনডম ব্যবহার। যৌনমিলনের আগে ও পরে প্রস্রাব করা ও স্থানটি ধুয়ে ফেলতে হবে। ইউটিআইর চিকিৎসা চলা অবস্থায় সহবাস এড়িয়ে চলাই ভালো। মহিলাদের হাইজিন প্রোডাক্ট যেমন- পাউডার, ডিওডরেন্ট, অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম ইত্যাদি ব্যবহার না করা। কিছুদিন পরে যন্ত্রণা কমে গেলেও অ্যান্টিবায়োটিকের নির্দিষ্ট প্রেসক্রিপশন অবশ্যই মেনে চলা।